সদ্য প্রয়াত ড. শিশির মজুমদার যাঁর সম্বন্ধে না লিখলে নয়
কানাইলাল জানা
মধুমিতা প্রায়ই বলে স্বামী আগে মারা গেলে বিধবা স্ত্রী যেমন সহজে সামলে নেন , স্ত্রী আগে মারা গেলে বিপত্নীকরা বড্ড অসহায় বোধ করেন প্রাত্যহিক জীবনে। এমনটাই ঘটেছে সদ্য প্রয়াত আশি বছর পৃর্ণ না করা বিপত্নীক ড. শিশির মজুমদারের ক্ষেত্রে। অবশ্য বিশিষ্ট নাগরিক ও আশি বছর বয়স পেরোনো বিপত্নীক ত্রয় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ড. পবিত্র সরকার ও অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য-র ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয় কারণ তাঁদের মেয়েরা আছেন, যেখানেই থাকুন বাবার খোঁজ নেবেন কিন্তু শিশির বাবুর মেয়ে নেই, দু'ছেলে সোমায়ন ও সমুজ্জ্বল বাবার কাছে থাকতেন না। এদিকে লকডাউনে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল 'এশিয়াটিক সোসাইটি' ও 'জাতীয় গ্রন্থাগার'। ফলে এশিয়াটিক সোসাইটির সক্রিয় সদস্য শিশির মজুমদার প্রায় ঘরবন্দি হয়ে পড়েন। 'আনন্দ বাজার' এবং 'এই সময়' পড়ে আর কতটা আশ মেটে ? সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সমরেশ মজুমদার ড. শুভঙ্কর চক্রবর্তী ড. পবিত্র সরকার ড. পিনাকেশ সরকার প্রমুখ গুণীজনদের কাছের মানুষ শিশিরবাবু ছিলেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে পিএইচ ডি প্রাপ্ত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষক ছিলেন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য। যে ক'জন অধ্যাপক কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চাকে পাঠ্যক্রমের অন্তর্গত করেন, জনপ্রিয় মঙ্গলকাব্য রচয়িতা ভ. আশুতোষ ভট্টাচার্য তাঁদের অন্যতম। তাঁর অনুপ্রেরণায় ছাত্ররূপে শিশির মজুমদার অসংখ্য মঙ্গলকাব্য থেকে দশটি মঙ্গলকাব্য বাছাই করে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য প্রকাশ করেন 'মঙ্গলকাব্যের গল্প'। ফরিদপুরের মুস্তাফাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করা এবং কলকাতার বিজয়গড়ের স্থায়ী বাসিন্দা শিশিরবাবু যখন রায়গঞ্জ কলেজের অধ্যাপক উত্তর দিনাজপুর পশ্চিম দিনাজপুর মালদহ জলপাইগুড়ি দার্জিলিং ও কোচবিহার জেলার গ্রামে গ্রামে পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে ঘুরে ঘুরে প্রত্যক্ষ করেন গ্রামীণ সংস্কৃতি ও লোকাচার। এই সময় তিনি একটি মূল্যবান চিঠি পান তাঁর শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য-র কাছ থেকে:
কল্যাণভাজনেষু শিশির, ২/২/১৯৮১
তুমি উত্তরবাংলার অবহেলিত অঞ্চলের লোক-সংস্কৃতি নিয়ে কেবলমাত্র নিজের প্রেরণায় যে কাজ করে যাচ্ছ, তা বাস্তবিকই প্রশংসার যোগ্য। শুনে প্রকৃতই আনন্দিত হয়েছি যে তোমার অনুসন্ধানের ফলগুলো আজ সর্বস্তরেই স্বীকৃতি লাভ করতে আরম্ভ করেছে। পশ্চিম দিনাজপুর জেলার কাঠের মুখোশ কিংবা পাটের কার্পেট এসব জিনিস চোখে দেখা দূরে থাক, তাদের বিষয় কেউ কানেও শোনেনি। সেই অবস্থায় তুমি তাদের সম্মান করে এনে লোকচক্ষুর সামনে উপস্থিত করছ এবং সরকারি পুরষ্কারে শিল্পীদের অভিনন্দিত করবার সুযোগ করে দিয়েছ, এমন কাজ এদেশের খুব বেশি লোক করতে পারেনি। উত্তরবাংলার অনেক কিছুই আমরা জানিনা , এই না জানাই উত্তরবাংলার সঙ্গে আমাদের একটা ব্যবধান সৃষ্টি করেছে। তুমি তোমার পরিশ্রম এবং জ্ঞানবুদ্ধি দিয়ে সেই ব্যবধান দূর করে দিতে ব্রতী হয়েছ, এজন্য তুমি জাতির কৃতজ্ঞভাজন হয়ে থাকবে।.....
.... ...আশীর্বাদক শ্রী আশুতোষ ভট্টাচার্য।
রায়গঞ্জ শহরের কাছে একটি গ্রামে পলিয়া জনগোষ্ঠীর বসবাস। অনেকের ধারনা এই জনগোষ্ঠীর লোকজন তিস্তা নদী পেরিয়ে এসেছিল বলে পালিয়া থেকে 'পলিয়া'। অন্য বিশেষজ্ঞের মতে এরা হল আসলে হাতিধরা পলি পাইক। আসামের জঙ্গল থেকে হাতি ধরে নিয়ে এসে দিনাজপুরের সম্পন্ন ব্যক্তিদের এরা দিত এবং তাঁদের হয়ে পাইকের কাজও করে দিত। 'পালি' কথার অর্থ চুক্তিবদ্ধ। পালি থেকে পলিয়া। পলিয়াদের বিষয়ে এবং তাদের মুখে মুখে প্রচারিত আটটি লোককথা নিয়ে অবিভক্ত দিনাজপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট জি এইচ ড্যামন্ট ১৮৭২ সালে একটি মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন ইংরেজিতে। সেই গ্রন্থের সুচারু অনুবাদ করেন শিশিরবাবু। তা প্রকাশ করে একটি পবিত্র কর্তব্য পালন করেছে 'পারুল প্রকাশনী'। শিশিরবাবুুর উদ্যোগেই প্রথম প্রকাশিত হয় 'উত্তরবঙ্গের লোকনাট্য'। লোকসংস্কৃতির প্রতি নিবেদিত প্রাণ গুণের জন্য কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পর তিনি হয়েছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্য নাটক সংগীত ও দৃশ্যকলা আকাদেমির সদস্য-সচিব।
সাহিত্যিক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাব্যগ্রন্থের বৈশিষ্ট্য যদি হয় সুন্দরবনের লোকাচারকে আলোকিত করা তবে শিশির মজুমদারের কাব্যগ্রন্থের বিশিষ্টতা উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতিকে আদরনীয় করে তোলা। তাঁর আর একটি মহৎ গুণ অন্যের হয়ে বলা, অন্যের জন্য কিছু করা, সেই সবই থাকবে পরের পর্বে...
আমাদের পাড়ায় ব্রহ্মপুরে ( বাঁশদ্রোণী থেকে কিছুটা ভেতরে ) ডক্টর শুভঙ্কর চক্রবর্তী স্থাপিত শিশুশ্রেণি থেকে বারক্লাস পর্যন্ত 'নিভা-আনন্দ বিদ্যালয়' নামে বিশ বছর বয়সের একটি স্কুল আছে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষৎ স্বীকৃত যার বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করার মত: (১) বাংলা অথবা ইংরেজি যে কোন একটি মাধ্যমে ছাত্র ছাত্রীরা পড়ে অভিভাবকের সামর্থে কুলোয় বেতন দিয়ে, তাও একই বাড়ির দুজন পড়লে একজনের বেতন অর্ধেক । (২) প্রশস্ত খেলার মাঠ ও মুক্ত মঞ্চ থাকা এই স্কুলে নিয়মিত বিষয় ছাড়াও পড়ানো হয় ম্যাজিক,সংগীত, নাটক, ক্যারাটে, রান্না-বান্না, বক্তৃতা দেওয়ার অভ্যেস, শারীর শিক্ষা এবং বাড়ির নিত্য ব্যবহৃত বৈদ্যুতিন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ খারাপ হলে তা নিজে সারানোর প্রক্রিয়া। (৩) দুপুরে ছাত্র ছাত্রী শিক্ষক শিক্ষাকর্মী সকলের আহারের জন্য খাবার আসে 'জলযোগ' থেকে এবং দ্বিতীয়বার স্কুল -সংগীত গেয়ে আবার শুরু হয় ক্লাস। (৪) এতগুলো বছর আনন্দের সঙ্গে কাটানোর ফলে প্রাক্তন হওয়া ছাত্র ছাত্রীরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখে স্কুলের সঙ্গে। (৫)পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্র ভর্তি ও শিক্ষক নিয়োগ হওয়াএটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয় ( মালিক নেই, ট্রাস্টি চালায় ) এবং একদমই ফাঁকি দেওয়া চলে না শিক্ষকদের তাই দেখেছি স্ত্রী মধুমিতা সহ প্রত্যেক শিক্ষক লকডাউনে নিষ্ঠার সঙ্গে হয় অন লাইনে অথবা স্কুলে গিয়ে পড়িয়েছেন যথারীতি। তার ফলে ছাত্ররা যেমন ফাঁকি দেয়নি, তেমনি এপ্রিল এলেই চার হাজার টাকা করে বেড়ে যায় প্রত্যেক শিক্ষকের বেতন অথচ এই স্কুলেই ড. শিশির মজুমদার অবসরের পর বেশ কয়েক বছর পড়িয়েছেন বিনা বেতনে স্কুলের সার্বিক উন্নতিকল্পে। প্রশাসনিক শীর্ষে থেকে তাঁর বড় ছেলে সোমায়ন মজুমদার লকডাউন পিরিয়ডে ড. শুভঙ্কর চক্রবর্তীর নির্দেশে অভিভাবকদের আশ্বস্ত করেছেন তাঁদের সন্তানের পড়াশুনোর দায়িত্ব স্কুলের। তাঁদের নয়। কিন্তু প্রথম থেকেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষায় বেশ ভাল ফল করা সত্ত্বেও পাড়া প্রতিবেশীদের অবিশ্বাস ও সন্দেহ জুলজুল করছিল মৌচাকের মত। বিদ্যাভারতী থেকে আমার মেয়েকে এনে 'নিভা - আনন্দ'এ ভর্তি করায় হায় হায় করেছেন অনেকেই। কিন্ত আমাদের বিশ্বাস ছিল বরাবর। এখন স্কুলের প্রতি এলাকার মানুষের এতটাই বিশ্বাস ও ভরসা যে ভর্তি নেওয়া যাচ্ছে না,বিভিন্ন ক্লাসে ভর্তি হতে চায় এত ছাত্রছাত্রী। আমার আশা প্রয়াণের আগে শিশিরবাবুু নিশ্চয় জেনে গেছেন স্কুলের এই শ্রীবৃদ্ধি। এই স্কুলে পড়াকালীন মেয়ের মাধ্যমেই তাঁর সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক। মেয়ের একটি লেখা পড়ে তাঁর ভাল লাগে এবং আমাদের ডেকে পাঠান। সেই শুরু। এই সময় মেয়ের লেখা পড়ে তারিফ করেছেন স্বয়ং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, প্রভাত চৌধুরী, নাসের হোসেনরা কিন্তু একদিন মেয়ের ডায়েরি মা কেন পড়বে এই অজুহাতে লেখালেখি বন্ধ করে দেয় মেয়ে যদিও স্নেহ ভালবাসা পেয়েছে অনেক গুণীজনের কাছ থেকে। শিশির মজুমদার সম্পাদিত স্কুল ম্যাগাজিন 'আনন্দধারা' থেকে পাওয়া ১৫/১৬ বছর আগে লেখা একটি কবিতা:
মন
ময়ূরাক্ষী জানা
এক ফোঁটা শিশির বিন্দুর মতো তুমি শীতল,
সূর্যের প্রখর তেজের মতো তোমার ক্রোধ
এক সদ্য ফোটা গোলাপের মতো তুমি সুন্দর,
কখনো তুমি ভরা থাকো হিংসায়
কখনো তোমার বুকে জ্বলন্ত দীপ
নিভতে নিভতেও নেভে না।
তুমি.....,তুমি মন
তুমিই সেই মন যাকে আমি খুঁজে খুঁজে
পাইনি কোনোদিন।
তোমাকে যে কত চেয়েছি
তুমি কি তার খবর রাখো, মন...
কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়াও ফেরিওয়ালার মতো,
তুমি কি স্বপ্ন বিক্রি করো ?
ঘুরে ঘুরে তোমার গায়ে ক্লান্তির ছাপ,
মন একটু জিরোও, একটু দাঁড়াও,
এত তাড়া কিসের ?
সারাজীবন তো সবাইকে ভালবেসে গেলে,
বয়ে বেড়ালে কত রাগ -দু:খ-অভিমান।
কেউ কি তোমার খবর রেখেছে ,মন!
তোমার ব্যথা ভরা জীবনটার ?
উৎসাহ দিতে দিতে এক সময় সবাই থেমে গেলেও শিশিরবাবু থামেননি, আমৃত্যু আমার মেয়েকে উৎসাহ দিয়ে গেছেন লেখালেখি ও অন্যান্য কাজে।
তিনি যখন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্য নাটক সংগীত ও দৃশ্যকলা আকাদেমির সদস্য-সচিব, মধুমিতা পাল নামে এক সম্ভাবনাময়ী ছাত্রী তাঁর নজরে এলে এতটাই উৎসাহ ও সাহায্য সহযোগিতা করেন যে আজও তিনি দেশে দেশে নৃত্যের অনুষ্ঠান করে বেড়ান।
শিশিরবাবু নিজেই ফোন করে অন্তত দেড় ঘন্টা এক নাগাড়ে কথা বলতেন। কবি অমিতাভ দাশগুপ্ত যেমন অনর্গল কথা বলতেন যাঁর প্রতিটি কথাই হত দামি তেমনি শিশির মজুমদার যত কথাই বলুন প্রতিটি কথা ছিল সমাজ ও সংস্কৃতি মনস্ক।
ভেবেছিলাম আমিও একদিন ফোন করে অনেকক্ষণ কথা বলব কিন্ত তার আগেই চিরঘুমের দেশে চলে গেলেন অনিন্দ্যকান্তি এই মানুষটি। এ বেদনা যাওয়ার নয় কোনদিন...
শিশির মজুমদারের কিশোরদের জন্য 'হাতিরা এল কলকাতায়' গ্রন্থটি সাড়া ফেলেছিল একসময়। দুই বঙ্গের বিশিষ্ট জনদের সঙ্গে অন্তরঙ্গতা নিয়ে 'কিছু স্মৃতি কিছু কথা'ও একটি উল্লেখযোগ্য বই, উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের যে সব গ্রাম পরিক্রমা করেছিলেন তার প্রত্যক্ষ ও অসাধারণ অভিজ্ঞতা নিয়ে মূল্যবান গ্রন্থ 'উত্তর গ্রাম চরিত' এবং 'মঙ্গলকাব্যের গল্প' প্রকাশ পায় তাঁর শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য-র জন্ম শতবর্ষে। 'উত্তর বঙ্গের লোকনাট্য ও সমাজ জীবন' নাট্য বিষয়ে উত্তর বঙ্গের প্রথম গ্রন্থ। এছাড়াও তাঁর আছে 'সীমান্ত মুছে যায়', কাব্যগ্রন্থ ( নাম মনে পড়ছে না ) এবং সর্বোপরি 'পালিয়া লোককথা'।
তাঁর শিক্ষক ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য-র জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে অনেকগুলি অনুষ্ঠান করেছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারভাঙ্গা বিল্ডিংয়ে। সমরেশ মজুমদার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, পিনাকেশ সরকার, প্রদীপ ঘোষ প্রমুখ গুণীজনদের এনেছিলেন কারণ তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র ছিলেন। একবার বীথি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমাকেও আমন্ত্রণ জানান কবিতা পাঠের আসরে।
লোকশিল্পের প্রতি তাঁর আগ্রহ ও খোঁজ ছিল আজীবন। এই প্রসঙ্গে হাওড়া জেলার বহু গ্রামের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল আন্তরিক। 'চিত্রসেনপুর' ইত্যাদি গ্রামে লোকসংস্কৃতির অনুষ্ঠানে বড় লাক্সারি বাসে করে নিয়ে গেছেন আমাদের কলকাতা থেকে, আপ্যায়নের ত্রুটি যাতে না হয় সদা সতর্ক থাকতেন। তাঁর ছোট ছেলের বিয়েতে শীর্ষেন্দুদার সঙ্গে আমাদেরও চোখে চোখে রেখেছেন কোন অনাদর যাতে না হয়।
আমার বাড়ির আড্ডায় শ্রুতি নারায়ণকে ( অভিনেত্রী প্রেমা নারায়ণ পরিবারের সদস্য) কে আগলে রেখেছেন তাঁকে যেন বেশি করে লোক সংগীত গাইতে দেওয়া হয়। নেতাজির জন্মদিনে বিজয় গড়ে তাঁর বাড়ির কাছে 'নিরঞ্জন সদনে' প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রী , বিশিষ্ট বন্ধু , আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের সদস্যদেে উপচে পড়া ভিড়ে এই শ্রুতি এবং তাঁর মেয়ে বৈদেহী যখন শুরু করলেন: 'ভরা থাক্ স্মৃতি সুধায়, হৃদয়ের পাত্রখানি,বিষাদের অশ্রুজলে, অনেকেই আবেগ ধরে রাখতে পারেন নি, দু নয়নে অশ্রুধারা।
একবার আমার বাড়ির ছাদের আড্ডার মাঝপথে হঠাৎ শিশিরবাবু বলছেন ব্যস্ত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়কে কেন বসিয়ে রেখেছি ? এই কথায় শীর্ষেন্দুদার সায় না থাকলেও শিশিরবাবু জানতেন যে বাড়ি ফিরে একটি ক্রিকেট ম্যাচ দেখে রিপোর্ট পাঠানোর কথা। পরে জেনেছিলাম যে ম্যাচ রিপোর্ট করতে কোনও অসুবিধাই হয়নি শীর্ষেন্দুদার কারণ বৃষ্টির কারণে বিলম্বে শুরু হয় খেলা। কিন্তু সেদিন উপস্থিত অনেকেই ভীষণ ক্ষুব্ধ শিশির বাবুর ওপর ,হইনি আমি কারণ শিশিরবাবুুর বরাবরের স্বভাব অন্যের জন্য বলা ও অন্যের হয়ে কিছু করা। শেষবার যখন এলেন আগে চলে যাবেন বলেও বসে আছেন কারণ আমার মেয়ের সম্বন্ধে কিছু বলে খুশি থাকবেন। বললেনও , যতোই লজ্জিত হই। 'নিভা-আনন্দ বিদ্যালয়ে'ও ( বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়ে যে স্কুলে বিনা বেতনে পড়িয়েছেন ড. শুভঙ্কর চক্রবর্তীর অনুরোধে ) সুন্দরভাবে হয়েছে তাঁর স্মরণ সভা। তাঁর প্রাপ্ত সমস্ত সম্মান, পুরষ্কার ,পদক ইত্যাদি এবং প্রকাশিত গ্রন্থ সাজিয়ে , পুষ্পার্ঘ দিয়ে, কাজে ও কথায় মূল্যায়ন করে অবিস্মরণীয় সে স্মরণ কারণ সকলে জানি অন্যের জন্য ভাবার একজন সম্মানীয় মানুষ চিরকালের জন্য বিদায় নিয়েছেন এই শহর থেকে....
*****************************************************************************************



কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন