বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

গুচ্ছ কবিতা * মনোজ বাগ




গুচ্ছ কবিতা * মনোজ বাগ







বৈজয়ন্তি 

পত্ পত্ করে উড়ছে তোমার বৈজয়ন্তি !

যুদ্ধ জয়ের নিশান !


সারি বদ্ধ শান্তি সেনারা মিছিলে সামিল ।

ঝেঁপে আসা আমজনতা -- যারা মূলত জনমজুর , কেরানি , কৃষাণ -- অভিভূত ।

পুষ্পবৃষ্টি হচ্ছে মহাশূন্য থেকেও ! বাহ্ !


স্তবক হাতে যত আমলা-নেতা-মন্ত্রীরা শশব্যস্ত ইষ্ট  বন্দনায় ।

আইন-কানুন সব শিকেয় তুলে গোটা রাজ্য জুড়ে 

চলছে বিজয় সম্মিলন !


ক্ষোভ অসন্তোষগুলি প্রকাশ্যে নেই ।

অগরু আতরে সুগন্ধিত সব দেহ -

ফুঁসে ওঠা দ্রোহগুলিতেও ঢেলে জল

উদ্দাম তান্ডবে মেতেছে নারী - পুরুষ ।

বাদ্যি বাজছে - লয়দার মাদলের বোল ।


যুদ্ধ মানেই সংঘর্ষ  ।

যুদ্ধ মানেই রঙ ও রক্ত হোলি ।

যুদ্ধ মানেই কারো হার কারো বা জিৎ ।

যুদ্ধ মানেই ফুলের মতো ফুটে থাকা লাশের পাশে লাশ ।

যার একটিও আমার বা আমার কারোর নয় ।

সবই অন্যের ।

অন্য কারোর বাবার , কাকার , জ্যাঠার , দাদার ...


মুখরিত চারপাশ ।

মহোৎসব !

টিপে ধরা সব কণ্ঠের চাপা আর্তিগুলি আর কোথাও নেই !

কোথাও কী নেই -- অস্ফুট সব গোঙানি !

হাড় হিম করা সব রুদ্ধশ্বাস !


তারা আজ কোথায় !

যারা সত্যদর্শী , যারা সব জানেন বোঝেন ?


যারা জানেন , কোন বর্ষণ কতটা অস্বস্তির ।

যারা জানেন , কার নিদাঘ কতটা অসহ্যের ।

যারা জানেন , মধু মেশানো বিষ কতটা উপাদেয় -

গরল মেশানো মধু কতটা ক্ষতির ।


এ ভূমি বধ্যভূমির !

কাদের ?

নাকি মরূদ্যান !

কাদের ?


হট্টমেলার দেশ আমাদের ।

এত হট্টমেলার দেশও আজ গুমসুম !

কেন এত গুমসুম !


প্রথম আলোয়

অন্ধ দুটি চোখ খুঁজে ফিরছে আলো , খঞ্জ দুটি পা ঘুরে দেখছে পথ ।

কেউ এমনি আতুর-পঙ্গু , পড়ে আছে ।


যে নিঃস্ব - সর্বশ্রান্ত , বাড়িয়ে দিয়েছে হাত ।

যে দুঃস্থ - ক্ষতবিক্ষত , বরাভয় চাইছে ।

আর আমি না অন্ধ , না পঙ্গু , না দুঃস্থ , না আতুর -- চেয়ে আছি যেন প্রাণহীন পাথর ।


বলি , ও পাথর -- পাথর চোখের সব অবরোধগুলি ভেঙে এবার সর্বতোব্যাপ্ত করো দৃষ্টি ।

প্রাণের স্পর্শটি রাখো সর্বংসহা এই মাটিতেই ।

যে মাটিই আমাদের সমস্ত শক্তির উৎস ।


দিনান্তে ঘরে ফেরা পাখিরা আবারও খুব ভোরে , দেখি 

ডানা মেলতে মেলতে উড়ে যাচ্ছে ছুন্নি হয়ে দূরে ।


যে টুকু বলার 

সঙ্গীতের মতো বেজে বেজে ওঠো তুমি ।

আমি তোমার অন্তর্ধ্বনি তন্নিষ্ঠ হয়ে শুনি  ।


তোমার সুর , তোমার ধ্বনি , 

তোমার তাল , লয় ও বাণী -

নিরন্তর তরঙ্গের মতো ।


আর কিচ্ছুটি নয় -

ঐ তরঙ্গে চিরদিনই উথাল-পাতাল যেন হই

আমার চাওয়া এই এতটুকুই ।


স্থির নৈঃশব্দ্যেও যা জেগে থাকে 

কখনো মর্গের পাশে যাই ,

দেখি , স্থূপাকৃতি লাশ , নশ্বরতা ।

শ্মশানে গিয়ে দাঁড়াই -- দেখি , ভস্মীভূত কাঠ , সাদা ছাই ।

নৈঃশব্দ্যের মধ্যেও জেগে থাকে শ্মশান ও মর্গের কথা ।


ঝুঁকে পড়া পাংশু পাতায় হাওয়া লাগে ।

হাওয়া লেগে ঝরে যায় শুকনো পাতা ।

তার মর্মর ছুঁয়ে যায় স্মৃতি ।

দূরাগত ঐ ধ্বনি যখনই বাজে , খুব তন্ময় হয়ে শুনি ।

অন্ধকার সান্দ্র হলেও যত দূর দৃষ্টি যায় তা দেখি ।


ছড়ানো ঘাস -- ঘাসের অঙ্কুর ।

ঐ ঘাসের ওপরই পা দুটি ফেলে যখন চলি -

অনাগত  সময়ের ধ্বনি কানে শুনি ।












ভালোবাসা যারে কয়

ভালোবাসা শেখো ।

ভালোবাসাও শিখতে হয় ।

জানতে হয় তার কলা-কৌশল ।

যারা  শিখেছে , তারা জানে ।

যারা শেখেনি , তারা জানে নি ।


একটা বৃত্তি আছে যাকে বলে আগ্রাসন ।

আছে কেড়ে-কুরে মেরে-মুরে সব কিছু আত্মসাৎ করে নেওয়ার অদম্য ঝোঁক ।

যো সো করে সব নিজের করে নেওয়াতেও এক ধরণের আত্মতৃপ্তি থাকে ।

তবে তা অন্য কিছু , ভালোবাসা নয় ।


ফুটে আছে একটি ফুল ।

দেখে মুগ্ধ তুমি ।

তার বর্ণে গন্ধে আবিষ্ট তুমি বিমূঢ়ও হতে পারো ।

তবে যা প্রকৃত সত্য -- আসক্তি নয় , 

ভালোবাসা হলে , ভিতর থেকে তুমি তার দাসস্য দাস হবে । 

প্রভু নয় ।


এই দাসবৃত্তিই একজন মাকে আদর্শ মা হতে উদ্দীপ্ত করে ।

একজন পিতাকে সর্বস্ব পণ করেও সংসার নির্বাহে প্রবুদ্ধ করে ।

উচ্ছল একটি যুবককে করে ঘোর সংসারী ।

একটি যুবতীকে এক পরিবারের মায়া কাটিয়ে আর এক পরিবারে মিশে যাওয়ার ইন্ধন দেয় ।


আমি অজস্র দম্পতি দেখেছি ।

যারা একে অন্যের দাসত্ব করতে করতেই সারাজীবন পরস্পরের পাশে থেকেছেন ।

সন্তানের জন্ম দিয়েছেন , তাদের লালন-পালন করে বড় করেছেন ।

জীবন-যজ্ঞের অগ্নিটিকে সদা প্রজ্জলিত রাখতে যা যা করতে হয় সব করে একদিন বিগত হয়েছেন ।

তাদের উত্তরসুরিরা তাদের সে সাক্ষী বহন করছেন ।


নিঃস্ব হওয়ার আনন্দ কী ,

সম্পূর্ণ রিক্ত থাকার সুখ কতটা -

কিছুর অভাব বোধও কতটা উজ্জ্বল করে আমাদের , বা কান্নারও যে মাধুর্য আছে -- 

জানতে হলে ভালোবাসা না শিখে উপায় নেই । 


যা আর পাঁচটা বিদ্যার মতোই একটি বিদ্যা ।

যা জানতে জানতেই জানা হয় ।

যাতে সেধে সেধেই সিদ্ধ হয় প্রতিটি মানুষ । 

মায় কীট-পতঙ্গ , পশু-পাখি , উদ্ভিদ ...

সবাই ।


হিংস্র বাঘ-বাঘিনীও জানে , এ বিদ্যা রপ্ত না হলে তাদেরও বাঘ জন্ম , বাঘিনী জন্ম সম্পূর্ণ নয় ।


রাজভিখারী 

রাজ-রাজেশ্বর পথে পথে ঘুরে ফিরছেন  । 

চান , আমজনতার সহধর্মিতা , সহমর্মিতা , সহযোগ ।


আমরা পশু পাখি , কীট পতঙ্গ , মানুষ মানুষী , 

যে যার  জায়গায় , যে যার মতো ঠিকই আছি -- ভালো অথবা মন্দ ।

রাজা তবু ঘুরে ফিরছেন পথে প্রান্তরে , 

হাতে বাটি , কাঁধে ভিক্ষার ঝুলি ।


নাহ্ , এ রাজার নিজস্ব কোন ভালো - মন্দ নেই ।

মন্দ - ভালোও নেই ।


অগাধ ঐশ্বর্যের অধিকারী হয়েও তিনি ঘুরে ফিরছেন তোমার আমার এর তার -- আমজনতার দ্বারে দ্বারে ।


শ্রুতি

কোলাহল বলি বা ক্যাওস  

সোরগোলে - হইচই হট্টগোলে কোন সুর নেই  ।

যাকে বলি নাদ , যার থেকে জাত হয় শ্রুতির , সঙ্গীতের ,

তাতে কোন সোরগোল নেই , আছে সুর , আছে অশ্রুত বিচিত্র সব লয়ে তালের সঙ্গত।


একজন সঙ্গীতজ্ঞ জানেন , যে কোন ধ্বনিই কেন সুরের দ্যোতক নয় ।

তাই যা নিছকই কোলাহল তা থেকে যতটা সম্ভব নিজেকে দূরে  রাখেন তিনি ।

যাতে তার সুর সাধনায় কোন ব্যাঘাত না আসে ।


কিন্তু একজন সাধারণ মানুষের অত বাছবিচার নিয়ে থাকলে কী করে চলে ?


তাই সমস্ত পরিস্থিতিতেই একটু শান্তির জন্য , 

কিছুটা স্বস্তির জন্য তাকে ক্যাওসের মধ্যেও খুঁজে নিতে হয় সেই শ্রুতিই ,

যা তার ভিতরের সুর বোধকে জাগিয়ে রাখে ।


এই বোধ যে মানুষটির হয়েছে তিনিও সুর-সাধক ।


একজন  সুর সাধক জেনে হোক বা না জেনেই 

সারাটি জীবন ধরে যে সাধনটি করে চলেছেন 

তা এক অখন্ড সুরেরই সাধনা ।


যে অখন্ডতায় শত সহস্র কোলাহলও 

এক অমোঘ  নিয়মে বাজছে ,

এক পরম সুরে ভাসছে ।

কীটপতঙ্গ 

মনোজ বাগ


অন্ধকারের কীট আলোয় জগতে এসে হয়ে উঠতে পারে আলোরই কণা ।

ঐ কণাগুলোই আবারও অন্ধকারে ফিরে গেলে 

জোনাকির মতো তারাও হতে পারে একটি একটি স্বয়ংক্রিয় আলো।


জীবনও এ রকমই ।


চোখ ফুটে গেলেই তাই সবাই আলো চায় ।

যে আলোর কোন অন্তর-বার নেই ।


ভিতরে আসি , বাইরে যাই ।

পর্দাগুলো সরিয়ে সরিয়ে এ সবই যত দূর দৃষ্টি যায় দেখি ।


ঈশ্বর স্বভাবের মানুষ

আপনি কী ম্যাজিক জানেন ?

এটা কী সত্যিই কোন ম্যাজিক , ইন্দ্রজাল !


এই একটু আগেই ফেটে পড়ছিলেন রাগে , ক্ষোভে --

এখন ধীর , স্থির ...


আলোড়ন কত ভাবেই তো জীবনে আসে ।

তরঙ্গ ওঠে , নামেও ।

হাওয়া কখনো মৃদুমন্দ , কখনো প্রবল ।

তুফান যখনি শান্ত হয় , চেয়ে চেয়ে দেখি --


সমস্ত ওলোটপালটের মধ্যেও আপনি 

কী করে থাকতে পারেন এতটা শান্ত , স্থিতধীর !


আপনাকে দেখে হাসি পাওয়ারই কথা , 

বা হওয়ার কথা ভয় -

অথচ আমার এ সব কিছুই হয় না ।


বরাবরই দেখে এসেছি উচ্ছল কোন আবেগই আপনার ভিতরে দীর্ঘস্থায়ী হয় না ।

খরতাপেই হোক বা প্রবল শৈত্যে ,

সব অবস্থাতেই আপনার সমগ্র মুখ-মন্ডল জুড়ে থাকে একটা অদ্ভুত আলো ।

তাকে লাবণ্য বলব , নাকি প্রশান্তি ?


আপনি তো ম্যাজিক জানেন না ।

তবে কী ম্যাজিকের মতোই ভিন্নধর্মী সব অবস্থাকেই তার গভীর অন্তরে টেনে নেয় ওই স্থির প্রশান্তিই !


এ মেয়ে ঠিক মায়ের মতো নন , বড় দিদির মতো 

একটা আলোর বলয় তাঁর মতো করেই ঝলঝল করছে মধ্যাহ্নের সূর্যের মতো ।

নাহ্ , দিনদুপুরে নয় , ঘোর একটা দুর্দিনের গাঢ় অন্ধকারে ।


তার সব আলো উত্তাপ সারা অঙ্গে মেখে 

অন্ধকারেও জ্বলে ওঠার পরিবর্তে 

আমরা আমাদের স্বভাব কালো , স্বভাব ধূসর আবছায়াদের পোষা কুকুরের মতো লেলিয়ে দিয়েছি  তার দিকেই ।


ঘুমন্ত মানুষের চোখে আলো বড় বেঁধে কিনা , তাই 

তার সামান্য আভাও বড় অসহ্য লাগে আমাদের ।


স্বভাবদুষ্ট মন আমাদের ।

আমাদের চোখের কোণে , হাতের মুঠোয় , বাজুতে -

জমে আছে সহস্রাধিক বছরের সব আদিখ্যেতা ।

এই একবিংশ শতাব্দীতেও যা অন্য কোন কিছুকেই রেয়াত করে না ! 

আলো স্বভাবের মেয়ে ঘোর অন্ধকারেও তবু ফুটেই থাকেন তাঁর মতো করে ।


তাঁর সব কষ্ট লাঘব করতে এক বিশ্ব প্লাবনে যখন সব ভাসিয়ে দেওয়ার কথা -

তা না করে , এই আমরা একটি দুটি কাগুজে বিদ্যুৎ , ঝলসে উঠছি মাঝে মধ্যে , একটু আধটু দায় সারতে , বিনা মেঘেও ।

দু এক ফালি গর্জেই ঘুমিয়ে পড়ছি , কালেভাদ্রে -- কিন্তু তাতে কী !


সব আলোয় আলো করে আছেন যে মেয়ে ,

তাঁর জন্যই দোয়াত ভর্তি কালি আমরা মজুত করেছি যে যতটা পেরেছি ।

কেন এমনটা করেছি ?


অন্তরে দর্পণ কৈফিয়ত তলব করছে হরবখত্ !

বদ্ধ ঘরে , খোলা ছাদে , রাস্তা-ঘাটে , হাটে বাটেও ...


যদি ভূতের রাজা দিত বর

কোথায় ডোকলামাকান , কোথায় আল্পস !

পামীর থেকে জিল্যান্ডিয়া -- 

সবই আছে একই বিশ্বে ধরা । 


ভিসুভিয়াসে যখন প্রচন্ড অগ্ন্যুপাত চলছে ,

আমাজনের গভীর নির্জনে যখন খুলে যাচ্ছে অনেক সাবেকী রহস্যের জট ,

দাবদাহে যখন জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে ক্যালিফর্নিয়া --

আদুরে ব্যাঙের মতো গর্তে ঢুকে আমি মগ্ন হয়ে আছি শীতঘুমে ।

যদিও লেপের ভেতর থেকে জুলজুল চোখে কখনো সখনো বুঝেও নিচ্ছি পরিস্থিতি পরিবেশ আমার জন্য কতটা নাতিশীতোষ্ণ ।


আটার টিন থেকে বেরিয়ে আসে সাদা আরশোলা ,

নালা নর্দমা থেকে পিলপিল করে বেরিয়ে আসা সমাজপতিদের  সঙ্গে মিলেমিশে রাস্তা-ঘাটে বিধান দিচ্ছেন  :

"কেউ কারো নয় তবু সবাই সবার ।

গনতন্ত্রে মুড়ি - মিছরি , গরু -গাধা-ঘোড়া কেউ আলাদা আলাদা নয় -- সব এক ।"


হোডিং-এ , পোস্টারে ছয়লাম রাজ্য ।

স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত দেশ ।

কান ঝালাপালা হলেও শুনি অমৃতবাণী তা না হলে যাবটা কোথায় !

ঠাঁই নেই - ঠাঁই নাড়াদের - ছিলও না কোথাও কোন কালেই ।

জানি , তাই মিলিয়ে নিই বেসুরে সুর , বেতালে তাল । 

তাল কানাদের সঙ্গে এর'ম বেঁচে থাকা কতটা মরণের , জেনেও ।

এ ভাবেই ছিলাম , আছি , থাকতেও হবে যতদিন ধড়ে প্রাণ আছে ।


ভাবছি কী করি আর কী না করি ।

ভূত রাজার যৎসামান্য প্রজা , এদিক ওদিক দেখি -

কথায় কথায় বর প্রার্থনা যাদের ধাতে নেই ,

তারাও তো মুখ চেয়ে থাকে সেই রাজারই ।


জীবন এ রকমই !


মহাপ্রাকৃতিক ভান

প্রকৃতি এরকমই -

যেখানে যেমন , সেখানে তেমন ।

কোথাও উদ্বৃত্ত বৃষ্টি লাগু করেছে বন্যা ।  

কোথাও চরের পরে চর ধূ ধূ করছে বালি ।


যে বুক লালন করে সবুজতা , সজলতা ,

তাতেই কী করে অন্তরীন থাকে গলিত লাভা !

থাকে ।

তবে সোহাগিণী জ্বালামুখী হলেই উগরে দেয় সব  , 

তখন আর চেপেচুপে রেখেঢেকে রাখে না কিছুরই ।

এ তো রোজের দেখা , রোজের শোনা ।


শৈত্যে ওম , দাবদাহে নাতিশৈত্য তবু চাই ।

প্রচ্ছায়া আশা করি মধ্যাহ্নে , বৃক্ষের কাছেই -

গুল্ম-আগাছা বা তৃণদের কাছে নয় ।


চলাচল করে রক্ত ধমনী শিরায় ।

চলাচল করে হলাহল আশরীর ।

চলাচল করি তুমি আমি কখনো ডোকলামাকানে , কখনো আল্পস , পামীরে কখনো জিল্যান্ডিয়ায় ।


আর ভূতে পাওয়া মন মেতে থাকে আলাপচারিতায় 

এর ওর সঙ্গে 

আর গুণকীর্তন করে - যে সুবিধা দেয় , তাঁর ।

গালি দেয় , যে সব কেড়ে কুড়ে নেয় , মারে -কাটে , তাকে ।


প্রকৃতি সবই জানে । 

জানে , কী সে কী হয় -- জানে , কোনটি কী ..


সব জেনে শুনেও চুপ থাকে ,

সব জেনে শুনেও কোন কিছুই না জানার ভান করে ।









*********************************************************************************************



মনোজ বাগ

পেশায় ব্যবসাজীবী । কবিতা বেঁচে থাকার রসদ ; অনিবার্য এক ইন্ধনও । প্রিয় কবিতার গ্রন্থ : গীতা , ঈশোপনিষদ , গীতবিতান , আমিই মাটি , আমিই আকাশ (সুজিত সরকার) । কবিতা প্রিয় বিষয় হলেও সাহিত্যের প্রতিটি শাখাই টানে । সঙ্গীত ও চিত্রকলার প্রতিও প্রবল আকর্ষণ আছে । ভালো লাগে ভাবতে : আপাত যা কিছু -- এই সবই এক পরম সত্যেরই প্রকাশ ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন