শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০২২

পাঠকের মতামত * স্বরবর্ণ * ৮



কবি-লেখকেরাই স্বরবর্ণের মূল চালিকা শক্তি। তাঁদের সৃষ্টিকাজ বুকে ধরে স্বরবর্ণের পথ চলা।কোনও সন্দেহ নেই,সেই সঙ্গে তার চলার গতিকে ত্বরান্বিত করেছে পাঠকের সুচিন্তিত পাঠ-প্রতিক্রিয়া। প্রতি সংখ্যা মতো বর্তমান সংখ্যাটিরও বহু মতামত আমরা পেয়েছি। ক্রমান্বয়ে সেগুলি প্রকাশ করব। আজ, প্রথম পর্বে থাকছে, গৌরীশঙ্কর দে-র পাঠ-প্রতিক্রিয়া। তিনি প্রায় সম্পূর্ণ স্বরবর্ণ * ৮ সংখ্যাটি পাঠ করেছেন। এমন তন্ময় পাঠককে কুর্নিশ ।


গৌরীশঙ্কর দে-র পাঠ-প্রতিক্রিয়া

পঙ্কজ মান্নার কবিতা সম্পর্কে *  কবিদের কবি একজন। তাঁর কবিতা নিয়ে কিছু বলা আমার মতো তুচ্ছ একজন ভাষা শ্রমিকের কাছে, শৌখিন মজদুরির বেশি কিছু নয়। তাই সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই

উমা বন্দোপাধ্যায় *  উমাদির আকাশে কবিতা মেঘের মতো চড়ে। অত্যন্ত উচ্চাসনে বসিয়েছি তাঁকে। স্বরবর্ণ ওঁর ছোঁয়ায় নতুন বর্ণে বিচ্ছুরিত হলো।

শুভজিৎ গুপ্ত *  অন্যরকম লেখা। ভালো লাগলো খুব। 

গোবিন্দ মোদক * দ্বিতীয় তাল প্রধান কবিতাটিতে মনের ভিতর জলতরঙ্গ বেজে উঠল বুঝি।

মধুমিতা বসু সরকার * মুখপুস্তকের মাধ্যমে মধুমিতা বসু সরকারের কবিতার সঙ্গে আমরা অনেকেই এখন পরিচিত। অত্যন্ত ঋজু ঘনপিনদ্ধ চিত্রকল্পের মঘ্য দিয়ে কবি একটি অন্তর্জগত নির্মাণ করে কবিতার অন্তর্নিহিত বুনন সম্পূর্ণ করেন। স্বরবর্ণ-এ প্রকাশিত এই দুটি কবিতাই সেই অধরা মাধুরীর সন্ধানে আমাদের টেনে নিয়ে যায়। একজন কবির নিভৃতবিজ্ঞান স্বজ্ঞায় সঞ্চারিত হয়।

দেবার্ঘ সেন * দেবার্ঘ কবি। দেবার্ঘ ছবি আঁকে। দেবার্ঘে আমি দিগন্ত থেকে ছুটে আসা রেলপথ ররাবর দুটো ট্রেনের ছুটে আসা দেখি। "কৌশল" কবিতাটির 'A', প্রথম 'ভ্রামক' কবিতাটির 4G থেকে উঠে এলো বলে ভ্রম হয়। আর এই ভ্রম থেকে প্রতিধ্বনিত হয় কলমের বর্ণমালায় গাঁথা প্রতিকবিতা।

নিমাই জানা * "রাতের প্রতিটি আততায়ী তারার নিচে অযোগবাহ অক্ষরেরা শুয়ে থাকে গলিত মোমের মত শিরদাঁড়া নিয়ে" অথবা "শিশুরাই রাতের অন্ধকারে নিজেদের ছায়ার নিচে দাঁড়ানো আর এক ছায়াকে ভয় পায়," এই দুটি চিত্রকল্পের দৃশ্যগত ইন্দ্রিয়গম্য কাঠামোটি নিমাই জানা এক আপাত দুরূহ কিন্তু দুর্বোধ্য নয় (বুদ্ধদেব বসুর অসামান্য কবিতার নির্মাণ প্রসঙ্গে নিমাইকে দিয়ে সাম্প্রতিক কবিতার নতুন ধারা সৃষ্টি করিয়ে চলে অবিরত।

দেবদাস রজক *  চমৎকার লাগলো দুটি কবিতাই। অত্যন্ত অনায়াস ও আন্তরিক।

চন্দন রায় * কবিতাগুচ্ছ * চন্দন আশির কবি। আশির কবিতা হলো এককথায় লোহিত সরণের ক্রমশ গৈরিকীকরণের মেদুর অভিশাসন। সত্তরের মরচে ধরা বীজের জীবন। কবি চন্দন রায় তারই প্রতিভু। আশির দশকের সঙ্গবদ্ধ কোনো উচ্চারণ নেই। প্রত্যেক কবিই, চন্দন, অলোক বিশ্বাস, প্রজিত জানা, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় (উত্তরপাড়ার), জহর সেন মজুমদার, বিজ্য সিংহ কতো প্রিয় নাম।

রূপায়ণ ঘোষ * অনুবাদ কবিতা *  অসাধারণ একটা কাজ। "শয়তানের সঙ্গে কথপোকথন" যে কী গভীর অর্থে আধুনিকতার বেড়া ভেঙেছে, ভাবা যায়না। প্রতিটি অনুদিত কবিতাই আদিম আইরিশ কবিতার পরিসরের বাইরে গিয়ে চিরায়ত হয়ে উঠেছে। অনুবাদকের প্রতি রইল অকুণ্ঠ অভিনন্দন

দেবাশিস সাহা-র উপন্যাস ধুলোর সিংহাসন (পর্ব-সাত)  অসাধারণ। দুকূল প্লাবনে ভেসে গেল, পুরীর সমুদ্রের ঢেউয়ে। অশোকের অন্তঃসত্ত্বা কবিমন, বিস্ময়, দুচোখের গভীর অবলোকন প্রদীপদা, কাশীদাকে রক্তমাংসের পুরুষ এবং রিনাদি, অলিদের মৃদু মানবী সঞ্চার পথের পাশে পায়েল শেঠ ও বিজন মুহূর্তে মোহানার দিকে খুলে দিল নারীর অন্য মুখ। হিউমার, গল্প বলার অনায়াস দক্ষতার উপর দিয়ে কবিমনের ঝাউপাতা, দার্শনিকতার শালপ্রাংশু মহাদ্রুমের সামনে নত হয়ে বসে পড়লাম। এত অকৃত্রিম উপন্যাসোপম এই রচনা হৃদয়ে প্রথম দেখা পুরীর গর্ভ মন্দিরের দিব্যত্রয়ীকে কষ্টিপাথর ছেনে লেখায় বসিয়ে দিয়েছে যেন চূড়ান্ত মানবতার বিমূর্ত মন্দির আর মন্দিরের চূড়ায় উঠে যাচ্ছে সন্ধ্যাবেলা ধ্বজ। একেবারে যাকে বলে মজে গেলাম সপ্তম পর্বে। পিঠে অদেখা বন্ধুর হাত রেখে বললাম। জয় হোক এই উপন্যাসের। জয় অশোকের মতো ঘোড়সওয়ার-এর জয়।

( আগামীদিন )

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন