কবিতাগুচ্ছ * তুষার ভট্টাচার্য
ভোরের স্বপ্নে
পাখি ডাকা ভোরের মায়া জড়ানো স্বপ্নে আজ কিছুক্ষণ
শুনেছি বহুদূর থেকে ভেসে আসা সমুদ্রের গর্জন ;
আজ স্বপ্নে দেখেছি বৈষ্ণবীর রাঙা লাজুক মুখ কিছুক্ষণ
ভালবেসে চেয়েছি তার পরান্মুখ হৃদয় মন
পুবের রোদ্দুরে ভেজা উঠোনে এসে
পাখিরা শুনিয়েছে কলতান গান ;
পড়শি নদীর জলে আজ ভাসিয়ে দিয়েছি
মন পবনের নাও
কৃষ্ণকলি বৈষ্ণবী দুয়ারে ছুটে এলে
আজ যাব না চলে অন্য কোথাও l
স্মৃতির পাখি
ভাঙা চোরা ক্ষয়ে যাওয়া বিষাদ জীবনে আর কোনও প্রয়োজন নেই
মায়াবী জোছনায় ভেজা ঘাসের উঠোনে
ঘুঙুর শব্দ, আতরের ঘ্রাণ ;
ভালবাসার সমস্ত স্মৃতি চিহ্ন
ধুয়ে ফেলছি অশ্রু জলের বেদনায় ;
তবু নিঝুম রাত্তিরে হৃদয়ের বাতিঘরে
কেন যে স্মৃতির পাখি নীরবে
শুনিয়ে যায় ভালবাসার ঝুমুর গান l
বেহুলার মত
প্রতিটি ভাতের দানায় ফুটে ওঠে মায়ের দুঃখী উপোসী মুখ
শরীরের প্রতিটি নুন ঘাম শ্রম জলের মধ্যে
লেগে থাকে যন্ত্রণার ক্ষত চিহ্ন
জীবনের প্রতিটি ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে জড়িয়ে থাকে ব্যর্থতা আর অপমানের নকশি কাঁথা ;
তবুও প্রতিটি বিপন্ন রাত্তিরে আধো ঘুমের ভিতরে উড়ে আসে বহুদূরের সাত সমুদ্র
তের নদীর গর্জন ;
বেহুলার মত দুঃখে ভেসে যাব না গাঙুরের জলে
এখনও ভোরবেলা পুবের জানালা খুলে
দু'চোখে রোদ্দুর মেখে আমাকে ডাক দেয়
জোড়া শালিক পাখি
ওই আকাশ গঙ্গা থেকে একদিন ছেঁড়া জামার পকেটে নিয়ে আসবো
রূপকথা স্বপ্নগুলি l
রাত্তির দর্পণে
যতবার চোখ বুজি ঠিক ততবার রাত্তির
দর্পণে
হিম শিশিরে ভেজা ম্লান জোছনায়
একটি ছায়ামুখ ভেসে ওঠে ;
আমার দুঃখের মণ্ডপে
আজও কেন বার বার নীরবে ভেসে
ওঠে চুল খোলা কিশোরীর সজল
মায়াবী মুখ ?
অনন্ত স্মৃতির ভিতরে উড়ে এসে কেন সে
আমাকে শুধুই কান্না জলে ভাসিয়ে দিয়ে যায় !
যতবার চোখ বুজি ঠিক ততবার।
*******************************************************************************************************
তুষার ভট্টাচাৰ্য
তুষার ভট্টাচাৰ্যর জন্ম ১৯৬২ সালে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে l স্নাতকোত্তর পাশ ( কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ) সরকারি কর্মী l দীর্ঘদিন ধরে কবিতা লেখেন l সিগনেট প্রেস থেকে ২ টি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে l





কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন