কবিতাগুচ্ছ * দীপ্তিশিখা দাস
স্বপ্নেরা ঘুড়ি হয়ে যায়
ঠিক যেন রঙিন ছবির চকচকে রঙের ভেতর দৃষ্টি নিবদ্ধ সকলের ----
রহস্যময় একধরণের ভাঙা প্রাসাদে সৃষ্টি হয় জন্ম-বিতর্ক ;
অকারণ ঠেলাঠেলিতে পড়ে আছে সব কিছু বহুদিন যাবত ;
কেউ কোথাও ছিল না? তবে আর কার জন্যে মরে যেতে হয় দুহাত বাড়িয়ে ---
কেউ আছে কি, যার চোখের কোণে স্বপ্নেরা
ঘুড়ি হয়ে যায় আজ !
অখণ্ড মুগ্ধ কথাদের কাহিনী ও আক্ষেপ
কখনো মানে না হার
যেন শেষটুকু ধরে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা ;
বাজে কত নুপুরের গান..!
তবুও কি শেষ হয় চোখের জলে দেবতার পুজো ?
পোড়ো মন্দীরের দুয়ারে অনেক বসন্তবিলাপ শুনি।
পলাশের নেশায়
সে আর ছড়ায় না সুগন্ধ
আজ।
বাঁচার জন্যেই মৃত্যু আসে
বাঁচার জন্যেই মৃত্যু আসে ।
এই আবেগ তো প্রাসাদবাসী নয়!
কত বিস্ময় ছিঁড়ে ছুটে চলে ধাবমান স্রোত
ছুঁয়েছ কি তার গতি ?
অনেক বসন্ত ক্ষয় হয়
ডাল ভেঙে উড়ে যায়
পলাশের সব রঙ যেন ;
ফিরে আসে সকল উষ্ণতা
ক্ষমতাহীন শূন্যতায় ....!
রক্তাক্ত হয় আরো লাল মাটি।
হাড়পাজরের ভাজে কোথায় কোন বিন্দুতে মিশে যায় তার পায়ের
চিহ্ন?
ছুটে যায় ফাগুণরথ কোন অভয়ারণ্যে .... !
আমার শরীর ঘেষে কেবলই বিদ্যুৎ চমক।
ছলনাদের ডাকে
রোদ চড়ে
আগুনপথ পেরোয় গলিপথ.....
বিছানায় চাদরে অনেক উষ্ণতা বাড়ে ----- কী অসহ্য নিগূঢ় ছোঁয়া যে!
পচা মাংসের ঘ্রাণ চারদিকে। ডাস্টবিনের পাশে ও পাড়ার কুকুর
এ পাড়ায় আসে ----
গলে গল্প
গলে বসন্ত
শিমুল পলাশেরা কত না আবীর মাখে ;
মাখে, আরো কত কিছুই না!
রক্ত জমাট বাঁধে ।রাস্তায় ঝলসায় পিচ। কত দাগ স্পর্শকাতর হয়!
কত ক্ষত...... কত ঘরছাড়া ছায়ামানব
পথে পথে তাদেরই ছায়ারা কাঁদে । কত কথা যে!
ছলনারাও সন্ধা অবধি ডাকে। কারা যেন ছিঁড়ে ফেলছে নিজেই নিজেদের দেহ।
তারা কি সব পরাজিত সৈনিক ---- না কি কল্পশিকারী সব?
রাত বাড়েনি তাকে নিয়ে
এ যেন জোরজুলুমের হাসি কান্না!
হাসি কি বিক্রি হয়?
রক্তে ঝাঁঝালো রক্তের বিষ ------ এসো, আজ তোমাকে এত্ত পলাশ দেব :
পাহাড়ী হৃদয়ের কান্না শোনো, গর্জে নৈশ অভিজানের পর নিঃশব্দে সব -----
চুপ কর, হে মহাশূন্যতা ---
ঝলসে যাচ্ছে চারদিক
ঝলসে যাচ্ছে চারদিক।
রাত ক্রমশঃ ভোরের সঙ্গে মিশতে মিশতে প্রখরতা বাড়ায়।
তার অর্ধেক ভ্রমণ শেষ হলো?
চলো , তবে ফিরি স্বপ্নগভীরে ----
সে চলে গেল রুখু পথ ধরে বুকের পাঁজর বেয়ে..... অসংখ্য জোনাকীদের
খেলা
পড়ে আছে কার চিবুকের রঙ!
সে কি ফিরবে কখনো ভেজাতে চাঁদের ঠোট
এই পূর্ণিমায় ?
নীরবেই ভাসতে থাকে নৌকো এই বসন্তবেলায়।
ওদিকে নদী, মাঝিও দাঁড়িয়ে , বিষণ্ণ আবীরে রেঙেছে আজকের সব লাল ----- কতটা করুণ !
কতটা করুণ সে চাহুনি ----
আগলে দাঁড়িয়ে আছি নিশ্চুপ।
গুনগুন করে সকল গোপনীয়তা
যদি সে এসেই পড়ে নিভৃতে, ডাকেই ফাগুন
তবে তো পলাশগুলি জাপটে ধরে শোনাবোই
বসন্তবিলাপ ----
আমি কি কারো ডেক্সে কাগজের ফুল
না কি উড়তে থাকবো পাখির ডানায় --- ঝরা মরসুমে!
গুনগুন করে সকল গোপনীয়তা।
আমাকে জাগাও, ও পাহাড়ী হাওয়া ----জুড়োই এই মন।
চলে গেল যে কোন পথে আমার পরানভোমরা
বিরহী বাউল চোখে ----
তাকে দেখেছ কি
কোন নদীর ঘাটে বনজোস্নায় ভিজেছে
শরীর!
তাকে তো ফিরতেই হবে
এই শুষ্কতায়
ভেজাতে এই মাটির ঠোঁট;
ডেকে ওঠে বসন্ত কোকিল
আরো অন্য সুরে, বাজে বাঁশি, ঝরে চাঁদেদের অসংখ্য কথারা ......
সে কি বোঝে না
কতটা কঠিন হলো আজ ঝরনার জল --- কিসের প্রতিক্ষায় ?
সময় মূর্ছা যায়। তার ধুলো পায়ের পাতায় ঝরে
আমার চোখের মেঘ ;
সেই তুমি আজ কত দূরে
সরিয়ে নিয়েছ মুখ ----
বনে বনে পলাশ মাখে একলা বসন্ত ;
তুমিও এসো সেই তৃষ্ণায়
খানিকটা রঙিন হই ----
***********************************************************************************************


কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন