বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২

গুচ্ছ কবিতা * ছোটন গুপ্ত



কবিতাগুচ্ছ * ছোটন গুপ্ত 

চাওয়া








শূন্যে চাওয়া রোদের ছবি রাত্তিরে মেঘ আয় 

হাত পেতেছে বৃষ্টি চেয়ে ঝাপসা কুয়াশায় 

কবির চোখে শূন্য বাড়ায় নিছক অভিমান 

দূর থেকে দূর পর হয়েছে এক শতকের গান 

গান গেয়ে সেই বাউল গেল চলে 

স্বপ্নবিহীন রাতের তারা মিটমিটিয়ে জ্বলে

ফুসফুসে তার জমাট ধোঁয়া, চোখ মেলে না, চায়।



আত্মলিপি   

নিজেকে খুঁজেছি ঘনঘোর তমসাতে—

ঝাপসা দু-চোখে ছায়া ঘনিয়েছে রাতে ৷ 

কথা দিয়ে যায় শাল বট জারুলেরা—

আছি হে পথিক, চাই চেনা পথে ফেরা ।


গাংচিল বাজ দূরের বলাকা যত 

আকাশ সুনীলে ভেসে যেত শতশত,

বুনোফুল পাখি গাছ লতা ঘাসে ছাওয়া

আলো হাতড়িয়ে আত্মকে ফিরে চাওয়া ।

 

তেমাথার মোড়ে ভোরে সূর্যের গানে 

আকাশ চিনেছি আনমনে আনচানে ।

ঘন মেঘে ঢেকে বলে গেছে সেও, আসি,

নদীকে ডেকেছি, সে যখন বানভাসি ।


নদী বলে গেছে ঢেউ সুনিবিড় ঢালে 

চাতক হ' দেখি, দেবো জলধারা তা'লে ।

চাতক হবো না, চিৎকার করে বলি,

আমাকে চেয়েছে পাহাড়িয়া অলিগলি ।


পাহাড়ের কোলে বুকে নিভৃতে শুয়ে 

রাত জেগে থাকা আমি তুমি এক দুই-এ ।

অচিন পাহাড়ও আমার মতোই একা, 

আঁকিবুকি ক্ষত পাথরের বুকে লেখা ৷ 


ক্ষয়িষ্ণুতায় আবলুশ কালো গায়ে

পাথরের ছবি নিয়েছি অচল বাহে

তোমার অপেক্ষা পথ চেয়ে জেগে থাকে,

কেউ বলবে না, মনও ভুলে গেছে তাকে ।


তুমি ফিরে গেছো পাহাড় ভাঙা যে গানে

সাগরে মিশেছো রূপকথা মায়াস্নানে ।

আত্ম খোঁজার শেষ কোথা, জানি না তো,

অচল পাহাড়ে  আমি একা আপাতত ।


তুমি ফিরে এলে পাহাড়ে জ্বালাবো আলো,

নিজেকে জানতে হিজিবিজি রেখা কালো 

তবুও তো রাত যত গাঢ় হয় ফিরি

তোমার কাছেই আকাশ ছোঁয়ার সিঁড়ি ।



ফেরা

পুড়ে যেতে পারে হঠাৎ আগুনে 

ডুবে যেতে পারে জলে

শব্দরা তবু খেলাঘরে মাতে

নিরভিমানের ছলে।


দিনান্তে জাগে হাহাকার লিপি

সব কাজ শেষে উঠে

কবিতার কথা চুপচাপ থাকে

ভোরবেলা অস্ফুটে।


যে আগুন ভেজে সরলতা বোধে

বৃষ্টি অথবা ঘামে

অন্ধকারের না লেখা কথারা

বিকোবে না কম দামে।


কিছু শব্দ তো পথ ভুল করে

এখনও সত্যে জাগে

কারা সারারাত মশাল আলোতে

স্বপ্নের অনুরাগে


অপেক্ষা ভোরে পুবাকাশ পানে

লিখে রাখে সাতসুর

বিশ্বাসটুকু থাক সুখ আবাসে

ফেরাবেই রোদ্দুর।












প্রাপ্তি

কিছুই পাবো না জেনে এই দুই হাতে

ধূলিকণা মেখে নিই চলে যাওয়া রাতে

ঝরে গেছে গতকাল থলে থেকে ঠিকই

কাঙালের ভিক্ষের আধুলি ও সিকি।


চোরাবালি পথ ধরে হেঁটে যেতে যেতে 

শূন্যতা ঘিরে ধরে রোদ্দুরে তেতে 

তোমাকে দেখতে চাওয়া ইচ্ছেরা হেসে 

বলে গেছে জেগে থেকো লাইনের শেষে।


পাহাড়ে নদীর তীরে জঙ্গলে একা

তোমাকে খুঁজিনি আমি হয়নি তো দেখা 

ইঁদুরের দাঁতে কাটা ভিখিরির থলে 

ফেলে দিই রাত্তিরে দুটি হাত মেলে।


কে কাকে ফকির করে কে যে হয় রাজা 

বুলবুলি ধান খায় বাঁশি তোর বাজা।

আপোষে পাপোশ খোঁজে ঘরে ঢোকে পা পা

কিছুটি নেবো না শেষ বিছানাটা মাপা।



চুমুর পরে

চুমুর পরে চুমুর পরে চুমুর যে সুর আঁকি 

নূপুর পায়ে নাচবে রাতে একশোটা জোনাকি।

দুয়োর খোলা আকাশ হলে মনের পাখি রূপ

ভুলগুলোকে ভুলতে বাঁচুক চুমুরা নিশ্চুপ।


উড়ছে ঘুড়ি পড়বে জানা ভোকাট্টাতে ছাতে

কুড়িয়ে নেবো সোহাগ ভরে শূন্য লাটাই হাতে।

ভালোবাসতে হাসতে হলে আকাশ হয়ে যাস

কান্না মুছে স্বপ্নে আঁকিস চুমুর আলোকভাস।


ভালোবাসার স্বপ্ন যখন পাখির উড়াল চায়

পাখিরা থাক নীল আকাশে প্রেমিক ফিরে আয়।

মাঠের ঘাসে রোদ নিবাসে মেঘের ভেলায় ভেসে

গান গেয়ে সেই একটা মেয়ে জাগছে চুমুর দেশে।



আয় চিল

ছবিঘরে না বাচক বোধের আকর

নীলাকাশে গাঙচিল মাখে রবিকর।

রিক্ত নিঃস্ব কালে স্নায়ু সাড়াহীন

রাতজাগা শব্দরা খুঁজেছে সুদিন।


ভাঙনের খরা লিপি ওড়ায় পালক

বাঁচার চেষ্টা করে ধিমেল আলোক।

না বাচক শব্দরা ঘুমাঘরে ঠায়

চেনা পৃথিবীর ছবি এখন কোথায় ?


গোপনতা নিয়ে কেউ কেউ ভালো থাকে

অচেনা ছবির মায়া কবিকে ডাকে।

গ্রামোফোনে শুনে যাওয়া সেতারের সুর

দরজা জানালা খোলা হাসে রোদ্দুর।


গাঙচিল ফিরে গেছে বিগত কালে

পুরানো ছবিতে টান সাতসকালে।

কতোকাল হয়ে গেলো সীমানার খোঁজ 

ধ্রুপদী গানের কলি দুটি চোখ বোজ।


***********************************************************************************************************



ছোটন গুপ্ত

পোশাকি নাম প্রবীর দাশগুপ্ত। কবিতা লেখেন ভালোবেসে। মানুষ সময় সমাজভাবনা তার লেখার উপজীব্য। কবিতায় বার্তা থাকে একসাথে হাতে হাত বেঁধে পথ চলার। বিশুদ্ধ ভালোবাসা প্রত্যাশা ছড়িয়ে যায় কলমে। সুচেতনার ভরসায় কবিতা কথা বলুক, এটুকুই চাহিদা। এ পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ পাঁচটি। 'আগুন বৃষ্টি ভালোবাসা', 'ফিনিক্স আয়', 'দহনকালের কবিতা' 'নীরবতার শব্দমালা' এবং 'অশোক লিপি'। ষষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ 'ছেঁড়া স্বপ্ন অথবা' যন্ত্রস্থ। পেশায় উচ্চমাধ্যমিক স্কুল শিক্ষক। জন্ম- ০৬/১২/৬৪।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন