বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৩

গুচ্ছ কবিতা * দীপ্তিশিখা দাস



কবিতাগুচ্ছ * দীপ্তিশিখা দাস

স্বপ্নেরা ঘুড়ি হয়ে যায়








ঠিক যেন রঙিন ছবির চকচকে রঙের ভেতর দৃষ্টি নিবদ্ধ সকলের ---- 

রহস্যময় একধরণের ভাঙা প্রাসাদে সৃষ্টি হয় জন্ম-বিতর্ক ;

অকারণ ঠেলাঠেলিতে পড়ে আছে সব কিছু বহুদিন যাবত ; 

কেউ কোথাও ছিল না? তবে আর কার জন্যে মরে যেতে হয় দুহাত বাড়িয়ে ---


কেউ আছে কি, যার চোখের কোণে স্বপ্নেরা 

     ঘুড়ি হয়ে যায় আজ !


অখণ্ড মুগ্ধ কথাদের  কাহিনী ও আক্ষেপ 

   কখনো মানে না হার 

যেন শেষটুকু ধরে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা ;


বাজে কত নুপুরের গান..!

তবুও কি শেষ হয় চোখের জলে দেবতার পুজো ?

পোড়ো মন্দীরের দুয়ারে অনেক বসন্তবিলাপ শুনি।

পলাশের নেশায় 

সে আর ছড়ায় না সুগন্ধ 

                        আজ।



বাঁচার জন্যেই মৃত্যু আসে

বাঁচার জন্যেই মৃত্যু আসে ।

এই আবেগ তো প্রাসাদবাসী নয়! 

কত বিস্ময় ছিঁড়ে ছুটে চলে ধাবমান স্রোত 

ছুঁয়েছ কি তার গতি ?


অনেক বসন্ত ক্ষয় হয় 

ডাল ভেঙে উড়ে যায় 

পলাশের সব রঙ যেন ;


ফিরে আসে সকল উষ্ণতা 

   ক্ষমতাহীন শূন্যতায় ....!

রক্তাক্ত হয় আরো লাল মাটি। 


হাড়পাজরের ভাজে কোথায় কোন বিন্দুতে মিশে যায় তার পায়ের 

                          চিহ্ন? 

ছুটে যায় ফাগুণরথ কোন অভয়ারণ্যে .... !


আমার শরীর ঘেষে কেবলই বিদ্যুৎ চমক।












ছলনাদের ডাকে

রোদ চড়ে 

আগুনপথ পেরোয় গলিপথ..... 

বিছানায় চাদরে অনেক উষ্ণতা বাড়ে ----- কী অসহ্য নিগূঢ় ছোঁয়া যে! 

পচা মাংসের ঘ্রাণ চারদিকে। ডাস্টবিনের পাশে ও পাড়ার কুকুর 

এ পাড়ায় আসে ----

গলে গল্প 

গলে বসন্ত 

শিমুল পলাশেরা কত না আবীর মাখে ; 

মাখে, আরো কত কিছুই না! 


রক্ত জমাট বাঁধে ।রাস্তায় ঝলসায় পিচ। কত দাগ স্পর্শকাতর হয়! 

কত ক্ষত...... কত ঘরছাড়া ছায়ামানব 

পথে পথে তাদেরই ছায়ারা কাঁদে । কত কথা যে! 

ছলনারাও সন্ধা অবধি ডাকে। কারা যেন ছিঁড়ে ফেলছে নিজেই নিজেদের দেহ। 

তারা কি সব পরাজিত সৈনিক ---- না কি কল্পশিকারী সব? 

রাত বাড়েনি তাকে নিয়ে 

এ যেন জোরজুলুমের হাসি কান্না! 

হাসি কি বিক্রি হয়? 

রক্তে ঝাঁঝালো রক্তের বিষ ------ এসো, আজ তোমাকে এত্ত পলাশ দেব :

পাহাড়ী হৃদয়ের কান্না শোনো, গর্জে নৈশ অভিজানের পর নিঃশব্দে সব ----- 

চুপ কর, হে মহাশূন্যতা ---



ঝলসে যাচ্ছে চারদিক

ঝলসে যাচ্ছে চারদিক। 

রাত ক্রমশঃ ভোরের সঙ্গে মিশতে মিশতে প্রখরতা বাড়ায়। 

তার অর্ধেক ভ্রমণ শেষ হলো? 

চলো , তবে ফিরি স্বপ্নগভীরে ----

সে চলে গেল রুখু পথ ধরে বুকের পাঁজর বেয়ে..... অসংখ্য জোনাকীদের 

                 খেলা 

পড়ে আছে কার চিবুকের রঙ! 

সে কি ফিরবে কখনো ভেজাতে চাঁদের ঠোট 

        এই পূর্ণিমায় ?

নীরবেই ভাসতে থাকে নৌকো এই বসন্তবেলায়। 

ওদিকে নদী, মাঝিও দাঁড়িয়ে , বিষণ্ণ আবীরে রেঙেছে আজকের সব লাল ----- কতটা করুণ !

কতটা করুণ সে চাহুনি ----

আগলে দাঁড়িয়ে আছি নিশ্চুপ।



গুনগুন করে সকল গোপনীয়তা

যদি সে এসেই পড়ে নিভৃতে, ডাকেই ফাগুন 

তবে তো পলাশগুলি জাপটে ধরে শোনাবোই 

         বসন্তবিলাপ ----

আমি কি কারো ডেক্সে কাগজের ফুল 

না কি উড়তে থাকবো পাখির ডানায় --- ঝরা মরসুমে! 

গুনগুন করে সকল গোপনীয়তা। 


আমাকে জাগাও, ও পাহাড়ী হাওয়া ----জুড়োই এই মন। 

চলে গেল যে কোন পথে আমার পরানভোমরা 

    বিরহী বাউল চোখে ----

তাকে দেখেছ কি 

কোন নদীর ঘাটে বনজোস্নায় ভিজেছে 

             শরীর! 

তাকে তো ফিরতেই হবে 

          এই শুষ্কতায় 

ভেজাতে এই মাটির ঠোঁট;

ডেকে ওঠে বসন্ত কোকিল 

আরো অন্য সুরে,  বাজে বাঁশি, ঝরে চাঁদেদের অসংখ্য কথারা ......

সে কি বোঝে না 

কতটা কঠিন হলো আজ ঝরনার জল --- কিসের প্রতিক্ষায়  ?

সময় মূর্ছা যায়। তার ধুলো পায়ের পাতায় ঝরে 

       আমার চোখের মেঘ ;


সেই তুমি আজ কত দূরে 

সরিয়ে নিয়েছ মুখ ----

বনে বনে পলাশ মাখে একলা বসন্ত ;


তুমিও এসো সেই তৃষ্ণায় 

     খানিকটা রঙিন হই ----


***********************************************************************************************



দীপ্তিশিখা দাস 

 পুরুলিয়া থেকে লিখছেন " আমি অসমাপ্তিকা "দীপ্তিশিখা প্রথম কবিতার বই  প্রথম কবিতার বইতেই প্রতিশ্রুতির স্বাক্ষর রেখেছেন দীপ্তিশিখা  বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় নিয়মিত লিখে থাকেন 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন