বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

দীর্ঘ কবিতা * সুধাংশুরঞ্জন সাহা




শরৎ : তিন

সুধাংশুরঞ্জন সাহা














গোধূলি ঘনিয়ে এলে সব পাখিরা বাসায় ফেরে।
ছায়াদের ভালোটুকু অত সহজে যায় না ছেড়ে।
দূর থেকে ভেসে আসে বিলুপ্ত বাজপাখির ছায়া।
অচেনা পোশাকে চেনা রাত বুনে দেয় আলোছায়া,
রাতের আলাপ শেষে হাঁটি অচেনা অজানা পথে।
বিরামহীন মেঘেরা দেয় কি প্রলেপ বেদনার ক্ষতে?
প্রথম শ্রাবণে তুমি এসেছিলে শালিকের বেশে,
আর্তনাদের আগুনে হাত সেঁকে উঠেছিলে হেসে।

খুঁজেছিলে পারাপার জীবন নদীর কথামুখ,
ঘোরানো সিঁড়ির মতো গল্পেরা খোঁজে নতুন মুখ।
নদীরা নিকটবর্তী হলে পথ হয় সাংঘাতিক,
ডালপালা মেলে দিয়ে জোয়ারে খোঁজে নতুন দিক।
দিগন্তে পালাবদল আজ, ত্রস্ত ঝিল নদীনালা,
বিষণ্ণ আলো, জোনাকি, নীলিমায় ভাসে কথামালা।
নদীর কী দোষ, আমি তো পেয়েছি তাকে কতবার,
মেঘের ধূসর ডানা যেন বাজারের মূল্য ছাড়।
শরতের সাঁঝবেলা জড়ালো মেঘের আলিঙ্গনে,
শঙ্খ ঘোষের যমুনাবতী ভিড় করে আসে মনে।
অবাধ্য ভালোবাসায় মিশে থাকে যদি অন্তর্ঘাত,
আমাদের চারিদিকে পাতা আছে অন্তহীন ফাঁদ।

মেঘে মেঘে ছায়া আঁকা হয় বর্ণময় আকাশের,
তোমার অভিমানের দীর্ঘপথে রাত্রি আসে ফের।
দিনে রাতে কত কিছু রয়ে গেল অকথিত কালো,
প্রেম ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু আছে নাকি ভালো!
সুদীর্ঘ সময় ধরে বিপুলা পৃথিবী সাজায় কে?
কারা ভাসায় জাহাজ সেই হারানো নদীর খোঁজে!
হাতের মুঠোয় কতবার নিয়েছি প্রিয় গোধূলি,
সেই সব মুহূর্তের ছবি নিথর হ্রদে কীভাবে ভুলি!
একই পৃথিবী ভিন্ন ভিন্ন ভাবে রেখে যায় স্পর্শ,
ধরাছোঁয়ার বাইরে মৃত্যুই চরম উৎকর্ষ।
পথ কি আমাকে নিয়ে যাবে অচেনা পথের দিকে?
স্বপ্নের যে পথে আমি হাঁটিনি, সেপথ আজ ফিকে।
রাত কি আমাকে নিয়ে যাবে অচেনা রাতের দিকে!
যে রাত আগুন জ্বালে অলস ক্ষণে দিগবিদিকে।
যখন গাছগাছালি মাথা তুলে দাঁড়ায় একাকী,
যদি দাবানলে পোড়ে গাছ আমরা কী করে থাকি?
আমরা কি এভাবেই হেঁটে যাব কয়েক শতাব্দী?
জীবন ঘেঁটে বুঝেছি ভালোবাসা মস্ত এক ফাঁকি।
অরণ্য ও বাতাসের কাছে আজ কিছু প্রশ্ন রাখি,
বলতে চাই, পুরুষ কী  নারীর পোষ মানা পাখি?

জানি,এসব প্রশ্নের উত্তর মেলা সহজ নয়।
সত্যি বলতে উত্তর দিতে সকলের নানা ভয়!
অনেক শতাব্দী আগে কারা যেন লিখেছে দেয়ালে,
কঠিন অক্ষরগুলো ছন্দহীন ঝুলছে কপালে।
নারী পুরুষ সবাই আগন্তুক এই দুনিয়ায়,
নারী পুরুষকে চায় আর পুরুষ নারীকে চায়।
বিশ্বাসে ভালোবাসায় অন্ধকার আলো হয়ে যায়,
প্রকৃতির অবয়বে শীত পায় বসন্তের সায়।
কে কোথায় ফেলে আসে কার স্বপ্নের অলীক ছায়া,
গোপনে জানায় কেউ ডুবন্ত জলযানের মায়া।
আমাদের ঘুরপাক জীবনের ছায়াবৃত্ত নিয়ে,
নদী,অরণ্য যেখানে দেয় সহজে হাত বাড়িয়ে।

এই দেশ তো আমার নয়,ছিন্নমূল মানুষেরা
দিয়েছে কত প্রমাণ, পৃথিবীর দেশে দেশে এরা।
দাঁড়াও, উঠে দাঁড়াও একবার মানুষের হয়ে, 
ছিনিয়ে আনো জীবন বারবার বারুদে আগুনে।
এই শহরের চোখে ধূসর পাথরের ঢাকনা,
অন্ধকার ছাড়া অন্য কোনো কিছু দেখতে পায় না।
ঘোলাটে আকাশ সঙ্গে নিয়ে জীবনের পথ চলা,
কীভাবে গাইব গান মুছে দিয়ে গাঢ় ছলাকলা।




















******************************************************************************************************



সুধাংশুরঞ্জন সাহা

জন্ম ৩০ ডিসেম্বর ১৯৫৭। বেড়ে ওঠা পূর্ব কলকাতায়। ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক।আটের দশক থেকে লিটল ম্যাগাজিনে কবিতা লিখেই তার যাবতীয় পরিচিতি । কবিতা ছাড়াও গল্প, ছড়া, প্রবন্ধ এবং বিদেশি কবিতা অনুবাদ করতে ভালোবাসেন। সম্পাদনা করেন একটি অনিয়মিত লিটল ম্যাগাজিন 'অন্যসাম্পান' । প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : ১৬, গল্পগ্রন্থ : ২, ছড়াগ্রন্থ : ২  উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে : অপহৃত রাত্রির চর্যাকথা * নিরুত্তর তারার স্বপ্ন * পূর্বাভাস * পাগল চাকা ঘুরছে অবিরাম * একা দুপুর * শ্রেষ্ঠ প্রেমের পদ্য * সময়ের এস্রাজে বেজে যায় অবুঝ দুপুর * বেলুনের কোন জন্মদিন নেই * নির্বাচিত কবিতা ১০০  ইত্যাদি। 





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন