সোমবার, ১৩ জুন, ২০২২

অনুবাদ কবিতা * রূপায়ণ ঘোষ



প্রাচীন আইরিশ কবিতা 

ভাষান্তর: রূপায়ণ ঘোষ 



প্রাচীন আইরিশ কবিতার কথা বলতে গিয়ে অনিবার্যভাবে এসে পড়ে খ্রিস্টধর্মের কথা। পঞ্চম শতাব্দীতে খ্রিস্টধর্মের প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই আয়ারল্যান্ডে সাক্ষরতা এসে পৌঁছেছিল। এই সময় খ্রিস্টান মঠগুলি প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে, সময়ের সঙ্গে বিবর্তিত হয়ে এগুলিই সপ্তম শতাব্দীতে বৃহৎ, স্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠান তথা বৃত্তির প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। এই পরিবর্তন আইরিশ ভাষার সাহিত্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল- ঠিক এই সময়পর্ব থেকেই লিখিত আইরিশ কবিতার সূত্রপাত ঘটে যায়। ঐতিহাসিক ও ভাষাবিজ্ঞানীদের মতানুসারে, আনুমানিক ষষ্ঠ শতকে প্রথম আইরিশ কবিতা রচিত হয়। 

প্রাচীনতম আইরিশ কবিতাগুলি ছিল মূলত অসংলগ্ন। এই ধরনের রচনা আইরিশ ভাষায় একটি বিকল্প দলমাত্রিক শ্লোক [ Alternative Syllabic verse ] বা গীত আকারে নির্মিত হতে শুরু করে। বিষয়বস্তুতে দেখা গেছে কখনও ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণ তো কখনও দেখা গেছে বীররস, বিখ্যাত পুরুষদের প্রশংসা কিংবা একজন বীরের মৃত্যুর জন্য বিলাপ করার বিবিধ ঘটনাও। এই ঘরানাটি প্রারম্ভিক আধুনিক যুগে আইরিশ সাহিত্যে মহাকাব্যসূচক সৃষ্টি হিসাবে অধিক মর্যাদা লাভ করে। 

সন্ন্যাসী [ Pope and Fathers ] কবিরা এই বিকল্প শ্লোকাবলি রচনা করার জন্য স্থানীয় এবং ল্যাটিন উভয় ভাষার ঐতিহ্য গ্রহণ করেন এবং ধর্মীয় তথা নৈসর্গিক কবিতার জন্য সেই ভাষাব্যঞ্জনার ব্যবহারও করেছিলেন। সাধারণ গীতিকবিতা এবং ঈশ্বরস্তোত্রের ধারাদুটির সংমিশ্রণ ঘটার ফলে মূলত আইরিশ সন্ন্যাসীদের দ্বারা রচিত উচ্চ সাহিত্যগুণ সম্পন্ন ল্যাটিন স্তোত্রগুলি বিশ্বসাহিত্যে সমাদর লাভ করেছে। এই সময়কালে আইরিশ কবিতায় যে নতুন ভাবনাগুলি প্রবিষ্ট হচ্ছিল তাদের মধ্যে প্রকৃতি প্রেম, মানব-একাকিত্বের যাপন ও ঈশ্বরচিন্তা ব্যাপক রূপে আত্মপ্রকাশ করে। সন্ন্যাসীদের গীতিকবিতায় এইসব বিবর্তিত যুগের হাওয়া প্রবেশ করলে আইরিশ কবিতার গতিপ্রকৃতিই অনেকাংশে বদলে যায়। ফলে সাহিত্য রচনার আরও বিবিধ ব্যক্তিগত উদ্বেগগুলি এই ভূ-খণ্ডের কাব্য-সাহিত্যকে প্রসারিত করতে আরম্ভ করে। 



সন্ত পেদ্রিয়াক্ [St. Pedrieacc ] 



ইভের বিলাপ ( Cumha na hoíche )


আমি ইভ, মহান আদমের স্ত্রী 

আমি যে অনাদি ঈশ্বরকে ক্রুদ্ধ করেছি, 

আমি যে স্বর্গের সন্তানদের কেড়ে নিয়েছি, 

এ পাপ আমার- 

আমারই উচিত ছিল নীরবে ক্রুশবিদ্ধ হওয়া। 

আমার রমণীয় আনন্দের জন্য 

নিজস্ব একটি ঘর ছিল। 

আমার সে উল্লাস প্রকৃতি বিরুদ্ধ 

আমাকে নিঃস্ব করে চলেছে যা- 

সেই ছলিত সর্পিল পরামর্শ 

আমাকে করে তোলে আশ্চর্য প্রবৃত্তিগামিনী...  

হায়! এ সত্তা বিশুদ্ধ নয়  

যে আপেল আমি ছিঁড়েছি জ্ঞানবৃক্ষ থেকে 

সে আমার মৃত্যুর উপর দিয়ে যাবে-

যতদিন সমস্ত নারী দিনের আলো বুঝে নেবে, 

ততদিন নারীরা মূর্খতা থেকে বিরত থাকবে। 


ততদিন কোনো স্থানে কোনো বরফ থাকবে না 

কোনো চকচকে বাতাসে ভেসে থাকবে না শীতকাল, 

কোনো নরক থাকবে না 

কোনো দুঃখ থাকবে না 

থাকবে না অনন্ত ভয়ের জীবন- 

যদি এ সূর্য নারীর জন্য না হয়, 

তবে পৃথিবীতে সূর্যের নিতান্ত প্রয়োজন থাকবে না। [ ১ ]



পাহাড়ি আইরিশদের গান  ( Amhráin an chnoic Gaeilge ) 


আপনার কণ্ঠে পবিত্র ফেরেশতার গান

হে খ্রিস্ট, জীবিত ঈশ্বরের পুত্র- 

আমাদের ঘুম, আমাদের বিশ্রাম, 

আমাদের উজ্জ্বল শয্যাগুলি রক্ষা করুন। 

আমাদের ঘুমের মধ্যে ইন্দ্রনীল ছায়া 

পৃথিবীতে জীবনের সত্য প্রকাশ করুক... 

হে মহাবিশ্বের রাজপুত্র, 

হে ব্রহ্মাণ্ড-রহস্যের মহান রাজা 

কোনও রাক্ষস, কোনও অসুস্থ বিকারবেদনা, 

কোনও দীর্ঘ বিপর্যয় অথবা ভয়ংকর স্বপ্নাঘাত-  

আমাদের অনন্ত কর্ম, আমাদের সুগভীর ইচ্ছায় 

যেন ব্যাঘাত ঘটাতে পারে না। 


হে ঈশ্বরপুত্র, মানুষের সময় পবিত্র হোক 

আমাদের কর্মোল্লাস, আমাদের জীবন-সংঘাত, 

আমাদের বিজয়-পরাজয় অনিমেষ ঘটে যাক, 

ঘটে যাক সময়ের যে কোনো বিরতি ছাড়াই... [ ২ ]



চন্দ্র-নক্ষত্র ও পাহাড়ি প্রার্থনা ( Gealach-réalta agus paidreacha sléibhe )


হে চন্দ্র-নক্ষত্র, হে পবিত্র দেবতা 

পুরুষ, নারী ও শিশুদের উপর ঈশ্বরের আশীর্বাদ 

প্রিয় ভূমির উপর আশীর্বাদ 

ন্যস্ত হোক... 

যে প্রকৃতি আমাদের ফল দেয়, আশ্রয় দেয়

প্রতিটি সম্পদের জন্য তাদের কৃতজ্ঞতা। 

এই আমাদের বসন্ত উৎসব, ফসলের উল্লাস- 

সাহায্যের নদী বয়ে যায় মানুষের নিজস্ব গ্রামে 

চন্দ্র-নক্ষত্র জ্বলে, 

তার উপর ঈশ্বরের আশীর্বাদ... 

পাহাড়ের চূড়ার উপর প্রার্থনা-সংগীত, 

তাদের খালি পতাকা ওড়ে পাথরের উপর

তাদের ছাদের উপর একটি আশিস 

তাদের শিলাগুলির উপর একটি আশীর্বাদ

জাহাজের নীচে সমুদ্রের বালির মতো এই উপত্যকা-

ঢালে, সমভূমিতে, পর্বত-পার্শ্বে, চূড়ায় 

হে দেবতা, মানুষের মাঝে ঈশ্বর বেঁচে থাক... [ ৩ ]



চিন্তার দোদুল্যমান তরাজ়ু ( Scálaí smointeoirechta ag luascadh ) 


আমার চিন্তার ধারাগুলি এলোমেলো, 

তারা কীভাবে আমার থেকে যেন বিচ্যুত হয়ে যায়! 

আমি অনন্ত কিয়ামতের দিনে এর থেকে বড় বিপদের আশঙ্কা করি 

গীতসংহিতার সময় তারা ডানদিকে ভেসে থাকে 

তারা ভ্রূ-কুঞ্চন করে, তারা বিরক্ত হয়- 

তারা মহান ঈশ্বরের চোখের সামনে বিরূপ আচরণ করে। 

যে পথ উৎসুক জনতার মধ্য দিয়ে

অসহায় নারীদের জটলার মধ্য দিয়ে 

অরণ্যের ভিতর দিয়ে 

শহরের মধ্য দিয়ে চলে যায় 

সে পথ বাতাসের চেয়েও দ্রুততর। 

এখন প্রেমের পথ বেয়ে দংশিত চেতন- 

একটি নৌকার কাছে ভীড়ে থাকে 

একটি পদক্ষেপ ভুল না করে তারা প্রতিটি সমুদ্র পেরিয়ে যায় 

দ্রুত তারা পৃথিবী থেকে স্বর্গের সীমানায় লাফ দেয়।  

তারা দূর-দূরান্তে কখনও মূর্খতার দৌড় শুরু করে

তারপর ঘরে ফেরে আশ্চর্য নির্লিপ্ততায়!

যদিও তাদের বেঁধে রাখা উচিত 

অথবা তাদের পায়ে পরানো উচিত শৃঙ্খল, 

তারা বিশ্রাম নেওয়ার জন্য 

এক অনাদি ধ্রুবক চেতনার অধিকার নিয়ে আসেনি

তলোয়ার অথবা চাবুকের ভয় 

তাদের বিরামহীন নতজানু করে রাখবে না 

ঈলের লেজের মতো পিচ্ছিল তারা 

আমার হাত থেকে অবিরত পিছলে যায়, 

পিছলে যায় ধাবিত বিশ্বের দিকে... [ ৪ ]



উঁচু খিলানের ঘর ( Tech'ard áirse ) 


পৃথিবীর অন্ধকারে বাতাস বয়ে যায় 

সমুদ্রের দৃঢ়তা তাদের পথে বাধা দেয় না।  

হে সত্যিকারের প্রিয় খ্রিস্ট, 

তোমার কাছে প্রতিটি দৃষ্টি পরিষ্কার, 

সপ্ত-গুণ আত্মার কৃপা আসুক তাদের রাখতে, 

তাদের পরীক্ষা করতে!  

আমার এই হৃদয়কে শাসন কর, 

আমরা ভয় করি মহান ঈশ্বরকে 

যেন তুমি আমাদের প্রেম হতে পার 

আমরা পালন করতে পারি তোমার ইচ্ছা।  

এমন সহজাত পথ হোক 

যাতে আমি খ্রিস্টের কাছে তাঁর মনোনীত সঙ্গীদের সাথে পৌঁছাতে পারি, 

যাতে আমরা একসাথে থাকতে পারি!

তারা চঞ্চল বা অস্থির নয়- 

সুউচ্চ খিলানের এই আলোঘর 

আমরা সেখানে অনন্তকাল শিখে নিতে পারি শান্তিপ্রিয়তা... [ ৫ ]



শয়তানের সঙ্গে কথোপকথন ( Comhrá leis an diabhal ) 


আমি গির্জায় প্রার্থনারত মোলিং 

দূর থেকে একজন ব্যক্তিকে হেঁটে আসতে দেখি- 

বেগুনি পোশাকের এক আশ্চর্য ব্যক্তি! 


হীমশীতল তাঁর কণ্ঠে ধ্বনিত হয়, ''এভাবে মাথা নত করো কেন!''


আমি মোলিং- দৃঢ় স্বরে বলে উঠি,  ''আমি খ্রিস্টের সেবক। ঈশ্বরের পুত্র, আমি তাঁর আদেশের দাস।''

 

ব্যক্তিটি হেসে ওঠে। প্রচ্ছন্ন কৌতুকে বলে ওঠে, "ওহ ধর্মগুরু! আমিন।''  


প্রশ্ন রাখেন শান্ত মোলিং, ''কে তুমি? আমি তো জানি না তোমায়! খ্রিস্টের পবিত্র ভূমির কাছে ঈশ্বরের দাসদের সাথে মুখোমুখি হে অজ্ঞাত পরিচয়, বলো কে তুমি?" 


ব্যক্তির মৃদু হাসি শোনা যায়। গির্জার দেওয়ালে দেওয়ালে ধ্বনিত হাসি... 


"স্তব্ধ হোক ওই তাচ্ছিল্য কৌতুক। বেগুনি রঙের এই পোশাক, রাজকীয় আড়ম্বর- তুমি ঈশ্বরপ্রেমী নও।" 


"ঈশ্বর প্রেম!''- সেই ব্যক্তি হেসে ওঠে পুনরায়। 

''আমার বিশ্বাসে আঘাতের জন্য এই হাস্য শয়তান।''  

"সে কেমন বিশ্বাস? যার দেহ এত ঠুনকো!'' 

"তোমার অবিশ্বাস তোমার জন্য ধ্বংস বয়ে আনবে। যীশু প্রতিকার করবেন এই অবিশ্বাস অন্ধকারের।" 


শয়তান বলে ওঠে;  ''হে ধর্মগুরু, চেয়ে দ্যাখো আমার অবিশ্বাসে দীর্ঘ বিশ্বাসের অগ্নি সমুজ্জ্বল। যেভাবে ভাবছ তুমি, আমি তেমনই ক্লেশের ছায়া অথবা হারানো মানুষ৷'' 


আমি মোলিং- চিৎকার করে উঠি, "আমি এ হতে দেবো না। গির্জার প্রান্ত থেকে ফিরে যাবে কারণ এই পবিত্র ভূমির তুমি যোগ্য নও।" 


"যদি না যায়?" ব্যক্তিটি বলে ওঠে, ''এই সৌন্দর্যমণ্ডিত গির্জা, অদূরে মধু সরোবর। পোশাকময় অসহায় মানুষেরা সেখানে স্নান করে নিক, পোশাকের মধুগন্ধ ছড়িয়ে রেখেছে এই বাতাস। এই দৃশ্য তোমায় জাগিয়ে তোলে না?"


মোলিঙের কণ্ঠ ঘৃণায় ভরে ওঠে, ''শুনে রাখো নীচ, কোনও আদিম দৃশ্যের জন্য আমার জন্ম হয়নি।" 


"তোমার ঈশ্বর এতখানি পোক্ত নয়- যে অস্বীকার করতে পারে সময়ের আদিমতা। দ্যাখো, সমস্ত আদিমতার ক্রোড়ে সৃষ্টি ও সৃজনের মায়া রয়ে গেছে।" 


"তোমার সৃষ্টিতে কোনও সৃজন থাকবে না", মোলিং বলে যান, ''হে শয়তান, তুমি তার যোগ্য নও।'' 


শয়তান হেসে ওঠে, ''তবে আমাকে মৃত্যুর পূর্ণ অভিশাপ দাও।'' 


"তাতে কী লাভ তোমার?'' 


''অভিশাপের বিষ ও আঘাত থেকে জীবনের সংগ্রাম উচ্চারিত হবে।'' 


ক্রুদ্ধ মোলিং ওঠে, "ঈশ্বরের পৃথিবীতে মানুষের সংগ্রাম বলে কিছু নেই, সমস্ত ইচ্ছেই প্রকৃতপ্রস্তাবে তাঁঁর। তুমি সেই সব সংগ্রাম মানুষের বলো কোন অধিকারে?" 


"বলি, জীবনের অধিকারে..." 


''হে অকৃতজ্ঞ শয়তান, জেনো প্রভুর সৃষ্টিতে কোনো অধিকার তোমার কখনও নয়।''

 

শয়তান তীক্ষ্ণ অথচ মৃদুল হেসে ওঠে। হেঁটে যায় দরোজার অভিমুখে। তার বিপুল কণ্ঠ বেজে ওঠে গির্জার দেওয়ালে দেওয়ালে, "যে সৃজনাগারে মানুষের অধিকার নেই, সেখানে ঈশ্বর জেনো এক সামান্য শয়তান আমারই মতো।" [ ৬ ]


                                        

টীকা: 

১. কবিতাটির রচনাকাল নবম শতাব্দীর আশেপাশে। আয়ারল্যান্ডের প্রাচীন শহর ওয়াটারফোর্ডে [ Waterford ] অবস্থিত গির্জার এক সন্ন্যাসিনী [ Nun ] মার্থা পেরিউল-কে এই কবিতার রচয়িতা বলে মনে করা হয়। 

২. দ্বাদশ শতকে নেফিন্ পাহাড়ের নীচে অবস্থিত ছোট্ট একটি গ্রামের জনৈক পাদ্রী সন্ত লুসিয়াস প্যাট্রিক [ Saint Luscious Patrick ] এই কবিতার রচয়িতা। 

৩. পার্বত্যভূমির আইরিশ জনজাতি গেইলস্ [ Gaels ] -এর মধ্যে তাঁদের স্থানীয় আইরিশ ভাষায় ঈশ্বরের প্রার্থনার রীতি ছিল। লুসিয়াস প্যাট্রিক দীর্ঘদিন সেখানে থাকার সুবাদে সেই ভাষাতেই এই কবিতা লেখেন, আনুমানিক ১১৭৯ খ্রিস্টাব্দে। 

৪. এই কবিতাটির রচনাকাল দশম শতাব্দী। রচয়িতার নাম অজ্ঞাত। তবে কবিতাটি ল্যাটিন ভাষায় লিখিত বলে মনে করা হয়। 

৫. কবির পরিচয় অজ্ঞাত। রচনাকাল নবম শতাব্দী। আয়ারল্যান্ডের প্রাচীনতম গির্জা [ St. Germonus Cathedral, 431Ad. ] থেকে কবিতার পাণ্ডুলিপিটি আবিষ্কৃত হয়েছে। 

৬. কবিতাটি রচিত হয়েছে একাদশ শতাব্দীতে। কথিত আছে পুরাতন ব্যালিশ্যানন্ [ Ballyshannon ] শহরের এক প্রাচীন গির্জার পাদ্রী এডওয়ার্ড মোলিং প্রথম জীবনে প্রবল ধার্মিক ছিলেন। পরবর্তীকালে সাধারণ অসহায় মানুষের উপর চার্চের অত্যাচার ও ধর্মের অপব্যাখ্যা তাঁকে ব্যথিত করে তোলে। ধর্ম সম্পর্কে তাঁর অনীহা জন্ম নেয় এবং গির্জা ত্যাগ করে চলে যান। পরে তিনি 'শয়তান ও ঈশ্বর' [ Satan agus Dia ] শিরোনামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। এই গ্রন্থে তিনি নিজের ধর্মভীরু ও ধর্মত্যাগী- এই দুই সত্তার দ্বান্দ্বিকতাকে অত্যন্ত সাবলীলভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। চার্চ তাঁকে নাস্তিক আখ্যা দিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় সেই সঙ্গে তাঁর রচনাসম্ভার ধ্বংস করার হুকুম জারি করে। 


বি:দ্র: ইংরেজি থেকে অনুবাদ করলেও, স্থানে স্থানে মূল আইরিশ পাঠগুলির সাহায্য নেওয়া হয়েছে। কবিতাগুলির শিরোনামের ক্ষেত্রে বন্ধনিতে মূল ভাষার নামগুলিকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। সপ্তদশ শতাব্দীতে ( আনুমানিক ১৬৮৭-৮৯ খ্রি:) সন্ত পেদ্রিয়াক্ [St. Pedrieacc ] দ্বারা সংকলিত 'প্রাচীন আইরিশ কবিতা' [ Seanfhilíocht na Gaeilge ] নামক মূল গ্রন্থ থেকে কবিতাগুলি সংগৃহীত।


*****************************************************************************




রূপায়ণ ঘোষ

জন্ম অগস্ট ১৯৯৩ সালে, লালমাটির বীরভূমে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'প্রাচীন ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও প্রত্নবিদ্যা' বিষয়ে স্নাতকোত্তর। অনুবাদের পাশাপাশি রূপায়ণ মৌলিক কবিতা ও প্রবন্ধচর্চাও করে থাকেন। তাঁর এ যাবৎ প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে দু'টি কবিতার বই ও একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। বর্তমানে হিন্দি, মরাঠি, পালি ও রোমানিয়ান সাহিত্যের অনুবাদক হিসেবেও তিনি কাজ করছেন।

1 টি মন্তব্য:

  1. অসাধারণ একটা কাজ। "শয়তানের সঙ্গে কথপোকথন" যে কী গভীর অর্থে আধুনিকতার বেড়া ভেঙেছে, ভাবা যায়না। প্রতিটি অনুদিত কবিতাই আদিম আইরিশ কবিতার পরিসরের বাইরে গিয়ে চিরায়ত হয়ে উঠেছে। অনুবাদকের প্রতি রইল অকুণ্ঠ অভিনন্দন।

    উত্তরমুছুন