কবিতাগুচ্ছ * ছোটন গুপ্ত
১)
ডাক
ডাক দিয়েছে মিহিন বাতাস
হিম পৌষের সাঁঝে,
ডাকছে এখন আমায় আকাশ
নেবোই ছুটি কাজে৷
রোদ বাতাসের আলতো পরশ
তাপ পোহানো বেলা...
কমুক এখন মনের বয়স,
চলুক খেয়াল খেলা৷
পৌষালি গান গাইবে কে আজ ?
যাচ্ছি রোদের দেশে,
নীল আকাশে থাক মন্তাজ—
শীত রৌদ্রে ভেসে।
পাল্টে দেবোই ভ্রান্তিবিলাস
দুঃখ-সুখের খাতা…
শীত ভাঙা দিন আমার আকাশ
লিখবে সৃজন গাথা৷।
২)
রোদ এলে
এক আকাশ রোদ এনে দেবে
কথা দিলে খুশির আবেশে
কথা দিয়েছিল সান্তাও
ভালোবাসা দেবে রাত শেষে
কথা ছিল আলোবাসা গিয়ে
পাখির কাকলি কলতানে
আঁকা হবে সোহাগের ছবি
সাত রং-এ স্বপ্ন বাগানে ।
কথা ছিল কাল দেখা হলে
আশ্বাস দিয়ে যাবো তোকে
সান্তা তো সব ভুলে গেল
ঘুম ভাঙে অভিমানে শোকে
আমাদের প্রিয় বাসভূমি
রাত জেগে থাকে তবু একা
ভালোবাসা ফিরে চলে এলে
এঁকে দিও সোনা রং রেখা ।
৩)
অদেখা লিপি
তোমার সঙ্গে দেখা হয়েছে কী আর ?
কতোদিন পরে স্বপ্নটা বারবার
খোলা জানালায় রোদ মেলে চাই রোজ
পথে হারিয়েছি তোমার বাসার খোঁজ ৷
জানালার পাশে কাঁঠালি চাঁপার কুঁড়ি
তোমার দু'হাতে বেজে ওঠা দুটি চুড়ি
বয়ে যাওয়া দিনে রাতে অহমিকা স্রোতে
হারিয়ে গিয়েছে ভালোবাসা ভুল পথে৷
এখানে সবাই ব্যস্ত কাজের ভিড়ে
ফিরে গেছে গান কবিতারা প্রিয় নীড়ে ।
তোমার পাড়ায় সাড়ায় ছড়ায় আলো
হাসি কথালাপে আছো খানিকটা ভালো ৷
উড়ছে সোনালি রূপোলি রঙের দিন
তোমার ছায়ায় নিভু আঁচে আলাদিন
পথে প্রান্তরে আসে না বাউন্ডুলে
আছে সে যন্ত্রে কবিতার কথা ভুলে ৷
বেলা কমে আসা শীতের হিমবাসা জানে
তুমি না থাকায় স্বপ্নরা হার মানে ৷
পড়ন্ত বেলা বলে গেছে ফিরে যেতে
রিরংসা লোভ কাম ক্রোধ তলানিতে ৷
নীরবতা কাল ভুলভাল করে চলে
তুমি নেই তবু তোমারই গল্প বলে ।
কান পেতে রাতে তোমার অপেক্ষাতে
না বলা কথার নীরবতা ঘন রাতে ৷
কিছু পুরাতনি শব্দকে ডাকে হাওয়া
অকথা জড়িয়ে স্মৃতিবাস ফিরে চাওয়া ৷
রাত যতো বাড়ে ছায়া গাঢ় কাঁপুনিতে
কবে যে দেখেছি দূরের পাহাড়ে শীতে !
তোমার মুখের মুখরতা দিলে ডাক—
এখনো কেন যে বুকে বেজে চলে শাঁখ !
তোমাকে পেয়েছি বিগত বিরতি ছুঁয়ে
আমি কেউ নই, বলে গেছে একগুঁয়ে ।
যা গেছে তা যাক যেটুকু আছে তা থাক
অকবি ছবিতে নিজেকেই খুঁজে পাক ।
রাত জাগা ভোরে ভালোবাসাটুকু রাখি,
মহাজনী ঋণে বেড়ে চলে ধারবাকি ৷
৪)
শীতের সফরে
কুয়াশায় ঢাকা সকালের রাস্তাতে
হেঁটে যেতে যেতে দেরি হয়ে যায় রোজ
তুই সাথে এলে হাত রেখে তোর হাতে
পৌঁছাতে পারি যে বাসার নেই খোঁজ
বন্ধু ঘুমিয়ে লেপে কম্বলে ঢেকে
শীতভোরে পথে জেগে থাকি তাই একা
কল্প আদরে রোদের স্বপ্ন এঁকে
সুর্যশিবিরে পৌঁছানো হলে ফেরাবো আলোকরেখা ।
শীতল এ রাতে দু একটি কথা বলি
তোর পাশ ঘেঁষে উষ্ণ সোহাগ চাওয়া
তোকে ভালোবেসে আপাতত ফিরে চলি
স্বপ্নবাসাতে কোনও সাক্ষাতে পুনরায় গান গাওয়া ।
৫)
ভাসমান ছবি
নিরুদ্দেশের নৌকা বয়ে চলা
ছল ছল ছল জল টলমল নদী
সমর্পণের চিহ্ন এঁকে বলা
সত্যি শুধু আমার হতো যদি
আঁকতে তুমি স্মৃতির ছায়াছবি
ক্যানভাসে রং তুলির আখর টানা
হয় তো তখন বাউণ্ডুলে কবি
বলতো ডেকে শব্দ করা মানা
নম্র জলের উতল ধারার ঢেউ
সমস্ত রাত এমনি বয়ে যাওয়া
স্মৃতির দেওয়াল থাকগে ছুঁয়ে কেউ
দাও ছড়িয়ে উতল সান্ধ্য হাওয়া
ইচ্ছে যাপন যেদিক খুশি যাক
সেই তো তুমি আঁকছো ছায়া আলো
আমার খেয়ায় মন ছবিটাই থাক
আসবে জানি মুছিয়ে দিতে কালো ।
***********************************************************
পোশাকি নাম প্রবীর দাশগুপ্ত। কবিতা লেখেন ভালোবেসে। মানুষ সময় সমাজভাবনা তার লেখার উপজীব্য। কবিতায় বার্তা থাকে একসাথে হাতে হাত বেঁধে পথ চলার। বিশুদ্ধ ভালোবাসা প্রত্যাশা ছড়িয়ে যায় কলমে। সুচেতনার ভরসায় কবিতা কথা বলুক, এটুকুই চাহিদা। এ পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ পাঁচটি। 'আগুন বৃষ্টি ভালোবাসা', 'ফিনিক্স আয়', 'দহনকালের কবিতা' 'নীরবতার শব্দমালা' এবং 'অশোক লিপি'। ষষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ 'ছেঁড়া স্বপ্ন অথবা' যন্ত্রস্থ। পেশায় উচ্চমাধ্যমিক স্কুল শিক্ষক। জন্ম- ০৬/১২/৬৪।




কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন