বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

গুচ্ছ কবিতা * দীপংকর রায়




পাথুরে বোধনের কান্না শুনি কাশবনে‌ 

(উৎসর্গ:  দীপ্তিশিখা দাস)

দীপংকর রায়


২০০.

প্রসাধনীতে সাজাই না তো  !

যতটা পারি আলগা রাখি ।

প্রবাদ আছে, ‘লজ্জা ভয় , 

তিন থাকতে নয় । ‘

 তবুও গুটাও ;


প্রিয়জন কি কখনও 

সে সব মনে রাখে ?

সব ছাড়িয়ে 

নিজেকে  প্রতিস্থাপন করা ;

শত চেষ্টাতেও নিজেকে নিজের থেকে 

না পারা যায় যেন লুকোতে ।


যেখানে উৎসর্গিত হয় 

এই দেখা-শোনা।


২০১.

শব্দে শব্দে ঘুরে যায়…


বন্ধ জানলা দরজায় 

দূর পথের অতিথি মুখটি ....


আত্মার সঙ্গে ঘুম-জাগরণ

প্রকৃতির এই যে প্রহসন -----

বড় অভিমানী চাঁদ ওঠে 

আকাশ জুড়ে যদিও ,

সব নক্ষত্রদের তাই বলে কি

জানিয়ে জাগে  

সেই মাঘী পূর্ণিমার রাত ?


আকাশ ভাবেও না কখনো 

কোন মাঠে কত চিৎকার 

জড়ো হয়ে পড়ে থাকে কুয়াশায়।


দুএকটি নক্ষত্রের ইশারায়  

কেউ কেউ , জ্যোস্না মেখে 

গড়াগড়ি করতে চেয়েছিল যেই,

কোনো এক কালে মনে মনে ;

হয়তো ,  সে সব গল্প 

কোথাও আজও প্রচলিত :


মনোবিকলনে এই সব ,

এই যেমন ,  সে ও তার মাঝে 

কত বিভাজন ! কত রেখাদের উল্টোপাল্টা চলন , চিৎকার…


নৈঃশব্দের ভেতর হামাগুড়ি দিয়ে চলে যেন

কতকাল ধরে , 

মাধবীলতাদের সুমিষ্ট ঘ্রাণ :


কাঠবাদাম ফেটে পড়ে ?

শিমুল পলাশেরা  

সমস্ত দিন চুলের ভেতর 

আঙুল চালায় শুধু ....

কে আর জানে সেসব ?


দুচোখ বেয়ে 

বয়ে যায় কত 

দামোদর মহানন্দারা …


ঠোঁটের উপর

তাদের দেখেছি কি কেউ কখনো ?


মনে নেই যেন , 

কত নাম নাজানা নদীরা 

সে সব আজও 

কত সুর ছড়িয়ে বয়ে চলে------ 


সেই জলের শব্দ কীভাবে পাঠাই ?


ঘরের ভেতর 

কে যেন আজও 

এতটা আকাশ পাঠায় বলেই 

তাঁকে দেখতে পাই এমন করে।



২০২.

কোন অনুভবে হাত-পা মেলবো ?

আজকের বেঁচে ওঠায় 

কোন উচ্ছ্বাস ?


আহ্লাদ আসে নি , 

দিন যায় রাত আসে...

একটি ছোট্ট কমায় লেখা হয়ে যায় 

ছিলাম কখনো 

সেই নামের পাশে , সামান্য গুঞ্জন....


নিশ্চয়তা ছিল না 

ফেরায় ;

যাওয়া আসা সেও একটি বিন্দুর ,

ঝড় উঠেই থেমে যায় ৷


নানা পথে মনখারাপ .....

নাকি সে ছিল আপন আপন ঘোরায় খানিকটা ধুলোয় ধুলোক্কার......?


ছলনাদের নানা সাজপোশাক….;

কালবৈশাখী এসেছিল কি ?

সে যেন দমকা হাওয়ার সুখ আমার ।


আগুন প্রহসন ?

জানি না তো !

মনে হয় ফুরিয়ে এলো  দিন …. ;


আজ আর কোনোভাবেই 

মনে পড়েনি ---- 

যার মধ্যে আমি আমার সকল বয়স রেখেছি লুকিয়ে ।


সেও রেখেছে খুলে 

সকল প্রসাধনী ।


সেই যে কোথাও উঠেছিল দুটি রেখায় রামধনু 

তাকে কি দেখেছিল কেউ ?


যে দিকে যত আছে দুঃসময় ----- 

হয়তো দেখেনি ,

যে যার অহম খেয়েছিল চিবিয়ে 

অনেকক্ষণ ।


কত কাল কিছুই হয়নি ! ভাবনাদের কপালজোড়া  কত তীক্ষ্ণ

বিন্দু , ভোঁতা হয়ে গেছে …..অবসন্ন ? 


ঘাড় কাত করে বসে আছে 

নতজানু সব

একা ঘুরে চলা জলের কাছে ৷


সেও চলেছে ঘুরে আজও …

নিভৃতির সুতোয় বোনা 

কারো দুটি চোখের নির্লিপ্তি 

সে সব


২০৩.

নির্ভার হবো বলে 

পথকে খুঁজছিলাম গলাগলি ;

অনুভবের দরজা-জানলা রেখেছিলাম খুলেই ,

বন্ধন কি বাদ যায় তবুও ?

পথের মোড়ে 

দাঁড় করিয়ে অহেতুক টানাটানি হিসাব কষার ;

কাকে বুক খুলে 

ছেঁড়া বোতামগুলির গল্প বলি ....?


কেউ কারো ভেতরে  

এক মুহুর্তেরও 

শোনেনি তো  আর্তনাদ  ।


ঝোলে ঝালে

চর্বিতে চামড়ায় 

বদহজমের ঢেঁকুর খালি ।


মুখগুলিকে  ঝরে পড়া রঙ দিয়ে যতোই আঁকি , 

সেও তো তাই-ই।

যার দুচোখে 

ঠোঁটে , গালে , গালের দুপাশ জুড়ে  কলঙ্করেখা উঠেছে ফুটে , কীভাবে তাকে 

ভেতরের শূন্য তরঙ্গ বোঝাই ?!

কত দিন পরে দেখা হলেও 

বলতে পারি না নির্ভার হও তো একটু ...... কাছে এসে দাঁড়াও , চলো , পথের গান শুনি ......

ঘর থেকে বেরিয়েও ,

জানলা দরজা পিছু ছাড়ে না ।


এক একটি দিন এমনই.......













২০৪.

না-ঘুম চোখের পায়ে পায়ে 

হাঁটছে রাত ......

সেও তাঁর আকাশগঙ্গায় ভাসছে একা একা ।

কানতে কানতে অনেক রাতের শাখায় শাখায় কান পাততে পারছে কি এই বসন্ত ?


সকল গানের না-জানা সুর 

বিরহী রাতের তারারা-ই জানে , 

আর কেউ না ------


এই সব রাতের পায়ের সাথে আমাদের কতকালের ওঠা বসা ------সে কথা জানো কি ?


এই ভেসে থাকা , 

নদীর মতো মিলেমিশে একাকার হলে , কে যেন বুকের বোতাম খুলে জ্বালিয়ে দেয় শেষ আব্রুটুকুও ;


উপচে পড়ে কত আহুতি যে ------


তারপরের বৌদ্ধিক স্তব্ধতা জানে অনেক অজানা পথের 

নানা কথা বুঝি -----


যে কথা জানা হোল না আজও ।



২০৫.

জঙ্গল ,পাথর,কাঁকড় ,ধুলোবালি মাখামাখি 

রূপের অরূপ রূপন্তি সে সব .....


কি দুঃসহ চলাচল জড়িয়ে 

সব অবয়ব ভাঙলো যে সে, সমস্ত অনুভব চেতনায় রূপান্তরিত হলে , কতরকম ভাবে যে তাঁর উপস্থিতি , সে সব দুঃসহ পথের পথে পথে ,  কীভাবে যে স্বপ্নের রথ ছুটে যায় ---- সব অবয়ব ভেঙে পড়ে মহানিরাবয়বের ভাঁজে ভাঁজে ---- খাঁজে খাঁজে চলাচল করে মহাকাশ ---- তারায় তারায় হাজার চাঁদের গহবর ---- পথ খুঁজে হন্যে হয় যেন কে , কে যেন তখনো বলে , ওসব সব ভুলে চলো ---- চলো চলে যাই---- সেই বাচড়া ক্ষেতের 

কাঁটাপথ ভাঙি আর একবার ---


সেই তো জীবন !

বহু জীবনে যেতে যেতে 

এই পথ যখন পেয়েছি , দাঁড়াও , 

দুহাতে স্বপ্ন চিবাই কিছুক্ষণ …



২০৬.

গুটিয়ে থাকার কথা ভেবে 

শরীরকে অপরাধী করি ।


কেন মিছিমিছি 

লুকিয়ে পড়ি ?


ভাবনাদের নিয়ে 

জাবর কাটবো বলে ?

সেই আমাদের নিভৃত সুখ একমাত্র ।

সেই বুঝি নাজানা আনন্দ !


সেই জন্যেই কি 

এতকাল গাঙজোছনায় ভাসিয়ে রেখেছিলাম 

শরীর ?


স্মরণ থাকে না যেন ,

তাই বুঝি ছবি জুড়ে 

এতটা মোহনীয় সে ?


সেসব সব 

অশরীরী আবেগ বিহ্বলতা ছাড়া 

আর কিছু নয় তো !


তার কি শরীর থাকতে নেই ?

তার কি অসুখ থাকে না কোথাও ?

সে কি সদা চঞ্চল 

অপার্থিব কিশোরী দৌড় এক !

আমাদের চেতনায় 

এই অমূল্য ভুল কেবলই ছুটিয়ে মারে .....।



২০৭.

ভেতরের তাকে 

সে আটকাবে 

কোন ছলনায় ?


পথের ধারে 

আমমুকুলের ঘ্রাণে 

সেই তো ভাসছে 

দেখি ......


পথের আড়ালে 

আর একটি পথের রোদে 

তার যে মুখটি ভাসে ,

সেই দুটি চোখেই তো 

আমার আজকের মুখটি দেখি ।

সে যে কি আয়না-আনন্দ আমার !

সে কথা কি জানে সে ?


জানে না -----


রহস্যের এই যে যাওয়া-আসা ,

এই যে ভেঙে পাওয়া প্রতিচ্ছবি---- 

এই যে আম-মুকুলের ঘ্রাণে 

তার সকল উপস্থিতি আজও ;

সেও তো লেবুফুলের মুর্ছনাদের মতোই ।


ডাকের ভেতর কীভাবে যে পুড়ি ;

সে কথা কি সে জানে কখনো ?


কি যে সেই ঠোঁটে ঠোঁট রাখারাখি !

হয়তো জানে , হয়তো জানে না , তবু সেই জানাজানিতে 

কোথাও ছলনা নেই । আছে আপন আহ্লাদ শুধুই ।


২০৮.

কিছু কিছু সম্পর্ক 

ক্ষমা , অনুভবও 

সাজানো ভবিতব্যের কথা বলে :


রক্তেরা বিরোধিতা করলেও , কেউ কেউ হাঁ করে চেয়ে থাকে বিকেলের আকাশের মতো ।

বেহিসেবী ফাল্গুনের মন-কেমন হাওয়ারা জানে 

আরো ভালো সে সব !

ঘুঘুগুলি অপ্রতিরোধ্য 

দুপুর বেলার মনকেমন করা ডাক....।


সন্ধ্যা আসে 

চাঁদনী রাতে গলা সাধার সুরে ......

কার যেন লেগে আসে দুই হাঁটু ,

গলা ভেঙে যায় , চিৎকার থামে না তবুও ; 

কে যেন মরিয়া আজ , বাতাসে মিশিয়ে দেবেই 

সে তার অন্তিম সুর ....!

এতটা কি দরকার ছিলোই আজ ?


এতবার 

বুঝে নিতে চেয়েও 

জানলো না কাকে বলে সম্পর্ক !

ডোবাটির ভেতর 

শ্যাওলা জমে আছে , সেখানেও দেখার শেষ নেই ;


ওই তো সরস্বতী ছড়িয়ে গেল .....

অবাধ্য কিশোরীটির 

ঢিল ছুঁড়ে দেওয়াতে ।












****************************************************************************************************************


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন