মঙ্গলবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১

সমিধ গঙ্গোপাধ্যায়





কবি সমিধ গঙ্গোপাধ্যায়-এর দুটি কবিতা  


জার্নাল ২০


এক ধরনের অপেক্ষা

এক এক একই ধরনের অপেক্ষা

ঠিক এর পরের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়তে পড়তে

আরও খানিক পিছিয়ে যাওয়ার মতো

আরও খানিক...খানিকটা...এই না-বলার

অক্ষম চালাকি ঢাকতে ঢাকতে

কী দিয়ে কী দিয়ে যেন ঢাকব সেই শব্দেরও

হারিয়ে যাওয়ার খনন জাত মারী চাপতে চাপতে

এই বসতে চাওয়ার খিদে। সংক্রান্ত যা কিছু।

এসব গল্পকার-দেরাজ  সাজিয়ে গুছিয়ে

আলতার বর্ণ বেচে তারপর আর কাউকে

দোকানের হদিশ না দেওয়া,

কত অল্পের জন্য সে সব তস্করস্নেহ দুঃখ হতে হতে

শেষ মুহূর্তে আবার আবার,

সংকেতবহ করে তুলেছে শ্বাসাঘাত--

মননাভির শত্রুতা হৃদয় নামক এক মন্ড থেকে

যাতে আরও আরও কিছুদিন অশ্লেষে

ঠিকানার ভালোবাসা ছড়িয়ে যেতে পারে।

কেননা অনুসরণ ছাড়া এমনকি ঈশ্বরও,

বিকল্পের গ্রাহ্য কোনও নিয়ামক রেখে যেতে পারেননি নিজের কাছে।


আমি এই অর্ধেক বসাশোয়াদাঁড়ানোর ভঙ্গিমাটি

করায়ত্ত করবো বলে রোজ

ক্রমশঃ না-হয়ে উঠি,

কিভাবে না-লিখতে হয় বলার অপেক্ষায় ঘামের চেষ্টা দিয়ে যাই

আর আসি আর যাই।



জার্নাল ২১


ফিলিম দেখেছি সারারাত।

প্রতিরাতে নায়ক শেষাবধি নায়িকার সামনে

একবারও বিছানায় যাওয়ার কথা বলেননি।

ফলতঃ নায়িকার হাতে একের পর এক খলনায়কের প্রত্যাবর্তন

দেখেছি সারারাত।

বিষয়হীন ভাবেই দুর্বলতার কাছে যেতে যেতে

অবধারিত তোমাকে আনতে চেয়েছি।

আমাদের এ পাড়াটা আবার নাকি ভদ্রপাড়া

অন্তত জনগণআদরিণী হওয়ার সময়ও,

আমার মাননীয় প্রতিবেশী যেভাবে তাঁর মেয়েকে

ঠোঁটে আঙুল রাখতে বলেছিলেন

আর বাছাধনদের রুটি-তড়কা'র টাকা দিয়ে

আশীর্বাদ করেছিলেন প্রাণ ভরে শেষাবধি

মারতে বাকি রেখেছে বলে--

তার থেকেই পাড়ার প্রয়োজনীয়তার আমদানি,  সহজে মালুম হতে পারে।

তবু তুমিও আমায় ঘুম পাড়াতে ব্যর্থ হয়েছো।

শুধু আমার জেগে থাকার বদভ্যেসে রাতের পর রাত,

পাড়া আরও বেশি ভদ্র হয়ে উঠেছে

রবীন্দ্র ঠাকুরের তোয়াক্কা না করে।

এই যে তোমাকে না পেলে আমি অযথাই রাবীন্দ্রিক

হই

এবং খুইরা কাঁটা দেখতে দেখতে প্রায় বেলেহাঁস অবধি পৌঁছোতে পারি,

এই সাফল্য আমার বন্ধুরা বুঝতে চায় নি।

বড্ড বোকার মতো আমার সঙ্গে সাঁটলিপি বদ্ধ করেছে যথাযথ বিজ্ঞাপনের।

আর আমিও

'এত একলা মানুষে থাকে না' বলে কেঁদেছি নিখুঁত।

একসময় ফিলিম ছেড়ে হালফ্যাশানের হাতকীর্তি

যা কিনা একসপ্তাহেই ফ্লুয়েন্ট শেখা যায়,

তার টিউশন করেছি,হ্যাঁ, নিয়মিত।

একহপ্তা বাদে গভীর নিষ্ঠা সহকারে আমি

সারারাত মূলের কাছে ঘেঁষতে চেয়েছি।

পরিমাণমতো জল চোখের সামনে ঘনবাষ্পে

পরিণত হলে যেন এক রবাহূত সন্ততির

হেঁড়েকান্না শোনার মতো আনন্দ হয়।

তারপর ঘুমের কাছে জুৎ করে বসতে গিয়ে

দেখেছি লেখা চোখে আসছে না।

কিংবা উল্টোটাই,

অর্ধনমিত হলে যেমন সব দৃশ্যে

হাড়ের স্বাদের সঙ্গে মাছের গলার দেনাপাওনা

বড় মসৃণ লাগে।


বস্তুতঃ ঘুম চোখে কাক ভোরেও এত কাজ সেরে ফেলে অথচ আমার

ফিলিম হাই তোলে না

মূলের ঢেঁকুর পাশ ফেরে না

লেখা আড়মোড়া ভাঙে না

রবীন্দ্রনাথ নাক ডাকেন না

মশারির দড়ি খুঁজে পায় না বন্ধুরা

এবং এ পাড়ায় লোডশেডিং বৈধ তাই হাতপাখার

কোনও বালাই নেই।

অবশ্য এসবে তোমার বাপেরও কিছু করবার নেই।

তাই তীব্র অপরাধবোধে,

বেঁচে থাকার মতো একটা চূড়ান্ত শয়তানি

ভোগ করার মতো একটা শখ ধাওয়া করছি আজকাল।


মাঝে মধ্যে ফুরসৎ না-ডাকলে মনে কোরো

পিনকোডের হাতখরচ ফুরিয়ে গিয়েছে।


***********************************************



সমিধ গঙ্গোপাধ্যায় 

জন্ম ১৯৯০। লেখালেখির শুরু ক্লাস সেভেন এইট থেকে। "বাক" "নতুন কৃত্তিবাস" "তবুও প্রয়াস" সহ বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ "নিউক্লিয়াসের বিষ (২০২১)"।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন