মঙ্গলবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১

কবিতাগুচ্ছ * তপন পাত্র




কবিতাগুচ্ছ  * তপন পাত্র


অসূয়া


  (১)


ভ্রমরের নীল ডানার ভিতরে সুতীক্ষ্ণ কা'ৎ

একেকটি টইটুম্বুর ফুলের উপরে এসে বসে ।

লাঠি নিয়ে ভ্রমরের দিকে ছুটে যাই ।

তৎক্ষণাৎ উড়ে যায় সুচতুর নীল ডানা ।


কা'ৎকার চোখেও পড়ে না ।


(২)


ডাকঘরের ধ্বজা পুড়ছে ।

আবার লেগেছে আগুন হনুমানের ল‍্যাজে ,

 

সুবিশাল নক্ষত্রেরা শিউরে উঠছে ।

বাংলার কোলিয়ারি 

ওপারের দুবাইয়ে ভূমিকম্পের মতো ভীতিপ্রদ বিপর্যয়ে 

টল টল করছে অভাগী বসুন্ধরা ।


এ সময় সুতীব্র চিৎকারে তোমাকে যদি ডাকি হে যৌবন ,

তুমি কি মৃত মৌরলা মাছের মতো

চকচক করবে জ্যোৎস্নার আলোতে ।

নাকি পেঁয়াজি মানুষের গা থেকে একটার পর একটা 

                                 খোল ছাড়াতে শুরু করবে ...


 (৩)


নিথর স্বপ্নেরা ভাসছে

নিরুপম মেঘের ভেলায় ।


হিমশীতল ব্যস্ততায় মানুষ ভুলেছে আজ 

আত্ম-আবিষ্কার ।

অন্ধকারের মৌন তরবারি ঝনঝন করে উঠছে 

মনুষ্যত্বের কন্ঠনালী টিপে ধরছে রিক্ত ও রক্তাক্ত দু'টি হাত।


দু'টি পৃথিবীর মাঝে মাকড়সার 

জালে ধুলো জমে যাওয়ার পর ফুটে উঠছে কম্পন রেখা ।

রচিত হচ্ছে সৃষ্টির আদি কথা

            বিরাগ-অসূয়া গাথা ।


(৪)


মুখোশের ভিতরে হায়নার পদচিহ্ন ।

উত্তেজনার লালপেড়ে শাড়িতে আজও তেমনি লটকে আছে 

বহু প্রাচীন বটকা বনজ গন্ধ ।


নে'ল পালিশের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে সুতীক্ষ্ণ সুদীর্ঘ নখ ।


(৫)


ঝাঁ-চকচকে রাস্তার ওপর সুস্পষ্ট

ফুটে উঠছে

 হিংস্র জন্তুর পদচিহ্ন ।


মমতা সত্যি সত্যিই একটি পশুর মৃতদেহ আজ ।


হাসি না ,

কান্না ।

চোখগুলি বেয়ে শুধুই গড়িয়ে পড়ছে  ক্রুরতা ।


সাধনা ও সিদ্ধপিঠের মানচিত্র ভেঙে ভেঙে

কাঁটা-খোঁচা ও পাথরকুচির পথ ধরে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে

না-পৌঁছানোর দেশে ।



বহুরূপী

বহুরূপী এলে আমি ভিড় করি না,

হরবোলা এলেও না ।


           আমিই তো বহুরূপী, 

              আমিই হরবোলা ।

        আমি আমাকে দেখি ।


আমি ভোরবেলা যোগের সাথে যোগ ,

সকালে রোগীর সাথে রোগী হয়ে হাঁটি মাইল তিন।

 তারপর প্রাইভেট টিউশন ।

বেলা বাড়লে সবজি বিকি ।

                    সন্ধ্যা হলে চা ।


অল্প রাতে যাত্রার আখড়ায় রাণাপ্রতাপ সিং।


 এতোসবের পর 

আমি আর  আমার মাঝে তপনকে খুঁজে পাই না 

                                 কখনোই না ।


 ঠিক তেমনি মা, শিশু, ডাক্তার, নেতা , প্রতিবেশী 

এবং বান্ধবীর সাথে আলাদা আলাদা স্বরে কথা বলি ।

                বহুরূপী এলে,

               হরবোলা এলে

আমি এতো কাজ ফেলে ভিড়ে মুখ গুঁজি না ।

বরং মনে মনে ভাবি আমিই হরবোলা 

আমিই বহুরূপী ।


অহংকার


এত অহংকার কীসের ?

 তোমার পায়ের কাছে পড়ে আছে যে ভাঙ্গা আলপিন ,

তুমি কি তারই মর্ম বোঝ ?


 তোমার গায়ের বর্ণ ,

 তোমার মুখের শ্রীও তোমার অর্জিত নয় ।

আত্মীয়-পরিজন  বংশ মর্যাদাও ।


 গাছের কাছে গাছ

            এবং 

মাটির কাছে মাটি হয়ে দ‍্যাখো ---


 সকল অহংকার ভেসে যাবে 

     অশ্রু নদীর জলে

                কলার মান্দাসে ।


*******************************************



তপন পাত্র 

পুরুলিয়ার সুপ্রাচীন লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন দিক ফুটে ওঠে পেশায় অধ্যাপক তপন পাত্রর কলমেগদ্য ও কবিতা উভয় শাখাতেই তিনি সাবলীল । তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই ---কাব্যগ্রন্থ : মাটিও কালে ঢেউ  --(১৯৯৪) * অচেনা রং --(১৯৯৮) * স্বাতী নক্ষত্রের জল  ঝিনুকের বুকে --(২০০০) *  ঝড় সওয়া কলাপাতার গান --(২০০৩) * রচিত কবিতা --(২০১৮ ) বিভাবরী --(২০১৮) * সেই পলাশ্যার তিন পাত --( (মানভূঁইয়া কবিতা) (২০১৯) * সুদূর মাঠের প্রস্তাব -- (২০২০) * কোভিড নাইনটিন্ --(২০২০) * বসন খসে পড়ে --(২০২১) ছড়া---দিলাম ছড়া ছড়িয়ে --(১৯৯২) *  হুল  --(২০১৩)



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন