কবিতাগুচ্ছ * তপন পাত্র
অসূয়া
(১)
ভ্রমরের নীল ডানার ভিতরে সুতীক্ষ্ণ কা'ৎ
একেকটি টইটুম্বুর ফুলের উপরে এসে বসে ।
লাঠি নিয়ে ভ্রমরের দিকে ছুটে যাই ।
তৎক্ষণাৎ উড়ে যায় সুচতুর নীল ডানা ।
কা'ৎকার চোখেও পড়ে না ।
(২)
ডাকঘরের ধ্বজা পুড়ছে ।
আবার লেগেছে আগুন হনুমানের ল্যাজে ,
সুবিশাল নক্ষত্রেরা শিউরে উঠছে ।
বাংলার কোলিয়ারি
ওপারের দুবাইয়ে ভূমিকম্পের মতো ভীতিপ্রদ বিপর্যয়ে
টল টল করছে অভাগী বসুন্ধরা ।
এ সময় সুতীব্র চিৎকারে তোমাকে যদি ডাকি হে যৌবন ,
তুমি কি মৃত মৌরলা মাছের মতো
চকচক করবে জ্যোৎস্নার আলোতে ।
নাকি পেঁয়াজি মানুষের গা থেকে একটার পর একটা
খোল ছাড়াতে শুরু করবে ...
(৩)
নিথর স্বপ্নেরা ভাসছে
নিরুপম মেঘের ভেলায় ।
হিমশীতল ব্যস্ততায় মানুষ ভুলেছে আজ
আত্ম-আবিষ্কার ।
অন্ধকারের মৌন তরবারি ঝনঝন করে উঠছে
মনুষ্যত্বের কন্ঠনালী টিপে ধরছে রিক্ত ও রক্তাক্ত দু'টি হাত।
দু'টি পৃথিবীর মাঝে মাকড়সার
জালে ধুলো জমে যাওয়ার পর ফুটে উঠছে কম্পন রেখা ।
রচিত হচ্ছে সৃষ্টির আদি কথা
বিরাগ-অসূয়া গাথা ।
(৪)
মুখোশের ভিতরে হায়নার পদচিহ্ন ।
উত্তেজনার লালপেড়ে শাড়িতে আজও তেমনি লটকে আছে
বহু প্রাচীন বটকা বনজ গন্ধ ।
নে'ল পালিশের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে সুতীক্ষ্ণ সুদীর্ঘ নখ ।
(৫)
ঝাঁ-চকচকে রাস্তার ওপর সুস্পষ্ট
ফুটে উঠছে
হিংস্র জন্তুর পদচিহ্ন ।
মমতা সত্যি সত্যিই একটি পশুর মৃতদেহ আজ ।
হাসি না ,
কান্না ।
চোখগুলি বেয়ে শুধুই গড়িয়ে পড়ছে ক্রুরতা ।
সাধনা ও সিদ্ধপিঠের মানচিত্র ভেঙে ভেঙে
কাঁটা-খোঁচা ও পাথরকুচির পথ ধরে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে
না-পৌঁছানোর দেশে ।
বহুরূপী
বহুরূপী এলে আমি ভিড় করি না,
হরবোলা এলেও না ।
আমিই তো বহুরূপী,
আমিই হরবোলা ।
আমি আমাকে দেখি ।
আমি ভোরবেলা যোগের সাথে যোগ ,
সকালে রোগীর সাথে রোগী হয়ে হাঁটি মাইল তিন।
তারপর প্রাইভেট টিউশন ।
বেলা বাড়লে সবজি বিকি ।
সন্ধ্যা হলে চা ।
অল্প রাতে যাত্রার আখড়ায় রাণাপ্রতাপ সিং।
এতোসবের পর
আমি আর আমার মাঝে তপনকে খুঁজে পাই না
কখনোই না ।
ঠিক তেমনি মা, শিশু, ডাক্তার, নেতা , প্রতিবেশী
এবং বান্ধবীর সাথে আলাদা আলাদা স্বরে কথা বলি ।
বহুরূপী এলে,
হরবোলা এলে
আমি এতো কাজ ফেলে ভিড়ে মুখ গুঁজি না ।
বরং মনে মনে ভাবি আমিই হরবোলা
আমিই বহুরূপী ।
অহংকার
এত অহংকার কীসের ?
তোমার পায়ের কাছে পড়ে আছে যে ভাঙ্গা আলপিন ,
তুমি কি তারই মর্ম বোঝ ?
তোমার গায়ের বর্ণ ,
তোমার মুখের শ্রীও তোমার অর্জিত নয় ।
আত্মীয়-পরিজন বংশ মর্যাদাও ।
গাছের কাছে গাছ
এবং
মাটির কাছে মাটি হয়ে দ্যাখো ---
সকল অহংকার ভেসে যাবে
অশ্রু নদীর জলে
কলার মান্দাসে ।
*******************************************
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন