রবিবার, ১২ জুন, ২০২২

মোহাম্মদ হোসাইন



মোহাম্মদ হোসাইন / দু'টি কবিতা 


রাত্রি ও ঘুমের গল্প


ঘুম না এলে প্রায়ই ঘুমের সাথেই আড়ি আড়ি খেলি 

ঘুম এদিকে যায় তো আমি ওদিকে 

একজন আরেকজনকে ছুঁতে চাইলে বাউতি দিয়ে যাই... 

তখন কেউ কাউকে ধরতে পারিনা... রাত্রি খিলখিল হাসে, 

হইহই হাত তালি দেয়, সিঁটি বাজায়...

আমি ও রাত্রি তখন বেশ ঘনিষ্ঠ হই...ম্যাচিউরিটি খেলি...!

কোনো কোনো দিন অন্ধকার ঘরে পায়চারি করি, 

বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখি দূরের আকাশ...বুঝতে চেষ্টা করি 

পৃথিবী থেকে দেখা আকাশ আর আকাশ থেকে দেখা 

পৃথিবীর রূপ কেমন হয়...! 


গাছপালাগুলোর ভাষা তখন বেশ নিবিড় 

কিছু কিছু গাছপালা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে, 

তাদের মায়েদের পাখনার নীচে...কিছু কিছু আবার উড়নচণ্ডী, 

বাবরি দুলিয়ে গান করে...দেশের গান

মেঘেরা, তারারাও তখন অসাধারণ সঙ্গতকার...! 


শেষ রাতে মা ঘুম থেকে জেগে ওঠে। 

ফজরের নামাজ শেষে আমাকে বুকে টেনে নেয়, 

আদর করে চুলে বিলি কেটে দেয়...

আমি তখন ঘুমঘোর এঁটেলের দলা...অসম্ভব নেশাতুর নাদান...!


বিলি কেটে দিতে দিতে... পাখির কলরব শুনতে শুনতে 

কখন যে মা আমার অরুণোদয় আর ঝিরিঝিরি হাওয়ার সাথে 

মিশে যায়...!











১৪২৯, বঙ্গাব্দ


আমি কী চাই তোমার কাছে

কী চেয়েছি তোমার কাছে

এই জানতে চাইছ!?


শুধু তো এইটুকু চেয়েছি যে, তুমি আমার পাশে পাশে থাকো, 

পাশাপাশি হাঁটো

কিংবা, প্রয়োজন হলে আমার আঙুলে আঙুল রেখে, 

শক্ত করে একটু ধরো

... এই তো...?


রাতে ঘুম না এলে, আমার কপালে আলতো একটু হাত দাও, চুমু খাও

চুলে একটু বিলি কেটে দাও...

কখনো এর চে' বেশি কিছু চেয়েছি বলো!?


আর, কী চাই, মাঝেমধ্যে একটু পিঠ চুলকে দাও

ঠোঁটের কাছে তোমার নরম, উষ্ণ আর্দ্র ঠোঁট এনে

একটু আদর করো... আর, তোমার অবাক করা চুলে একটু নাক ঘষে 

দিই কিংবা খুব জোরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে তোমাকে আমূল ঝাপটে 

ধরি, মোমের মতো গলে যাই...!?

এর চে' বেশি কিছু কি চেয়েছি আমি? না ছিল কোনো দিন...!?


ভোরবেলা যখন মোরগ ডাকে, আর আস্তে আস্তে ফর্সা হয়ে আসে 

চারদিক, তখন তুমি আমার চোখে নরম রোদের মতো ডাক দাও, 

কানের কাছে এসে দিনের শুরুতে একরাশ মুগ্ধতা ঢেলে বলো তুমি 

আমার, শুধু আমার...! অথবা, বিকেলে পাতাঝরার শব্দে কেঁপে কেঁপে 

ওঠে, জল তরঙ্গের মূর্ছনা এনে, পেছনে ঝাঁপটে ধরে বলো...এত দেরি 

হলো যে...!


ধরো, একদিন আমার খুব রাগ হয়েছে, কিংবা খুব অভিমান

এমনও হতে পারে, আমার মন ভাল নেই

কেউ আমাকে খুব অপমান করেছে, অথবা হারিয়ে ফেলেছি মূল্যবান 

কিছু... তুমি তখন আমাকে বুঝতে চেষ্টা করো, নীরবে খুব কায়দা করে 

কাছে এসে বসো, হাতটা ধরো, অনেক নির্ভরতা নিয়ে, অনেক মমতার 

সাথে ভেতরের ক্ষতের মাঝে একটু ভেজা তুলো দিয়ে, 

নরম জর্জেটের আবেশ ছড়িয়ে মরমের স্পর্শ দিলে... 

দিতে দিতে আমার চোখ জড়িয়ে এলো... আর আমি 

মুগ্ধ ছানার মতো সুরঙ্গম মৃদঙ্গের মতো বসনহীন 

ঘুমিয়ে পড়লাম...! আহা...?!


যদি গা পুড়ে যায় কখনো, লাল টকটকে হয়ে জ্বলতে থাকে দু'চোখ

যদি পৃথিবী উলটপালট করে অসুখ করে কোনো দিন, 

তুমি তখন অস্থির না হয়ে, দূরে চলে না যেয়ে

আমার পাশে পাশে থাকলে, রাতের বালিশ ভাগ না করে 

দুঃখকে জড়িয়ে নিলে

আর, দু'হাত তুলে মোনাজাত করলে পরমের কাছে...!

চিরদিন এইই তো চেয়েছি আমি, চাই নি..!?


মাকে যেমন খুব জ্বালিয়েছি জীবনে, তোমাকেও ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে 

খুব জ্বালাই, অনিয়ম করি, বকুনি খাই

ইচ্ছে করে অনেক রাত করে বাড়ি ফিরি, 

পাড়ার লোকজনকে হইহই বিরক্ত করি যেমন খুশি তেমন, 

আর তুমি খুব শাপান্ত করো, জলভরা চোখে কষ্ট পাও,

এমনকি তেড়ে আসো একটা কিছু নিয়ে... ভীষণ ভীষণ উদ্বেগাকুল হও...

আমি তখন, মিইয়ে যাই, অতিশয় কাতর আর মুখচোরা আনাড়ি আসামি বনে যাই

যেমন পৃথিবীর সমস্ত প্রেমিক, সমস্ত দুঃখী মানুষ করে থাকে...

 নীরবে...করে যায়...!


আর শুধু চাই, তুমি জিজ্ঞেস করো সারাদিন খেয়েছি কি না

কিছু খেতে চাই কি না...!?

কেননা, স্বাদ করে, আহ্লাদ করে কতদিন... কতদিন... কেউ বলেনি 


বলেনা...বুকুন, আয় খেয়ে যা...!?


***********************************************************************



মোহাম্মদ হোসাইন


প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ

ভালোবাসা নির্বাসনে গেছে (১৯৯৫) * মেঘগুলো পাখিগুলো (২০০১)

অরণ্যে যাবো অস্তিত্বে পাপ (২০০৩) * পালকে প্রসন্ন প্রগতির চাকা (২০০৪)

ভেতরে উদগম ভেতরে বৃষ্টিপাত (২০০৬) * মেঘের মগ্নতায় রেশমি অন্ধকার (২০০৯)

বৃষ্টির গান মায়াবাস্তবতা (২০১২) * রূপপ্রকৃতির বিনম্র চিঠি (২০১৩)

নৈঃশব্দ্যের এস্রাজ (২০১৪) * অন্তিম জাদুর ঘূর্ণন (২০১৫)

বিভাজিত মানুষের মুখ (২০১৫) * অনূদিত রোদের রেহেল (২০১৫)

ভুল হচ্ছে কোথাও ভুল হচ্ছে (২০১৭) * তুমুল বেজে ওঠে অন্ধকার (২০১৯)

হায়ারোগ্লিফিক্স (২০২০) * ছবি ও চেনাগন্ধের মেটাফর (২০২১)

ঈশ্বরের ছায়াচিত্র ( ২০২১).


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন