নিমাই জানা / দু'টি কবিতা
নীল শরীর ও কিছু অপ্রাকৃত অন্তর্বাস গুচ্ছ
হরপ্পা ঠোঁটের মতো রহস্যময় দুর্গের ভেতর ট্রাপিজিয়াম অসুখ গুলো খুঁজে বেড়াই রাতের অন্ধকারের কোন এক অপ্রাকৃত মানুষ হয়ে , যার পিঠে একটি দীর্ঘকায় স্বরবর্ণ বসে আছে দুটি সংক্রমিত ঊর্ধ্ব মহাশিরা নিয়ে
যারা ক্রমশ পৌনঃপুনিকের ছায়া ভেঙে খায় নিম্নাঙ্গ গর্ভকেশর জোড়া হলুদ পুরুষের সাথে , আমি কিছু মৈথুন অসুখ নিয়ে যমুনা পুলিনে বাজিয়ে চলি নৈসর্গিক বাঁশি , শ্মশান থেকে পঞ্চমুখ এগিয়ে আসে রডোডেনড্রন ছায়া ভিজে
রাতের প্রতিটি আততায়ী তারার নিচে অযোগবাহ অক্ষরেরা শুয়ে থাকে গলিত মোমের মতো শিরদাঁড়া নিয়ে
তারা আমার শ্মশানের পাশে নয়জন মাতাকে উৎসর্গ দিয়ে আসছে এক কমন্ডুল কালো তিলের জল , আমি বাৎসায়নকে বড় ভয় পাই লাল শাড়ির মতো যে উপসর্গ দোষ গুলোকে নৈশযানে লুকিয়ে রাখে বিভাজিত কঙ্কালের মতো
রাতের পোশাক পরলেও সকলকেই তবুও উলঙ্গ দেখায়
মেঘেদের তলপেটের কাছে আরও অজস্র ঈশ্বরের সৃষ্টি তত্ত্ব জেনে আসি কোন কাল্পনিক নরম তৃণভোজী হয়ে
গলিত বীর্যরেনুর মতো এক ক্রোমোজোম ভাঙা দাঁত নিয়ে বিশাখা হরিণেরা দৌড়ে যাচ্ছে আমার বাবার বিছানার দিকে
সেখানে ১১৩ জোড়া ভূমধ্যসাগরের সপ্তঋষিরা শুয়ে থাকে বিস্তৃত গণিত নিয়ে, প্রতিদিন আমার ঈশ্বরী একটি অর্জুন গাছ হয়ে যায় আমাকে বসিয়ে দেয় হলুদ পাপড়ির পরাগের নীচে , আমি বৃত্তাকার কাপুরুষ
কিছু পর্ণমোচী দানার মতো আমিও প্রতিদিন মানুষের খোলস খুলে রাখি নরম জানালার হৃদপিন্ডে
রাতের নির্ঘুম প্রাণীরা আমার তলপেটের উপর উপবৃত্তাকার নৌকা চালিয়ে বাড়ি ফিরে আসে , আমি কিছু পরজীবীর ছায়াগাছ নিজের নাভির উপর পুঁতে সম্প্রদান করি আমার সরল পুরোহিত মন্ত্র ঘরে
মা কিছু বিস্ময়সূচক চিহ্ন লুকিয়ে রেখেছিল কৃষ্ণ বর্ণের জমাট হিমোগ্লোবিনের উপর
আমি কিছু প্যারাসাইট ঠোঁট খুঁজছি আজও পিশাচের মতো
জনশূন্য মেগাস্থিনিস ও বাবার সেন্ট্রোজোম
আমার বিছানাকে জনশূন্য করে সকলেই একদিন উড়ে যাবে
মেগাস্থিনিসের মতো একটি বিবর্ধিত অসদ বিম্বের আয়নার দিকে
আমি তীব্র পোতাশ্রয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর সকলের অন্তঃস্থ বর্ণ চিহ্নগুলো শ্মশানে ডুবিয়ে রাখি মধ্যদুপুরের এক কাকতালীয় বিভাজিকার মতো
এখানে কিছু স্তন সমগ্র কথা রেখে আসার পর শ্মশানবন্ধুরা একসাথে আমার বিয়োগ চিহ্নটিকে ঋণাত্মক ধাতু করে তুলবে মৃত জেব্রার ঠোঁট দিয়ে
আমার শরীরের প্রতিটি ভূখণ্ড অথবা ধারালো বিষধর পিঁপড়ের ঠোঁট ৩৩ জোড়া সেন্ট্রোজোম অবধি নেমে কিছু লোমওয়ালা শরীরের স্তম্ভমূলের নীচে থাকা পুরুষ ধান গাছের বৃত্তস্থ কোণ টুকরো করে কেটে খাচ্ছে , একটি কাঁটা গাছে আমাদের অনন্ত সহবাস ঝুলে আছে দেখো লাল চাঁদের মতো
একটি লাভাময় অসুখগুলো বের করছে রাতের নিষিদ্ধ সুর , অর্জুন পুরুষেরা মহাপ্রস্থান শেষে মহাভারতে রেখে যাবে এক পক্ষকালের বিরতি যুদ্ধ
শিশুরাই রাতের অন্ধকারে নিজেদের ছায়ার নিচে দাঁড়ানো আর এক ছায়াকে ভয় পায় ,
আমি শুধু কল্পনা করি বাবাও কীটনাশক ফেলে শ্রীরাধার মতো অভিসারিকা হতে চেয়েছিল বারংবার
নিরক্ষীয় অসুখের কাছে দাঁড়ালে ছায়া দীর্ঘতর নয় , শুধু নিজের আবছায়া পরিচ্ছদে শ্মশানের ধোঁয়া গন্ধ লুকিয়ে থাকে
হিমোসায়ানিন চাদর মাথায় নিয়ে কলঙ্কের ঘরে ঢুকে যাচ্ছে প্রতিটি পরজীবী নারী , মৃত্যুর আগে উলঙ্গ হয়ে আছে কলা পাতার মতো
আকাশমনি তলায় দেখেছি বিমুর্ত হয়ে শুয়ে থাকে কর্কটক্রান্তির অ্যানালাইটিক্যাল ঋতুচক্রের ঈশ্বর
৩ জন সোনালী রঙের পুরুষ গলিত গর্ভাশয় দিয়ে রাতের কোন প্রাসাদের ভেতর ঈশ্বরীর যৌনাঙ্গ লুকিয়ে ফেলে ভয়ে
হঠাৎ , আজ নিজেকে একজন ঋণাত্মক নিষেকের ঘোড়া মনে হলো
*************************************************************************


"রাতের প্রতিটি আততায়ী তারার নিচে অযোগবাহ অক্ষরেরা শুয়ে থাকে গলিত মোমের মত শিরদাঁড়া নিয়ে" অথবা "শিশুরাই রাতের অন্ধকারে নিজেদের ছায়ার নিচে দাঁড়ানো আর এক ছায়াকে ভয় পায়," এই দুটি চিত্রকল্পের দৃশ্যগত ইন্দ্রিয়গম্য কাঠামোটি নিমাই জানা এক আপাত দুরূহ কিন্তু দুর্বোধ্য নয় (বুদ্ধদেব বসুর অসামান্য কবিতার নির্মাণ প্রসঙ্গে নিমাইকে দিয়ে সাম্প্রতিক কবিতার নতুন ধারা সৃষ্টি করিয়ে চলে অবিরত।
উত্তরমুছুন