সোমবার, ১৩ জুন, ২০২২

কবিতা বিষয়ক গদ্য * পারমিতা ভৌমিক




স্তেফান মালার্মে , 

 "আমি মাটির ওপরে খড়ি দিয়ে লিখি, মালার্মে----"

(চিন্ময় গুহ)...।


নিবিড় পাঠ―পারমিতা  ভৌমিক 



ঘুমের মধ্যে ৩৮ বছর আগেকার বিলুপ্ত এক রাত ফিরে এলো ডুব সাঁতার দিয়ে। কোন অঘ্রানের শিশিরে হারিয়ে গিয়েছিল সেই 

বইয়ের রাত। (ঘুমের দরজা ঠেলে-পৃষ্ঠা-১৮).... বইটি পড়ছি একটা ঘোরলাগা আলোছায়ায়। সে আলো অচেনা। নতুন। সে আলো চিন্ময় গুহর দান।

    চিন্ময় গুহ জানালেন ― জীবনানন্দের বিলাস গল্পের মাস্টার মশাই গলা খাঁকরে শান্তি শেখর কে কিছু বলেছিলেন, আমার আর আমার মতো সব পাঠকের মনে হলো, চিন্ময় যেন তা স্বয়ং দেখছেন , শুনছেন।

ঘুমের ভিতরে বইগুলো ছিল আলমারির লবেজান অন্ধকারে। অন্ধকারের তিব্বতী পবিত্রতা ছিল সেখানে,  ছিল ধূপের আবছায়া আর বৌদ্ধ শান্তির মন্ত্রধ্বনি ―― মণিপাম হুম। 

বাকি সব বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল ওই অন্ধকারে!!! 


আমার মনে হল,  বৈরাগ্যের একটি নেতিপ্রসারিত অন্ধকারে ঐসব বিলুপ্ত হয়েছে  যার শেষ কিন্তু একটা স্বচ্ছ ইতিতে। 

    ঐ সময়ে, মাষ্টার মশাই জ্যোতিভূষণ চাকীর কথা ভেসে এল ছাত্র চিন্ময়ের দিকে ―― " তুই কিন্তু বললিনা ম্যালার্মের কথা,

 ভুলে গেলি।"  তখনই, কীইই অলৌকিক প্রতিক্রিয়ায় চিন্ময় মাটির ওপর খড়ি দিয়ে ম্যালার্মে লিখলেন....!!! আমরা পড়তে শুরু করলাম, ――ম্যালার্মে এক হারিয়ে যাওয়া পিতা, পল ক্লোদেলের ভাষায়-প্যারিসের পারিজাত।

   কিছুটা অবাক হয়েই যেন, ঘুমের ঘোরে চিন্ময় ভাবছেন জীবনানন্দের কথা! আমাদের জানাচ্ছেন তাঁর মনোগত কথা....জীবনানন্দের মতো আধুনিকতম দুঃসাহসী ছাড়া কে আর বুঝতে পারতেন ম্যালার্মের এমন  রহস্য মেদুর অভিযান মালা? চিন্ময় গুহর গভীর বীক্ষণে উঠে এল কিছু কথা!――"এজন্য বোধকরি জীবনানন্দ লিখতে পেরেছেন-

১) নগ্ন নির্জন হাত 

২) অন্ধকার

গভীর অন্ধকারে ঘুমের আস্বাদে আমার আত্মা লালিত

আমাকে কেন জাগাতে চাও

হে সময় গ্ৰন্থি 

হে সূর্য হে মাঘ নিশীথের কোকিল , 

হে হিম হাওয়া 

আমাকেজাগাতে দাও কেন? 

      (ঘুমের দরজা ঠেলে, পৃষ্ঠা-১৯) 


আশ্চর্য এক শব্দঘোর মেখে চিন্ময় এসে আমাদের জানালেন --

২) শুধু শব্দের ভাস্কর্য , তার দৈর্ঘ্য তার র–ফলা ও রেফ তাঁকে টেনে নিয়ে ছিল কবিতাত্মার দিকে। 

আশ্চর্য অভিঘাত এনেছিল সেইসব শব্দেরা.... ম্যালার্মের ভাবনা ও অনুভব কেবল চিন্ময়ের অন্তরাত্মার ওপর ছায়া ফেলছিল কতকটা গ্রীসীয় স্থাপত্যের মতো। যেমন করে কৌণিক হিসাব না বুঝেও আজো অজন্তা ইলোরাকে ভালোবাসা যায় । চিন্ময় বুঝেছিলেন একসময়ে এভাবেই ছোঁয়া যাবে, যায়,  আবহমান কবিতা শরীরকে। এভাবেই কালে ও কালান্তরে ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলা বৈ তো অন‍্য কিছু নয়!!

  চিন্ময় গুহ জানালেন স্তেফান মালার্মে (১৮৪২-১৮৯২)যার আসল নাম এতিয়েন মালার্মে। তিনি বোদল্যের এক অভিযানের সেনাপতি। বোদল্যের-এর নতুন প্রস্বরকে তিনি অনুসরণ করেছেন। তবুও কবিতার ইতিহাসে তিনি একক ভাবে স্বতন্ত্র। 

চিন্ময় গুহর এই সাহসী উচ্চারণে আমরা জানতে পারি আরও দুঃসাহসিক কথা!!! ―― "তাঁর ভাবনা চিন্তাকে না দেখে যারা সোস্যুর, বার্ত,দেরিদার নাম করেন , করুণাঘন  অবজ্ঞায় তাঁদের  ছিন্ন পাঠমালা  আমরা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করতে পারি ।" (ঘুমের দরজা ঠেলে-পৃষ্ঠা-২০)।

কী অসাধারণ উচ্চারণ!!! স‍্যালুট স‍্যার, চিন্ময় গুহ!!!


চিন্ময় গুহর কাছেই জানলাম,

অশ্লীল বাস্তবতার কদর্যতা ও একঘেয়েমিকে ঘৃণা করতেন মালার্মে। (হায় কী বিষণ্ণ মাংস!) 

চিন্ময়ের কলমেই উঠে এসেছে এমনসব কথা ও তত্ত্ব । 

আরও জানলাম ,

..." মালার্মে তাই বুঝি নৈরাশ্য আর বিতৃষ্ণাকে কাটিয়ে উঠতে সমুদ্র যাত্রা(সমুদ্র বাতাস)  এবং মৃত্যুর (ঘন্টা বাদক )কথা ভেবেছেন। বোদল্যের মতো তিনিও স্বপ্ন দেখেছিলেন এক রহস্য মেদুর স্বর্গের।

 আমরা জেনেছি তাঁর "তিক্ত বিশ্রামে ক্লান্ত " , "জানলাগুলি'' "আকাশনীল"এর কথা ।জানিয়েছেন চিন্ময়গুহ। আমরা সাধারণ পাঠক স্যার চিন্ময় গুহের কাছে  ঋণী থাকবো ! চিরদিন!!!

    চিন্ময় গুহ শিক্ষক। সেই সুরে বাঁধা আছে তাঁর লেখা। তিনি লিখলেন― মালার্মে তার যন্ত্রনা আর উৎকন্ঠাকে দিয়েছেন ―― 

ক) একটি নৈর্ব্যক্তিক শরীর। 


এত সূক্ষ্ম তা সে মনে হয় এ পৃথিবী তা গ্ৰহণে সক্ষম নয় । 


খ) সে এক কাল্পনিক বিশ্বনির্মাণ করতে  আমাদের অনুপ্রাণিত করে না যা  আমরা ইংরাজি সাহিত্যে  পেয়েছি।


 প্রায়শই একটা  সাদাপৃষ্ঠা ― তাতে  মালার্মে লিখে রাখতে চান তাঁর  অক্ষমতার কথা । জীবন সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ আর স্বপ্নে আশাহত অপবিত্রতার খাদ তাঁকে কেবল দিয়েছিল  বিবমিষার  গা ঘিন্ ঘিন্ । পবিত্রতার সমুদ্রের সামনে তাঁর মাথা ঘোরে , সামনেই তিনি স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে থাকেন। 

 আশ্চর্য মগ্নতায় ইতিমধ্যে আমরা চিন্ময় গুহর মনের সরণি ধরে চলেছি..... দেখছি....জানছি...পড়ছি...!!!চিন্ময় বলছেন, "জানলা"কবিতায় মালার্মে এক মৃত্যুপথযাত্রীর বর্ণনা করেন। সে বিষণ্ণ হাসপাতালে ক্লান্ত মাথা রাখে রৌদ্রস্নাত এক কাঠের দেওয়ালে। এভাবে সে হয়ে ওঠে দিনগত পাপক্ষয়–ক্লান্ত, ব্যর্থ ও পলাতক জীবনের

 প্রতীক ----- এসবই তো পড়েছি চিন্ময় গুহর কলমের স্বতোৎসারিত  নির্ঝর থেকেই। ঋদ্ধ হয়েছি ফরাসি ভাব তত্বের আকাশে ডানাখোলা মানস পাখির মতো। 

 মালার্মের "আকাশনীল" কবিতায় চিন্ময় গুহর অনুবাদে ভেসে উঠেছে

এক ভয়ংকর হতাশা দীর্ণ কবির কথা  ও ছবি―word painting....! 

এই কবি যেন এক অসম্ভব আকাশের সামনে কেবল একা আর্তনাদ করে ওঠেন। (ঘুমের দরজা ঠেলে- , পৃষ্ঠা -২০)

মালার্মের জীবনস্কেচ এত সুন্দর ও সুদৃঢ়তায় পেতাম না কবি লেখক স্রষ্টা চিন্ময় গুহ না এলে। বাংলা সাহিত্যের এ এক নবতর রেঁনেশা। 

বাংলা সাহিত্যের সাথে নিবিড় নৈকট্যে চিন্ময় এঁকে চলেছেন –– একটা দীর্ঘ চলচ্ছবি যেন! 

   মালার্মে এই কানাগলি থেকে বেরোতে চান । এই বন্ধ‍্যাত্বের পরিসমাপ্তি চান। কোন বন্ধ‍্যাত্ব? দীর্ঘ লালিত জীবন অবক্ষয়ের সাহিত্যগত বন্ধ্যাত্ব ? কি চেয়েছিলেন তিনি ????

   আসুন আমরা জিজ্ঞাসা করে নেব, আমাদের আদর্শ, পথ প্রদর্শক, চিন্ময় গুহ কে....

    মেন্টর চিন্ময় গুহকে.... যেমন করে তিনি পেয়েছিলেন জাদু লন্ঠনের শেষ উত্তরাধিকার , অরুণ মিত্র, জ্যোতিভূষণ চাকী, প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত, অন্নদাশঙ্করের কাছ থেকে তেমন করে আমরাও আজ অসহিষ্ণু বন্ধ্যা গরলবর্ষী এই সাহিত্যভূমি থেকে উজ্জ্বল আলোয় যেতে তাঁর হাত থেকে নেব জাদু লন্ঠন।

      

       মালার্মের প্রসঙ্গে আসি, তাঁর সামনে ছিল প্রচুর বাধা -


১) পেশাগত সংকট

২) স্বাস্থ্য জনিত সমস্যা

৩) নিদ্রাহীনতা

৪) নিউ র‍্যালজিয়া

৫) আত্মহত্যার চেষ্টা ও প্রবণতা


তবু নান্দনিকের সন্ধান করেছেন তিনি। অবশেষে ১৮৭১-এ , ২৯ বছর বয়সে প্যারিসে ইংরেজি শিক্ষকের চাকরি হয়েছিল মালার্মের। তখনই ঘটে গেল অদ্ভুত  এক রূপান্তর (যা নাকি চিন্ময় গুহের রচনায় পড়ছি) ল্যকঁৎ দ্য মিলের ভাষায়―― "স্তেফান মার্লামে এলেন , আগের চেয়েও নম্র , বিনীত ও উন্মাদ এবং কপর্দকহীন।সঙ্গে এমন কিছু গদ্য এবং কবিতা যা সম্পূর্ণ অবোধ‍্য। চিন্ময় গুহ জানালেন তাঁর বিখ্যাত ইশারাময় কবিতা "ফনের বিকেল "এর কথা। এ ছাড়াও গভীর নিষ্ঠায় মালার্মে তিল তিল করে নির্মাণ করেছিলেন নিবিড় ও সমাহত, "দুর্বোধ্যতম" সব কবিতা।  কিম্বা বলাকা সনেট। 

  বলাবাহুল্য সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় নির্মিত হতে থাকল তাঁর (চিন্ময় জানিয়েছেন ,) যুগান্তকারী এক নন্দনতত্ত্ব। ১৮৯৭ সালে মৃত্যুর আগের বছর, 'অসংলগ্ন ভাবনা নামে একটি সংকলনের জন্য মালার্মে একত্রিত করলেন তাঁর সব ভাবনা চূর্ণ এবং বক্তৃতা। ঐ সময়ে প্রকাশিত হল তাঁর সবচেয়ে বিতর্কিত কবিতা 'পাশার এক দান"। টাইপ্রোগ্ৰাফিতে ছাপা হয়েছিল এ কবিতা। এতে ছিল অসম্বন্ধ পৃথিবীর রহস্যভেদ  করার জন্য আকুল চিন্তার অভিযানের প্রকল্প। 

 এখানেই চিন্ময় বলেছেন মালার্মের শব্দ প্রক্ষেপনের কথা। পৃষ্ঠার ওপরেই মালার্মে শব্দগুলি প্রক্ষেপন করেছেন পরম বাস্তবকে প্রকাশ করার জন্য। শব্দের আদর্শ সংস্থাপনকে খুঁজেছেন শূন্যতার ঘোড়সওয়ার মালার্মে । তবুও তাঁর চূড়ান্ত প্রচেষ্টা গুলো যেন অসফল। আবার তারই মধ্যে তিনি খুঁজে পেলেন "সাদা পৃষ্ঠার হতাশা"। আমরাও আশ্চর্য হয়ে পড়ি আর ভাবি এবং ছবি দেখি সেসবের..... দেখি ঐ সাদা পৃষ্ঠার হাতছানি!! চিন্ময় গুহর লেখাতে বারবার যা ঘুরে ফিরে এসেছে এক মেদুর রহস্যের মতোই। হ‍্যাঁ ঐ "সাদা পৃষ্ঠা"ই !!!

 কোথাও না কোথাও ঐ সাদা পৃষ্ঠার আকর্ষণ চিন্ময়ের প্রতিভাকেও কি তবে গ্ৰস্ত করে রেখেছিল? ? ? ?


কীইই অপূর্ব দিকনির্দেশ পেলাম চিন্ময় গুহর লেখায়----বাকিটুকু চিন্ময় গুহর লেখা থেকে হুবহু উদ্ধৃত  করলাম----

"মালার্মে চেয়েছিলেন যে কবিরা হয়ে উঠুন ক্রিয়াপদের জাদুকর। তিনি চেয়েছিলেন ভাষাস্থাপত্যের মধ্যে শুদ্ধ চিন্তার (idée pure) আলোকময় ক্ষমতাকে বন্দী করতে, যাতে তার ভেতর থেকে উৎসারিত হয়ে পারে নতুন এক আঙ্গিক। 

মালার্মে চেয়েছিলেন আপাত-দৃশ্যমানতাকে ভেদ করে প্রকৃত সারবত্তা (essence)-কে স্পর্শ করতে। যাতে গোলাপের আড়ালে অথবা গোলাপের মধ্যে প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে গোলাপের আদর্শ সত্তা।


‘সাহিত্যের সিম্ফনি’-তে এইরকম দৃশ্যপট এঁকেছিলেন মালার্মে :―― একটি দোমড়ানো গাছ, যার বাকল একরাশ স্নায়ুশিরার মতো, যার স্নায়ুমুখকে তুলনা করা হয়েছিল বেহালার কান্নাভরা সুরের সঙ্গে, যা গাছের ডালের শেষ প্রান্তে একটি সংগীতের স্বরলিপির মতো কাঁপছে...। শোকার্ত অববাহিকা এক আবহমান ফুলের বাগানে ঢুকে পড়েছে: মৃত, ভারী, ধাতব জল, পেতলের ফোয়ারা, যেখানে আছড়ে পড়ে বেদনার্ত এক অদ্ভুত রশ্মি, মুছে যাওয়া মাধুর্য নিয়ে।


একদিক থেকে প্রতীকী অনুষঙ্গ-কে হয়তো শার্ল বোদল্যের-এর চেয়েও বেশি তীব্রতায় অনুসন্ধান করতে চেয়েছিলেন মালার্মে। অনুষঙ্গগুলোর একটিকে অন্যটির ওপরে সংস্থাপন করে দেন তিনি। অভাবনীয় দক্ষতায় মিলিয়ে-মিশিয়ে দেন। যেমন, স্বপ্নে দেখা দু'টি নারীশরীরকে ফন একটি রেখায় বিম্বিত হতে দেখেন––— দিগন্তে উন্মোচিত একটি শান্ত শুভ্র রেখা, যা একটি সুরমূর্ছনার মতো। এভাবে শিল্পের প্লাস্টিক গুণ ও সাংগীতিকতাকে এক স্বর্ণিল শূন্যতায় স্থাপন করা হয়। 


১৬ নভেম্বর ১৮৮৫ সালে পল ভের্লেন’কে লেখা এক স্বীকারোক্তিমূলক চিঠিতে তিনি লেখেন :――

আমি সব সময় এক অ্যালকেমিস্টের ধৈর্য নিয়ে স্বপ্ন দেখি, যেমন সমস্ত ভণিতা ও তৃপ্তিকে বিসর্জন দিয়ে লোকে এক সময় ঘরের আসবাব ও কড়িকাঠ জ্বালিয়ে দিত, তেমনি করে মহাশিল্পের উনুনে উৎসর্গ করতে... একটি বই, কারণ আমি নিশ্চিত যে বই একটিই, অচেতনভাবে যেই তা লিখুক না কেন...। বইটির ছন্দ (যা নৈর্ব্যক্তক আর সজীব) থেকে পৃষ্ঠাসংখ্যা পর্যন্ত সেই স্বপ্ন বা ওড-এর সমীকরণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়।


প্রিয় বন্ধু, এই হল আমার পাপের নগ্ন স্বীকারোক্তি, যা আমি হাজার বার রক্তাক্ত, ক্লান্ত মনে প্রত্যাখ্যান করেছি, কিন্তু তা আমায় ভর করে থেকেছে, এবং হয়তো একদিন আমি সফল হব, গোটা বইটি লিখতে নয় (তার জন্য না জানি কী করতে হয়), অন্তত এক টুকরো নির্মাণ তুলে ধরতে যা বাস্তবতার গরিমায় ঝলমল করে উঠবে, বাকি সব কিছুর দিকে আঙুল দেখিয়ে যা বলে উঠবে ওসব একটি জীবনও টেকার নয়। ওই নির্মিত অংশগুলো দিয়ে প্রমাণ করা যাবে বইটির অস্তিত্ব, যা আমি চিনতে পেরেছি, কিন্তু শেষ করে উঠতে পারিনি।


এক উন্মীলীয়মান গ্রন্থের অসম্ভব স্বপ্নের সামনে দাঁড়িয়ে সাহিত্যকে বিনির্মাণ করেছিলেন তিনি।

 সময় পৃষ্ঠার হতাশা খুঁজে পেতে গিয়ে মালর্মে হয়ে উঠলেন গভীর ভাবে আত্মস্থ আর সমাহিত কবিতার প্রবক্তা ও পুরোহিত। সেখানে অদীক্ষিত পাঠকের প্রবেশ নিষিদ্ধ। তিনি দাবী করলেন নিখুঁত ও অমলিন এক ভাষা যা সুযোগ সুবিধা দেয়া নিষিদ্ধ করে দেন। এডমান্ড গম্  কে লেখেন কবিতা তো খবরের কাগজের পৃষ্ঠা নয়।"(ঘুমের দরজা ঠেলে।)



*******************************************************************

      


পারমিতা ভৌমিক

বাংলা কবিতার আলোচনার জগতে পারমিতা ভৌমিক একটি অতি পরিচিত নাম। কবিতার রহস্যময় দুর্ভেদ্য মায়াটান তাঁর আলোচনার প্রসাদগুণে প্রাঞ্জল হয়ে ওঠে। কবিতাপাঠের অনাস্বাদিত আনন্দে ভরে ওঠে পাঠকমন। স্বরবর্ণের বর্তমান সংখ্যায় আমরা পড়ছি স্তেফান মালার্মে  কবিমানসের উপর তাঁর মননঋদ্ধ আলোচনা।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন