সনেটগুচ্ছ * গৌরীশঙ্কর দে
কড়ি
আবার রাতের পাখি মেলে দিলো ঘুম,
চোখের নিস্তব্ধ তীরে বেহিসাবি নীড়।
জমাট কান্নার জল চাতক পাখির,
বৃষ্টির অধিক প্রিয় নিবিড় নি:ঝুম।
বৃষ্টি পড়ে ফোঁটা ফোঁটা রক্তাক্ত নিশীথ,
একা একা হেঁটে যায় হিমেল মৌসুম।
পায়ের তলায় ভাঙা ডিমের কুসুম,
কুসুমিত আলস্যে কি ডাকে পরভৃৎ?
নীচে রক্ত উপরেও রক্তাক্ত পৃথিবী—
ও পৃথিবী কবে বল কোল পেতে নিবি?
বিদায়ের পদধ্বনি অতীব নির্জন।
অক্লান্ত ঘড়ির শব্দে একাকী পাগল,
হেঁটে যায় স্বপ্নে তার সঙ্গিনী মরণ,
সঙ্গ নেয় চোখ ভরা যোনি—অশ্রুজল।
বরগা
প্রৌঢ়ত্বে আচ্ছন্ন পুরুষের স্ত্রীকে বহু
নিকটের বলে বোধ হয়। এ বিজ্ঞান
শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্যের, অবসন্ন লহু,
মাঘ মাসে মার্জারের রতির আহ্বান।
যৌবন দামাল নৌকা, তার পাড় ভাঙা
কাজ। সে লুণ্ঠন করে চলে মাতৃদুগ্ধ,
তার জন্য একটি নারীর কামরাঙা
শরীরে প্রলুব্ধ হয়, 'যেন' দিলে ক্ষুব্ধ
হয় কবিতার বহুতল। 'মতো' শব্দে
ভস্ম মেখে পড়ে থাকে শব্দের জাঙাল,
পেরিয়ে প্রান্তর, খুঁজে নিতে সে প্রারব্ধে
তালগাছে বসে থাকে বাবুই কাঙাল।
বাসা বাঁধে রাধিকাকে নিয়ে ঘনঘোর,
নূপুরের এই ধ্বনি শান্ত মনোহর।
খিলান
মেশিনের পাশে শুয়ে রয়েছে মেশিন ।
মেশিনে মেশিনে রোদ-বৃষ্টি বিনিময়
চলে কিছুক্ষণ, পরে প্রচন্ড প্রণয়
জন্ম দেয় এইদেশে প্রজন্ম নবীন ।
এখানে নরম থাবা বিছিয়েছে চীন।
'মুসলিম ঘৃণা করি' আজো লেখা হয়,
যন্ত্রের নিয়মে চলে এদেশে সময়,
রোদেলা কান্নায় ভেজে মুড়িমাখা দিন।
এখানে সনেট ভালো চলে কবিতায়,
কুকুর-বেড়াল নিয়ে মেশিনেরা চড়ে।
শনি-রবি ফূর্তি আর সোম-শুক্রে কাজ,
সেলফোনে বাবা-মাকে বেশ দেখা যায়,
কেবল যায়না দেখা ভয়ের বিবরে,
করুণ শ্বাসের শব্দ, সাপের আওয়াজ।
গম্বুজ
এলো কী কান্তার ভেঙে নতুন কবিতা,
আন্দালুসিয়ায় বসে আমি তা লিখেছি
অন্তিম শব্দের জন্মদাতা আদি পিতা
আমি শব্দে শব্দ ঠুকে অগ্নি জ্বালিয়েছি।
এলিজাবেথের যুগ থেকে শুরু করে
এখনো চলেছি লিখে সনেট কত যে!
আমার বনেটে তাই পড়ে না নজরে
বসেছে সুপর্ণাদুটি প্রেমের সহজে।
ঘরে ফাঁদ পাতা আছে মরেছে ইঁদুর।
গন্ধে তার সন্ত বসে আছে মাদারির,
আশ্চর্য খেলায় মেতে করি ঘুরঘুর,
মৃত্যুর সেতারে তুলি মীড়ের আবির,
কী ফিনকি দিয়ে রক্ত দোলপূর্ণিমায়,
সনেট সমীপে ছোটে মুগ্ধ কবিতা




কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন