কবিতাগুচ্ছ * সুদীপ দাস
ব্রেইল
বিক্ষিপ্ত ঘুমের মধ্যে একটা ছাদহীন বাড়ি এসে হাজির
যার শানের মেঝেতে ডোরাকাটা ছায়ার ভেতর ভাসছে
ছোটো ছোটো ভালোলাগার প্রজাপতি এফেক্ট !
বাঁচার তাৎক্ষণিক উপায় চোখের গ্রন্থিগুলো ঢিলে রাখা
আর দীনতার সারল্যে মোড়া অন্তরের কোলাহল
বাষ্প করে মিশতে দেওয়া শ্বাসপ্রশ্বাসে
ব্রেইল অক্ষরে লেখা এই ধারণার বশে
শতাব্দীর ঘটনাক্রম থেকে লকগেট তুলে দিতেই
জলস্রোত এগিয়ে যায় নখ বের করা পায়ের পাতা ভেজাতে
মার্জিনের ভিতর বাহির
কোনো পর্দাই উড়ছে না আপন খেয়ালে। কখনও একটা বিড়াল আচমকা লাফিয়ে হৃদপিন্ডের সামনে। কখনও নির্জন গলিতে হঠাৎ মুখোমুখি ষাঁড় ও কুকুর। তারপরই একটা সমবেত উল্লাসের হুইসিল এবং সুড়সুড় করে সবাই ঢুকে পড়ছে মাইন-পোঁতা সুন্দর বাগানে।
কম উত্তাপে ভাপা মাংসের ঘ্রাণ। ব্যথা, ক্রোধ, রক্ত, ঘাম, শুকনো পাতা, ছেঁড়া কাগজ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে লাল মাটিতে, কালো রাস্তায়। মাঝে মাঝে সদ্যরাতে খুটখাট শব্দ। প্রবেশের। প্রস্থানের। কারা যেন মোমবাতি হাতে শব্দহীন চলাফেরা করে।
ঘর থেকে, অন্ধগলি থেকে, দেখা যায় সমস্ত ছাদে সারি সারি দুর্বোধ্য পতাকা টাঙানো। পতপত করে উড়ছে আর ছড়িয়ে যাচ্ছে বিপুল তরঙ্গ।
শূন্য তবু হাউসফুল
চেয়ারের সংখ্যাল্পতা জেনে সবাই জীবনের দখল করা জায়গায় শক্ত হয়ে বসে। হাউসফুল। সিট পায়নি যে কয়েকজন তারা বরফে, নুনে, বালিতে, কাদায় শুয়ে শুয়ে শুনতে পায় হৃদয়ের উদ্দেশ্যহীন পথে শুনশান হাওয়ার মাতব্বরি। চোখে আয়না বসানোর ডাক। নদীতে ঘোলা অন্ধকার।
বিস্তীর্ণ প্রান্তরে একটা ভাঙা হুইলচেয়ার আর একটা শূন্য প্যারাম্বুলেটার। পৃথিবীর ইচ্ছাহীন চাউনির সামনে দিশাহারা।
মুহূর্তের কুহু
ভিতরে উদ্বৃত্ত নেই, তবু নিজের ঘুমন্ত শরীরে চাও জলের আবরণ !
জেগে উঠলেই কয়েকজন নাকচবাদী বুকের
হাড়মাংসের নিচটা মুচড়ে ধরে
বন্ধ দরজায় কড়া নাড়ছে অতৃপ্ত আগন্তুক
ছাড়ছে খোলশ একে একে - বৈরাগীর, লম্পটের, সংসারীর।
তারপরই শিরদাঁড়ায় সেই ফিসফাস সটোরি
- দেখো - শুধু দেখে যাও - ঈশ্বরের মতো
এক ডাল থেকে অন্য ডালে গিয়ে বসো
দেখো উড়ে যাচ্ছে বিষমাখা আদি তিরের অসংখ্য সন্তান।
বিদ্ধ করছে ব্যর্থতার অট্টহাসিকেন্দ্রে
ওইখানে উন্মুক্ত বুক পিঠ নিয়ে হাঁটো, দাঁড়াও, হাঁটো।
******************************************************************************************
শুরুতে চিত্রশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ। পরে সরে আসেন কবিতার জগতে। প্রথম কবিতা প্রকাশ পেয়েছিল নয়ের দশকে। প্রকাশিত কবিতার বই ‘তোমাকেই প্রস্তাব দেব”, নৈঃশব্দ্যের পাসওয়ার্ড”, ‘অগাধ জলে খড়কুটো’। ‘নীললোহিত’ পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত।


অসামান্য লেখা।
উত্তরমুছুন