প্রশান্ত মন্ডল * দুটি কবিতা
আড়ি
মাঝেমধ্যে নিজেকে একাকী ঘরে
তালাবদ্ধ করে,
ঘুরে আসি।
ওর সাথে তখন আর ভাব হয়ে ওঠে না।
কিছুটা পথ হেঁটে বেড়াই।
দৃশ্যায়নের ছবি তুলি।
সারাটা দিন দেখা করি না আর...
ঠিক সন্ধ্যাবেলায় ঘরে ফিরি
যত ফেলে রাখা কাজ গুছিয়ে নিই
জল খাই। আহার করি।
একেবারে শোবার সময় মুখোমুখি হই..
আমাদের তখনও আড়ি
ফের শরীরে কাঁথা টেনে, তার উল্টোপাশে ঘুরে শুয়ে পড়ি।
এক স্মরণীয় শবযাত্রা
বাবা যেদিন চলে গেল
তখন তাঁর বয়স নাইন্টি প্লাস
তখনও মাথার চুল বেশ ঘন, পাকা রঙ ধরেনি সেভাবে
অর্থাৎ বাবা সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে যেত দিব্যি।
আমার কথা সেখানে নয়, কথা হল..
বাবা অনেকদিন বাঁচতে চেয়েছিল,
সকলের সাথে, সকলকে নিয়ে
তাই লোকটি নির্ভেজাল জীবনযাপন করে গেছে আজীবন।
অথচ বাবার মৃত্যু যাত্রায় সেসব মুখ খুঁজে পাইনি আমি
যাদের সাথে অন্তরঙ্গ একটা ব্যাপার ছিল আগাগোড়া
অর্থাৎ যারা প্রায়ই বাবার ভেঙে যাওয়া বুক দেখতে আসত
চায়ের সাথে ঘন্টাকয়েক জমিয়ে গল্প হত, গান হত
দৃষ্টিহীন চোখে বাবা দিব্যি তাদের পরিসেবা দিয়ে যেত।
কিন্তু জনস্রোত বাড়ল ঠিক সেইদিন,
যেদিন তারা কব্জি ডুবিয়ে এক এক করে খেয়ে গেল এসে..
*******************************************************************************************************
পিতা- লক্ষীকান্ত মন্ডল ও মাতা- কিরণবালা মন্ডল। ভারত, পশ্চিমবঙ্গ তথা শিলিগুড়ি শহরের একটি ছোট্ট গ্রাম অম্বিকানগরে জন্মগ্রহণ এবং স্থায়ী বাসস্থান। জন্মের কিছুকাল পরই মাতৃবিয়োগ ঘটে এবং ধীরে ধীরে অভাব-অন্টনের মধ্যে এগিয়ে চলার পথ তথা জীবন-বৃত্তান্ত। লেখার আগ্রহ তথা গুণী ও শ্রদ্ধেয় মানবদের জীবনী পড়বার ঝোঁক শৈশব থেকেই। প্রথম লেখার হাতেখড়ি বিদ্যালয় জীবনে এক তরুণ কবি তথা স্কুল শিক্ষককে দেখে। প্রথম আত্মপ্রকাশ "মুখচ্ছদ্ম" নামক আঞ্চলিক পত্রিকার দ্বারা। এরপর "শুকতারা" পত্রিকায় কবিতা প্রকাশ। ধীরে ধীরে সময়ের হাত ধরে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, যৌথ সংকলন, ই-সংকলন, ই-ম্যাগাজিন এ লেখা প্রকাশ।
লেখালেখি ছাড়াও পাশাপাশি চলতে থাকে শিল্প-কর্ম, সঙ্গীত চর্চা, নাটক-থিয়েটার, অভিনয় চর্চা এবং সমাজসেবামূলক কার্যকলাপও চলতে থাকে সুযোগ পেলে। আর এই পরিমিত জীবনের যা কিছু দেনা-পাওনার গল্প তা স্বর্গীয় পিতা-মাতার প্রতিই উৎসর্গিত।






কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন