সোমবার, ১৩ জুন, ২০২২

গল্প * প্রদীপ দে



লেঙটির রোল 

প্রদীপ দে 

       

এক আকাশ মেঘ। বৃষ্টির কিন্তু দেখা নেই। মনা আনমোনা মামা মর্মর এরও পাত্তা নেই। সেই কখন যে এগরোল আনতে গেছে এখনো কোন খবর নেই।  

বিকাল পাঁচটার সময় আদর করে বললে --  কিরে আজ ক্যামন ওয়েদার দেখেছিস?

--  হ্যাঁ দেখেছি। মনে হয় ঝড় বৃষ্টি হবে।

--  তাহলে রোল খাবি?

--  মামা,  তুমি রোল খাবে ? তোমার না বুকের সমস্যা?

--  না না ডাক্তার রোল খেতে মানা করেনি।

-  ওহঃ তাই নাকি?


এরপর আর কথা বাড়ায়নি মর্মর মামা। থলে হাতে বেড়িয়ে পড়েছে।

মনা শুধু চেঁচিয়েছে --  তা থলে নিচ্ছো কেন?

--  আরে প্রতিবেশীদের সব বোঝাতে নেই। লুকিয়ে  আনবো। সবাই ভাববে বাজার করেছি।


সেই মামা এখনো ফেরে নি। মনা দেখে দু ফোঁটা জল জানলা দিয়ে মাথায় যেন পড়লো! 

হ্যাঁ  ঠিকই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। এবার মনা কি করবে ?


মামা মর্মরকে মোবাইলে ফোন করতেও পারছে না, মোবাইল নিয়ে যায়নি, দেখা যাচ্ছে যন্ত্রটি টেবিলে অবহেলায় পড়ে আছে।

দশ মিনিট মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে গেল। শিলও পড়লো।

তখন মনা র মাথায় একটা  বুদ্ধি খেলে গেল।

মোবাইলে ফোন লাগালো মামার ডাক্তার কে। উনি একেবারে লাগোয়া পাড়ার বাসিন্দা।

-- হ্যালো -হ্যালো - ডাক্তারবাবু আমি মনা বলছি --

--  হ্যাঁ - হ্যাঁ  -- বুঝেছি। আমি তোমার ফোনের অপেক্ষাতেই ছিলাম।

মনা ভয় পায় --  কেনো দাদু?  কিছু  হয়েছে? মামা ফেরেনি তুমি কিছু জানো?

--  জানি না আবার?  মামার পিঠে ঢামা বেঁধে দিয়েছি। এই বয়সে লুকিয়ে রোল খাওয়া?  তাও আবার এগের? ধরে এনে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছি। এটাই ওর শাস্তি।

-- সে কি গো ডাক্তার দাদু মামা শাস্তি পাচ্ছে?  মামা যে বলছিল তুমি এগরোল খেতে মানা করোনি?

-- মনা,  তুমি চলে এসো এখনই।  ব্যাগে রোলগুলো ঠান্ডা মেরে যাচ্ছে --  এসো, তুমি আর আমি মিলে ওদের সদ্গতি করি।

--  আচ্ছা আমি এই এলাম বলে।

মোবাইল বন্ধ করে মনা হাঁটা দেয় ডাক্তার বাড়িতে।



বাড়িতে কলিংবেল বাজাতেই ঝাঁজখাই গলায় ডাক্তার গিন্নির চিৎকার শোনা যায় --  কে- কে?

--  আমি মর্মর মামার ভাগ্নী মনা।

--  ওহঃ এসো এসো ভেতরে এসো। ভালোই হয়েছে দুজনার শাস্তি দেখে যাও।


মনা অবাক --  দুজনার মানে?

বিশাল চেহারার ডাক্তার গিন্নির মুখ ভর্তি  হাসি --  তবেই না?  ডাক্তার হয়ে পেশেন্টকে শাস্তি দেওয়ার নামে এগরোল গুলো সাঁটানোই ছিল মুল উদ্দেশ্য। আমি ঠিক সময়ে চলে এসেছি। একেব্বারে দুজনাকেই কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছি। তুমি এসেছো, ভালোই হয়েছে আমরা দুজনা মিলে এবার সস দিয়ে এগরোল গুলো খাবো --  চলো উপরে চলো।


উপরে উঠেই মনা তাজ্জব। ডাইনিং রুমে ডাক্তার দাদু আর মর্মর মামা কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

ডাক্তার গিন্নি মনাকে নিয়ে সামনের ডাইনিং টেবিলে বসে পড়ে। মামার থলে টেনে নেয়। 

রোল বার করতে গিয়ে--   

উরিবাব্বা! একিরে? --  বলে চেঁচিয়ে ওঠে গিন্নি!


মনাও ভয়ে চমকে ওঠে, টেবিল ছেড়ে উঠে পড়ে একটা  ভয়ে।


কান ধরা ছেড়ে ডাক্তার আর মামা দৌড়ে আসে।

গিন্নি ভয়ে বেসামাল। সব্বাই অবাক হয়ে দেখে একটা লেংটি ইঁদুর ব্যাগের মধ্যে থেকে লাফিয়ে বের হয়ে ভয়ে, এক লাফে পগাড়পাড়!


চারজনে ব্যাগ উল্টে দেখে - এগরোল দুটি কুচিকুচি করে অনেকটাই খেয়ে নিয়েছে ব্যাটার ছেলে ওই পুচকে লেংটিটি!


*************************************************************************



প্রদীপ দে 

লেখক  নেশায়। পেশা ছিল হিসেবনিকেশ।  বয়স -৬২ । কলকাতা নিবাসী। বিবাহিত।
নিজের লেখা কয়েকটি বই আছে।


1 টি মন্তব্য: