বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

গুচ্ছ কবিতা * শিশির আজম





কবিতাগুচ্ছ * শিশির আজম









ক্যাফের শেষ টেবিলে আমি আর গগাঁ

ক্যাফের কোণার শেষ টেবিলে মাছিদের সঙ্গে বসে আছি আমি আর গগাঁ
তিরিশ মিনিটে তিনটে বাক্য আমি বলেছি
একটা সম্ভবত ও শুনেছে  আর দুটো শোনেনি
মাছিদের শোনার নিয়ম নেই
ওদের মাথাগুলোকে গরম জলে সেদ্ধ করে ভালো মাছিভর্তা পাওয়া যায়
কিন্তু এখন
এমুহূর্তে
ওর মাথায়
হ্যা গগাঁর মাথায় একটা বাক্যও নেই
ক্যাফের বাতিগুলোকে ও দেখছে আর লোকজনের আসাযাওয়া
ওর দিকে কারোরই নজর নেই
কেবলই ও উশখুশ করছে ওর বৌ গেছে পিকাসোর স্টুডিয়োয়
তো
পিকাসোর স্টুডিয়োয় যে কারো বৌ-ই যেতে পারে
এমন কি যে কারো প্রেমিকাও
যাক বাকি আবসাঁথটুকু আমি একাই তারিয়ে তারিয়ে খাবো
এখন
এমুহূর্তে আমার কোন বৌ নেই
কোন প্রেমিকাও নেই





What is What

ক্ষমা করবেন আমি কিন্তু চেঁচাইনি
উনি বললেন আমি পরিবেশ দূষণ করছি
আমি কালো
পরনের কাপড়চোপড় ময়লা
দাঁড়িয়ে পেচ্ছাব করি
বাংলা বলি
ক্ষমা করবেন আমি কিন্তু আমি না




ম্যাডোনা

তোমারে সবাই ম্যাডোনা বইলা চেনে ম্যাডোনা বইলাই ডাকে
কিন্তু আমার মনে কু ডাকতেছে
তুমি নিজে নিজেরে সত্যি ম্যাডোনা বইলা চেনো তো
মানে তুমি জন্মাইবার পর তোমার নিজের নাম
নিজে তো ঠিক করো নাই
সেই সুযোগ তুমি পাও নাই
কে দিছিল তোমার নাম
ম্যাডোনা লুইজ চিকন
কে প্রথম তোমারে নাম ধইরা ডাকছিল
মাডোনা
যা হোক ওরা যে তোমার জন্য সঠিক নাম বাছাই করতে পারছে
এইটা কি তোমার মনে হইছে
তুমি কি হ্যাপি
নিজের নামের ব্যাপারে কোন কনফিউশান তোমার নাই
আর হ্যা
ভাটিকানে আর এক ম্যাডোনা আছেন
যার সেলিব্রেশন ট্যুর নাই
পপ নাই
কিন্তু ওনার বিশাল ভক্তকুল আর অনুসারী
এমন কি ভিক্টোরিয়ান মহান কবিরা ওনারে নিয়া কবিতা লিখছেন
মিকেলাঞ্জেলো আর কত কত শিল্পী ওনারে আঁকছেন
ভাস্কর্য বানাইছেন
তুমি জানো
যা হোক তুমি আমাদের কাছে ম্যাডোনাই
যে নামেই হোক তোমার ভেতর তো এক ম্যাডোনা আছেই
সে কি বুর্জোয়াদের ম্যাডোনা
সে কি জয়নুলের ম্যাডোনা
সে কি ভাটিকানের ম্যাডোনা
এখন এই প্রশ্ন নিজেরে তুমি করতেই পারো
হ্যা
যে মানুষ সবাইরে ভালবাসা দেয় দুঃখ দেয় দ্রোহ দেয়
সে নিজেরে কী দিতেছে
সে
সেই ম্যাটেরিয়াল গার্ল
এইটা একদিন তার অবশ্যই জানা দরকার





হুল


এই কাহিনীর নায়ক আমি নায়িকা আমার স্ত্রী
মাথার ওপর সান এ্যান্ড শেড ফ্যানটাসি কিংডম
মাথার ভেতর চন্দ্রবোড়া বিষবাগান
সে
মৌমাছির হুল খাওয়া এক দ্রাবিড়কন্যা
কবিতা পড়ে না
খবরের কাগজ পড়ে দুগ্ধজাতীয় শিশুখাদ্য প্রস্তুৎকারক বহুজাতিক
কোম্পানির রঙিন বিজ্ঞাপনসমেত
কালো অবিবাহিত ঘোড়াদের আমার পেছনে লেলিয়ে দেয়
আউশ আমন ধানে কম্যুনিস্ট ক্যানভাসে
তার আর তাদের কি দাবড়ানি কি অসংগম লাইলিমজনু মাইন বিষ্ফারণ
হতে পারলাম না খাঁটি মধু খাঁটি পরমহংসদের
নেই হোমোইরোটোফোবিয়া
অথবা পরম সত্য বলে যা কিছু একটা আছে বলে ভাবো
ও বস্তুটা আমার ভেতর কক্ষুনো গজায়নি
আমি টের পাইনি অবিস্ফোরিত গ্যালাক্স্রির ইন্দ্রিয়ময়তা
আর বিছানায় ব্যাকরণসম্মত ঢাকঢাক গুড়গুড়
আমার ধাতে নেই
যা হোক সভ্যতাসংস্কৃতি বলতে তোমরা যা বোঝাও তার কুলদিশা
তোমরাই জানো হয়তো দেখেছো রেফ্রিজারেটরে মেয়েদের ক্যাকটাস
হেলিপ্যাড বানাইনি বৃষ্টিতে ভাটিকানের উইন্ডস্ক্রিন
খচমচ করে উঠলো আর কি আশ্চর্য দেখো আমাদের বিপ্লবী ক্ষুদিরাম
টিভি সিরিয়ালের মুচমুচে চিপস
এখন আমরা ঢুকে পড়বো আমাদের জিনেটিক গ্রান্ড ক্যানিয়নে
আমাদের অখ্রিস্টিয়ো বোবা শুয়োরটা নিয়ে
আমি
       আদম
আমার স্ত্রী
       হাওয়া





সূর্য উঁকি দিয়ে দেখছে

সকাল ধুয়ে ফেলেছে
তিতে

চেয়ারগুলো অন্ধকার থেকে আলোয়
সরে এসেছে
টেবিলের ওপর ছোঁপ ছোঁপ
রক্ত
গত রাতের মোমবাতির

বিশ্বাসভঙ্গের দায় নিয়ে কেউ জানালাগুলো খুলে দিয়েছে
কে
হয় তো কমনীয় কোন শরীর থেকে এখন তুষার ঝরে পড়েছে
হ্যা
সূর্য উঁকি দিয়ে দেখছে
দেখুক
হয় তো কোথাও পড়ে আছে
জানোয়ারের পশম
হয় তো তোষকের নিচে রাক্ষসের
নরম চোখ

কুয়াশা

হ্যা কুয়াশা কিন্তু কোথাও



****************************************************************************************************************



শিশির আজম

জন্ম : ২৭ অক্টোবর, ১৯৭৮  জন্মস্থান, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা : এলাংগী, কোটচাঁদপুর ঝিনাইদহ -৭৩৩০
                     বাংলাদেশ
কাব্যগ্রন্থসমূহ : ছাই (২০০৫) দেয়ালে লেখা কবিতা (২০০৮) রাস্তার জোনাকি (২০১৩) ইবলিস (২০১৭)
চুপ (২০১৭) মারাঠা মুনমুন আগরবাতি (২০১৮)
মাতাহারি (২০২০) টি পোয়েট্রি (২০২০) সরকারি কবিতা (২০২১) হংকঙের মেয়েরা (২০২২) বিষ (২০২৩)
সম্পাদিত ছোটকাগজ : শিকড়  (৫ টি সংখ্যা প্রকাশিত)
সম্পাদিত কবিতার ভাঁজকাগজ : বাংলা (৩ টি সংখ্যা প্রকাশিত)
বাংলা কবিতায় Tea Poetry Movement এর উশকানিদাতা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন