সোমবার, ১৩ জুন, ২০২২

কবিতা বিষয়ক গদ্য * পরান মণ্ডল



পঙক্তিমালা 

পরান মণ্ডল


পঙক্তিমালা কি?সংজ্ঞায় বলা যায়,পঙক্তিমালা হল সারা বাংলার সেরা কবিতার সেরা উদ্ধৃতির একটি সংকলন,যার পরিসর বৃহৎ, এবং যেখানে আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা --অনুসন্ধান-অনুধ্যানেরও কামনা থাকে ৷

পঙক্তিমালা'র এইরূপ নবীন বিন্যাস বিদগ্ধজনের দ্বিধাহীন ভাষায় প্রশংসিত হলেও আদর্শ কবিতাপাঠকের সংশয়ভঞ্জনের জন্য দু'চার কথা নিবেদনযোগ্য এই কারণেই যে,পঙক্তিমালা আমার পরিচিত কবিদের সৌজন্যসম্মত নয়, পঙক্তিমালা রীতিমতো গভীর-অনুধ্যানে কষ্টোপার্জিত । অধিকাংশ পঙক্তিই অর্থঘন,পূর্বাপর সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হলেও ইতিবাচকেরর দিকে উন্মুখ এবং কাব্যিক তাৎপর্যপূর্ণ । মোটেই হেতুহীন বিশ্নেষণ নয়, পঙক্তির অস্বস্তিকর গুরুভারে ভারাক্রান্তও নয় ৷ কাব্যনিরীক্ষায় ভাব বা বিষয়ের দূরাণ্বয় থাকলেও পাঠকের সাহিত্যরসসম্ভোগে গরমিল ঘটবে না, কারণ স্মরণে স্মৃতিসত্তা থাকলেও পঙক্তি কখনোই কবিতার পূর্ণ চিত্রখণ্ড হতে পারে না ৷  

প্রতি কবির কাব্য থেকে একশত কবিতার সেরা পাঁচটির অন্বেষণে পূর্ণ পাঠকের ভূমিকা আছে আমার। আগামীতেও থাকবে। এখন দায়ভার আপনাদের। পঙক্তিমালার হিতাকাঙ্ক্ষায় আপনার লেখা কবিতার সেরা দশের অন্বেষণ করবেন আপনিই স্বয়ং -- আপনিই নির্মাতা, আপনিই চূড়ান্ত নির্ণায়ক৷

অতঃপর আসুন তপঃসিদ্ধ দুই-শতাধিক কবির সঙ্গে সম্মুখমূল্যায়নে , এবং নিরপেক্ষ  মূল্যায়নে থাকুন আপনারাও ।


পঙক্তিমালার আটটি বিভাগে হোক অষ্টবসুদের সন্ধান I

প্রাজ্ঞপাঠকেরা মহাকালের দরবারে একদিন নির্ণয় করে দেবেন আপনাদের অবস্থান এবং আপনাদের স্থিতিকাল ৷

বিভাগ যথাঃ

১) ধ্রুপদি পঙক্তিভাবনা : যেখানে থাকবে বিশুদ্ধ বাংলায় লেখা তৎসম শব্দের আধুনিক ব্যবহারে অথবা, অ-ব্যবহারে, শুদ্ধ হৃদয়তান্ত্রিক উচ্চারণে ঈশ্বরভাবনার আস্তিকতায় , অথবা নাস্তিকতায় অনুষঙ্গ হবে জীবনদর্শন-জীবনভাবনা এবং জীবনজিজ্ঞাসা ৷ অথবা, যেকোনো অনুষঙ্গে  লেখা ধ্রুপদি-কাব্যধারার বিবর্তিত আঙ্গিকে আপনার মৌলিক কাব্যভাষ, এবং অবশ্যই তা হবে বিশুদ্ধ বাংলায় ।

২) অত্যাধুনিক পঙক্তিভাবনা : গতানুগতিক-আধুনিক কাব্যভাষার  উচ্চমার্গীয় ভাষারীতি ৷

৩) ব্যতিক্রমী পঙক্তিভাবনা : প্রথাবিরুদ্ধ নিজস্ব নির্মাণ।

৪) সময় এবং সমাজভাবনায় দায়বদ্ধ পঙক্তিভাবনা : সহজসরল বাংলায় বোধগম্য ভাষায় লিখিত কবিতা ৷ যেখানে থাকবে সামাজিক প্রেক্ষাপট -- সমাজনীতি, রাজনীতি, মনুষ্যত্বের অবক্ষয়, বেকারত্ব, দারিদ্র্য,খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি..

৫) প্রেমে-অপ্রেমে অন্তর্বিদারক পঙক্তিভাবনা : প্রেমের হৃদয়তান্ত্রিক উচ্চারণ ৷

৬) অভিনব নিসর্গভাবনা : সুররিয়্যালিজম, ম্যাজিক রিয়্যালিজম, ইত্যাদি

৭) পঙক্তিভাবনার বাঁকবদল : কাব্যভাষার পরিবর্তনীয় রূপ ।

৮) কবিতায় উজ্জ্বল শিশিরবিন্দু


আরও দুই-একটি  বিভাগ পরবর্তীকালে রাখা যেতে পারে ৷ যথা:

৯)  কবিতায় প্রেমহীন শুধুই  যৌনতা বা, যৌনভাবনা৷

১০) কবিতায় অর্থহীন পঙক্তিভাবনা ৷ ইত্যাদি ...


আপনার কাব্যটি আমার ঠিকানায় পাঠাবেন ,এবং প্রতিটি  বিভাগের জন্য ৫টি ক'রে পঙক্তি আপনার নোটবুকে নোট করে রাখুন । পরবর্তী সংকলনের জন্য ৩-৪ মাস পরে যেকোনো সময়ে চেয়ে নেব ৷ 


প্রেমে-অপ্রেমে অন্তর্বিদারক পঙক্তিভাবনা : 

পর্ব-১

প্রেম ছাড়া কবিতা হয় না -- একথা একাংশে সত্য | বিচ্ছেদ-ব্যথা থেকে জেগে ওঠা অন্তর্দহন নির্বাপিত হয় কবিতার স্পর্শে | " ভালোবাসার পাশে একটি অসুখ শুয়ে আছে '' -- এই অসুখের নিরাময় দেয় কবিতা , কবিতা তখন প্রেম হয়ে ওঠে | উপাস্যপ্রেমে প্রেমিক- প্রেমিকা কখনোও সাধক-সাধিকা কখনোও-বা ঈশ্বর-ঈশ্বরী | বিরহ তখন ভাষা খোঁজে -- কবিতার ভাষা | হৃদয় বড়ো হয়ে ওঠে | ব্যথিত হৃদয় ক্রমশ আকাশ হয় : যন্ত্রণা সেই আকাশে ছোট্ট একটি অনশ্বর-রঙিন পাখি,কখনও

কালো মেঘ হয়ে উড়তে থাকে...হারানো প্রেম ততদিনে কবিতা হয়ে ওঠে !

বিশেষত প্রেমের কবিতা লেখে তরুণ হৃদয় | ইদানীং তরুণীরাও প্রেমের কবিতা লিখছেন | অথচ গত কয়েক দশক জুড়ে কোনও প্রিয়দর্শিনী কবি প্রেমের কবিতা লিখেছেন কি না আমার জানা নেই | তাঁরা সকলেই এক জোট হয়ে নারীবাদী কবিতা লিখে গেছেন | প্রণম্য কয়েকজন কবির পাশাপাশি বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণীর কবিতায় মুগ্ধ হয়েছি | উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের নাম করা যেতে পারে |

বলা বাহুল্য , কবিতায় প্রেম নেই যৌনতাই উপজীব্য -- এ সময়ের বিকৃত কিছু কাব্যকুশলীর কাছে তা গ্রহণযোগ্য হলেও অনশ্বর-সুধী পাঠকমণ্ডলীর কাছে তা পরিত্যাজ্য | প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে লেখা যায় " যা বেটি হারামজাদি, ফাঁকা মাঠে দিব তোর মুখে চুন কালি " -- চুনকালির বদলে এহেন পরিস্থিতিতে কাব্যিক মহার্ঘ্য দান করা যায় , বলা যায় : " তুমি সুখ যদি নাহি পাও -- যাও সুখের সন্ধানে যাও "l মহাকালের ইঙ্গিতে জনমানসে প্রতীয়মান হয় এইরূপ সহজসত্য -- যা উচ্চারণে হৃদয়গ্রাহ্য, মূল্যবোধে ঐশ্বরিক এবং কবির মেধা-প্রজ্ঞা ও তপস্যাবলে পরমপ্রাপ্তি | চাটুকারিতা এবং স্তাবকতাকে প্রাধান্য দিয়ে যে বৃত্তবন্দি রঙ্গক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে সেখানে নির্লজ্জতার সহিত প্রদর্শিত হচ্ছে যাঁদের মুখ তাঁদের অধিকাংশই কবি নয় | কবির বদলে কমান্ডো, ছায়াপিণ্ড, স্তাবক , চাটুকার ইত্যাদি এবং ইত্যাদি ...

তবুও কবিতা আছে এবং কবিতা থাকবে | প্রাজ্ঞ পাঠকেরা সেইসব আলোচিত মহান কবিকে গ্রহণ করে নেবে সতর্কচিত্তে | 

পঙক্তিমালা বিভাগে সম্মানের সহিত যাঁরা রইলেন তাঁরা হলেন :


নামসূচি

নভেম্বর,২০১৯ থেকে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত, পঙক্তিমালা সংকলনের প্রথম খণ্ড-এর প্রেম-অপ্রেম বিভাগের প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয়পর্বে ৬২ জন কবির ৭০টি কবিতাপঙক্তির ভিতর দিয়ে রেখে গেলাম প্রেমে-অপ্রমে লেখা অন্তর্বিদারক পঙক্তিভাবনার প্রকাশ৷ সূচিতে বয়সানুসারে আনুমানিক দশক নির্ণয় করা হল । ভুল থাকলে পরবর্তী সংকলনে সংশোধন করা যাবে ৷

সত্তর -- আশির দশক 

রণজিৎ দাশ , প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়, অজিতেশ নাগ, কিংকর চক্রবর্তী, মলয় গোস্বামী,  পুলক রায়, আনন্দমোহন দাশ, প্রবীর দাস, সফিকুজ্জামান, এবং অচিন মিত্র  |

নব্বই দশক 

মণিশংকর বিশ্বাস ,তুষারকান্তি রায়, বিভাস রায় চৌধুরী ,আশিস মিশ্র, প্রতাপ মুখোপাধ্যায়, অমিত সরকার , প্রদীপ ঘোষ এবং পল্লব গাঙ্গুলী ,এবং তাজিমুর রহমান ।

শূন্য দশক

বিরুপাক্ষ পাণ্ডা, বিপ্লব ভূঞ্যা ২,  অনিমেষ সিংহ , উজ্জ্বল রায়, অভিজিৎ দত্ত, নিলয় গোস্বামী, সনৎ মন্ডল, রাজীব পাল ,মানবেন্দ্র পাত্র, দেবাশিস মুখোপাধ্যায়, কৌশিক দাস, তাপস বিশ্বাস, দেবগুরু বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌম্য দে, রবীন বনিক এবং প্রতাপ নন্দী ।


নতুন দশক

সৌমাল্য গরাই , পল্লব গোস্বামী ,গৌরাঙ্গ মণ্ডল ,সমীর সরকার, মলয় পাহাড়ি, বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়,মৃণালকান্তি দত্ত, মনোতোষ বৈরাগ্য, মানস সবুজ নিয়োগী ,রাজীব মৌলিক,কনিষ্ক দেওঘরিয়া, বন্ধুসুন্দর পাল,সর্ভানু দাশগুপ্ত , মেহবুব গায়েন,পিঙ্গল আকাশ,চিরঞ্জিত ভান্ডারী এবং তাপস বিশ্বাস ৷

প্রিয়দর্শিনী দিদিভাই :

উমা বন্দ্যোপাধ্যায়, রমা সিমলাই, মঞ্জরী গোস্বামী , বেবী সাউ ,তনুশ্রী ভট্টাচার্য, বৈশাখী দাস এবং মৌমিতা চক্রবর্তী।

আছেন, সৈয়দ শামসূল হক ৷


 প্রিয় পাঠক ,  আসুন এখন স্পর্শ করি সেই উজ্জ্বল আলোকপ্রভ :


' হায় দীক্ষা , সেও প্রগলভ | ' ... ' আমি কোন অভিসম্পাতজনিত চারণভূমি নই ; / যে, তুমি উৎসমুখ থেকে সহসাই কৃত্তিবাসী অভিধান পাঠ করে শোনাবে ' -- অজিতেশ নাগ (অনুল্লেখিত )


' আরও তীক্ষ্ণ কর নখ , উপেক্ষা প্রবল / ঘৃণা হোক আরও গাঢ় / তবুও আমার হাত ফুলে ভরা ,/অক্ষর সম্বল ' -- প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়


' তবে কি হারিয়ে গেছে পথ ! বাঁশি ?/ হৃদয় লিখে কি তবে বাগান পেরবো!  /  দু-আনার বাতিঘরে লিখে রাখি দরদি বকুল!' -- তুষার কান্তি রায় (নিঃশব্দ)


' ভালো থাকা / ঘুমের ভিতর বিস্তর পরিভাষা নিয়ে জন্মায় পাপ ও বিদ্বেষ |/ বন্ধুহীন দূরত্বে হাঁটে কাতর জোনাকি । আদরের স্বপ্নঘরে চলে পরিশীলিত খুনের তামাশা ' -- বিরূপাক্ষ পন্ডা(এ মহাজীবন )


' ভাত লিখে খাইয়ে দিই রাস্তার খেকুরে / নেড়ি কুকুরদের |  #  জল লিখে ভাসিয়ে দিই খরাগ্রস্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল | # আগুন লিখলে জ্বলে ওঠ তুমি |#

প্রেম লিখে আমি পুড়ে যাই | ' -- প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (লেখা) পূর্ণ কবিতা |


' খেলাঘরে এসেছিলে জানি / ফুল ফুটবার আলোটুকু নিয়ে হাতের সাজিতে / আমি তো তখন জানলায় / জেগে থাকা চাঁদটি নিভিয়ে / ভোরের দোয়েল হয়ে গেছি / ঘরে ঘরে সেই গান রেখে আসি গিয়ে/ নিত্যকার সুরে সুরে / জানো না কি তুমি ? / ভুলে গেছ কী যে কাজ আমার-তোমারও !/ খেলাঘরে লুকোনো যে বকুল মালাটি / তুলে নিয়ে গেলে না যে তবে ?' -- উমা বন্দোপাধ্যায় ( খেলাঘর) পূর্ণ কবিতা |


' একটা রাস্তা/ দু'চোখ পেতে/ একলা হাঁটে / সাকিন-টাকিন কিচ্ছু না / ছায়া, মায়া / জন্ম, মৃত্যু /কেউ টানে না ' -- কিংকর চক্রবর্তী (?)


"এমন আঁধার নিয়ে কোনোদিন তোমার পাশে গিয়ে /দাঁড়াইনি|এতদিন যত গান বেঁধেছি ,/ সবগুলো আলোর | আর তুমি/ বসন্তের পুষ্ট পাতার মতো একটু একটু করে/ সবুজ হয়ে উঠেছ ..."-- আনন্দমোহন  দাশ (বিশ্বাস)


' দেয়ালের গল্প দোয়েলের হতে পারে না / রাত্রি এক দীর্ঘ সংলাপ ' ....' যমের দুয়ারে কাঁটা দিয়েও যারা ফিরল না / তাদের জন্য একটি অশ্রু নদী গাও' -- দেবাশিস মুখোপাধ্যায় (হেমন্তের কবিতা)


' দিগন্ত মুছে যাওয়া এক চরাচরে মাটিতে হাঁটু মুড়ে একজন মানুষ কাঁদছে আর বিড়বিড় করছে / হে ভালোবাসা , তুমি এসো না ... এসো না .../ তোমার না-আসাটাই আমার মতো লাগছে | ' -- বিভাস রায় চৌধুরী (একা মানুষ )


সুধী পাঠক , উল্লিখিত নয় জন কবির পঙক্তিনির্মাণ লক্ষ্য করুন এবং নিরপেক্ষ মূল্যায়নের দ্বারা কবি এবং কবিতার উৎকর্ষতা নির্ণয় করতে পারেন ৷ 


' ধাক্কা দিলে উঠে পড়ি / কাত হয়ে জেগে আছে তারাদের টুপি / তুমি সোঁপে দিতে পারলে সর্বনাশ , কবর'টা হতো ফুলদানি  ' -- বন্ধুসুন্দর পাল (তালাচাবি )


' তোমার নাভিমূলে বিরুদ্ধ ঠোঁট চুমু দিয়ে বলবে /

ধন্যবাদ একলাখি পদ্ম | ' -- সমীর সরকার (চা পাতা)


' বাড়ি থেকে পুকুর পাড়  ততোটা নয় যতটা ভেবে নিতে পার | # খেলতে খেলতে একদিন রোদ হলাম | রোদেরও তো আবার স্নান থাকে ' -- সমীর সরকার ( তরঙ্গ )


' অসুখ চোখে প্রজাপতি বসে কেন রমা? / ইচ্ছে দৃষ্টি পুড়ে যায় সুন্দরে | ' ... ' ফুল পরাগের নির্জন সংলাপে ইচ্ছে দৃষ্টি পুড়ে যায় সুন্দরে ! ' ... ' প্রেতছায়ারাত ' ... 'অনন্ত বটচোখে  প্রজ্ঞারাত পাখি / দ্যাখে অাগুন ; / আত্মশশানে ...!' -- মৃণাল কান্তি দত্ত ( মৃত্যুর অন্যনাম রমা )


' কত নিবি রাক্ষসী ?/ সবই তো দিয়েছি তোকে --/ নখ থেকে চুল | # ঘুমিয়ে পড়ার আগে , / আমাকে ফিরিয়ে দিস দু'খানা আঙুল | ' -- কৌশিক দাস 


' দুয়ার খোল অভিমানীনি ,অভিমান বুঝি তারও হয়নি / ওলো ও সর্বনাশী ! তুই বেহুলা না অহল্যা ,/ বিরহানলে বুঝি সেও পোড়েনি ?' -- প্রদীপ ঘোষ (ভ্রমে ভ্রমর )


'চোখে দিঘি আঁকা হয়ে গেলে / কান্নারা শুধুই জলজ বুদবুদ ' ...' অগাধ বিশ্বাসের ছিল তো অবকাশ ' ...' একাকীত্বের সাথে বন্ধুতা ! নিশ্চিত অবেলা ' -- প্রদীপ ঘোষ (হৃদয় তো সাম্পান)


' হঠাৎ আমার মৃত্যু হলে  / দেখবে একটি নরম নারী মাথার কাছে / হাত বুলোবে , ভগ্নশাঁখা , তার কপালে / দেখবে তুমি সমস্ত ক্ষয় ' -- আশিস মুখোপাধ্যায় (সমস্ত ক্ষয়)


' গোলাপি সরোবরের কিছু বিষণ্ণ ভ্রমর জানে / রাতে গান গেয়ে যায় , তীরে বিদ্ধ হওয়া এক পাখি | ' -- নিলয় গোস্বামী (হোম )


'স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি সিঁদুরে মেঘ / আগুনের দিকে টেনে নিচ্ছে ডোর |# কালীপোকা পুড়ে যায় কী তীব্র সুখে # প্রেমের আবেগে | ' -- অনিমেষ সিংহ 


' তোমার  ফুলের বাগানে বিষধর সাপকেও মনে/ হয়েছিল দোদুল্যমান একটি রুমাল ' -- অনিমেষ সিংহ (ভ্রমণ)


' সেই তুমিও আপেলের মতো , কাঞ্চনফুলের মতো শাশ্বত নও ' -- অনিমেষ সিংহ (শাশ্বত)


" দৃশ্যত ভাঁটার মাঝে জোয়ারের উচ্ছ্বসিত প্রাণ /জিজ্ঞাসু বালির নীচে ফল্গু জলধারা # তুমি না জানলেও /নদী আছে নদী আছে তোমার ভেতর"-- অচিন মিত্র (নদী আছে)

" আমার হতদরিদ্র সাম্রাজ্যে কিছু না থাক আধিপত্য প্রেমের"--প্রবীর দাস (বন্ধু আমার)



সুধী পাঠক , উল্লিখিত কবিদের কাব্যভাষা মৌলিক কি না ? লক্ষ্য করুন পঙক্তি নির্মাণের উৎকর্ষতা এবং গভীরতা |


 পর্ব - ২

সুধী পাঠকমহাশয়, আসন ,স্পর্শ করা যাক পঙক্তিমালার আরও কিছু উজ্জ্বল আলোকলতা :


' কতদিন রোদের সঙ্গে কথা বলিনি / তুমি আসবে বলে / বিধবার সিঁথির মতো মাঠে / ফেলে রেখেছি সিঁদুর কৌটোর ঢাকনা '-- দেবগুরু বন্দ্যোপাধ্যায় (তুমি আসবে বলে)


' স্বামীরা প্রেমিক হলে,/ জানালায় বসে থাকে সামাজিক কাক!'-- দেবগুরু বন্দ্যোপাধ্যায়


' অস্থির পৃথিবী থেকে তুলে এনে ভালোবাসার দু'হাতে তোমাকে এখন আমার স্থিরতার পটে স্থাপন করে চলেছি / পৃথিবীর সব রূপসিরা আমার পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে তোমাকে ,/ আমি তাদের ঈর্ষা দিচ্ছি কেননা তারা স্থিরতা পায়নি | '--সৈয়দ শামসুল হক.(ভালোবাসার দিনে )


' আজও তোর প্রাক্তন চোখে,/বুকে অজস্র গাছ বুনেছিস  আমি/তার-ই শেকড় জন্ম '  # আজকাল শব্দহীন জোছনা নিয়ে যায় মৃত উল্কাপিণ্ডে , মরে যাবার / আগে কবিতা লিখতে পারছি না / পবিত্র যমুনায় ' -- উজ্জ্বল রায় (চারশত কুড়ি)


প্রিয় পাঠক, লক্ষ্য করুন -- কবিতার কোথায় ভাবাবেগ , পঙক্তি নির্মাণের মুনশিয়ানা এবং স্বতন্ত্রতা , অতিকথনে ক্লান্তি আছে কি না ৷


' প্রিয়জনের জন্মদিনে গাছ উপহার দিন/ গাছের সবুজ রং ভালোবাসা হোক ' -- রাজীব মৌলিক (উপহার)


' দ্বিতীয়বার কালোপ্রেমেই ভাসলাম   #  আমিও কালো প্রেমও কালো / কারও মনে কোনো দোষ নেই / কেউ কাউকে কালো বলি না / পাখির বুক জুড়ে আজ কালো বসন্ত / সাদা বকে লাগে শুধু ধুলোর কলঙ্ক ..' -- রাজীব মৌলিক (কালো প্রেম)


' কে তুমি / কর্মঠ পিয়নের হাতের মতন ট্রয় কিংবা বাগদাদের পোড়া ছাই দিয়ে নবপ্রণয় লিখছ/ মিশরীয় না আরবীয় প্রেমিক তুমি / কোন অহল্যা তনয়ার প্রেমে মেতেছ '-- পিঙ্গল আকাশ 


 ' ছাপানো বিরহ / মুখোমুখি আলোচনা ? হয়নি সাহস # তুমি ও পৃথিবী/ দুঃখ পুষে রাখো / গোলার্ধ.দু'দিকে চাপা অথচ নিরেট '-- মনোতোষ বৈরাগ্য (অভিমান )


' যে ট্রেনে স্টেশন নেই, আছে শুধু দূরে চলে যাওয়া সেখানে বালিকা মাঠে খেলা করে এলোকেশী হাওয়া ' -- সৌমাল্য গরাই  (ত্রাণ)


সৌমাল্য ,মনোতোষ , পিঙ্গল , রাজীব এই চারজন কনিষ্ঠ কবি ৷ অথচ, এত অল্প বয়সে এঁদের লেখার হাত অসাধারণ -- পাঠক লক্ষ্য করুন |


' বুকে বুক মিশিয়ে রেখেছি / তবু / শিখিয়ে দেবে না সালোকসংশ্লেষ ?' --মঞ্জরী গোস্বামী (অব্যক্ত) 


' তালপাতা কি আর শীতল করতে পারে / প্রাচুর্যের মরুভূমি !'  .... ' বয়সের চিহ্ন মেখে বাঁশি বাজাতে ভুলে গেছে রুগ্ন বসন্ত ' -- মৌমিতা চক্রবর্তী (ছুঁয়ে আসা যায় )


' যত্ন করে যন্ত্রণার ছবি আঁকাটা / তোমার বিলাসিতা / অসুখের শরীরে অসুখের বাদামিলতা / সর্বকার্য বিগর্হিতা '-- মৌমিতা চক্রবর্তী


' ইর্ষান্বিত ইচ্ছামৃত্যু নিয়েও পিতামহ / অনন্তশয়ান পাননি # অলকানন্দা বা ভোগবতী / তৃতীয় পাণ্ডবের শরমুখে / শ্রদ্ধা নয় , দায়বদ্ধত রেখেছিল ' -- রমা সিমলাই (শেষবার)


' এই যে নৈঃশব্দ্যের মোড়কে আদ্যোপান্ত ঢেকে নেওয়া / সুরেলা কথা-কোলাজ , স্বেচ্ছায় .../ তা কি শুধুই মরশুমি বুদবুদ ? তা কি ভাষা দূষণের ভয়? / ...প্রেম নয়? ' -- বৈশাখী দাস (নিঃশব্দে)


' অনেকদিন পর প্রতিজ্ঞা পার করেছ / ছাতিমফুলের গন্ধ ভেসে আসছে তোমার শরীর থেকে / একটা চেনা ঠিকানায় দাঁড়িয়ে আছি মৃত্যুর মুখোমুখি / মাঝখানে মায়াবী হেমলক '-- তনুশ্রী ভট্টাচার্য 


আরও বিশিষ্ট তিনজন আছেন | পড়ুন পুলক রায়, কণিষ্ক দেওঘরিয়া এবং তাপস বিশ্বাসের কবিতা থেকে তুলে নেওয়া সেরা কবিতাংশ :


' অমৃত অধরা থাক,/ চেয়ে নাও প্রাত্যহিক জীবনের হলাহল / আড়াল করে চোখের জল '-- পুলক রায় (অন্দর মহল )


' তোমার বিস্তার ভুলতে সমুদ্রের কাছে আশ্রয় নিতে হয় ' ...' আসন্ন সংগ্রামের নাম দেই চুপ করে থাকা ' -- কণিষ্ক দেওঘরিয়া (ঢেউ)


' ঘরমুখী পথেদের হয়ে যেত দেরি, রাতের নক্ষত্র বেয়ে যদি নেমে আস , আরেকটিবার '-- তাপস বিশ্বাস (ফিরতে দেরি হয়ে যেত )


' সুন্দরী ভানুমতীর সলজ্জ হাসিতে / পৃথিবীর অঙ্গার নিভে ফুল হয়'-- সফিকুজ্জামান (বনানী)


' বুকের ভিতর নুনের খোঁজ | না হলে / জলপোকার মতো সাগরের রোদে / কীভাবে একা হয় ভালোবাসা ' -- মলয় পাহাড়ি


' নিকানো উঠোনের পরতে পরতে ভালোবাসা/আর নিপুণ আলপনায় বিষের বাঁশির আমন্ত্রণে | # আসব ফিরে ...' -- প্রতাপ নন্দী (আসব ফিরে )


' ভাষা নির্বাক , বোধ সবাক , অদর্শনে দর্শন , ছায়াপথে গড়ে প্রেম-আসঞ্জন' -- প্রতাপ নন্দী (প্রেম)


' তোমার কবিতা অনেকটা মেঘের মতো -- / দুটো লাইন পর কেমন যেন কালো / হয়ে এলো আকাশ --' ...'হয়তো ভাবছে / প্রতিটা শব্দ থেকে আজ জন্ম নেবে তার সবুজ রঙের ভাইবোন -- হয়তো-বা ভাবছে প্রতিটি অক্ষর থেকে জেগে উঠবে তার মা -- ' ...'তোমার প্রতিটি কবিতাতে একটা / মেঘের গন্ধ থাকে ৷৷ ' -- রবীণ বনিক (মেঘরঙের মেয়ে)


কবি -- সফিকুজ্জামান, মলয় পাহাড়ি ,রবীণ বণিক এবং প্রতাপ নন্দী-র কবিতা অন্তর্বিদারক |


পর্ব-৩    

কবিদের দ্বারা মূল্যায়িত  কবির কবিতাপঙক্তি :


এইসময়ে  প্রেমে-অপ্রেমে অন্তর্বিদারক-হৃদয়স্পর্শী প্রেমের কাব্য লিখছেন কে? কে কে ? আপনি নিশ্চয় টিভি দেখে খবরের কাগজ প'ড়ে , কিংবা ধরুন গরমাগরম দু'একটি বাজারিপত্রিকা প'ড়ে বলবেন অমুকবাবু অথবা তমুকবাবুর নাম ৷তাই শুনে ফলনাকান্ত-দপনাকান্তরা সমর্থন জোগালেও আমরা বলব , সর্বৈব সত্য  না ৷ কারণ, বিরহিণীর কান্না সে তো কর্ণে শোনা যায় না, প্রকাশ পায় অক্ষিমাঝে, দীর্ঘশ্বাসে,নীরবে-নিভৃতে । একমাত্র নিভৃতচারী করিরাই শোনাতে পারেন সেই কান্নার সুর ৷ মদিরার রঙমশলা ছেড়ে এসে আপনারা অনুভব করেছেন কবির অন্তঃস্থলের ভায়োলিন -- কী ভীষণ অন্তর্ঘাতক সেই সুর I এবং নির্বাচন করেছেন নিম্লোল্লিখিত ১৮ জন কবির ২৫টি পঙক্তির ভিতর  ক বিভাগ থেকে ৭ টি , এবং খ বিভাগ থেকে ৭ পঙক্তি -- 

যা আপনার সুক্ষাতিসূক্ষ্ম চেতনার মস্তিষ্কপ্রসূত ... । সর্বস্তরীয় কবিকেই এখানে রাখা হয়েছে I নির্বাচনের নিয়মার্থে প্রতিবারের মতো এবারেও পঙক্তির পাশে কবির নাম রাখা ছিল না৷

প্রতি কবির ৪০-৫০টি কবিতা সিরিয়্যাসলি পড়ার পর ১-২টি অথবা, ৪-৫ নির্বাচন করেছি ৷ অতঃপর কবিতার ভিতরের মূল অংশটুকু পঙক্তিমালায় প্রকাশ করেছি ৭-৮ টি বিভাগে । আপনারা এই পঙক্তিগুলোর তুলনামূলক মান নির্ণয় করেছেন ৷

অনুগ্রহ ক'রে এভাবেই  পঙক্তিমালার পাশে থাকবেন । এবং সমসাময়িক বাংলা কবিতার নিরপেক্ষ-সামগ্রিক মূল্যায়নে আপনিও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন ।


পঙক্তিসংগ্রহের সময়কাল :  ডিসেম্বর ২০২০  --  ডিসেম্বর ২০২১

ক বিভাগ  (আট-নয়-শূন্য দশকের কবিদের কবিতাপঙক্তি)

..............................................

"একটি কবন্ধ তার কাটামুণ্ডু হাতে নিয়ে তোমার দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে : তুমি সেই / মুন্ড উপহার নাও ৷/ রক্তের ফোয়ারা বইছে, আর বেশিক্ষণ দু'পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব জেনে সে কবন্ধ পাগলা-ঘন্টির মতো বাজাচ্ছে কলিংবেল, ছুটে গিয়ে তুমি দরজা খুলছো যেই, গরম রক্তের ছাঁট লেগেছে শাড়িতে, স্তনে, পায়ের পাতায় -- রণজিৎ দাশ  "  (উপহার) ৭

" মেহগনি কাঠের আলো, রাত্রে বেরিয়ে এলো, তোমার শরীর থেকে কাল! '  ....    ' মেহগনি কাঠের আলো এত রাতে ? / কীভাবে বেরিয়ে এলো অলি ? " --- মলয় গোস্বামী ( মৃত্যুদিনে) ৫

" সাদা রঙের উঠোন হলে চলবে না ! তোকে দেখতে চাই, ওড়না রাখবি না ৷ তোর দক্ষিণ কোণের মেঘবাড়ি দেখতে দে আমায় ৷ উত্তরের শিরিষ গাছ ৷উঠোনভর ইতিউতি শস্যদানা ৷মেঘেরা কেমন জ্যোৎস্না নামায় তোর উঠোনে , দেখি আগে " --- পল্লব গাঙ্গুলী  (শ্বেতচন্দনের গুঁড়ো ) ৪

"অনন্তের বকুলের কাছে এই সাধনাশ্রম৷/ গাছের একটি শাখা কালপুরুষের মতো / নুয়ে আছে জলের উপর -- তার ভাষা স্বাতী নক্ষত্রের ' ... ' দূরে পাহাড়ের গায়ে ধীরে ধীরে বাতি জ্বলে ওঠে --/ মনে হয় তুমি আছ ওইখানে ... প্রতিটি আলোর পাশে " ---  মনিশঙ্কর বিশ্বাস ( শিকল) ৫

" আমিও পিতৃশোক ভুলে গেছি / তোমাকে হারাবার শোকে ....        মায়া না কি দুঃখ       কে বিচিত্র সুমনা " ---মৃণালকান্তি দত্ত ৪

"বিচ্ছেদ পেতে বসেছে জল রঙের পোট্রের্ট/সেখানে একটি জানলায় মুখ পেতে বসে আছে আরাধনার মতো আগামী I'  ... ' এবার তুমি রাত থেকে রাত্রি হয়ে ওঠো ৷/ ঘন বৃক্ষের বাগানে আগুন নয় / জ্যোৎস্না ভালো লাগে " --- সৌম্য দে    (রাত্রি) ৩

"কেমন সকাল তুমি চেয়েছিলে ? নিশ্চিত তা কখনোও বিকেলের মতো নয় ' ... ' যত বড়ো সময় তুমি স্নানের জন্য দিয়েছো/ ততবড়ো গান দাওনি শরীরে " ---  আশিস মিশ্র   ( কেমন সকাল তুমি চেয়েছিলে) 

"খাঁচার কাছে অন্ধ হয়ে থাকা / আকাশ খুলে বেরিয়ে গেল রোদ ' .......   ' এই যে আয়ু হাত ফসকে গেলে /কী আর থাকে সকাল থেকে রাত ' ..... ' নিজের মতো থাকতে চায় জবা " ---  আশিস মিশ্র  (খাঁচা) ৪

"আট লক্ষ শাড়ির ক্ষমতা/সে ধারণ করে রেখেছে৷/ আট লক্ষ শাড়ির মোহ/ তাকে গ্রাস করতে পারেনি ৷' ... ' হলুদ পানপাতার মতো তার মুখ দেখে / কিছু বিবর্ণ কবিতা আবিষ্কার করার পর / তার শ্রমশুদ্ধ কোলে মুখ গুঁজে / শিশুর মতো শুধু কেঁদেছি ।" --- আশিস মিশ্র (আমিও আমার প্রেমিকা -৭) ৫

১০

"তুমি যাকে মন বলো, সে আমার অনিয়ন্ত্রিত শাদা ঘোড়া " --- অমিত সরকার  (মনের মানুষ কাঁচা সোনা ) ৬

১১

" ভালোবাসলে কত সহজে বালিকা /হয়ে ওঠো নারী / কিংবা পুরুষ হয় অবুঝ বালক " ---   তাজিমুর রহমান  (অকৃপণ ) ২

১২

"  'মেয়েরা শ্রুতিলিপিকর '   .....'  লোকনাথ-দৃষ্টি মেলে  ছেলেটি দ্যাখে : ঘষাকাচের মতো / ঝাঁকে ঝাঁকে স্বপ্নহরিণিরা দৌড়ে যায় মৃত জ্যোৎস্নায়....  "   অভিজিৎ দত্ত  (মেয়েটি আর ছেলেটি ) ৪


খ বিভাগ  (১ম দশক/নতুন দশকের কবিদের কবিতাপঙক্তি)

..................................................

১৩

" `ভালোবাসি ' বলতে গিয়ে দম আটকে মরে গেল একটা শালিখ ... ' ... ' ভালোবাসি বলতে চাওয়া শালিখের পাশে রাখা থাকবে এক-একটি পুষ্করিনী " ---   মানস সবুজ নিয়োগী (ভালোবাসি) ২

১৪

" আমাকে ভালোবাসো / অস্বীকার করো ... খেদ নেই / কালি শুকোলে সব কবিই জীবাশ্ম !" -- মানস সবুজ নিয়োগী ৩

১৫

" জানবে, যেখানে অপেক্ষা থাকে / সেখানেই আলোহীন আঁধার!/ আলোটুকু নিয়ে চলে গেছে কেউ ... " --- সনৎ মণ্ডল (আক্ষেপ নেই) ৩

১৬

" এসেছ তাই পাহাড় গড়ার শব্দ পাচ্ছি আবার/ এসেছ তাই বৃষ্টি ঝরার স্পর্শ পাচ্ছি আবার / গন্ধ পাচ্ছি কেশর বাদাম ফুলের " --- মনা বৈরাগী  (যেতে পারো) ৪

১৭

"আমি তার /কালোকিত চোখে প্রশ্ন রাখলাম -- " এমন রৌদ্রের মাঝেও কি বৃষ্টি হয় ? ' সে হাসতে হাসতে সমুদ্র হয়ে গেল ...." পল্লব গোস্বামী     (রূপান্তর) ৪

১৮

"হারিয়ে যাওয়া ধুলোয় /যেটুকু খোওয়াব পড়ে থাকে / সেটুকু পথেই, / তুমি শুধু আমার " -- পল্লব গোস্বামী (প্রেম)

১৯

" গতজন্মের / না ফুটতে পারা শোকফুল ..../ আজীবন গুলমোহর হয়ে ছড়ায় " --- পল্লব গোস্বামী (বৃষ্টি) ২

২০

" ভেলভেট স্পর্শ সাময়িক, ওকে প্রকৃত ছোঁয়া দিয়ো /ওকে বোঝাও হৃদকমলের স্নিগ্ধতা ' ... ' সবুজ হয়ে গেছি পাতাগান গাইতে '   ....  ' যে জলের অতল ছুঁয়েছে  ও আমাকে খুঁড়ে দিয়েছে জল' ... '  উলঙ্গ ঘুরে ঘুরে ফুরিয়ে গেছে পথ,/ তখনও / সে তার বেঁধেছে দূরত্ব " --- মানবেন্দ্র পাত্র   (অনালোকিত )

২১

" আর দেখা হবে না জেনেও/ আমি অপেক্ষা করি অনন্ত আঁধারের পাড়ে বসে/ এছাড়া কী-ইবা উপায় " --- বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় (কীই-বা উপায়) ৪

২২

" তোমার ভাঙা মুখ / সূর্যাস্ত আলোয় / দেবী সেজে ওঠে " --- বেবী সাউ ৩

২৩

"তোমার শরীর খুঁড়ি /মন নেই /মন খুঁড়ি / শরীর নেই কোথাও " --- বেবী সাউ ৩

২৪

" আমাকে অবৈধ করো, পুঁতে দাও অথর্ব চত্বরে / দুই পা চুবিয়ে রাখো, ঢালো শোক, মাঙ্গলিক ঘোর,/ আড়াল, অশেষ ফুল, অতঃপর ফুটিয়া যাবেই " --- গৌরাঙ্গ মন্ডল ৬

২৫

"  সারারাত জেগে জেগে কয়েকটা জোনাক এনেছি ধরে /ওর মেঘলা চুল সাজিয়ে দেব যত্ন করে ' ........ ' আঁখিপাতে পরিয়ে দেব অরণ্যকাজল'  ........  '  জোছনার কাছ থেকে আনা শাড়ি প'রে / সিথিতে সিঁদুর নিয়ে কপালে ভোরের সূর্য টিপ প'রে / ও যাবে পুজোর থালা হাতে '      ..........    ' এসো শিশির : ধরা দাও ধরা দাও / তোমাকে করব আমার বউয়ের নাকছাবি " --- চিরঞ্জিত ভাণ্ডারী  (রবিঠাকুরের পুজো) ২

মূল্যায়নে সত্তর দশকের বিশিষ্ট কবি দিশারী মুখোপাধ্যায় ,প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং বিকাশ চন্দ৷ মূল্যায়ন করেছেন নব্বই দশকের সুকবি সঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা ৷ মূল্যায়ন করেছেন শূন্য দশক এবং নতুন দশকের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য কবি, যথা: মলয় পাহাড়ি, মানবেন্দ্র পাত্র, দিলীপ ভঞ্জ, রবীন বণিক , সৌম দে, রবিউল ইসলাম, দীপান্বিতা মুখার্জি , মেহবুব গায়েন এবং প্রমুখ ..

মূল্যায়িত বিশেষ-কবিতাপঙক্তির কবি  ক বিভাগে : রণজিৎ দাশ৭ , অমিত সরকার ৬, আশিস মিশ্র ৫

খ বিভাগে : গৌরাঙ্গ মন্ডল ৬, মনা বৈরাগী ৪ , পল্লব গোস্বামী ৪


আরও কয়েকটি প্রেম বিষয়ক পঙক্তিভাবনা ৷ কবিবন্ধুরা অনুরোধমতো এখানে চার জন কবির আটটি পঙক্তির ভিতর মাত্র চারটি পঙক্তি নির্বাচন ক'রে আমাকে জানিয়েছেন ।

" যে যৌনতার কাছে বসে অন্ধকার রেখে আলোর কবিতা লেখে, তাকে দেব অসীম অ্যাপোলো ' ... ' শুধু এই শোকের সমাধি চিনি , চিনি তার হৃদয়ে ঘাসফুল ৷/ সে আমার গয়নাগাটি,আমারই সে কানপাশা, দুল ৷ " --- বেবী সাউ ৯

" অ্যানেস্থেসিয়া না করে কেন কাটো মন/কষ্ট হয় চোখ থেকে নেমে আসে জল " --- মেহবুব গায়েন ৭

"তোমার বিপ্লবে গোলাপ পুঁতে দিতে/ মেঘ-মেয়েদের খোঁপার বাগান আলাপে এনেছি / বিকেল-মেয়েরা সূর্য-পাঞ্জাবিতে/খোঁপা ডুবিয়ে মেহেন্দি শেখাচ্ছে " ---বিপ্লব ভূঞা (অনন্ত ঘোড়ার দিকে) ১০

" সাহসী প্রেমের দৃশ্য, কারা সেই দৃশ্যের অলস / কারিগর, জানি না যে  ৷ আমি তার রং শাসন করি৷/আমার কবিতা নয় আগুনের পাশে দারুরস " --- বেবী সাউ ১০

" তখনও আমার আকাশে রাংতা রাঙা তুমি / তোমাকে নদী আঁকলে আমি ডুবে যাই ক্রমশ " -- বিপ্লব ভূঞা   (জলজলালন) ১৬

"প্রেমও একটা প্র্যাকটিক্যাল মার্ডার " -- মেহবুব গায়েন (প্র্যাকটিক্যাল মার্ডার ) ৫

" ছন্দ একটা চমৎকার তবলা ... যে যেমনভাবে বাজাতে পারে -- গভীরতা নিয়ে তোর সাথে আমি কথা বলতে চাই না মোহিত ৷ শুধু তোর বউকে শাড়িটা নাভির উপরে পরতে বলিস " ---  সর্ভানু দাশগুপ্ত (রক্তরসের কথা ) ৭


"ডানায় আগুনলাগা পাখি দেখলেই উনি গুলি করে মাটি তে নামিয়ে আনেন "-- সর্ভানু দাশগুপ্ত (পাঠভবন) ৭

মূল্যায়ন করেছেন , কবি --  প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়, বিকাশ চন্দ, বিজয় কর্মকর, অভিজিৎ দত্ত,আশিস মিশ্র, অরিন্দম প্রধান  , মানবেন্দ্র পাত্র, দয়াময় মাহান্তী  , মলয় পাহাড়ি  ,বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় , চিরঞ্জিত ভাণ্ডারী' চিরঞ্জিত ভাণ্ডারী , প্রবীর চক্রবর্তী , সুব্রত মণ্ডল সুব্রত মণ্ডল , মৃনালকান্তি দত্ত , দীপঙ্কর গিরি,রবিউল ইসলাম এবং প্রমুখ ..

মূল্যায়িত পঙক্তিগুলির মধ্যে ৫নং পঙক্তিটির কবি বিপ্লব ভূঞ‍্যা ৷ পঙক্তিটিতে ১৬ জন কবির ভালোবাসা জড়িয়ে আছে । এছাড়াও তাঁর ৪নং পঙক্তিটিও বিশেষ উজ্জ্বল ৷ বেবী সাউ-এর ৪নং এবং ১নং পঙক্তিটিও নজর কেড়েছে ৷


************************************************************************



পরান মণ্ডল

জন্ম: ২৬ অক্টোবর , ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ | বর্ধমান জেলার গলসিতে  এরপর চার-বৎসর বয়সে সপরিবারে বোলপুরে৷অদ্যাবধি সেখানকারই বাসিন্দা । বাবা কৃষক| মা গৃহকর্মিণী । ১৮ বছর বয়স থেকে কবিতা লেখা শুরু প্রথম কবিতা 'মরু সাহারার বেদনা' শব্দের ঝংকার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়  এরপর শতাধিক লিটল ম্যাগাজিন-এ লেখালখি শুরু  দরিদ্রতার জন্য মাঝেমধ্যে কবিতা লেখায় এবং পত্রিকা সম্পাদনায় বিরতি এবং দিবারাত্র পরিশ্রম  ২সেপ্টেম্বর ১০১২ `দেশ' পত্রিকায় প্রথম কবিতা প্রকাশ । পুনরায় অবর্ণনীয় দরিদ্রতার জন্য পত্রিকা-প্রকাশ এবং কবিতাচর্চা একেবারে বন্ধ  ভগ্নস্বাস্থ্য , ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, অ্যাঞ্জিয়প্লাস্টি এবং দরিদ্রতা নিত্যসহযোগী ...জানুয়ারি ২০১৮ থেকে পুনরায় কবিতার জগতে প্রবেশ । দু'মুঠো অন্ন সংস্থানের নিশ্চয়তা থাকলেও  ভগ্নস্বাস্থ্য এবং টিন্নিটাস চিরসঙ্গী।খ্যাতির প্রত্যাশা নয়, যন্ত্রণাকে শিল্পে রূপান্তর ঘটাতেই এখন কবিতা লেখেন  তিনি বিশ্বাস করেন, প্রভুনাম শতবার লেখার সাথে সাথেই লেখা হোক শতকবির নামও । ভাগবতের পাশাপাশি পড়া হোক মরমীকবির কথা এবং তাদের অনশ্বর পঙক্তিসমুহ ।

               প্রকাশিত কাব্য: বধূ শ্যামলিমা, সম্পাদিত পত্রিকা: অরুন্ধতী

সম্মাননা: অর্ণব সাহিত্য সম্মান ,অকাদেমি অফ বেঙ্গলি পোয়েন্ট্রি'র সারস্বত সম্মান ,সৈকত সাহিত্য অকাদেমি'র শিশির চক্রবর্তী স্মৃতি সম্মান,অনন্যে অভিধা সৃজনী আকাদেমী'র ঋষি বঙ্কিম স্মারক সম্মান ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন