পাথুরে বোধনের কান্না শুনি কাশবনে
(উৎসর্গ: দীপ্তিশিখা দাস)
দীপংকর রায়
২০০.
প্রসাধনীতে সাজাই না তো !
যতটা পারি আলগা রাখি ।
প্রবাদ আছে, ‘লজ্জা ভয় ,
তিন থাকতে নয় । ‘
তবুও গুটাও ;
প্রিয়জন কি কখনও
সে সব মনে রাখে ?
সব ছাড়িয়ে
নিজেকে প্রতিস্থাপন করা ;
শত চেষ্টাতেও নিজেকে নিজের থেকে
না পারা যায় যেন লুকোতে ।
যেখানে উৎসর্গিত হয়
এই দেখা-শোনা।
২০১.
শব্দে শব্দে ঘুরে যায়…
বন্ধ জানলা দরজায়
দূর পথের অতিথি মুখটি ....
আত্মার সঙ্গে ঘুম-জাগরণ
প্রকৃতির এই যে প্রহসন -----
বড় অভিমানী চাঁদ ওঠে
আকাশ জুড়ে যদিও ,
সব নক্ষত্রদের তাই বলে কি
জানিয়ে জাগে
সেই মাঘী পূর্ণিমার রাত ?
আকাশ ভাবেও না কখনো
কোন মাঠে কত চিৎকার
জড়ো হয়ে পড়ে থাকে কুয়াশায়।
দুএকটি নক্ষত্রের ইশারায়
কেউ কেউ , জ্যোস্না মেখে
গড়াগড়ি করতে চেয়েছিল যেই,
কোনো এক কালে মনে মনে ;
হয়তো , সে সব গল্প
কোথাও আজও প্রচলিত :
মনোবিকলনে এই সব ,
এই যেমন , সে ও তার মাঝে
কত বিভাজন ! কত রেখাদের উল্টোপাল্টা চলন , চিৎকার…
নৈঃশব্দের ভেতর হামাগুড়ি দিয়ে চলে যেন
কতকাল ধরে ,
মাধবীলতাদের সুমিষ্ট ঘ্রাণ :
কাঠবাদাম ফেটে পড়ে ?
শিমুল পলাশেরা
সমস্ত দিন চুলের ভেতর
আঙুল চালায় শুধু ....
কে আর জানে সেসব ?
দুচোখ বেয়ে
বয়ে যায় কত
দামোদর মহানন্দারা …
ঠোঁটের উপর
তাদের দেখেছি কি কেউ কখনো ?
মনে নেই যেন ,
কত নাম নাজানা নদীরা
সে সব আজও
কত সুর ছড়িয়ে বয়ে চলে------
সেই জলের শব্দ কীভাবে পাঠাই ?
ঘরের ভেতর
কে যেন আজও
এতটা আকাশ পাঠায় বলেই
তাঁকে দেখতে পাই এমন করে।
২০২.
কোন অনুভবে হাত-পা মেলবো ?
আজকের বেঁচে ওঠায়
কোন উচ্ছ্বাস ?
আহ্লাদ আসে নি ,
দিন যায় রাত আসে...
একটি ছোট্ট কমায় লেখা হয়ে যায়
ছিলাম কখনো
সেই নামের পাশে , সামান্য গুঞ্জন....
নিশ্চয়তা ছিল না
ফেরায় ;
যাওয়া আসা সেও একটি বিন্দুর ,
ঝড় উঠেই থেমে যায় ৷
নানা পথে মনখারাপ .....
নাকি সে ছিল আপন আপন ঘোরায় খানিকটা ধুলোয় ধুলোক্কার......?
ছলনাদের নানা সাজপোশাক….;
কালবৈশাখী এসেছিল কি ?
সে যেন দমকা হাওয়ার সুখ আমার ।
আগুন প্রহসন ?
জানি না তো !
মনে হয় ফুরিয়ে এলো দিন …. ;
আজ আর কোনোভাবেই
মনে পড়েনি ----
যার মধ্যে আমি আমার সকল বয়স রেখেছি লুকিয়ে ।
সেও রেখেছে খুলে
সকল প্রসাধনী ।
সেই যে কোথাও উঠেছিল দুটি রেখায় রামধনু
তাকে কি দেখেছিল কেউ ?
যে দিকে যত আছে দুঃসময় -----
হয়তো দেখেনি ,
যে যার অহম খেয়েছিল চিবিয়ে
অনেকক্ষণ ।
কত কাল কিছুই হয়নি ! ভাবনাদের কপালজোড়া কত তীক্ষ্ণ
বিন্দু , ভোঁতা হয়ে গেছে …..অবসন্ন ?
ঘাড় কাত করে বসে আছে
নতজানু সব
একা ঘুরে চলা জলের কাছে ৷
সেও চলেছে ঘুরে আজও …
নিভৃতির সুতোয় বোনা
কারো দুটি চোখের নির্লিপ্তি
সে সব
২০৩.
নির্ভার হবো বলে
পথকে খুঁজছিলাম গলাগলি ;
অনুভবের দরজা-জানলা রেখেছিলাম খুলেই ,
বন্ধন কি বাদ যায় তবুও ?
পথের মোড়ে
দাঁড় করিয়ে অহেতুক টানাটানি হিসাব কষার ;
কাকে বুক খুলে
ছেঁড়া বোতামগুলির গল্প বলি ....?
কেউ কারো ভেতরে
এক মুহুর্তেরও
শোনেনি তো আর্তনাদ ।
ঝোলে ঝালে
চর্বিতে চামড়ায়
বদহজমের ঢেঁকুর খালি ।
মুখগুলিকে ঝরে পড়া রঙ দিয়ে যতোই আঁকি ,
সেও তো তাই-ই।
যার দুচোখে
ঠোঁটে , গালে , গালের দুপাশ জুড়ে কলঙ্করেখা উঠেছে ফুটে , কীভাবে তাকে
ভেতরের শূন্য তরঙ্গ বোঝাই ?!
কত দিন পরে দেখা হলেও
বলতে পারি না নির্ভার হও তো একটু ...... কাছে এসে দাঁড়াও , চলো , পথের গান শুনি ......
ঘর থেকে বেরিয়েও ,
জানলা দরজা পিছু ছাড়ে না ।
এক একটি দিন এমনই.......
২০৪.
না-ঘুম চোখের পায়ে পায়ে
হাঁটছে রাত ......
সেও তাঁর আকাশগঙ্গায় ভাসছে একা একা ।
কানতে কানতে অনেক রাতের শাখায় শাখায় কান পাততে পারছে কি এই বসন্ত ?
সকল গানের না-জানা সুর
বিরহী রাতের তারারা-ই জানে ,
আর কেউ না ------
এই সব রাতের পায়ের সাথে আমাদের কতকালের ওঠা বসা ------সে কথা জানো কি ?
এই ভেসে থাকা ,
নদীর মতো মিলেমিশে একাকার হলে , কে যেন বুকের বোতাম খুলে জ্বালিয়ে দেয় শেষ আব্রুটুকুও ;
উপচে পড়ে কত আহুতি যে ------
তারপরের বৌদ্ধিক স্তব্ধতা জানে অনেক অজানা পথের
নানা কথা বুঝি -----
যে কথা জানা হোল না আজও ।
২০৫.
জঙ্গল ,পাথর,কাঁকড় ,ধুলোবালি মাখামাখি
রূপের অরূপ রূপন্তি সে সব .....
কি দুঃসহ চলাচল জড়িয়ে
সব অবয়ব ভাঙলো যে সে, সমস্ত অনুভব চেতনায় রূপান্তরিত হলে , কতরকম ভাবে যে তাঁর উপস্থিতি , সে সব দুঃসহ পথের পথে পথে , কীভাবে যে স্বপ্নের রথ ছুটে যায় ---- সব অবয়ব ভেঙে পড়ে মহানিরাবয়বের ভাঁজে ভাঁজে ---- খাঁজে খাঁজে চলাচল করে মহাকাশ ---- তারায় তারায় হাজার চাঁদের গহবর ---- পথ খুঁজে হন্যে হয় যেন কে , কে যেন তখনো বলে , ওসব সব ভুলে চলো ---- চলো চলে যাই---- সেই বাচড়া ক্ষেতের
কাঁটাপথ ভাঙি আর একবার ---
সেই তো জীবন !
বহু জীবনে যেতে যেতে
এই পথ যখন পেয়েছি , দাঁড়াও ,
দুহাতে স্বপ্ন চিবাই কিছুক্ষণ …
২০৬.
গুটিয়ে থাকার কথা ভেবে
শরীরকে অপরাধী করি ।
কেন মিছিমিছি
লুকিয়ে পড়ি ?
ভাবনাদের নিয়ে
জাবর কাটবো বলে ?
সেই আমাদের নিভৃত সুখ একমাত্র ।
সেই বুঝি নাজানা আনন্দ !
সেই জন্যেই কি
এতকাল গাঙজোছনায় ভাসিয়ে রেখেছিলাম
শরীর ?
স্মরণ থাকে না যেন ,
তাই বুঝি ছবি জুড়ে
এতটা মোহনীয় সে ?
সেসব সব
অশরীরী আবেগ বিহ্বলতা ছাড়া
আর কিছু নয় তো !
তার কি শরীর থাকতে নেই ?
তার কি অসুখ থাকে না কোথাও ?
সে কি সদা চঞ্চল
অপার্থিব কিশোরী দৌড় এক !
আমাদের চেতনায়
এই অমূল্য ভুল কেবলই ছুটিয়ে মারে .....।
২০৭.
ভেতরের তাকে
সে আটকাবে
কোন ছলনায় ?
পথের ধারে
আমমুকুলের ঘ্রাণে
সেই তো ভাসছে
দেখি ......
পথের আড়ালে
আর একটি পথের রোদে
তার যে মুখটি ভাসে ,
সেই দুটি চোখেই তো
আমার আজকের মুখটি দেখি ।
সে যে কি আয়না-আনন্দ আমার !
সে কথা কি জানে সে ?
জানে না -----
রহস্যের এই যে যাওয়া-আসা ,
এই যে ভেঙে পাওয়া প্রতিচ্ছবি----
এই যে আম-মুকুলের ঘ্রাণে
তার সকল উপস্থিতি আজও ;
সেও তো লেবুফুলের মুর্ছনাদের মতোই ।
ডাকের ভেতর কীভাবে যে পুড়ি ;
সে কথা কি সে জানে কখনো ?
কি যে সেই ঠোঁটে ঠোঁট রাখারাখি !
হয়তো জানে , হয়তো জানে না , তবু সেই জানাজানিতে
কোথাও ছলনা নেই । আছে আপন আহ্লাদ শুধুই ।
২০৮.
কিছু কিছু সম্পর্ক
ক্ষমা , অনুভবও
সাজানো ভবিতব্যের কথা বলে :
রক্তেরা বিরোধিতা করলেও , কেউ কেউ হাঁ করে চেয়ে থাকে বিকেলের আকাশের মতো ।
বেহিসেবী ফাল্গুনের মন-কেমন হাওয়ারা জানে
আরো ভালো সে সব !
ঘুঘুগুলি অপ্রতিরোধ্য
দুপুর বেলার মনকেমন করা ডাক....।
সন্ধ্যা আসে
চাঁদনী রাতে গলা সাধার সুরে ......
কার যেন লেগে আসে দুই হাঁটু ,
গলা ভেঙে যায় , চিৎকার থামে না তবুও ;
কে যেন মরিয়া আজ , বাতাসে মিশিয়ে দেবেই
সে তার অন্তিম সুর ....!
এতটা কি দরকার ছিলোই আজ ?
এতবার
বুঝে নিতে চেয়েও
জানলো না কাকে বলে সম্পর্ক !
ডোবাটির ভেতর
শ্যাওলা জমে আছে , সেখানেও দেখার শেষ নেই ;
ওই তো সরস্বতী ছড়িয়ে গেল .....
অবাধ্য কিশোরীটির
ঢিল ছুঁড়ে দেওয়াতে ।
****************************************************************************************************************



কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন