জেগে ওঠা আলো
দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়
ধনতেরাসের রাস। তার ওপর কালীপুজো উপলক্ষ্যে কাল ছুটি থাকবে ব্যাঙ্ক।ক্যাশ কাউন্টারে আজ অভীকের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।টিফিনটাও নাকে মুখে গুঁজে সেরেছে কোন মতে। কষ্ট হলেও এখন আর খুব বিরক্ত হয় না।মানুষগুলোর চোখে মুখে যেন দীপাবলির আলো দেখতে পায় ও।মা বলতেন, মানুষের মুখে আলো জ্বললেই সাক্ষাৎ ব্রম্ভ।
ট্রেনেও আজ বেজায় ভিড়।সব কেনাকাটা করে ফিরছে। নামার সময় ভিড়ের ধাক্কা যেন ছুড়ে ফেলে দিল ষ্টেশনে ওকে। এতো চাপ ! ক্লান্ত বিধ্বস্ত শরীরটাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে চললো বাড়ীর পথে। মেয়ে ঝিকমিক টুনি লাইট কিনে নিয়ে যেতে বলেছে।বাড়ি সাজাবে। হঠাৎ একটা শোরগোল কানে এলো।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো একটা বাচ্ছা ছেলেকে মাঝবয়সী একজন গুন্ডা চেহারার খুব মারছে।ছেলেটার ঝোলায় মাটির অনেক প্রদীপ।লোকটা ছুঁড়ে ঝোলাটা ফেলে দিল রাস্তায়। কয়েকটা প্রদীপ ভেঙ্গে চুরমার।ছেলেটা প্রদীপগুলো কুড়োতে কুড়োতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। পাশের চায়ের দোকানের ছেলেটা জানালো,ছোট ছেলেটা ঐ লোকটার জায়গায় বসে প্রদীপ বিক্রি করছিল।তাই লোকটা রেগে গিয়ে ছেলেটাকে মারছে।
খুব রাগ হোল অভীকের।কেউ কোন প্রতিবাদ করছে না।এ এক অদ্ভুত প্রবণতা এখন!অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ এখন শামুকের খোলসে।তাপস বলে : "হিজড়ো কি ফৌজ !"ছেলেটা পড়ে থাকা প্রদীপগুলো কুড়িয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে কেঁদেই চলেছে।অভীক বুঝতে পারলো সব।এই প্রদীপ কটা বিক্রি হলেই হয়তো ওদের ঘর আজ গরম ভাতের গন্ধে ভরবে। মায়া হল খুব। এগিয়ে গেল ছেলেটার দিকে। প্রদীপগুলোর দাম জিজ্ঞাসা করলো ছেলেটার কাছে। চমকে ছেলেটা মুখ তুলে তাকাতেই অভীক মুচকি হেসে ওর মাথায় হাত রাখলো। ছেলেটা হাতের উল্টো পিঠে চোখের জল মুছে দাম বলল। অভীক কিছু অতিরিক্ত টাকা দিয়ে প্রদীপের ঝোলাটা নিল ওর কাছ থেকে। ছেলেটার চোখে এখন আগুন দেখতে পেল। হয়তো আগামী লড়াইয়ের প্রস্তুতি ওর।বাড়ির পথে চলতে চলতে ভাবতে লাগলো বাড়ি ফিরে মেয়েটাকে বলবে :"এই মাটির প্রদীপগুলো আজ জ্বালালেই ঐ ছেলেটার ঘরে আজ আলো জ্বলবে"।আজ তাহলে হয়ে উঠবে প্রকৃতই আলোতেরাস !
************************************************************
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন