রবিবার, ১২ জুন, ২০২২

কবিতাগুচ্ছ * গৌতম কুমার গুপ্ত



কবিতাগুচ্ছ * গৌতম কুমার গুপ্ত 


অন্যমনা 


তারপর তুমি অন্যমনা হলে

বেশ গুছিয়ে রাখছিলে চোখের আলাপন

কয়েকটি অর্কিড কিছু বনসাই 

শ্বেতশুভ্র টিউলিপ প্রিয় কালপুরুষ উত্তুঙ্গ মেঘ


তুমি বললে মেঘ এখনো রয়ে গেল অষ্টাদশী কুমারী

গর্ভবর্তী হল না এখনও কোন জলদপুরুষে

তাথৈ বৃষ্টির নবজাতক জন্মালো কই


অতঃপর তোমার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো আকাশ


তুমি অন্যমনা হলে আবার

মুখে বেশ প্রিয়ংবদা ছিলে কলভাষ কল্লোলে

প্রিয়তম উচ্চারণে ক্রমশঃ গভীর হচ্ছিল একটি সুনাম

বলছিলে তাঁর বলিষ্ঠ বাহু উন্নত বুক প্রশস্ত ললাট চোখের নম্র ভাষা 


সেই থেকে জমে গেল ইত্যাদিতে

নিজেকে আর গুছিয়ে রাখতে পারলে না

তবু ভাল বিশৃঙ্খলাহীন শৃঙ্খলা ছিল কোথাও


তোমার অন্যমনেও সেইমনেই ছিল বোধ হয়


বর্তমান 


কি ভাবে শান্ত হবো

চারদিকে দুরন্ত পতাকা

বর্ণময় সশস্ত্র মিছিল মুখে তুখোড় বৃষ্টিবুলি

কখনো আকাশ থেকে জ্বলন্ত লাভা


আমাদের সব নির্ণয় হয়ে আছে

বিভূতি -ধূসর ছায়া -জলের বিভাজ্য

পূর্ণমান নয় ভগ্নাংশের অবসাদ শরীরে

চুপ থেকে বাক্যহারা বিষাদ পরিহাস 


জানি না আদৌ জন্মান্তর আছে না নেই

অতীত- বর্তমান-ভবিষ্যত সব নামান্তর

এই আছি এই নেই









তু মি 

তুমি পদ্মগন্ধা চরিতামৃতা প্রিয়ংবদা

তোমার শরীরে লেগে আছে শ্বাসকণা

আমার সফল অম্লজানে ঐ পরাগ রচনা

সৌর উদ্দীপনে প্রগাঢ় পিঙ্গল নয়না 


তুমি বহ্নিমান ঐ পীনোন্নত পয়োধরা

তোমার সত্তায় লেগে আছে স্পর্শকণা

আমার সফল সংশ্লেষে সবুজ রচনা

চান্দ্র পুলকিত প্রভূত নিন্দিত বাসনা


আয়োজনে প্রয়োজনে তুমি অভিনন্দিতা

ভাষায় ক্ষমার্হ হোক আমার অপরাজিতা



খামখেয়াল 


খামখেয়ালটা একটু মনে রেখো

এভাবেই বাতাসে ওড়ে খড়কূটো

রুখুসুখু ছন্দহীন বেপরোয়া দিগভ্রান্ত


হতে পারে তপ্ত বৈশাখ ঘন দাবদাহ

উদভ্রান্ত কিছু শীতার্ত উন্মেষ

চোখে সংখ্যাহীন স্বয়ংক্রিয় দৃশ্যাবলী


বেখেয়াল ভাষাতে ব্যাখ্যা করি আত্মনাদ

শুধু তুমি ছান্দসিক ব্যাখ্যাতীত রয়ে গেলে

কল্পকাহিনী জুড়ে আমার ভুলের খামখেয়াল


ফুল সেও তো খেয়ালী আকাশ কিংবা বাগান

কিংবা উন্মাদের লেখচিত্রে ছিন্নভিন্ন তারা অথবা 

নগ্ন স্বভাবের নামাবলী বশে বিবশে দায়সারা


আমিই দস্তুর আমার কাঁটাতারে রক্তাক্ত

তবু যদি অভিন্ন থাকি লেশমাত্র

শুধু খামখেয়ালটা মনে রেখো



ছায়াপাতের আগে 


স্পৃশ্যের নাড়া পেতেই নড়ে ওঠে ছায়াপাত

ও তো জীবনেই আছে এতোকাল

শুধু মৃত্যুচোখে ভেসে থাকে আবছায়া

একটা ঘন্টাধ্বনির অবেক্ষণে থাকা মাত্র

সে ধ্বনি শ্রুত না হওয়াই বাঞ্ছনীয়

ততোদিন ত্বরণ ব্যঞ্জিত থাক


ঔষধির গুনগানে আপাত বিকাশ

সংগীতে ততোদিন মুর্চ্ছনা যেতে পারে

একটা নিছক কল্পনার বসবাসে যাপন

আসে যায় আবার আসে দিবসরাত্রির মতো

এক থেকে একশো ধারাপাত গুনে গুনে

আবার ক্রমান্বয়:অনুবর্তন।


শেষমেষ সেই তো দিগন্তে হেলে পড়া ক্ষীণ আলো

পাখির ডানায় ভর করে নীড়ে ফেরা

ততোদিন যেটুকু ভোজনে পরে শয়নে সমন

গমনে কিছু গন্তব্য লিখতে লিখতে চলে যাওয়া


******************************************************************************



গৌতম কুমার গুপ্ত

কবির জন্ম  ১৩৬৭ বঙ্গাব্দে বাঁকুড়া জেলার শালতোড়া থানার গোপালনগর গ্রামে।বর্তমানে পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের বাসিন্দা।প্রথম জীবনে সাংবাদিকতা পরে ই সি এলে কেন্দা এরিয়া বিভাগের কর্মী ছিলেন।২০১৯ সালে চাকুরিজীবন থেকে অবসর গ্রহন করেন।শিক্ষাগত যোগ্যতা বিজ্ঞান এবং কলা বিভাগে স্নাতক।পরে পার্সোনাল ম্য্যানেজমেন্ট ইনডাসট্রিয়াল রিলেশনে স্নাতকোত্তর পাশ করেন।আশির দশক থেকে লেখালেখি শুরু।'কালকেতু' নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তো বটেই ওয়েব ম্যাগাজিনেও গল্প কবিতা প্রবন্ধ লিখে থাকেন।এ পর্যন্ত তাঁর চারটি কাব্যগ্রন্থ  " সময়ের এই জলসাঘরে,'স্বভাবের সিলেবাস','অক্ষর ভাইরাস' এবং 'বিষুবরেখার পাখি' প্রকাশিত হয়েছে।কয়েকটি নাটকও লিখেছেন। "কয়লাক্ষেত্র "নামে একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে।।আরো একটি উপন্যাস "কৃষ্ণগহ্বর "শীঘ্র প্রকাশিত হতে চলেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন