কবিতাগুচ্ছ * ছোটন গুপ্ত
বৃষ্টি বিকেলে
অঝোর বৃষ্টি নামলে বিকেল মেঘে
গাছের ছায়ায় অপেক্ষমান জেগে
দু হাত মেলে গান গাওয়া জলঝড়
প্লাবন বুকে তোলপাড়ে তৎপর
বৃষ্টি ভিজে দাঁড়াও নিরুদ্বেগে ।
সবুজ গাছের অবুঝপনার কাল
হৃদয় জুড়ে জোছনা টালমাটাল
চাহিদারা আজও অমলিন
না শোধ করা বৃষ্টি বিকেল ঋণ
বন্ধ খামে সাজানো আবডাল ।
ডুবছে ছায়া মায়ার ভুবন থেকে
তস্য গলি রাস্তা এঁকেবেঁকে
জলকাদাতে ভিজছে নরম মাটি
বৃষ্টি ভেজায় সোহাগ পরিপাটি
ছুট্টে আসি জলের আদর মেখে ।
গাছের গায়ে গাছের ছায়ে জলে
বৃষ্টি ভিজে হাসছে গাছের দলে
রূপ সোহাগে গাছ লতা বাসভূমি
মেঘ ভেলাদের আকাশটা মৌসুমী
গাছ পাখিদের খুশিরা পথ ভোলে ।
ফুটপাথের ছড়া
একটা উঠোন একখানা ঘর
পুব জানলায় টুকরো আলো
ভোরবেলাতে স্বপ্ন হাতে
ঘুম ভাঙিয়ে বাসলো ভালো ।
জ্যোৎস্না মেখে সমস্ত রাত
ছড়িয়ে দেয় আস্থা ঘন
ডাক দিয়ে যায় একটা নদী
পাহাড় ঝর্ণা গভীর বনও ।
মাথার উপর নগ্ন আকাশ
ফুটপাথে যার রাতের আবাস
একটু ভালোবাসার আশা
ডাক দিয়ে যায় ঝিম প্রতিভাস ।
বিগত শীত ভয় ছিল খুব
রোদ না আসা হিম কুয়াশায়
পায়নি তেমন পেট ভরাবার
গরম ভাতের উষ্ণ আশা ।
কান্না নিষেধ এই শিশুদের
সভ্য সমাজ দেখালে রাগ
বাঁচতে চাওয়ার সাধ্যি কঠিন
অল্প খেয়েও চুপ করা যাক ।
আর যা কিছু আর যা বলার
হিজিবিজির আখর টানা
সুসভ্য এক স্বদেশ আমার
মুখ খুললেই সেপাই হানা ।
নিখোঁজ কালে
কতদিন হয়ে গেল বয়ে গেল বেলা
কবিতারা ঘুমঘরে কলমে জড়তা
বাজারে বিপদ বাড়ে রোজ মেলা খেলা
ঘুম ভাঙা ভোরবেলা চেনা নীরবতা ।
কে কোথায় চলে যায় কে কোথায় একা
ঘুমকালে জেগে থাকে স্তব্ধতা ভারি
কেউ যদি পেয়ে থাকো কবিতার দেখা
বলে দিও বসে আছি অপেক্ষা তারই ।
স্ববিরোধী বিরতির ছেঁড়া মায়াজালে
কবিতা লিখতে মানা চুপচাপ থাকি
হিজিবিজি আখরের কুটনো খেয়ালে
চেনা মানবীর ছবি শেষ পাতে আঁকি ।
স্বপ্ন জাগিয়ে দিলে কুলকুল ঘেমে
আকাশে দু'চোখ মেলি নিথর বাতাসে
রক্তচাপের গতি কতখানি নেমে
দিয়ে যাবে আশাবাদ মর্গের ঘাসে ।
ইদানিং রাত দিন ভয়ে কেঁপে উঠি
কবিতারা ছেড়ে গেলে শূন্যের সাথে
ঘুম ভেঙে চেয়ে দেখি খালি হাত মুঠি
ফিরে যাওয়া শব্দের খোঁজ নেই রাতে ।
ভয় বিষয়ক
ভয় পেয়ে যাই যখন দেখি ব্যস্ত সবাই
ভয় পেয়ে যাই যখন শুনি বকছে বোবাই
ভয় পেলে তো ভয়ের কাছেই জবাবদিহি
ভয় পেয়েছি ডাকলে ঘোড়াও চিঁহি চিঁহি
ভয় পেয়ে যে লোকটা রাতে তালি বাজায়
ভয় পেয়েছে সেই লোক কাল ধমকানি খায়
ভয়, কারা যে খড়ের গাদায় আগুন জ্বেলে
ভয় পাও তো, সামনে পাথর হোঁচট খেলে
ভয় বাড়ে যেই মানুষ বেহুঁশ মানুষ দেখে
ভয়াল মানুষ নাড়িয়ে মাথা হেঁ হেঁ শেখে
ভয় পেলে কেউ জঙ্গলে যায়, সাগরে কেউ
ভয় পেয়েছি দূরের থেকে মাপছি সে ঢেউ
ভয় পেয়েছো চিড়িয়াখানায় বাঘ দেখে কে
ভয় পেয়ে যায় ঘাতক নিজের ছায়া দেখে
ভয় পাওয়া লোক সামলে রেখো আত্মা নিজের
ভয় বাড়বে ছাড়লে খাঁচা, না পেলে টের ।
নিঃস্ব রাতের কবিতা
বাতাস এখন অভিমানী ছড়ায় না তার ডানা,
এই ফাগুনের পলাশ বনে রঙ ছড়ানো মানা।
বাউল কবি বাতাস বেয়ে গাইছে রোদের গান,
একখানা মেঘ উড়তে এলেই আকাশ ম্রীয়মান।
পলাশ রাধাচূড়ার বসত লিখছে ভুলে যা তা–
হৃদয় যতোই দিক না দোলা চুপ বসন্তগাথা।
মন বাউলের সুরের টানে কেউ যাবে জঙ্গলে
বাউন্ডুলে একলা পথিক, মিশবে না দঙ্গলে।
দিন বয়ে যায় রোদ উঠোনে ছায়া ঘনায় ধীরে,
ফাল্গুনে পূর্ণিমার রাতে পথিক চাইবে ফিরে।
সবহারা নিঃস্বতার কথা ঘুমোয় কবির খাতা,
লিখতে মানা হঠাৎ হানার দস্যুতা ফাঁদ পাতা।।
***********************************************************************************************************
পোশাকি নাম প্রবীর দাশগুপ্ত। কবিতা লেখেন ভালোবেসে। মানুষ সময় সমাজভাবনা তার লেখার উপজীব্য। কবিতায় বার্তা থাকে একসাথে হাতে হাত বেঁধে পথ চলার। বিশুদ্ধ ভালোবাসা প্রত্যাশা ছড়িয়ে যায় কলমে। সুচেতনার ভরসায় কবিতা কথা বলুক, এটুকুই চাহিদা। এ পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ পাঁচটি। 'আগুন বৃষ্টি ভালোবাসা', 'ফিনিক্স আয়', 'দহনকালের কবিতা' 'নীরবতার শব্দমালা' এবং 'অশোক লিপি'। ষষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ 'ছেঁড়া স্বপ্ন অথবা' যন্ত্রস্থ। পেশায় উচ্চমাধ্যমিক স্কুল শিক্ষক। জন্ম- ০৬/১২/৬৪।




কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন