অণুগল্প সাহিত্যের একটি বিস্ময়কর শাখা। ' বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন ?' ঠিক তাও নয় যেন, বিন্দুতে সপ্তসিন্ধু দশ দিগন্ত চকিতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে সার্থক অণুগল্পে। তেমনই একটি অসাধারণ অণুগল্প এবার আমরা পড়ছি ----
খচ্চর
শুভশ্রী সাহা
বাপী আজকের কীর্তন্টা দেখছে শুধু দুজনের। এই শপিং মলটায় দাদার নেই নেই করে তিন চারবার আসা হয়ে গেছে চাররকমের মালের সাথে অথচ ,এমন ভাব কচ্চে এই প্রথম বউ ছেলের সাথে আসা! বাবারে, তা দাদার ক্যাত আছে একে ব্যবসায়ী আবার পার্টির নেতা। শ্রমিক আমার বন্ধু,হ্যান ত্যান ফাটা রেকর্ড চালানো, বিড়িটানা ল্যাড়া ফতুয়া পরা পাটি করা নয়, হ্যান্ডলুমের ডিজাইনার পাঞ্জাবী তার সাথে মিলিয়ে জুলিয়ে জুতো ঘড়ি বোতাম পরা নেতা বলে কথা! বহুত চমকানো পুরো ফাইভ ইস্টার নেতা!৷ বাপীও বহুত দিনের লোক, দাদার ছক্কামারার আগের থেকেই সেঁটে আছে! আগে রেল লাইনের ধারের স্ট্যান্ডে প্রথমে রিস্কা পরে ট্যাস্কি চালাতো! ছুরি ফুরিও চালিয়েছে একসময়! তা দাদার কাছে এগুলো গুণ বই দোষ নয়, তাই নেই নেই করে দশ বছর হয়ে গেল এ বাড়িতে।
বউদিও কম নয়, বিয়ের আগের থেকেই খেলুড়ি, হাল চাল মেপে নিয়ে শেষে দাদার গলায়ই ঝুলে পড়ল। আগে পিপের মত চেহারা ছিল এখন তো পুরো ঝাক্কু জিনিস।
দাদার মতো,বউদিও এখানে ঘুরে গেছে শ সবার, অথচ হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে দেখো-- ইসসসস,কি সুন্দর গো! যা দেখছে আহা উহু করে যাচ্ছে বরের সারপ্রাইজে ! মঙ্গল গ্রহ ভিজিটের মতো! আদুরি! শালা কেন যে আইন আদালত সাক্ষী দিতে ড্রাইভারদের ডাকে না! পুরো বিলা করে দেবার হিম্মত রাখে একেবারে! ঘরে, বাইরে মালিকের ঘাপলা সামলে রাখে তারাই।
-- কিরে! ফোন সাইলেন্ট করে ঘুমাচ্ছিস নাকি!
দাদা ফোনেতে ঝাঁপিয়ে পড়ল!
-- আমিতো দোতলার লবিতেই আছি দাদা!
লবি, লবিতে কি করছিস তুই! গাড়িতে যা ঝটকরে, তোর বউদি আবার ফোন ফেলে এসেছে!
দুটোই শুয়োরের বাচ্ছা! বাপী মনে মনে বলল! এরপর জড়িয়ে জড়িয়ে ছবি তুলে সাঁটবে! এদিকে মেয়েছেলে পেলেই ধামসা ধামসি! মরগে যা! বাপী নিচে নামল।
একতলায় বুবাই দাঁড়িয়ে, এ-ই ছেলেটা এখনো বাপের মত জোলো হয় নি, ফোনে যার সঙ্গে হ্যাজাচ্ছিল, মেয়েটাকে বাপী চেনে। ওদের পাড়াতেই থাকে, ওর ভাইটা পুরো উলটো পার্টির খোঁচড়, জানতে পারলে ছেলেটার কলজে ভাজা খাবে! তবুও বোকা ছেলেটা ভালোবাসা বাসি বোঝে!
গাড়ির সামনে আসতেই সেই লোকটাকে দেখতে পেল বাপি, ওকে দেখেই এগিয়ে আসছে, নির্ঘাত দাদার খোঁজে। লোকটা বউদির টপকানো মাল। ওকে দু দুদিন দেখেছে বাপি বউদির সঙ্গে, কিন্তু ওকে খেয়াল করেনি এরা। দাদাও জানে না। ওর নির্ঘাত কিছু কিচাইন কেস হয়েছে পৌরসভায়, দাদাকে দিয়ে সাল্টাবে!
বাপী চট করে দাদার ড্যাসবোর্ডে ফেলে রাখা রে ব্যান সানগ্লাসটা পরে নিয়ে ভারিক্কি গলায় বলল,
আজ একদম কিচ্ছু করা যাবে না বুঝলেন তো ফ্যামিলি নিয়ে ডিনারে, বোঝেন তো! বলেই কায়দা করে নিজের মোবাইলে মন দিল। দেবে দেবে, কিছুতো দেবেই, মন বলছে,বাপি মেপে নিল।
সিল্কের শার্ট হাত কচলে বুক পকেট থেকে একটা লাল গান্ধীনোট বার করতেই, বাপী সটাকসে নিয়ে নিল।
কাল সকালে দেখা করিয়ে দেব! হয়ে যাবে! হয়ে যাবে! এখন যান দাদা!
লিফটে উঠতে যেতেই বউদির ফোনে একটা মেসেজ ঢুকল টুং করে,
মিসিং উ লট!
চু--- সামলে নিল সে, লিফটের আয়নায় চোখ পড়তেই দেখল পুরো একটা খচ্চর দাঁড়িয়ে আছে।
***********************************************
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন