মঙ্গলবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১

প্রদীপ ঘোষ



 

কবি প্রদীপ ঘোষ-এর দুটি কবিতা 


পৃথিবীর গান আকাশ কি মনে রাখে


....হন্তে গাছেদের কিশলয়, মেঘেরাও ঋতুমতী

শ্রাবণেই। সম্বৎসরে শরৎ কেন আসে জানো ?

দেখোনি শিশুর মত চঞ্চল অতি, উড়ে যাওয়া -

সাদা পেঁজা তুলো মেঘ,অশরীরী সদ্য জন্মানো?


ছোট বাড়ি ছোট্ট ঘর, কোথায় রাখি বড় অন্তর!

উপন্যাসে যেমন দেখেছি জীবনে নয় কেন ?

দাঁড়াবার জন্য তিন বিঘৎ ভূমি তাওতো রাখোনি

বলোতো, শেষ থেকে শুরু, হয় না বুঝি কখনো?


আকাঙ্ক্ষা বলতে যদি বৃত্তে প্রবেশের অননুমতি

মেঘ ডাকলেই বৃষ্টি বোঝো পাখি দেখো পালকে

তবু বোঝোনি ব্রহ্মপুত্র নদ তখনি,তিস্তা সংশ্লেষে

স্পর্শক হতে চেয়ে নিষাদ হয়েছি তির শরক্ষেপে।


এখনো সবুজ দেখি অবুঝ মনে, স্বপ্নালু ঝোঁকে

"...নীরব সুরের রামধনু শুধু দিগন্তে ছবি আঁকে"



ডায়েরির একটা পাতা


মন এখন কেন যে শরীরের কথা ভাবে কুসুম !....


প্রকৃতি বয়োঃবৃদ্ধ হলে শীতকাল। শীতল বাতাস শরীরে মনে কেমন যেন হায়-হায় এঁকে দেয়। বিষন্ন ধুলোবালির মাতন একটুও ভাল্লাগেনা। পাতা ঝরে গেলে সব গাছ-ই নগ্নিকা। চোখ পড়লেই মনে হয় দ্রৌপদী হাতজোড় করে আকাশের দিকে উচ্চারণ করছে কোথায় তুমি মাধঅঅঅঅব .......


তবুও ভীষণ ভাবে চাই শীতকাল আসুক। এ সময়ের একটা রুমানি ম্যাজিক আছে। একটা কিশোরের দেখা পাই প্রত্যেক, প্রত্যেকে বার। দুলে দুলে শব্দ করে শব্দরূপ-ধাতুরূপ, গঙ্গানদীর গতিপথ, মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ মুখস্থ করতে থাকা; কম্পাস দিয়ে জ্যামিতি পরিমিতর বিভিন্ন সূত্র ঝালিয়ে নিতে থাকা খাতার পাতায়।


ক্লাসে ওঠার বাৎসরিক পরীক্ষার প্রস্তুতি আরকি। সে সব পরীক্ষায় পাশ করলেও জীবনের পরীক্ষায় যাঁরা ফেল্টু আর বয়স বাড়লে বিশেষত যাঁদের এক চেয়ারে বসে গরম কফির মাগে চুমুক দিতে দিতেও শীত উপভোগ্য হয় না। যখন দেখে পাশের চেয়ার টা ফাঁকা-ই থেকে গ্যাছে। তাঁদের নস্টালজিক হওয়া ছড়া উপায়ন্তর-ই বা কি !


আরো একটা কারণ অবশ্য ইরাবতী। চির যৌবনাবতী হবে বলে প্রায়শই সারা রাত কুয়াশার মুক্ত কুড়িয়ে গায়ে মাখতো বালিকার উচ্ছাসে। আমি যে এতো ঘুম কাতুরে তা সে মেয়ে শুনবে সে কথা। গহরজানের যেমন সারেঙ্গি বাদক আমার প্রয়োজন ও ছিল ঠিক ততটুকু-ই। তবু সে দিনগুলো-ই আমার জীবনের ধন।


ওই আনন্দ-ধন টুকু আনন্দনাড়ুর মতোই। বিবাহের উপচার সত্য বটে তবে মণ্ডপের বর্হিভূত আচারাদি। ভেবে দেখো দুঃখ অভিমান এক আশ্চর্য মাৎসর্যের নাম! সুখ আনন্দের নিরিখে কিংবা দৃষ্টিকোণ থেকে। অনুভবের মৌলিক অনুভূতি, সুখ আনন্দের অণু পরমাণু ভর ঘনত্ব স্থিতি জীবনে এতোই কম, H2 গ্যসের মতো। ব্যাপনে অতিদ্রুত উবে যায় জীবন থেকে।


দুঃখ অভিমান কিন্তু ভারী জলজ পদার্থ, পারদের মত। তরল হলেও ঘনত্ব বা ভর এতোই বেশি যে আজীবন কাল তাপ উত্তাপে থার্মোমিটারে ওঠা নামা করতেই থাকে। করতেই .......


ভালোবাসায় পোড়ামন,স্মৃতিতে অক্ষত রেখেছি ভ্রু-বিভঙ্গি

ও মেয়ে ফিরবি কি? গলনাঙ্কে গঙ্গোত্রী উপহিমবাহ চতুরঙ্গী?


*********************************



প্রদীপ ঘোষ

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক (বঙ্গবাসী কলেজ)। পরবর্তীতে আইন নিয়ে পড়াশুনা (সুরেন্দ্রনাথ ল'কলেজ) এবং জর্জ টেলিগ্রাফ ইনস্টিটিউট থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা (সিওপি)। নিজ পেশা, কলকাতা নিবাসী।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন