বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৩

অণুগল্প * প্রদীপ দে



প্রদীপ দে 

" লড়াই লড়াই লড়াই চাই "


--  দ্যাখো, একবার চোখ তুলে দেখো পাশের বাড়ির তরুণ দাদাকে। কি পরিশ্রমী আর কি চাকরি! আহাঃ মাহিনা কত পায় জানো?

--  না জানিনা আমার জেনে কি লাভ? তা তোমার ওই দাদার উপর এত পিরিত জাগালো কেন হে?

--  তা জাগবে না? ওতো ভালো পূরুষ? কি হ্যান্ডসাম আর মাহিনাটা দেখো? তোমার মত অকর্মক নয়তো?

--  ওহঃ তাই বুঝি? তাহলে ওর গিন্নিকেও দ্যাখো।যেমন রূপ তার তেমনই গুন। আর বিদেশী ফার্মে চাকরি? মন জুড়িয়ে যায়! শাড়ি ভর্তি টাকা। আর ওর পাশে নিজেকে একবার ভাল করে দেখো ……

--  ওহঃ তোমারো অনন্যা কে চোখে লেগে গেছে?

একটা ঢলানি ! চাকরি করে, না ছাই করে?

বেশ্যাবৃত্তি করে - বুঝেছো। ওহঃ তুমিও ওর ফিগার দেখে নিয়েছো! তাহলে তো হয়েই গেলো। যাও টাকা নিয়ে গিয়ে ঢালো!

--  আর তোমার তরুণ দাদার কি খবরাখবর। কেবলই দেখি তোমায় ঝাড়ি মারে? লটকে যাও। আর কি?

--  অসভ্য জানোয়ার! তুমি ওর পায়ের নখের যুগ্যিও নও, বুঝলে?

--  অনন্যা ও অসামান্যা বুঝলে? 

--  তোমার স্বভাবই শুধু নিন্দা করা। বুঝলে?

তরুণ একেবারে তরুণ ই!  আজ ও হিরো!

--  তা হিরো যদি পেয়েই গেছো তাহলে এই বুড়ো জিরোর পাশে এসেছো কেন?

--  হ্যাঁ হ্যাঁ সব জানি আমাকে ছিবড়ে বানিয়ে এবার কুঁড়ি খুঁজতে গেছো -আসলে ওই অনন্যাকে তরুণদাও ছেড়ে দিয়েছে!

--  তা তোমার তরুণ ই বা কম কিসে?

--  ওর মন অনেক উদার - বউকে সন্দেহ বাতিক করে না!

--  আমিই বা কম কিসে? আমি ও দেদার! তোমাকে খেলতে ছেড়ে দিয়েছি।

--  কিন্তু আমি তোমায় ওতো সহজে ওই গাভীর পাল্লায় পড়তে দেবো না বুঝলে?

--  বাঃ বাঃ বেশ কথা!

ঝগড়া অল্প থেকে ভারী হচ্ছে। পরিবেশ গরম হচ্ছে। উত্তেজনার পারদ সীমারেখা অতিক্রম করে ফেলেছে। আমরা দুজনেই লড়াকু। মিউচুয়াল স্থিতিস্থাপকতা রক্ষা করার নিমিত্তেই এই বিয়েশাদি / বরবাদি মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আর কেউই কোন নিয়ম মানবো না, এক ইঞ্ছি জমিও কেউ ছাড়তে রাজী নই। তাই শান্তির কাঙাল না হয়ে - লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করেই বাঁচতে চাই - এই পদ্ধতিতেই এগিয়ে চলেছি।   

বাইরে পাড়ার বন্ধুরা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে উঁকিঝুঁকি মারছে। আমাকে দেখে চেঁচিয়ে উঠলো, 

--   কি দাদা নারী নির্যাতন চালাচ্ছেন ? জেনে রাখুন এখন নারীদের যুগ আর ক্যালেন্ডারের এই আটই মার্চ হচ্ছে, বিশ্ব নারী দিবস!

আমার বোঝাতেই সাহসে এল না যে আমি আমার বউ ছাড়া অন্য সকল নারীদের কত কত ভালোবাসি!


***********************************************************************************************************



প্রদীপ দে 

লেখক  নেশায়। পেশা ছিল হিসেবনিকেশ।  বয়স -৬২ । কলকাতা নিবাসী। বিবাহিত।
নিজের লেখা কয়েকটি বই আছে।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন