কবিতাগুচ্ছ * শীলা দাশ
মেঘ চাই গো মেঘ চাই
সাঁঝ ক্ষ্যাপা বাউল হেঁকে চলেছে
রাঙ্গা মাটির পথে পথে
একটা মেঘ চাই গো
একটা মেঘ চাই
হে আকাশ তিরতির করে কেঁপে ওঠা
একটা মেঘ দাও
এ দগ্ধ দহন বেলা
ধুয়ে মুছে যাক
মোষের রঙের মতো
একটা বড় মেঘ দাও
নৈঋত আকাশ জুড়ে
পাখির ডানায় শিহরণ
ঝরে ঝরে পড়ুক
বাউল কান্না শোনো আকাশ একটা অঝোর ঝরা সজল
রিমঝিম রাত দাও।
শব্দের নদী
তবু মনে খেদ জেগে থাকে
মেধাবী ছাতিমতলায় প্লুত মেঘ
যত ই আদরবৃষ্টি ঘনাক না কেন
এতদিনের প্রতীক্ষা কৌতূহল
সব ই কি ভস্ম হয়ে গেল?
কুন্দ ফুলের মতো ভোরের আলো
যখন নিহত স্বপ্নে ভেসে ওঠে
তবু কেন বিস্মৃত হতে পারি না
স্মৃতিচিত্রে অদৃশ্য ভাঙাচোরা দৃশ্য
বৈশাখের উষ্ণতপ্ত
বিক্ষুব্ধ রাতে
পাশের কপাটে ঝড় উঠল মেতে
দু আঙুলে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো
হোল অন্ধকার ক্রোধের মুহূর্তে
হৃদয় শস্যের আকাঙ্খার পাতা
যা ছিল দু মলাটের মোড়কে
নাম না জানা কোনো শব্দের নদী।
জ্যোৎস্নাবতী
এ জীবন ঠিকানাবিহীন
অশরীরি ঋণ
দুপাশে নির্জন টিলা
বিষন্ন বধ্যভূমি।
চলেছি কোথায় কোন
পথের কিনারে?
ওখানে খাদের আঁধারে
কে আছে পড়ে?
জ্যোৎস্নাবতী মেয়ে!
ঋতুকাল তার কখন
গিয়েছে উড়ে
নষ্ট ডিম থেকে দ্যাখো
ভ্রুণগুলো সব
উড়ছে ধানে,খড়কুটো
আর নাবাল ঘাসে।
এদিকে ঝুমকোলতা থেকে যাযাবর আয়ু
খসে পড়ে রোজ।
স্বপ্নভঙ্গ
শুয়ে আছি কোপাই নদীর পারে
ভুবনডাঙ্গার চরে সোনাঝুরি ছায়ায়
নদীতীরে উথালপাতাল হাওয়া
দুচারটি ছেঁড়া মেঘ আকাশে কাটাকুটি খেলে অনায়াসে
খুলে ফেলি সব অলংকার
আভরণহীন হয়ে যাই
রাত হলে কিছু কিছু নক্ষত্র
হীরে ফুল হয়ে ঝরে পড়ে
স্বপ্ন দেখি রাজ্যপাট গড়ি
স্বপ্নভঙ্গে দেখি হেলে গেছে চাঁদ।
বেদুইন
দহনবেলায় পোড়া আমি
এক বাউণ্ডুলে বেদুইন
আগুন সাগরে অবগাহন
করে চলেছি সাঁকো পেরিয়ে
মাটিতে জলজ চিহ্ন এঁকে এঁকে
পথহারা এক পথিকের
ঝোলাশুন্য পদাবলী গান
গেয়ে পাড়াগেঁয়ে সুখ গায়ে মেখে
রোহিনী নক্ষত্রের দিকে।
**********************************************************


কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন