বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

ভ্রমণকাহিনি * মুর্শিদ এ এম





দূষণমুক্ত রোম, এক ভ্রমণাভিজ্ঞতা

মুর্শিদ এ এম  


বর্তমান পৃথিবীতে দূষণ নিয়ে ভাবনা-চিন্তা ক্রমবর্ধমান। এই নিয়ে নানান সম্মেলন হচ্ছে বিশ্ব জুড়ে। তাবড় নেতারা সম্মেলনে যোগ দিয়ে এসে দেশের মানুষের কাছে লম্বা-চওড়া বক্তৃতা ঝাড়ছেন। কিন্তু যদি বলা যায়, বিশ্বের দূষণ নিয়ন্ত্রণে তাদের ভূমিকা শূন্য, তাহলে খুব একটা ভুল হবে না। দূষণ শুধু ধুলো-ধোঁয়াতে সীমাবদ্ধ থাকে না, মানুষের নৈতিক দূষণকেও এর সঙ্গে জুড়ে বিচার করা উচিত।  

এসব কথা মনে এল রোম-সফর সেরে আসবার পর। বস্তুত, ঘর ছেড়ে না বেরোলে ঘরের ফুটোফাটা নজরে ধরা দেয় না। অবশ্য, নিজের ফুটোফাটা দেখার মতো মনের অবস্থান চাই। নিজের সব ভালো--এই সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে না এলে তা ঘটে না। আবার, পরের ভালোর কাছে নিজের অবস্থানকে হেটা করার লক্ষ্যও যেন তাতে না থাকে। যাই হোক, কথা হচ্ছিল দূষণ নিয়ে। সাধারণ মানুষের দূষণ প্রতিরোধের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন এসে পড়ল। অন্তরের দূষণকেও জড়িয়ে নিতে হল।  

আমরা যতই নোংরা হই না কেন, আমাদের মনের মধ্যে কোথাও শুচিতার সুপ্ত একখণ্ড বরফ সঞ্চিত থাকে। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে তা বেরিয়ে আসতে পারে বিগলিত হয়ে। আমরা পথেঘাটে যত্রতত্র গুটখার প্যাকেট, বিড়ির প্যাকেট, থুতু ইত্যাদি ফেলে নোংরা করে থাকি। কিন্তু কোনো কর্পোরেট অফিস বা ঝকঝকে শপিং মল-এ তা থেকে সংযত রাখি নিজেকে। এই দ্বৈতস্বভাবে বা সত্তায় বোঝা যায়, পরিবেশ আমাদের দিয়ে সুপ্ত অভ্যাসটিকে ঝালিয়ে নেয়। তাহলে এও বলা যায়, ইচ্ছে করলে আমরা সর্বদাই এমন পরিপাটি পরিচ্ছন্ন থাকার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি। 

ইতালির রোম শহরে পা রাখার পর ঝটিতে এই সংবেদ আমাকে নাড়া দিল। ওখানকার অসাধারণ প্রকৃতি এমনিতেই পরিচ্ছন্ন। পাহাড়ের কোলে প্রাচীন এক শহর। অমন নির্মল নীল আকাশ বহুদিন চোখে দেখিনি। অবিরাম সবুজ গাছ-গাছালি। কী শীত, কী গ্রীষ্ম, তাদের গায়ে কোনো ধুলোবালি নেই। পর্যাপ্ত খোলামেলা পার্ক, খেলার মাঠ, প্রশস্ত চত্বর। চত্বরকে বলে piazza। পিয়াযজার মধ্যিখানে কোথাও কোথাও ফোয়ারা। বিশাল বিশাল মার্বেল পাথরের সুদৃশ্য সুঠাম চেহারার মূর্তির শরীর থেকে নির্গত সে জল পান করা যায়। যে জল পাইপলাইন দিয়ে সরবরাহ করা হয় চব্বিশ ঘণ্টা, তা যেমন ঠান্ডা, তেমনই পরিশ্রুত ও পেয়। কিন্তু এ কি শুধুই প্রকৃতির দান, মানুষের কৃতিত্ব কি নেই! এই জায়গাতেই কিছু বলার হয়ে ওঠে। 

মনে হয় যেন ওখানকার নাগরিক মুক্ত আর পরিচ্ছন্ন মনের অধিকারী। যারা তাদের ভিটেমাটিকে কলুষ হতে দেয়নি বা দেবে না কিছুতেই। প্রথমত, শহরে এমন যানবাহন নেই, যা কালো কার্বনমিশ্রিত ধোঁয়া নির্গত করে। এমন কেউ পথেঘাটে রান্না বা উনুন জ্বালায় না, যার দরুন বাতাসে দূষণের মাত্র বাড়ে। অথচ অগুনতি রেস্তোরা রয়েছে শহরজুড়ে। প্রশস্ত চত্বরে খোলা ছাদের নীচে খানাপিনার আয়োজন নজরকাড়া। যান চলাচল পথের পাশে চওড়া ফুটপাথ। সেখানে সাইকেলের হ্যান্ডেলওলা খুব ছোটো ছোটো চাকা লাগানো ফুট তিনেক লম্বা আর ফুটখানেক চওড়া পাদানির এক ধরনের যান দাঁড় করানো  থাকে। নাম monopatino। নির্দিষ্ট অ্যাপে গিয়ে বুক করে অনলাইনে পয়সা দিয়ে ভাড়া নিয়ে যে কেউ চালিয়ে আবার মেয়াদ শেষে যে কোনো ফুটপাথে রেখে চলে যেতে পারে।  খুব ডিসিপ্লিনড না হলে এভাবে পরিবহন-সহায়তা কী সম্ভব হত! বিগত একমাসের সফরে কাউকে থুতু ফেলতে দেখিনি জনসমক্ষে। তামাক বা নেশার দ্রব্য বা খাবারের মোড়ক কোথাও পড়ে নেই। অথচ নেশা যে তারা করে না, তা তো না। 

অবশ্য সব ছাপিয়ে দৃশ্যমান তাদের ভালোবাসার নেশা। চেনাজানা মানুষ, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা হলে গাঢ় আলিঙ্গন আর চুম্বনে ভরিয়ে দেয় এরা। স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে সর্বত্রই এক ছবি। আমাদের পাপী চোখে এগুলি বেশ করকরে ঠেকে কিন্তু ওরা কেউ ফিরেও তাকায় না। সত্যি বলতে, প্রেমের এ-হেন অনুভব উদযাপন করাই তো জীবনের ধর্ম, যৌবনের সার্থকতা! তাকে উপলব্ধি করতে পারলে আর তেমন বাধো বাধো, অস্বস্তিকর  লাগে না। ওদেশের উচ্ছল যৌবন-মুখরিত সাস্থ্যবান নারী-পুরুষকে দেখলে এটাকে স্বাভাবিক বলে মানতেই হয়। স্বাস্থ্য সচেতনতা ওদের দেখে শিখতে হয়। দিনে-দুপুরে বড়ো রাস্তায় পার্কে-- আপনার পাশ দিয়ে দেখবেন কেউ না কেউ দৌড়ে যাচ্ছেন শরীর চর্চার নিমিত্ত। বয়েসে তাঁরা যে নবীন তা নয়। সত্তরোর্ধ্ব পুরুষ আখছারই সেই দৌড়ে সামিল। আমাদের বাসার পাশেই এক ক্রীড়াঙ্গণ ফোরাম-এ উঁকি মেরেছিলাম এক বিকালে। সেখানে গোটা চারেক টেনিস কোর্ট, সুইমিং পুল, ক্রিকেট এবং ফুটবল মাঠ একই চত্বরে। একের  পর এক নারী-পুরুষ গাড়ি নিয়ে আসছেন তারপর পোশাক বদলে নেমে পড়ছেন শরীরচর্চায়। তাদের মধ্যে অধিকাংশই ষাটোর্ধ্ব। এঁদের সবলতা পথে ঘাটে আপনাকে অবাক করে দেবে! বলাই বাহুল্য, নর-নারীতে সেখানে প্রভেদ নেই, প্রভেদ দেখাও হয় না অন্যত্র। বড় বড় ট্রাক বা লাকসারি বাস চালকের আসনে মহিলাদের অনায়াস উপস্থিতি শিক্ষণীয় বিষয়। দর্শনীয় স্থানের টিকিট-পরীক্ষক বা পুলিশ কিংবা নিরাপত্তাকর্মী--তরুণীরা যেমন হাসিমুখ তেমনি পোশাক এবং অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত। আমাদের বঙ্গের নিরাপত্তারক্ষী বা শান্তিরক্ষাকারীদের অবসাদগ্রস্ত মুখমণ্ডল, উদাস খৈনি ডলার বহর বা নোয়াপাতি ভুঁড়ি-জাত বৈকালিক ঢেকুর, এর পাশে কেমন লাগবে সহজেই অনুমান করা চলে।  

বলছিলাম দূষণমুক্ত এক শহরের কথা। কিছু থাক না থাক রাস্তার প্রতিটি মোড়ে পাঁচ-ছটা বিশাল সাইজের ওয়েস্ট ড্রাম বসানো রয়েছে। রাত গভীর হলে বড়ো বড়ো ট্রাক এসে তাদের অটোমেটিক যন্ত্রের সাহায্যে ঘাড়ে তুলে নিজের পেটে সমস্ত আবর্জনা ঢুকিয়ে নিয়ে চলে যায়। আর ডাস্টবিন তো রেল-স্টেশনে, মেট্রোতে ছড়াছড়ি। এমনকি চৌরাস্তার মোড়েও দু-তিন রঙয়ের আবর্জনা ফেলার বাস্কেট ঘন ঘন রাখা। কোথাও ব্যানার ফ্লেক্স পোস্টার চোখে পড়েনি এ কয়দিনে। দোকানগুলি শুধুমাত্রই সাইনবোর্ড সজ্জিত। অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন দোকানের মধ্যই সীমাবদ্ধ। লটকায়িত প্লাস্টিকের স্লেটে ‘কাটা-190, গোটা-100’ লেখার মতো সৌন্দর্যবোধের অভাব চোখে পড়ল! কাঁচা বাজার আর অন্য প্রয়োজনীয় বাজার আলাদা জায়গায়। আমরা বাজার করতাম ভিত্তোরিয়ো বাজারে। মেট্রো চেপে ভিত্তোরিয়ো ইম্মানুয়েলে স্টেশনে নেমে যেতে হয়। এটা বড় একখানা সবজি- মাছ মাংসের প্রখ্যাত বাজার। সবজি ছাড়া মাছ মাংস ইত্যাদি প্যাকেটে মোড়া অবস্থায় বিক্রি হয়। বিক্রেতাদের প্রত্যেকের হাত দস্তানায় ঢাকা। এই বাজারের স্টলগুলোর অধিকাংশ মালিক বাংলাদেশী। ফলে কেনাকাটার সময়ে বাংলা যত খুশি প্রাণ খুলে বলে নেওয়া যেত। একেবারেই আমাদের এখানকার সমস্ত শাক-সবজি পাওয়া যায়। মাছও কলকাতার বাজারের মতো। চিকেন বিফ কাঁকড়া মাটন অক্টোপাশ আর পর্ক পাশাপাশি রেখে বিক্রির ‘অপরাধে’ কারও কখনও জ্যান্ত পুড়ে মরার ঘটনা ঘটেনি। 

ইতালির মানুষ পকেটে সর্বদাই টিসু পেপার নিয়ে ঘোরে। শারীরিক বর্জ্য তাতে মুছে ফেলে দেয় ডাস্টবিনে। ফলে জল ফেলে পথঘাট নোংরা করতে হয় না। শৌচালয়ের বাড়াবাড়ি নেই। আমরা ভালোভাবেই জানি আমাদের দেশে অধিক শৌচালয় থাকা সত্ত্বেও তার বাইরে কে কত নোংরা করতে পারি, তার প্রতিযোগিতায় সামিল হই। ওখানে স্টেশন, শপিং মল ইত্যাদি লোক সমাগমের স্থান ছাড়া পাবলিক টয়লেট আলাদা করে নেই। সেগুলি অধিকাংশই পয়সার বিনিময়ে। কোথাও এক ইউরো। কোথাও চার/পাঁচ। আর আছে রেস্তোঁরায়। বহুজাতিক এক রেস্টুরেন্টে খাবারের বিল দেখতে চাইছিল এক বাংলাদেশী কর্মী, নইলে টয়লেট সারা যাবে না!  

দূষণ তো যানবাহন থেকেও ছড়াতে পারে। আগেই কার্বন-ধোঁয়ার কথা বলেছি। গাড়ি চলাচলের সুষ্ঠু নিয়মও তো দূষণমুক্ত পরিবেশ তৈরি করায় সহায়তা দেয়। যেখান-সেখান দিয়ে রাস্তা পার হওয়া, অকারণে তাড়াহুড়ো করে কোনো গাড়িকে ওভারটেক করতে যাওয়া, অনর্থক হর্ন বাজানো, যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্ক করা। সিগন্যাল ভায়োলেট করা ইত্যাদি সুস্থ নাগরিকের লক্ষণ নয়। প্রত্যক্ষভাবে যানব্যবস্থা সুচারু রাখার জন্যে এগুলোকে মান্য করা যেমন উচিত, তেমনই পরোক্ষভাবে নাগরিকের সুচেতনা  তৈরিতে মানসিক ভাবে এটি সাহায্য করে। একটি অবিন্যস্ত, উৎশৃংখল, নাজেহাল  পরিবেশে যাতায়াতকারী চালক বা যাত্রীর মানসিক গড়ন  আর শান্ত, সাবলীল পরিবেশের যাত্রী বা চালকের মানসিক গড়নের তুলনা করলে স্পষ্ট বোঝা যাবে এর পার্থক্য। বলা যায় না, এই আপাতক্ষীণ পার্থক্যই হয়তো নির্ণায়ক হতে পারে একটি দেশের সভ্যতা-সংস্কৃতির। রোমের নাগরিকেরা এটি মানে, মানতে বাধ্য করে জানপ্রাণ দিয়ে। বাস, প্রচুর প্রাইভেট কার, বাইক একই পথে চলাচল করে সারিবদ্ধ ভাবে, একে অপরের পেছনে। কেউ কোনো ভাবেই কাউকে ওভারটেক করার প্রয়োজন মনে করে না। সিগন্যাল ব্যবস্থা অটোমেটিক, কোনো মোড়ে একটাও ট্র্যাফিক পুলিশের দেখা মিলবে না। হর্ন দেয়া একেবারেই নেই, নেই উদ্ধত ভঙ্গির কোনো চালক বা গাড়ির মধ্যকার কানফাটানো মিউজিক। মাইকের অত্যাচার কোত্থাও নেই। তবে গানবাজনা আছে। মেট্রোর চত্বরে, পার্কে, কোনো চার্চে বা মেলায়। কাছের জনের শোনবার জন্যে। সোলো গায়ক। আপনমনে গিটার বাজিয়ে গেয়ে চলেছেন। এটা যেমন মনোরঞ্জনের উপাদান তেমনই তা উপার্জনেরও অবলম্বন। সমস্ত দেশের মানুষজনকে ঘাড় ধরে শোনানোর মতো পবিত্র কর্তব্যকে হেলায় সরিয়ে রেখেছে। জেব্রা ক্রসিঙের যেখানে সিগন্যাল নেই, রাস্তা পারাপারের জন্যে কোনো পথচারী সাদা দাগে পা ফেললেই দ্রুতগামী গাড়িও থেমে যায়। তারা মনে করে, যে মানুষটা পায়ে হেঁটে চলেছে তার আগে যাওয়া উচিত, যার কাছে গাড়ি আছে তার নয়! এ-বিষয়ে তাদের সংস্কার হল—পথচারীরা হলেন প্রেসিডেন্টতুল্য (presidento) আর চালকেরা হলেন প্রজা! বাসগুলি নির্দিষ্ট স্টপে হলদে স্ট্যান্ডে লেখা নম্বর  অনুসারে টাইম টেবল ধরে আসে। এর জন্যে অ্যাপ সকলের মোবাইলে ভরা থাকে। দেখে নেয়া যায় ঠিক কোন সময় বাসটি আসছে। অনর্থক সময় নষ্ট হয় না তাতে। অটোমেটিক দরজা, টিকিট পাঞ্চ করার যন্ত্র, বাস থামানোর যাত্রী-নির্দেশ এবং কন্ডাকটরহীন এই বাসে শীতাতপ নিয়ন্ত্রক চালু থাকে সবসময়।  কোন স্টপ আসছে তা-ও জানান দেয় ভেতরের ডিসপ্লে বোর্ড এবং ঘোষক-কণ্ঠ। সন্ধে সাতটার মধ্যে শহর প্রায় যানমুক্ত হয়ে পড়ে। এত এত প্রাইভেট গাড়ির ব্যক্তিগত গ্যারাজের বন্দোবস্ত নেই। প্রশস্ত রাস্তার ধারে, সার দিয়ে দুরত্ব মেনে পার্ক করা থাকে রাতভর। তিন ধরনের পার্কিং লট আছে এখানে। বেশি পয়সায়, কম পয়সায় আর বিনামূল্যে।   

বাস-ট্রামে ভাড়া ফাঁকি দেয়া সর্বত্রই চালু অভ্যাস। ফাঁকি দিলে জরিমানা ধার্য করা হয় সকল দেশেই। কিন্তু সে জরিমানার পরিমাণ এত কম যে, অপরাধ করেও ছাড়া পেয়ে যাওয়া সহজ। রোমে কড়াকড়ি নিয়মে ফাঁকি দেয়া যাত্রীকে জরিমানা দিতে হয় স্পট ফাইন—৫০ ইউরো, আর দেরিতে দিলে লাগে ১০০ ইউরো। আমাদের টাকায় ৪৫০০ বা ৯০০০ টাকা! বোঝা যায়, বেশি পরিমাণে পেনাল্টি করার কারণে এখানে কেউ টিকিট না-কেটে যাতায়াত করতে সাহস পায় না। আমাদের এখানে যদি সেরকম ব্যবস্থা নেয়া হয়, তাহলে কি ফাঁকির প্রবণতা কমবে? (বাসের ক্ষেত্রে নয়, ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে) জবাব একটাই, সরকারি জরিমানা কেউ কি দেয়? পুলিশের সঙ্গে রফা করে ৫০০-র জায়গায় ৫০ টাকা দিয়ে কার্য সমাধা করে ফেলেন জনগণ! দাঁড়াল এই, সরকারি সদিচ্ছা থাকলেও ফাঁক বা ফাঁকি অন্যত্র। এবং সকলেই জানেন এই দূষণের টিকি কোথায় বাঁধা থাকে! এই দূষণ হল  দুর্নীতির সূতিকাগার, যা ছেয়ে রয়েছে আমাদের দেশ জুড়ে। ইউরোপের এই শহরের সভ্য নিয়ম-রক্ষকেরা এই রফা থেকে দূরে থাকেন। রাজনীতির লাম্পট্য বা লম্পট রাজনীতি এঁঁদের কলুষিত করতে সমর্থ হয়নি। 

ট্রেনে দুজন চেকারকে দেখেছিলাম, একজন তার মধ্যে মহিলা--দুজনেরই সরকারি পোশাক সুঠাম স্ব্যাস্থের অধিকারী, প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী--চাহনিতে টের পাওয়া যায়, এবং কোমরে  দস্তুরমতো রিভলভার শোভা পাচ্ছে। অথচ টিকিট পরীক্ষা করার বেলা নেহাতই নরম কণ্ঠ, যেমনটা আমরা দেখে থাকি--কোনো প্রধানমন্ত্রীসুলভ ভাব নেই। নিজের প্রতি, নিজের কর্মের প্রতি এই সম্ভ্রমবোধ না থাকলে সুসভ্য হওয়ার অজস্র উপকরণ দিয়েও কিছু হয় না। এক ট্রেনচালক যখন সারাদিনের ব্যস্ত ডিউটি-শেষে, কেবিন থেকে বেরিয়ে  কোনো প্রশ্নকারী অনভিজ্ঞ যাত্রীকে গন্তব্যের খুঁটিনাটি বলতে থাকেন এনকোয়ারিতে না-পাঠিয়ে, তখন আমাদের কর্মচারীদের সদাব্যাজার মুখ মনে পড়াতে বাধ্য করে। দুষণের এই পরম্পরা দেখে আসছে আমাদের দেশ। রাজনীতির দোসরেরা এই পরম্পরার ধারক-বাহক, পৃষ্ঠপোষক। কর্মের পরিবেশ যেমন দূষণে আক্রান্ত, মানুষের চরিত্রও সেইভাবে ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে এক অতলান্ত কালোর দিকে। এখন এখানে কেউ না-চাইলেও দিবারাত্র পাঁচ বার বা অষ্ট প্রহর তারস্বরে কানের কাছে মাইক বাজিয়ে যে শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার চলে, উত্সবের নামে লাগাম ছাড়া বাজি ডিজে ব্যবহার করা হ্য়, তা অসভ্যতাকেই চিহ্নিত করে। মনে হয়, কেউই  আমরা সুস্থ নই, সাবলীল বা সহজ নই। নিজেদের বদলানো ছাড়া অপরকে দোষ দিয়ে লাভ হবে না আর। এই আত্মদূষণের দায় থেকে আমাদের মুক্তি কে দেবে!











***********************************************

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন