সোমবার, ১৩ জুন, ২০২২

অনুবাদ কবিতা * সুধাংশুরঞ্জন সাহা

 


কবি সিমাস হিনি-র কবিতা

অনুবাদ : সুধাংশুরঞ্জন সাহা


কবি সিমাস হিনি (Seamus Heaney)-র জন্ম উত্তর আয়ারল্যান্ডে । ১৯৩৯ সালে। তিনি একজন আইরিশ কবি। প্রথম জীবনে ফ্রীলান্স লেখালেখি ও প্রচারের কাজে যুক্ত ছিলেন, পরে অধ্যাপনা । বহু পুরস্কারে সম্মানিত । কবিতার জন্য পেয়েছেন Whit bread book of the year award ১৯৯৬ সালে এবং সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান ১৯৯৫ সালে। তাঁর লেখায় বিশেষভাবে উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং ন্যায়বিচার । তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে-- Death of a Naturalist(1966), Wintering out(1972), The Haw Lantern (1987) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । নোবেল জয়ী এই কবি ২০১৩ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ।


টোপ


আমাদের একটা সাধারণ রূপরেখা দেয়া হল

আর আমরা বললাম, অহং উপমেয়।


অন্তরালে থাকা ঘূর্ণায়মান এক পেন্সিল কেসের ঢাকনা

একটা টোপ, যতক্ষণ না পর্যন্ত  শিশুটি এটা ধরতে পারছে।


প্রকাশ, মুক্তি এবং ফিল্ম জড়ানোর কাটিম কোথাও নেই।

তবু, ক্ষণিকের আভাসই সারা জীবনের কল্পনা হতে পারে।


অজ্ঞতার মাঝে একজন শুটিং তারকার অসহায়তা

সর্বদা তাকে পরিত্যক্ত ও দগ্ধ করে।


ক্ষুদ্র যবনিকা যেভাবে একজন ধনী ব্যক্তিকে অনুরুদ্ধ করে,

সেভাবেই স্খলনের পর স্খলন নিয়ে যায় খাদের কিনারে।


ছুটন্ত জলের উপর নকশা করা জাহাজের মাঝ বরাবর

তারকার শোভিত শিরস্ত্রাণ, সুতরাং বিদায়!


তার মারফত ঘূর্ণিত স্রোতের প্রতিকূলে বাধাশূন্যতা অপ্রত্যাশিত।

বিকল্প এক আলোর খেলনা, বিদায়!



স্মরণীয় পবিত্র স্মৃতিচিহ্ন


হ্রদের জলে প্রস্তুরীভূত বন

বছরের পর বছর

শস্যকণায় মজুত

পুরনো দাঁড় এবং ডাকঘর,

ভূতে অবরুদ্ধ।


মরশুমের নিঃশেষিত প্রাণশক্তি,

অগভীর জলমগ্ন চড়ার কোলে

দেয়ানেয়া

অপরিবর্তনীয় পুণ্যস্নান

যেন বৈঠকখানার ভালোবাসা

পণ রাখার চেষ্টায় হতভম্ব।


ঝুরির মতো লম্বা লম্বা চুনের দণ্ড,

মৃত আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত ধাতব পদার্থ,

কয়লা আর হীরে,

অথবা দগ্ধ উল্কার আচমকা জন্ম...


খুবই সরল

প্রলোভনহীন

নিহিত সেই পবিত্র স্মৃতিচিহ্নের

এক টুকরো মণিরত্ন,

স্কুলের তাকে রাখা রঙিন জইচূর্ণ।









বিস্ময়কর ফল


কবর থেকে তোলা মেয়েটির মাথা যেন একটা

ডিম্বাকার লাউ, আলুপোখারা রঙা ত্বক

আর খেজুর রঙা পাথরের মতো দাঁত।

তার চুল ব্যান্ডেজ দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো

ভেজা ফার্ণ জাতীয় উদ্ভিদ।

কুন্ডলী পাকানো এটার একটা প্রদর্শনী করা হয়েছে।

তার ত্বকের সৌন্দর্য নিয়ে বাতাসের ফিসফিস।

পশুর চর্বির মতো নস্বর সম্পদ :

তার ভাঙা নাক যেন কুচকুচে কালো 

তৃণাচ্ছাদিত মাটির ঢেলা !

তার চোখের কোটর ফাঁকা,

পুরনো ক্রিয়াকলাপের ডোবার মতো।

ডিওডোরাস সিকুলাসের স্বীকারোক্তি,

তার ক্রমাগত নিরুদ্বেগ পছন্দের মধ্যে আছে:

অপহৃত, বিস্মৃত, নামহীন, ভয়ংকর

শিরোচ্ছেদ করা সেই মেয়ে 

যেন চোখে চোখ রাখা কুঠার

এবং হার না-মানা সৌন্দর্য,

যা বিস্ময় সৃষ্টি করা শুরু করেছিল মাত্র !



***********************************************************************



সুধাংশুরঞ্জন সাহা

জন্ম ৩০ ডিসেম্বর ১৯৫৭। বেড়ে ওঠা পূর্ব কলকাতায়। ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক।আটের দশক থেকে লিটল ম্যাগাজিনে কবিতা লিখেই তার যাবতীয় পরিচিতি । কবিতা ছাড়াও গল্প, ছড়া, প্রবন্ধ এবং বিদেশি কবিতা অনুবাদ করতে ভালোবাসেন। সম্পাদনা করেন একটি অনিয়মিত লিটল ম্যাগাজিন 'অন্যসাম্পান' । প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : ১৬, গল্পগ্রন্থ : ২, ছড়াগ্রন্থ : ২  উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে : অপহৃত রাত্রির চর্যাকথা * নিরুত্তর তারার স্বপ্ন * পূর্বাভাস * পাগল চাকা ঘুরছে অবিরাম * একা দুপুর * শ্রেষ্ঠ প্রেমের পদ্য * সময়ের এস্রাজে বেজে যায় অবুঝ দুপুর * বেলুনের কোন জন্মদিন নেই * নির্বাচিত কবিতা ১০০  ইত্যাদি। 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন