['স্বরবর্ণে'র চতুর্থ সংখ্যা থেকে শুরু হয়েছে কবি দীপংকর রায়ের আত্মজৈবনিক উপন্যাস ' কথা দিয়েছিলাম হেমন্তের নিয়রে '। এই উপন্যাস লেখকের ষোল-সতের বছর বয়সের কালপর্ব থেকে শুরু। যদিও লেখকের জন্ম এপার বাংলায়, কিন্তু শিকড় ছড়িয়ে থেকেছে ওপার বাংলায়। কাজেই যাতায়াত থেমে থাকেনি। ইতিমধ্যে ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া একটি দেশ ছেড়ে চলে আসা আর তারই নাছোড় এক টানাটানির মধ্যে যে জীবনের ক্রমাগত আসা আর যাওয়া ,এই উপন্যাস মূলত তারই এক নির্মম নিষ্ঠুর ভাঙা-গড়ার আশ্চর্য কথোপকথন। ধারাবাহিকভাবে যা আমরা পড়ছি, কবি দীপংকর রায়ের মায়াময় কলমে।]
কথা দিয়েছিলাম হেমন্তের নিয়রে
পর্ব * ১৩
দীপংকর রায়

এই তো , এইটুকুন ছটফটানিই শুধু , ব্যস্ততা —-- পুজোর আগে ও পরে , তারপর তার রেশটা হয়তো থাকত প্রতিমা আড়ঙ্গে ( মেলা ) নিয়ে যাওয়া সময় পর্যন্ত । সে পর্যন্ত ও তার অস্থিরতা । না না , আর একটুও , সে হলো ইঁদুর মাটি চেলে দিয়ে প্রতিমা যখন রওনা করানো হোত , তখন পর্যন্তও তার উৎকন্ঠা । সে কাজটা হোয়ে গেলে এরপর যা যা ," তা যেমন হয় হোকগে— " এরকমই একটা ভাব মুখে থাকলেও , ঠিক কথা সেটাও না । তারপরেও তো আরো কত কি ! এই যেমন নৌকা তৈরি করা — আগে আগে সে দায়িত্ব সামলেছে দেখতাম ভূবন কাকা , এখন তো সে আর পারে না — সেসব থেকে সে এখন অব্যাহতি নিয়েছে । এখন তার জায়গায় তার দুই ছেলে ও কাইলে মামা , কুমার দা , শিবু দা , প'রে মামা । এরাই সকলে মিলেঝুলে করে নেয় দেখি । পুরো আয়োজনটাই এখন তাদের । সে দুই নৌকোর জোড়ন বাঁধা থেকে শুরু করে চারপাশে বাঁশ বাঁধা , সামিয়ানা টাঙানো , সব কিছু— এরাই সকলে করে ফেলে । ভূবন কাকা যেন পরবর্তী এই জেনারেশনের হাতেই সে সবের অলিখিত একটা নির্দেশনামা ধরিয়ে দিয়েছে ; বলেছে যেন , " আমি তো এতকাল করলাম , ইবারে তোমরাই সামলাও …..। "
পাঁচু ভাই মোনো মামার তল্লা বাঁশের ঝোড় থেকে বড় বড় চারখানি বাঁশের ডগা কেটে নিয়ে এসে কোন সময় রেখে দিত নৌকোর উপর । সে কথা কাউকে যেন বলতে হোত না !
সেই চারখানি তল্লা বাঁশের আগার মাথায় সামান্য কিছুটা ডালপাতা থাকবে যদিও তাতে ; তার চারকোনার চারটি মাথায় দড়ি দিয়ে সামিয়ানা বাঁধা হবে । এর পর দুই নৌকোয় বাঁশের মাচা বেঁধে জোড়ন তৈরি করা হোত । এই মাচার উপরেই দুই নৌকোর মাঝখানে প্রতিমা রাখা হবে । পরে যখন বিসর্জনের সময় হবে , এই দুই নৌকোর মাঝখানে জোড়নের বাঁধন খুলে দিলেই একেবারে সোজা ভাবে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়ে যেত ।
এই হচ্ছে জোড়নের সুবিধা ।
তাছাড়াও আর একটি সুবিধা হোল আরএকখানি নৌকো হোলে , ছেলেপেলে বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে সকলে বসবার একটু সুবিধা ।
তাই দুই নৌকোর পাটাতনের উপরেই মাদুর পাতা হোত । তার মধ্যে একখানি তে খানিকটা জায়গা ফাঁকা রাখা হোত ঢাকি এবং ধুনুচি নাচের জন্যে । আর বাজি , বাজি বলতে তো ওই সেই কাঠি বাজি — যাতে একটি কাঠির মাথায় বারুদ লাগানো থাকতো । আর বোম , যা ছুঁড়ে ফাটাতে হোত । সে কাজটি করতে হোত নৌকোর গোলুইএর উপরেই । তাকেই সহ্য করতে হোত বুক পেতে সেই দিনটার সব আঘাত । সেও যেন বুক পেতে দিয়েই আনন্দ পেত ।
আড়ঙে যাবার পথে ঘাটে ঘাটে মহিলারা সিঁদুর দিত মূর্তির পায়ে । মিষ্টিমুখ করাতো মাকে । কেউ নৌকোয় উঠে আসত , কেউ বা সিঁদুর মিষ্টির থালা এগিয়ে দিতো মায়ের পায়ে দিয়ে দেবার জন্যে —-- নৌকোয় যারা থাকত তাদের হাতে হাতে ।
কোনোদিনই কোনো উল্লাসে সামিল হতে পারিনি ! চুপচাপ বসে থাকতাম নৌকায় উঠে।
কি এক বিষণ্ণতা আমার চোখেমুখে ঘিরে থাকত কেন যে ! তার হদিস কোনোকালেই পাইনি । আড়ঙে যেতে যেতে মনে হোত কেবলই —- এই তো , কদিন ধরে কত আয়োজন, কত আয়োজন করেই না পুজোটা শুরু হয় ! আর এই তো , এই যে মানুষজনের এত হোইহল্লা , আড়ঙ , বাজির গন্ধ , পাঁপড় ভাজা গন্ধ , বাদামের গন্ধ , চানাচুর ভাজার গন্ধ —- সকলে গোল হোয়ে বসে নৌকোর উপর চেঁচামেচি , কথা বলাবলি , সন্ধ্যা হোলে ধুনুচি নাচের হোইহল্লা , মাইকের আওয়াজ , মেলা কমেটির নানা ঘোষণা , সব কিছু মিলে সে এক হোই হোই ব্যাপার…! অথচ আমি চুপটি করে বসে থাকতাম নৌকোর মাথার কাছটায় ।
আমার বয়সি বা আমার থেকে ছোট বড় সকলেই মেলায় নেমে যেত এটা ওটা কিনতে ঘুরতে , কিম্বা কত কিছু করতে হয়তো ; আমি নামতাম না নিচেয় । মন্টু মামার বউ অভিযোগ করে বলত , এই যে মনি , তুমি যে নামতিছ না নিচেয় , এর জন্যি আমাগের ছেলেপেলেরাও নামতি চাচ্ছে না যে… ! তুমিই তো আমাগের ডায়েডুয়ে নিয়ে আসলে ! তার জন্যিই তো আমার ও আসা হোল । এহনে তুমি নিচেয় না নামতি চাইলে, ওরাও তো নামতি চাচ্ছে না ! চলো চলো , সগ্গলি যাচ্ছে যহনে তহনে তুমিও চলো যাই —- ।
লজ্জায় পড়ে যেতাম । মনে মনে ভাবতাম , এমা , আমার জন্যি এতগুলি মানুষের আনন্দ করা নষ্ট হতি যাচ্ছে ! না , তাতো ঠিক না !
অনিচ্ছা সত্ত্বেও লাফ দিয়ে সকলের সঙ্গে সঙ্গে নামতে হোত নিচেয় । সঞ্চয়কেও ইশারায় ডাকতাম —- সে তাতে বলতো , তুই যা বউদিগের সাথে , আমি ঘট বেসজ্জন দিয়ে আসি । ধুনুচিও ধরাতি হবে । সন্ধে যে লাগে এলো যে !
কোনোরকমে এক চক্কর মেরেই মেলার ভেতর , ওদের যা কেনাকাটার আছে বলতাম কিনে নিতে । বলতাম , নেও তাড়াতাড়ি চলো তো এবারে ।
কল্যানী তো ঠোঁট কাটা —- বলতো , খাওয়াবেন না কিছু ?
সমস্যায় পড়তাম । টাকা পয়সার জন্যে না । সে তো প্রত্যেক দিদিমা মামিমা দের মাসি দের পাব্বনীর টাকা তো পকেটেই আছে ।সে সব বরাদ্দ মত যা পাবার পেয়েছি তো , বাকি কিছু দিদিমাও দিয়ে দিত । তার সাবধানী মন টাকা পয়সার বিষয়ে অতি সচেতন । বাইরে কোথাও গেলে সব সময়ই একটাই কথা —- কখন কনে কি লাগে , তা কিডা কতি পারে ! টাকা সঙ্গে থাকলি একটা বল- ভরসা পাওয়া যায় । তবে দেখপা , বেহিসেবী হবা না যেন কখনো !
তাই ওসব না , কেনাকাটার ঝক্কি কেন যেন আমি সামলাতে পারি না কিছুতেই । তাই মামিকে বলতাম , ও মামি , কী কেনবেন কিনে নেন । আমি পাঁপড় ভাজা কেনবার জন্যি এই কিছু টাকা আপনার হাতে দিচ্ছি।
সে তা আনন্দের সঙ্গে নিয়ে একটা নতুন চালন কিনে তাতে এক চালন বোঝাই করে পাঁপড় ভাজা কিনে নিত নৌকোর সকলের জন্যে ।কল্যানীকেও মহা খুশিতে দেখতাম তাতে । বলতাম , নে চল দেখি এবার নৌকোয় —--
বেবি টা একটু বড় হয়েছে, সে ইতিমধ্যেই তার কৈশোরীক চাঞ্চল্য প্রদর্শন করতে শুরু করে দিয়েছে । তাকে দেখে অনেক ছেলে ছোকরারা তার সঙ্গে বেশ ভাব জমাতে নানা সম্পর্কের ছুতো তৈরি করে ডাকাডাকি করতো তাকে । তাতে তাকেও দেখতাম বেশ আনন্দই পেতে ! চোখ মুখ দেখেলেই সেটি বোঝা যেত । সে মনে মনে বলছে ও যেন , দ্যাখো , আমার এখন কত কদর বেড়েছে ! দেখছ তো , কত জন আমার সঙ্গে কীরকম কথা বলার জন্যে এগিয়ে আসছে ? এটা ওটা কিনে দিতে চাইছে ! আহ্লাদ দেখাচ্ছে কিরকম ভাবে দেখ একবার… !
আমার দিকে চেয়ে নিয়ে বলছে যেন , দ্যাখো তুমি তো কেমন সবসময় আড়ষ্ঠ হয়ে নৌকোর উপরে বসেছিলে এতক্ষণ ,আসতেই চাইছিলে না — ভাগ্গিস , কাকিমারে দিয়ে তোমারে রাজি করালাম তাই —- তা না হলি এই এতটা মজা পাওয়া হত আড়ঙের ! নামাই তো হত না , ভীতুর ডিম একটা —- পারো শুধু রাঙাদির সঙ্গে চেঁচামেচি করতি ….।
ও বরাবরই এরকমের । হোইহল্লা করে থাকতে ভালো বাসে । একবার বলা শুরু করলে আর বাঁধ মানতে চায় না । মুখে লাগাম নেই । আমাকেও ছাড়ে না আহ্লাদ করে কিছু বলতে ।
যদিও খুব একটা ভালো লাগে যে আমার , তাও না — ওর এই ধরণের আদিখ্যেতা গুলোন …।
যা হোক , নানা ভালো লাগা খারাপ লাগা সব মিলিয়েই আড়ঙের মাঠের পর্ব মিটিয়ে , এবারে যখন নৌকোতে যেয়ে উঠতাম , তখন আবার আর এক পর্ব সেই সব পাঁপড় ভাজা বাদাম ভাজা ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে । তখনো পর্যন্ত বেবির সেই দেখনদারী ভাবটার ঘোর কাটতে চাইছে না যেন । কল্যানী বলত , এই মানুষটা না একটা বেরসিক । একদম আনন্দ করতি জানে না …. !
কথাটা সে আমাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়েই বললো কাউকে । বিশেষ একটা খেয়াল না করলেও — শুনতে তো পেয়েছি !
নৌকোয় নৌকোয় সন্ধ্যারতি শুরু হয়ে যেত এবারে … । ধুনুচি নাচ আর ঢাকের মোহড়া…. মাইকে নানা রকমের গানবাজনার আওয়াজের মধ্যে আমাকে দেখিয়ে তার যে বলা কথাটি খুব একটা গুরুত্ব পেল তা একটুও মনে হলো না। কারণ , তখন কে কতটা ধুনুচি নাচ নাচতে পারবে , নানা কেরামতি দেখিয়ে , সেদিকেই সকলের নজর চলে গেছে…. ।
এদিকে তখন , এক এক নৌকোর সঙ্গে এক এক নৌকোর একটা অলিখিত প্রতিযোগিতা লেগে গেছে …. ।
ধুপ-ধুনোর ধোঁয়া , বাজির শব্দ , মাইকের ঘ্যারঘ্যারানি , সব মিলে সন্ধ্যাবেলার নবগঙ্গার তখন অন্য আর এক রূপ । সে যে কি এক আবহ…. !
সে কথা আজ এই কলকাতায় বসে যখন সেই কথাগুলো ভাবছি, তখন কত কথাই না মনে পড়ছে আরো ..!
এরপর আরো এক অন্য আবহ ছিল , যখন মেলা থেকে ফিরে চলেছি নৌকো নিয়ে — তখনকার অবস্থা ছিল আর একরকমের ।
অল্প অল্প নিয়র পড়া শুরু হয়ে যেত কার্তিক মাস পড়তে না পড়তেই তখন । মিনমিনে একটা ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব । বিসর্জনের নৌকোয় ওঠার সময় দিদিমা সঙ্গে একটা চাদর নিয়ে যেতে বলে রাখত আগেই । আর সেই চাদর সামলাত কল্যানীই । সে সেটা সন্ধে লাগতে না লাগতে ফেরার সময় আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলতো , নেন্ — মাথাটার উপরে দিয়ে নেন , নিয়ের লাইগে যাবেনে কিন্তু ; তাহলি আর রক্ষে নেই আমার…, রাঙাদি কিন্তু আমারেই কবেনে ,"তুই কি একটু দেখতি পারিস নি —-- ওর কি এসবে কখনো কোনো হুঁদো আছে নাকি —- ও তো তালকানা….। "
এই যে সকলে হোই হোই করে গেলাম , অথচ ফেরার সময় সকলেরই যেন সকলের সঙ্গে একটা চুপচাপ কথা বলাবলিই চলছে নীরবে ! কেউ কাউকেই মুখে কিছু বলছে না যদিও ।
ঘাটে নৌকা লাগলে সকলে নেমে যেত যেমন , তেমন আমাকেও নামতে হত । বিসর্জনের নৌকোয় থাকার মতো তখনো পর্যন্ত আমি যেন দিদিমার কাছে সেরকমের বড় হয়নি । আসলে সে আমাকে কখনো বড় হয়েছি বলে ভাবতেই পারত না । অথচ সঞ্চয় কিন্তু তখন থেকেই সকলের সঙ্গে বিসর্জন দিতে নৌকাতেই থাকত !
যদিও এইসব নিয়ে আমার কোনো অভিযোগও থাকত না , তার কাছে কখনোই । কারণ কেউ তো জানে না , এর আসল সত্যটা কোথায় লুকোনো !
আমিও যে এই বিসর্জন জিনিসটাই দেখতে পারি না ।
সে যখন মেলার উদ্দেশ্যে রওনা হোত নৌকো , তখনই মনে হত মা কালীর মুখটা যেন কেমন ভার ভার লাগছে । কিরকম একটা অন্ধকারচ্ছন্ন ভাব লক্ষ্য করতাম প্রতিমার মুখটিতে যেন । পরক্ষণেই মনে হত , আচ্ছা এটা কি সত্যি সত্যিই দেখছি আমি ! নাকি আমার ভেতরে বিসর্জনের সুর বেজে উঠেছে বলেই , ওরকমটা মনে হচ্ছে আমার !
সত্যি সত্যিই কি এই যাওয়া আসায় কোনো আনন্দ দুঃখ বেদনা কিছুই কি যায় আসে আমাদের মতন তাঁর ? তাও তো জানিনা স্পষ্ট করে কিছুই !
আবার এক সময় সমাধানে আসতাম এই ভেবে , এই যে আমরা সকলে মিলে যে বিসর্জনের একটা আবহের মধ্যে দিয়ে যাত্রা করেছি যে, এটারই একটা প্রভাব তাঁরও মুখের উপর পড়ে বলেই , আর সেটাও আমরা ভাবছি বলেই হয়তো ; না হলে পূজা আরতির সময়ে রাতের বেলায় আমি কেন তাঁর দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে থেকে লক্ষ্য করে দেখেছি তো , তাঁর মুখটি যেন হাসিতে ভরে উঠেছে ….! সত্যি সত্যিই কি মা কালী হেসে ওঠেন তখন ? হয়তো ওঠেন , তা না হলে আমি কেন উপলব্ধি করি এমন ভাবে
সেই জিনিসটি …!
এই সব , এই সব কথাই ভাবতে থাকি আমার রাতের বেলার বসবার সেই মোড়াটির উপর বসে বসে … ।
আজও ভাবছি সেই ফেলে আসা কালীপুজোর রাতের কথা , আজকের এই এখানের কালীপুজোর রাতের বেলায় একাকী বসে বসে….।
সন্ধ্যা লাগতে লাগতেই চারদিক থেকে বাজির আওয়াজ… দুম দাম , হুস্ হাস্… , সি… সি …. করে কোথা থেকে উড়ে এসে ছড়িয়ে পড়ছে যেন… !
ওগুলোর ভেতর কোনটা রকেট বাজি ? তাও জানি না ঠিক করে ।
সামনের মাসিমা দের বাড়ির দালান ঘরের পেছনের দিকে যে ঝাউ গাছের সারি , তারও উপর দিয়ে কত বাজির ফুলঝুরি ছড়িয়ে পড়ছে…., এক এক সময় এক একরকমের আওয়াজ নিয়ে সে সব….।
একাকীই চুপটি করে দেখছি সে সব ।
কাজের দিদি আজ দুজনের জন্যে দুকাপ চা করেছে এখন । তার একটি বসিয়ে দিয়ে গেল আমার পায়ের কাছটি তে নিঃশব্দে।
তার নিজের চায়ের কাপটি নিয়ে ঘরের ভেতরে চলে গেল সে ।
বেশ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগছে আজ । ওদেশে থাকতে এই সময় থেকেই রাতে শোবার সময় কাঁথা লাগত দেখেছি । পুজোর শেষে হোমের ফোঁটা নেবার সময় তো কাঁথার তলা থেকে উঠে যেয়ে ফোঁটা নিতেই ভীষণ আলস্য লাগত !
এখানে যদিও সেরকম টা না লাগলেও , এখনি একটা কুয়াশা কুয়াশা ভাব যেন চারদিকে । মিনমিনে একটু ঠান্ডা ঠান্ডা ভাবও রয়েছে । ইচ্ছে করলেই একটা হালকা চাদর গায়ে লাগালেও লাগানো যেতে পারে । নতুন ঠান্ডা বলে কথা , বলা যায় না লাগলেও লেগে যেতে পারে তো !
বাড়িতে ঢুকবার প্রধান সদর দরজাটি যে বাঁশের চটার বেড়া দিয়ে তৈরি করা —- সেটি খুলে অলোক , ফোচন , মলি , এই তিনজনকে ঢুকতে দেখলাম । না ওরা তিনজনই নয় , একটু পেছনে কাবেরীও আছে দেখলাম । ওঁরা সকলে মিলে একেবারে হই হই করে উঠলো এই বলে ; বিশেষ করে কাবেরী তো একটু অভিযোগের শুরেই বলে উঠল , আচ্ছা , তুই কিরকম ঠিক বলতো ? আজ এমন একটা দিনে তুই এরকম চুপ করে বারান্দার কোণে বসে আছিস ! একা একা কী করছিলি তাই বল তো ?
তারপরে একে একে অভিযোগের পরে অভিযোগ —- আবদার — অনুশোচনা — তিরস্কার — কত কিছু যে ; তার বর্ণনায় না যেয়ে ওদের বলতে চাইলাম তার পরিবর্তে একটি কথাই —- সেই সব দিনগুলোতেই ঘুরতে কেন জানি মনেমনে ভালো লাগছিল ভীষণ আমার….. !
কিন্তু সে কথা তো আর বলা যায় না ! তবুও ভালোলাগছে এইটা ভেবেই —- কোথায় আমার মতো একটা বেরসিক চরিত্রের প্রতিবেশির ছেলে , আজকের দিনে একা একা বসে থাকবে কেন ! এই কথা ভেবে তাকে টেনে ঘরের বাইরে বের করা যায় কিভাবে , সেইটা ভেবে সকলে দলবেঁধে ছুটে এসেছে যে , এটা কি কম বড় কথা নাকি ! সকলে মিলে এই যে একজোট হয়ে ছুটে এসেছে এই বলেই হয়তো , '' চল তো , যাই ওকে বের করে নিয়ে আসি গে…., কোথায় সকলে মিলে একজোট হয়ে হইহল্লা করে কাটাবো , তা না চুপ করে বসে আছে বারান্দার এক কোণে ! চল দেখি — ও না এলে সকলে মিলে আজ ওর ওখানেই কাটাবো , চল , চল দেখি ……। "
এই যে সম্পর্কের বাঁধন , যা আমি এখানে এসেই না শুধুমাত্র , সে সেই ছেলেবেলা থেকে এ পর্যন্ত সকলের কাছ থেকেই যে কী গভীর ভালোবাসা স্নেহে আগলে রাখতে এগিয়ে আসতে দেখেছি সবসময় একে অন্য কে ; হয়তো ঝগড়াঝাঁটিও হয়েছে , তবু তা যেন চিরদিনের জন্যে নয় ! একসময় আবার সব ভুলে যেয়ে একে অন্যের খোঁজ খবর সবই রেখেছে সকলে ।
সত্যিই সে সব কথা সবটা ভাবলে ভালো লাগে । তখন আমি কোনো শূন্যস্থান খুঁজে পাই না তো কোথাও !
এরা যেন সব সময়ই ঘিরে ধরে থাকে । আমিই যেন কখনো কখনো এদের সঙ্গ কে মনে করি বড্ড একঘেয়ে । আর তখনই আবার পথে পথে একা একা হেঁটে বেড়াই । না হলে সিনেমা হল ফাঁকা পেলে একখানা টিকিট কেটে ঢুকে পড়ি । কী ছবি , কী বই চলছে এসবের কোনো ধার ধারা নেই—- ঢুকে পড়েছি একা একাই…. ।
ইদানীং সিনেমা দেখায় পেয়ে বসেছে । এমনই একটা টান থেকে শংকর ফোচন আরো কে কে যেন ছিল সেই দলে ! এবং এক সময় তো লেকের পাশের হলটায় চলছিল যে সেই সময়ের সব চেয়ে 'এ ' মার্কা ছবি —- ' ববি ',.....বলতাম , চল তো দেখে আসি ….!
অলোক যেন কীভাবে ফোচনকে সঙ্গে নিয়ে কটা টিকিট জোগাড় করেছে লাইন দিয়ে — সকলে মিলে গোপনে বলেছি , ' চল তো , দেখে আসি —- কী আর এমন হাতি ঘোড়া আছে ওতে ! '
কিন্তু ববি তো দেখা হলো । হয়তো একটু গোপনীয়তা নিয়ে — কিন্তু কেন যে এই চুপিচুপি একটা ব্যাপার , তার তো কিছুই বুঝলাম না এই ছবিটি দেখে !
ফোচনের বড় সুভাষ , সুবীর , মানু , ও পাড়ার হুলো , সরকার বাড়ির ছেলেরা সকলে মিলে পরদিন সন্ধ্যাবেলায় পাড়ার মাঠের কোণায় ডেকে নিয়ে সে কি জেরা করা শুরু করলো , মূলত আমাকেই — শংকর ফোচনও ছিল , ওদের ভেতর কেউ একজন বললো , '' কী রে , তোরা নাকি ' ববি ' দেখতে গেছিলি মেনকা হলে ? ''
আমিই একটু এগিয়ে গিয়েই বললাম , '' হ্যাঁ …. কেন , তাতে কি হইছে কি ? ''
মানু বললো , '' ওঁ….. তোমরা বুঝি খুব বড় হয়ে গ্যাছো , নাকি ? মাসিমার কানে যদি যায় তাহলে কী হবে ? শংকরের বাড়িতে জানে তো ? ''
বললাম , '' কেন , জানলে কী হবেনে ? আমরা কী এমনের গরহীত অন্যায় কাজ করে ফেলেছি যার জন্যি এত ঘটা করে আমাগের জেরা করবার জন্যি তোমরা একেবারে দল বাঁধে চলে আইস সকলে ? একটা ছবি দেহিছি এই তো ! তাতে যেন একেবারে চন্ডী অশুদ্ধ হয়ে গ্যাছে …! ''
সুবীর বললো , '' ওঁ….. তা তুমি বুঝতে পারছ না বুঝি ! ''
সুভাষও একসঙ্গে বলে উঠলো একই কথা । যেন নাটকের সংলাপ চলছে ।
অত্যন্ত স্থির হয়ে বললাম ,''আমার মা যদি কিছু বলে তা আমি বুঝে নিতি পারবানে । আমি কিন্তু মনে করতিছি না , সেরকম কোনোই অন্যায় করিসি আমরা ! তবে আর সকলের বিষয়টা আমি জানি না — আশাকরি তারাও বুঝে নিতি পারবেনে —- তবে শোনো তোমরা , আমি কিন্তু এই কাজটা কে কোনো দোষের বলে মনে করতিসি না । পারলি তোমরাও দেহে আসগে না —- কি হাতি ঘোড়া আছে সেই ছবি তি ! আমি মনে করি শিল্পের আবার স্লীল অস্লীল কী ! সেটা তো একটা ছবি মাত্র ! তাছাড়া আর তো কিছুই না ! …এই তোরা যাবি নাকি ? চল , আমার কাজ আছে , ঠিক আছে যাই এহোনে —- পারলি তোরা সকলে মিলে দেখে আয়গে যা…. ''
পেছন থেকে কে যেন শুনলাম বলে উঠলো —- ও বাবা , এ তো দেখছি যথেষ্ট ফোঁস করে ওঠে ! দেখে তো মনে হয় না এত ট্যাঁটন ….! আচ্ছা , এরে অন্য ভাবে দেখতে হবে।
সে সব শুনেও পেছনে ফিরিনি আর । এরপরেও এদের আরো কিছু বলার আছে কিনা সেটাও মনে করি নি । তারপরেও কত ছবি দেখেছি , কিন্তু বুঝে উঠতে পারলাম না ওই ছবিটিকে সেই সময়ের সমাজ এতটা অচ্ছুৎ করে দেখেছিল ই বা কেন ! ছবি হিসেবে তো একেবারেই বাজারের আর পাঁচটা ছবির মতনই একটি ছবি —- তবুও তখনকার চেতনা দিয়ে যেমন , আজকের ভাবনা চিন্তা দিয়েও যদি তাকে ভাবি , তাহলে তো কিছুই দাঁড়ায় না !
সে দিনের সেই ব্যাবহা— সেই যে থোড়াই কেয়ার করি গোছের
একটা চরিত্রের প্রকাশ ; সেটা এরা খুব ভালো চোখে নেয় নি । সেই চাপটা গুনগুনিয়ে চললো বেশ কিছুদিন । সকলের পরিবারের কাছেই পৌঁছে দেবার উপায় টা — নানা কায়দায় কীভাবে সম্ভব , তার কৌশলটা এরা খুব ভালো করেই আয়ত্ত করে নিয়ে জানিয়ে দেয় , সকলের বাড়ি বাড়ি একে একে নানা কায়দায় ।
ফোচনের ঠাকুমা একদিন কথায় কথায় বললো , কী রে ভাই সিনেমা দ্যাখতে গেছিলা নাকি ?
বললাম , হ , ঠাকুমা ।
—- তা ভালো করছো , অর বাবায় তো কইলো না তেমন কিছু , অর মায় বকা-ঝকা দিল । আমি কইলাম আগের মারে ," বউমা , হোই ছে ডা কি ? এই বয়সে পোলাপান দ্যাখছে না হয় একখান ছবি , তাইতে এতডা বকনঝকনের কি আছে আমি তো বুইঝ্ঝা পাই না ! এই বয়সে দেখপে না তো কি বুইড়া বয়সে দ্যাখপে নাকি ?..... ছাড়ো তো, পোলাপানেরে লইয়া এত প্যাচাল পারণ ভাল্লাগে না বাপু , অ্যাতে আরো বিগড়াইয়ে যায় পোলাপানে ।খারাপ কিছু দেখলে অগোরে বুঝাইয়া কয়ন লাগে— দ্যাহো , এইডা ভালো , এই ডা খারাপ , এইডা বুঝাই-য়া বিচার করণের ভার অগোরেই দিতি হয় , তাতে অরাই বুঝতে পারে , নিজের মধ্যে একটা বিচার করে নিয়ে — "
ঠাকুমা যেটার এত সহজে সমাধান টানতে পারছে — এদের কাছে সেটা এত সহজে বুঝবার বিষয় নয় । তাছাড়া নাতি নাতনির প্রতি তার একটা পক্ষপাতিত্ব ছিলোই ।
যাইহোক বিষয়টা মিটে গেলেও মিটলো না ।
শংকর একদিন বললো , এই শোন , এদের একদম পাত্তা দিবি না তো । যতসব ভোজগারলের দল ! লেখাপড়ার দৌড় তো কত , তা আমি জানি ! ওরা যেন কিছুই দেখে না , করেও না কিছুই ; এই তো , দেখ না কদিন বাদেই সব গোপনে দলবেঁধে টিকিট কেটে দেখে আসবে ঠিক দেখতে পাবি — হুঁ হুঁ… শুনেছে না , কুচকুচানি আছে একটু ; অথচ আমি তো তেমন কিছুই পেলাম না ! হলিউডের ছবিগুলিকে তাহলে এরা কী বলবে ! ওগুলোই কি সব নাকি ? আসলে তো বোঝে না কিছুই — বোঝে শুধু ওটাই — !
তার উত্তরে এই কথাটাই বললাম ওকে , আমি ওসব সব বাদ দিলাম , আমি শুধু এই কথাটাই বলতি চাই , আমি কোথায় কী দেখবো , কী খাবো , সেটা তোমরা ঠিক করে দেবার কে ? এই নিয়ে এত চোখমুখ টানাটানির ই বা কি থাকতি পারে , সেইটাই তো আমি বুঝতি পারতিছি নে ভাই !
শুধু এখানেই থামেনি সবটা । দিদির বন্ধুরাও জিজ্ঞাসা করেছে । টুকুন দি তো একদিন বেশ গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞাসা করলো একই টোনে , বললো , তোরা তো শুনছি অনেক বড় হয়ে গেছিস রে ….!
উত্তরে বললাম , তা যা কোইছেন টুকুন দি ! পারলি যান না দেখে আসেন গে —- খুব একটা খারাপ লাগবে নানে… ।
তার পরের অভিব্যাক্তির অপেক্ষা না করে হন হন করে হাঁটা লাগালাম বাজারের দিকে ।
মনে মনে একবার শুধু বললাম , টুকুনদিও ছাড়লো না তাহলে !
পাড়ার বেশ কিছু মানুষ সেই থেকে আমাদের দলটার একটা নামকরণ ও করে ফেললো , ডেপোর দল । বেয়াড়া । বলে বেড়াতে লাগলো , এই মনিন্দ্র কর্মকারের পোলাডা হলো গিয়ে বড়ো আঁতেল একটা…।
সুভাষ বললো , তার সঙ্গে জুটেছে আমাদের বোকাপাঠা টা —- ওরে ওরা চালনা করছে বুঝতে পারছিস ! ইদানীং দেখছি কতকগুলোন আরো বাইরের ছেলেপেলে জুটেছে এই দলে ।
সে যাই বলুক , আমাদের আড্ডা নিয়ম করে আবার চলতে লাগলো । একরকম প্রতি রবিবার হলে ই নতুন একটা টিকিট কাটার লাইনে দাঁড়িয়ে যাই আমরা কজনে মিলে । সে যে ছবিই আসুক না কেন, প্রথমেই দেখতে হবে সেটা । দেখে এসে সেই নিয়ে এক দুদিন আলোচনাও চলে আমাদের মধ্যে ।
এই করতে করতে কিভাবে যেন আমি একেবারে উত্তম ভক্ত হয়ে গেলাম । চুলের ছাঁট ও পাল্টে গেল আমার । দিদিমার গোল ফ্রেমের রোলগোল্ডের চশমা টা নাকের ডগায় ঝুলিয়ে পথের দাবীর সব্যসাচীর ডায়লক মুখস্থ করে আওড়াতে লাগলাম আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে , '' মনে করো দেশ তোমার মা , তুমি তাঁর সন্তান —- তোমার চোখের সামনে তোমার মাকে বিবস্ত্র করে চাবুক মারা হচ্ছে …….'',
আমার এই নকল করে অভিনয় করা দেখে একদিন শংকর বললো , বা …! বেশ বেশ ….! তুই তো দেখছি বেশ আয়ত্ব করেছিস —- এতো একেবারে যেন ছোট উত্তম কুমার ! তা হাইট টা যদি আর একটু ভালো হোত , তাহলে ঠিক হোত আরো …;
পথের দাবীর সব্যসাচী এতটাই প্রভাবিত করলো যে গোটা উপন্যাস টি তিনদিন ধরে নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে একরকম টানা পড়ে ফেললাম । আর ছবিটির কয়েকটি জায়গার দৃশ্য এতটাই মুগ্ধ করলো —- যে কারণে বার কয়েক তো দেখেই ফেললাম ।
যদিও এইসব ঘটনার কথা সিনেমার প্রসঙ্গ উঠলো বলেই সামনে এসে দাঁড়ালো । আসলে এ ঘটনা এদেশে আসবার বছর খানেক পরের ঘটনা তো হবেই ।
কালীপুজোর পরপর ই মা ওদেশ থেকে ভাইকে নিয়ে ফিরে এসেছিল । দিদিমা সেই সঙ্গে আসতে পারেনি ভিসা না পাওয়ার জন্যেই — কথা হয়ে রয়েছে ভিসা পেলে সঞ্চয় কিম্বা কাইলে মামা তাকে বর্ডার পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যাবে , আর আমরা তাকে সেখান থেকে এগিয়ে নিয়ে আসবো ।
ভাই ওখানে এতদিন কী কী করে বেড়িয়েছে —- মোটামুটি তার-ই একটা বর্ণনা চলতে লাগলো কদিন ধরে । কথা প্রসঙ্গে প্রসঙ্গ উঠলেই সেই একই বিষয়ের অবতারণা চলছে আজ কদিন ধরেই ।
শুনালাম একথাও , মা নাকি দিদিমাকে পরিষ্কার ভাবে বলে এসেছে , যাই করো আর তাই করো , তোমার এদেশে আর একা একা এই ভাবে থাকা চলবে না । তোমার বড় নাতিও যখন ওদেশে ফিরে গ্যালো আর আমিও তোমার জন্যেই তো এই গোরুবাছুর পুষলাম , তাহলে এবারে আর এখানে পড়ে থাকা কেন ? এবার তোমাকে যেতেই হবে ওখানে ; না না , ওসব আর শুনছি নে , আচ্ছা ঠিক আছে , তুমি এখানে যেমন জায়গা জমি গোরু বাছুর নিয়ে থাকো , ওখানেও না হয় সেভাবেই থাকবে । সে ব্যাবস্থাই না হয় করে দেওয়া যাবে । আমি নিশি বিশ্বাসের মতো না হয় মাঠের দিকে চাষের জমি জমা কি ভাবে পাওয়া যায় সে সবের খোঁজ খবর করে দেখবো । চলো , এবারেই দেখবো — কত কি দাম দস্তুর এখন চলছে মাঠের দিকে ; মোটমাট কথা হোল এভাবে তোমার আর এখানে থাকাটা চলবে না ।বয়স তো হচ্ছে , না কি কমছে ?
সেখানে দিদিমাকে কীভাবে মা বলেছে — সেই কথাগুলি ই সে বলছিল ।
আমি মায়ের কথার সূত্র ধরেই বললাম , তা তোমার কথা কি মেনে নিয়েছে দিদিভাই ? তা তো মনে হয় না !
মা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললো , মানবে না তো কি করবে ? যদিও এখানে একটা বিশেষ বিষয় রয়েছে , সেটা হলো গিয়ে তুমি , তুমিই পারো , তুমিই যদি তাকে ঠিকঠাক ভাবে বুঝিয়ে সুঝিয়ে পারো তো , তাহলেই হবে — তুমিই পারো যা বুঝতে পারলাম , তোমার কথাই সে মানতে পারে । তাছাড়া সে এখনো ভাবছে যদি তুমি আবার ঠেলা দেও ওদেশে ! তাহলে সে আর নড়বে না কোথাও । আমার সব পরিকল্পনাই ভেস্তে যাবে । তাই বলছিলাম কি , শোনো বাবা , এখানে সবটাই তোমার সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভর করছে এখন । সে এখনো ভাবছে , তুমি যদি ওদেশে ফিরে যাও ! আর সেটা গেলেই সে সব কিছু ঠিক করবে । বলছে , ''জমিজাতির এখন দাম নেই — টাকার বাটাও একেবারেই কম —- দরদাম বারুক তারপর ভাবা যাবে । তারে পাঠাও তো আগে একখান পাসপোর্ট করে , সে কি কয় ,তারপরে ভাবা যাবেনে ওসব সবকিছু । ''
তার মানে বুঝতে পারছ ? তোমার দিদিমার মনের বাসনা টা কি !
আমি যেন এসবের ভেতরে বাইরে কোনো পথেই হাঁটলাম না । এমনই একটা ভাব করে অন্য কিছুর দিকে বিষয়টাকে ঘোরানোর জন্যেই বললাম , '' এবারে আর কোথাও গেছিলে নাকি বেড়াতে…. ? ''
***********************************************
আগামী পর্বে
***********************************************