কবিতাগুচ্ছ * কল্পোত্তম
কৃষিতন্ত্র
২৪.
বারো বছর বয়সে
যে কথা বলবো ভেবেছিলাম
চল্লিশ বছরে এসে বললাম।
এখন তুমি তনু ও মনে
অনেক বেশি পরিপূর্ণ,
মজ্জায় মজ্জায় ধৈর্য্যের পাহাড়
ক্ষয়িষ্ণু শিলায় ডাকা ভূমিরূপ
কোথাও কোথাও জড়িয়ে ধরেছে
অপরিপূর্ণতাও।
বারো বছর বয়সে বললে
যে উত্তর দিতে পারতে
এখন তার উত্তর দিতে না পেরে
অনেকটা ঘুরিয়ে বললে-
মাটি ভিজে থাকতেই
বীজ ছড়াতে হয় চাষি
না হলে শুকিয়ে যায়।
অনেক পরিপূর্ণতার মাঝে
কিছু অপরিপূর্ণতা
অপরিহার্যতাকেও টেনে নিয়ে যায়
আরেক জীবন চক্রের দিকে।
২৫.
পাখির ঠোঁট দিয়ে
ছড়িয়েছো বীজ
পাখির ডানা দিয়ে
ছড়িয়েছো হাওয়া
নিত্য আসা যাওয়া
অলিতে গলিতে
পাখিটির তাই।
উঠোনের একপাশে
মাটির পরতে ঢেকে
ভিজিয়ে ভিজিয়ে
যতনে রেখেছি তাকে
অঙ্কুর হবে বলে
স্বপনে গেয়েছি গান
পাখির বাসায়।
স্বপনে বৃষ্টি ঝরে
আলগা হয় মাটি
গভীরে প্রবেশ করে
জীবের শেকড়
রোদ ঝড় কুয়াশাতে
অঙ্কুর জাগিয়ে রাখি
পার্থিব আশায়।
২৬.
সাতটি তারার দু'টি দু'টি গ্ৰহে
বুনেছো বীজ অবাক বিস্ময়ে
জেগে ওঠে অঙ্কুরোদগম
জেগে ওঠে মাটির অবক্ষয়ে।
তারার দিকে সবাই ধাবমান
কে চায় থাকতে গ্ৰহের মধ্যে নুয়ে
স্বপ্ন তাদের আলোর দিকে যাওয়া
হাঁটতে যে চায় আগুন ছুঁয়ে ছুঁয়ে।
তারাগুলোর আলাদা কি আর রূপ
অষ্ট অঙ্গে আগুন প্রবহমান
তুমিও জাগাও তোমার মাঝে তাকে
তুমিও তখন তাদেরই সমান।
আগুন হলেই পোড়াতে নেই জেনো
আগুন থেকে ফাগুনে আসে ফুল
আগুন দিয়ে জীবের আসা যাওয়া
আগুন দিয়েই ভাঙবে সকল ভুল।
তোমার মাঝেও রয়েছে আগুন তাই
বীজ বুনেছো সাতটি তারার গ্ৰহে
তোমার ফুলকি করেছে কংস বধ
ধর্ম যুদ্ধে রয়েছো সকল সহে।
৩০.
গ্ৰীষ্ম অবকাশে
চেয়ে থাকি আকাশের দিকে
চেয়ে থাকি চাতক,
শরৎ অবকাশে
চেয়ে থাকি মাঠের দিকে
চেয়ে থাকি দুধভরা শিষ।
ধান গাছের চারপাশ থেকে
আগাছা না সরালে
বৃদ্ধি হয় না ধান গাছের
হয় না সমৃদ্ধি। বার বার দেওয়া
জৈব অজৈব সারে
বেড়ে ওঠে নলখাগড়া।
তুমি কৃষক। তোমাকে জানতে হবে
ঠিক কোন্ আদর্শ সময়ে
কার রথের চাকা মাটিতে বসিয়ে দিলে
কার ঘরে উঠবে স্বর্ণশিষ।
৩১.
পথিকের পায়ের তলায়
তৈরি হয় পথ,
পথেরও আগে
পথিকের হাঁটাচলা।
যে পথে শস্যবীজ
সেই পথে পথিক হেঁটেছে,
হেঁটেছে কৃষক
মহাকালের চরকা হাতে।
মহাপ্রলয় থেকে
মহোৎসবের দিকে
পৃথিবীকে নিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা নিয়ে
জন্ম হয় কৃষকেরই;
কৃষকই পারে
তিন বেলা দাউ দাউ জ্বলে ওঠা
আগ্নেয়গিরির
আগুন নেভাতে।
৩৩.
একটু একটু করে
ছুঁয়েছো আকাশ গঙ্গা
একটু একটু করে
ছুঁয়েছো তারাদের কাঁধ,
আমার দিকে তাকালে
অনেক নিচে দেখতে পাও আমাকে।
যত উপরেই যাও
মাঠিই তোমার আধার
যত উপরেই যাও
আমিই তোমার আধার
যুগ যুগ হেঁটে যাই আমি
লাঙ্গল কাঁধে। তোমার চৌহদ্দির
চারপাশে রক্ষাকবচ, পতপত রঙিন পতাকা
আমার পাঁজরে গাঁথা।
মাটিতেই গাঁথা থাকে পা আমার
তাই আমি উড়ি না কখনো
তুমি রোজ ছুঁতে চাও তারাদের দেশ।
মনে রেখো, যত উপরেই যাও
মাটির কাছেই ফিরতে হবে একদিন।
৪২.
রাত্রির অন্ধকারে লাঙ্গল দিয়ে
বুনেছো তারা
তাঁরই ভেতর সঞ্চরণ তোমার আমার
আমাদের যুগ বদল
আমাদের মন বদল, মান বদলের
তাঁরই মাঝে প্রবাহিত
জয়গান ব্যক্ত জীবনের।
লাঙ্গলের গায়েও কোথাও না কোথাও
লেখা থাকে লিঙ্গের ধারাপাত।
সেই ধারাপাতেও
ধারাবাহিকভাবে শেখায়
কিভাবে তৈরি করা যায় ব্রহ্মাণ্ড
কিভাবে ব্রহ্মাণ্ডকে রাখা যায়
শস্যের ভেতর নিখুঁত নিপুণতায়।
সেই ধারাপাতেও
ধারাবাহিকভাবে শেখায়
গ্ৰহ নক্ষত্র সঞ্চরণও
কারো না কারো শরীরের রক্ত সঞ্চরণ।
***********************************************************************




কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন