বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

গুচ্ছ কবিতা * গৌতম কুমার গুপ্ত

 




কবিতাগুচ্ছ * গৌতম কুমার গুপ্ত











অলসবেলা 


সব গান শ্রুত হলে ঘুম হবে পৃথিবীর
সব কবিতার পরে পৃথিবী জেগে যাবে

এমন আধখানা ঘুমে নীরব শীতসন্ধ্যা
জাগরণে স্থির চোখে চেয়ে আছে তারা
ফুটে আছে সূর্য্যমুখী সুপ্রভাত সুবাতাস 

ফুটে না তাই চেয়ে আছে যদি ফোটে
সব ফুল গাছেদের সাথে মিশে আছে

একাকী লাবণ্যে আলোরা দিশেহারা
আঁধারের সাথে মগ্ন দারিদ্র্য ছেয়ে আছে
কবিতা গান থেকে ভেঙে যাক অলস বেলা।




গু ল্ম ল তা

                                                             
গুল্মলতায় জড়িয়ে আছে দিনরাত্তির
অজস্র গ্রন্থিতে বাঁধা ক্লিশে দিনলিপি
অবসাদক্লিন্ন নিমতেতো গ্রন্থি খুলে 
বিষাদবাতাসে কূট ঊর্ণনাভ ছড়িয়ে পড়ে

মৃত্তিকার গুণে স্বদেশের রৌদ্রজলে
আবাদের ফসল ঘরে আসে ভান্ডারে
দুর্ভোগে তবু উপবাসের স্বাদ জ্বলে
অন্নময় হয়ে থাকা প্রকৃত বিরোধাভাস

পর্য্যন্তগুলি অপর্যাপ্ত হলে শর্তের বিকিকিনি
একটি অলিখিত ছেঁড়া ম্যাপে সবাই গৃহরন্দী




ঈশ্বরের কাছে

আগুনের আঁচ খুজছি দৈবাৎ প্রয়োজনের  ঈশ্বর
নিমিত্তের পাশে চৌকো থুতনির মহাপ্রবর
আমাদের এখন দৈব দুর্বিপাকে বিপন্ন বৃষ্টিপাত

ভূমিকম্প নাড়িয়ে দেবে কখন জীবনের ভিত
কাঁপছি অকাল বন্যায় কিংবা রাজনৈতিক হনন
হাঁটু ভেঙ্গে প্রার্থনা হেতু আমাদের নতমস্তক

আগুনের আঁচে ঝলসানো হৃৎপিন্ডের প্রায়শ্চিত্ত
নতুন ভাবে বাঁচার স্হির নবজাগরনের আহ্বানে




অবরোধ

ওই সব আগুনের পোড়া অবরোধ পেরিয়ে 
আমাকে যেতে হবে আমার গন্তব্যে
ওখানেও কি আছে ছাইে লোহা টায়ারের
কি আছে লেখনী ললাটের ভবিতব্যে?

জড়ো করা দাপাদাপি সব হুংকার
মৃত্যু কাঁপে নি বরং কেঁপেছে শীতও
মিছিল এসেছে পথে ঘাটে প্রান্তরে
বুকে মুখে কত চিহ্ণ অদ্ভূত পোড়া ক্ষত

এই আসা যাওয়া কেন প্রতিরোধ কিসের
তবু যেতে হয় দু চোখে কাঁপে সন্ত্রাস
ভয়ে বুক কাঁপে গালাগাল অথবা গুলি
এ কেন দেশ আমার রক্তাক্ত অস্থির অবকাশ





চশমা 

চশমা খুলে ফেলি
আবার কাঁচ,মাছি উড়ন্ত হতবাক
জঘন্য গুলি সাহসিক

কেউ দেখল না
দৃশ্যের অন্তরায়ে বসে আছে
অদৃশ্য মনোযোগ

অন্ধত্বের কাছে হেরে গেছে
নদী ও নিসর্গ



কলঙ্ক


চলো দেখবে কলঙ্কের দাগ
             কিভাবে ফুটে আছে গায়ে

ফুটিফাটা মাঠ এখন
            তবু তো সতেজ শস্য ছিল

জলে প্রিয় কলঙ্ক কালো
                    কুহু ডাকে বসন্তরাগ

জীবনে পূর্ণমান 
পূর্ণিমা চাঁদ ভাসে
কলঙ্কের কালো জ্যোৎস্নায় হাসে



অবস্থান


চাঁদখচ্চর জানলা দিয়ে আলো ছোঁড়ে
দেখে নেয় শয্যাকেলি
সূর্য্যমস্তান যখন তখন দহন বাড়িয়ে
কেলোর কীর্তি দ্যাখে
বাতাস মাতালের মতো আকন্ঠ খেয়ে 
ঝড় তুলে খিস্তি দেয়।

মাটি বেচারা ঝগড়াঝাটি দ্যাখে 
মানুষপ্রাণী বৃক্ষনিধন করে 
হত্যালীলার রক্ত গায়ে মাখে
পড়ে থাকে প্রজন্মের শবদেহ
মানুষ চিল শকুন কীটপতঙ্গ কত কি

দুর্গন্ধে কান পাতা দায়















*************************************************************************************************




গৌতম কুমার গুপ্ত

জন্ম  ১৩৬৭ বঙ্গাব্দে বাঁকুড়া জেলার শালতোড়া থানার গোপালনগর গ্রামে।বর্তমানে পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের বাসিন্দা।প্রথম জীবনে সাংবাদিকতা পরে ই সি এলে কেন্দা এরিয়া বিভাগের কর্মী ছিলেন।২০১৯ সালে চাকুরিজীবন থেকে অবসর গ্রহন করেন।শিক্ষাগত যোগ্যতা বিজ্ঞান এবং কলা বিভাগে স্নাতক।পরে পার্সোনাল ম্য্যানেজমেন্ট ইনডাসট্রিয়াল রিলেশনে স্নাতকোত্তর পাশ করেন।আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে লেখালেখি শুরু।'কালকেতু' নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তো বটেই ওয়েব ম্যাগাজিনেও গল্প কবিতা প্রবন্ধ লিখে থাকেন।এ পর্যন্ত তাঁর চারটি কাব্যগ্রন্থ  " সময়ের এই জলসাঘরে,'স্বভাবের সিলেবাস','অক্ষর ভাইরাস' এবং 'বিষুবরেখার পাখি' প্রকাশিত হয়েছে।কয়েকটি নাটকও  লিখেছেন। ইতিমধ্যে "কয়লাক্ষেত্র "এবং কৃষ্ণগহ্বর নামে দুটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে।।শীঘ্র একটি কাব্যগ্রন্থ 'যদি হৃদয়ের কথা বলো'প্রকাশিত হতে চলেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন