বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২

অণুগল্প * বহ্নি শিখা



ণুগল্প সাহিত্যের একটি বিস্ময়কর শাখা। ' বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন ?' ঠিক তাও নয় যেন, বিন্দুতে সপ্তসিন্ধু দশ দিগন্ত চকিতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে সার্থক অণুগল্পে।       তেমনই একটি অসাধারণ অণুগল্প এবার আমরা পড়ছি , বহ্নি শিখা -এর কলমে -----


মেয়ে জন্মপাপ

বহ্নি শিখা (ঊষা দত্ত)

 

প্রতিটা মানুষের চলার পথে কাঁটার বেড়া।

ইচ্ছানুযায়ী কাজের মাঠে হয় কাদা নয় কংক্রিট। দিতির জীবনে কোনদিন তার  পরিকল্পনামতো কাজ সম্পন্ন হতে দেখেনি।

আজও বেলা আসেনি। দিতি ভাবে সবাই জপে আল্লাহ্ আল্লাহ্। আমি জপি বেলা বেলা, যন্ত্রণা! কি সমস্যা হলো কে জানে। ফোনটাও অফ। ওর ছেলেটা হয়ত কোন সমস্যা করেছে। এর হয়েছে জ্বালা। 

কুড়ি বছর বয়সে বিয়ে। তারপরে আর এক কুড়ি পার করে দিলো জুয়ার আসর থেকে বরকে ঘরে ফেরাতে। এরমধ্যেই দুই ছেলের জন্ম দিয়ে ঝিয়ের কাজ নিয়েছে। আর কুড়ি চলে যাবে জুয়ারি বখাটে ছেলেকে জীবন চেনাতে। 

                          "মেয়ে হয়ে জন্ম নেয়া পূর্ব জন্মের পাপের ফল" ছোটবেলা শুনেছিল দিতি। নারীবাদী দিতি কুসংস্কারে বিশ্বাসী না হলেও আজকাল কথাগুলো তাকে খুব ভাবায়।

                         কি পাপ করেছিল বেলা? দু'দুটো পর্যায়ে পুরুষকে পথে আনতে রাতদিন এক করছে। হয়ত বেলার পরিশ্রম সার্থক হবে। হয়তো হবে না। ধুকে ধুকে নিঃস্ব হবে বেলার চোখের সামনেই। এই ফেরাতে না পারাই কি পাপ?

                          এমন অজস্র বেলার জীবন -বিত্তভেদে ভিন্নমুখী। কে খবর রাখে তার। তবুও নারীর  পূর্ণোদ্দম সংসারে। অথচ বিশ্বসংসারে নারী এখনো উপেক্ষিত। লাঞ্চনার শিকার। 

                       ভাবতে ভাবতে নিঃসন্তান দিতির হাতে কাজ ফুরিয়ে যায়। সন্তানের মঙ্গল কামনায় এক মায়ের মনের হু হু করা কান্না তার বুকের ভিতর পৌষের শীতলতা অনুভব করে। ভুলে যায় ক্লান্তি। মাস কাবারি টাকায় বাঁধা বেলার কাজে না আসা।

                        সে জানে ঈশ্বরও মানুষের মতো লোভী। নাস্তিক দিতির প্রার্থনা ঈশ্বর শুনবে না জেনেও সে বিপথে যাওয়া বেলার ছেলের জন্য প্রার্থনা। 


**********************************************************************************************



বহ্নি শিখা 

টুকটাক লেখার নেশা।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন