অণুগল্প সাহিত্যের একটি বিস্ময়কর শাখা। ' বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন ?' ঠিক তাও নয় যেন, বিন্দুতে সপ্তসিন্ধু দশ দিগন্ত চকিতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে সার্থক অণুগল্পে। তেমনই একটি অসাধারণ অণুগল্প এবার আমরা পড়ছি ----
ছোটদিন-বড়রাত
শতদল মিত্র
বড় দিনের আগের সাঁঝ। সিঙবোঙা মাথার ওপর উঠতে না উঠতেই ঝপাং করে পাটে বসে আঁধার ডেকে! একটু আগেই তো হুই শহর থেকে কীর্তনের দল এসেছিল। খোল, হারমোনি, খঞ্জনি, তাপ্পরে আবার সোন্দরপারা চিন-চিন আওয়াজের একটা যন্ত্রও ছিল। বড়বাবা বললে, উটোকে নাকি বেউলো বলে। তাদের পাড়ার অগাটিন(অগাস্টিন) দাদাও ছিল
ঝপর-ঝপর ঝাঁঝর লিয়ে। ওরা গান ধরেছিল--
'প্রভু জিশুর চরণ ধরে ওরে ভোলামন
ওই চরণ না ভজিলে যে বৃথা যাবে জীবন।'
স্যাম, স্যামুয়েল টুডু যে, আঁধার চিরে চোখ চারে। হুই দূরে আলোর শহর, তা বাদে হু-ই লাল-লীল আলোর যি চেকনাই উটোই গিজ্জে বটে! স্যাম ভাবে। যখন খুব ছুটু ছিল সে, আর তার বড়বাবারও পায়ে তাকৎ ছিল, স্যাম একবার গিয়েছিল বৈকি সি গিজ্জেয় বড়দিনে। কত্ত রঙিল বাহারি ফুল! আর লাল-লীল কাগজের মালা! সাদা ঝালর-ঝালর জামা পরা একটো লোক তাকে মিঠি পিঠে দিয়েছিল। উটো নাকি কেক। আর লোকটো গিজ্জের মোড়ল, নায়কে--ফাদার। গিজ্জের থানের দেওতা যি জিশুবাবা, তা জানে স্যাম। উরই তো জনমদিন কাল। আজ রাতে গান হবে গিজ্জেয়। অগাটিন দাদা গুনগুনাইছিল--
'সুন্দর এই পুণ্যরাত
উজল তারার আলোয় ভরা পুণ্যরাত...
জেগে থাকো তুমি জেগে থাকো
প্রাণের আঙিনা সাজিয়ে রাখো
ধ্যানবাণী ভরা শান্তিমগ্ন পুণ্য রাত।'
মা-বাবা পুবের নামাল থিকে ফিরলে ইবার সে, স্যাম, জিশুথানে যাবে একবার, যাবেই। তবে আজ রাতে ঘুমোনোর আগে মাথার গোড়ায় চটের থলেটো রাখবেই সে। সান্তাবুড়হা ছুটুদের ভালোবাসে যি খুব!
আর তখন জিশুর জন্মথানে, প্যালেসতিনে সে রাত ছেয়ে যায় রকেটে, যুদ্ধবাজ প্লেনে। বাপ-মা হারা ছোট্ট দাহ্দুর মাথার ওপর শেষ ছাদটুকুও গুঁড়িয়ে যায়। হাসপাতালে শুয়ে থাকা ছোট্ট দাহ্দু আকাশে আলোর কেরামতি দেখে ক্ষণমাত্র, অথবা দেখে না।
স্যামের মন খারাপ। সান্তাবুড়হা কিছুই দেয় নাই তাকে। বিহানমেখে পথ ভাঙে সে আনমনে, শহরপানে। হঠাৎই পথের পাশে কুয়াশা জড়ানো কাঁটকিরি ঝোপের আড়ালে একটা থলে ঝিলিক হানে তার চোখে। সান্তাবুড়হা দিয়েছে স্যামকে নিজ্জস! ভুলে নাই বুড়হা তবে! ছুটে গিয়ে থলেটা তোলে সে, স্যাম, স্যামুয়েল টুডু যে। মাটি কাঁপানো শব্দ উগরে আলো ঝলকায়!
না, বেথলেহেমে ঈশ্বরের পুত্র জাগেনি এবার। শুধু রাত জাগিয়ে শান্তি ঝরেছিল অঝোর বেয়নেট ইশারায়! আর জাড় নেমেছিল বিশ্বে...
***********************************************************************************************



কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন