কবিতাগুচ্ছ * চন্দন রায়
আমার ছায়ারা তোমাকে
আমি চলে গেলেও আমার ছায়ারা ফিরে আসবে
হয়ত এইসব রাস্তায় দেখা হবে না---
নিজের জিজ্ঞেস করে নেব পরিচয়
বিস্ময় থাক, বৃষ্টির পিছনে লুকোনো প্রেম
নিঃশ্বাসের দূরত্বে আধখোলা দরজার ছবি
কিছু বলতে পারুক আর না পারুক
একটা আলোক রেখা এনে দেবে !!
পরস্পরের গন্ধ নেব, জিভের লালায় খুঁজে নেব
বিচ্ছিন্ন চিৎকার, অকারণ শীতলতা
আমি চলে গেলেও আমার ছায়ারা তোমাকে ডেকে
নেবে, হয়ত বিস্মিত তুমি তখন আর কিছুই বলতে
পারবে না-----
এই পর্যন্ত এবং এতক্ষণ
এতক্ষণ আড়াল ছিল
এইভাবে চালিয়ে যেতে পারলে ভূমিতলে বসত
নিশ্চিত, অসমর্থ পা দুটো শরীরের কাছে স্বাভাবিক
সব এই জমিতেই ঘটে
একটা কাহিনী নির্মাণ করে নিতে পারলেই
পিতৃপুরুষের ঠোঁট থেকে পানের লাল টুকটুকে রঙ
কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না
বহুদূর এই হাত মৃত্যুর ভিতর ভাঁজ করে চরিত্রলিপি
লিখে নিতে পারে
এপর্যন্ত এবং এতক্ষণ আড়াল ছিল
শুধু বুঝতে পারেনি ধানক্ষেতের পাশে একজন
মানুষ পাহারা দিচ্ছে, তার পাশে হাড়ের আগুন জ্বলছে----
প্রতিজ্ঞা
প্রতিজ্ঞা একটা সুদীর্ঘ সফর
মাঝে মাঝে জন্মগ্রহণ
মাঝে মাঝে নিরুদ্দেশ
পুনরাবৃত্তি সহ---
রহস্যের এই প্রাতঃভ্রমণ, কাল
সমস্ত সৌন্দর্য মুছে
বারান্দায় একা একা
বারবার নতুন শব্দ, প্রতিজ্ঞা আবার---
এই সুদীর্ঘ সফর ঘিরে
অসংখ্য স্মৃতির ধ্বনি
সৃষ্টি হয় আপনা আপনি
তারপর বালু ভীষন নগ্ন--- প্রকাশে উদাস
তাই এরসঙ্গে সহবাস
প্রয়োগ কৌশল দেহ
মিলন প্রত্যাশা ঘিরে রাখে
সমস্ত ছায়া, মনুষ্য জীবন-----
কপাল কিনারে
প্রত্যেকের আঘাত জামার নিচে
পেরেকের মত
প্রতিদিন তাকে আদর যত্নে ঘুম
জানলায় দাঁড়ায়
কবে সেই হাতে অস্ত্র উঠে আসবে
কবে রক্তের ঘোলা জলে
চুপচাপ জলছাপ রাত
অর্জুনকে বোঝাবে ক্ষত্রিয় বিচার
কল্পদ্বীপ আর স্বপ্নকাল রুগ্ন বিছানায়
শরীরের মৃতরেখা
ভয় পায় বুটের শব্দ, কনভয়
শুয়ে পড়ে, থমথমে দুর্বল ডানায়
স্রোতহীন বনবাসী নাভি
এভাবেই বছরের পর বছর
জন্মদিন পালন করে মানুষের বেশে
কপাল কিনারে শেষ ভৃত্য কতকগুলো
শব্দ জেগে থাকে পশমের মত-----
অসমাপ্ত চিত্রনাট্য ---১
চিত্রনাট্যের শেষ দৃশ্য
উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত পাঠশালার মাদুরে
মিড ডে মিলের থালা হাতে দীর্ঘজীবী ঈশ্বরের দল
শ্রাবণময় চোখ
বন্ধ দরজার ভিতর থেকে নেপথ্য কন্ঠ
"আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে"---
দূরে রেললাইন
নতুন আবিষ্কার বুলেট ট্রেন
গতিবেগ ঘন্টায় তিনশ মাইল
ভারতবর্ষের পতাকা উড়ছে
মসৃণ দাঁতের ফাঁকে বৃক্ষের সমগ্রতা
যোজন ছায়ায় বিশ্ব বিকাশের জন্মপুরাণ-----
পরিচয়লিপি ভেসে ওঠে-----
**************************************************************************
আশির দশকের অন্যতম বিশিষ্ট কবি । আটটিরও বেশি কাব্যগ্রন্থের প্রণেতা । নতুন মান্দাস নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন, যা ইতিমধ্যেই পাঠকপ্রিয় হয়ে উঠেছে । কবি চন্দন রায়ের সম্প্রতি প্রকাশিত দুটি কাব্যগ্রন্থ : জেলখানার খোলা চিঠি এবং শিরোনাম সন্ধান চলছে ।




চন্দন আশির কবি। আশির কবিতা হলো এককথায় লোহিত সরণের ক্রমশ গৈরিকীকরণের মেদুর অভিশাসন। সত্তরের মরচে ধরা বীজের জীবন। কবি চন্দন রায় তারই প্রতিভু। আশির দশকের সঙ্গবদ্ধ কোনো উচ্চারণ নেই। প্রত্যেক কবিই, চন্দন, অলোক বিশ্বাস, প্রজিত জানা, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় (উত্তরপাড়ার), জহর সেন মজুমদার, বিজ্য সিংহ কতো প্রিয় নাম।
উত্তরমুছুন