কবি অমিত চক্রবর্তী-র দুটি কবিতা
দ্রাবণ
এ শহর বা শহরতলি আসলেই খুব ছোট, পথ হারানো সম্ভব নয় এখানে,
কারণ তাকে ঘিরে রেখেছে ধানক্ষেত, আর ঝকঝকে সড়ক গেছে
চিরে, একটা নতুন যুগের চিন্তার মত।
আমি সবুজের ভক্ত, সড়কের নয়, তাই এলোমেলো রাস্তা হারিয়ে
এবার আলপথে এসে দাঁড়াই। এস, ধানগাছ দ্রুত দোলা দাও আমায়,
আন্দোলনে লঘু করে দাও বিষাদজরা, বাতাসে ছড়িয়ে দাও আমার
হেরে যাওয়া বর্মের নীল নীল গুঁড়ো।
কুড়িয়ে পাবে সে বিষাদচূর্ণ কোনো এক সুখী মেয়ে, নীল ছোপে যে
ভাল থাকতে জানে অথবা নীলমিশ্রণে নদী, ঘোলা হয়ে উঠবে
তার সুন্দরী জল। নিস্তেজ হয়ে বেদনা এখানে মিশে যাবে জলে,
জমাট বাঁধবে না কোনো শিল্পে বা ভাস্কর্যে, ঘনীভূত হবে না
সুখী মেয়ের শৌখিন হৃদয়ে, শুধু মাছেরা ঘাই মেরে বলবে,
তিনি এসেছেন আজ, জটাধারী বেদনাবাবা,
লুকিয়ে আস্তানা গেড়েছেন, বেড়া নদীর জলস্তম্ভে।
ঝিঙাফুল
মাঝরাতে কিচেনে আলো জ্বেলেছিল অতন্দ্রিলা,
সাদা ঝুঁকে পড়া আলোয় তার তেল চিটচিটে সমীক্ষা।
আমি তখনও আশ্চর্য ঘুমে –
আধো–স্বপ্ন জাগরণে দেখি দুরন্ত সড়ক,
ট্রাক চলে যায় ঘুরে, শহর থেকে শহর,
হাইবিমে, ক্রিসক্রস।
অতন্দ্রিলা বিষণ্ণ মাত্রা,
মুদ্রার এপিঠ, কারা যেন ছলনা করে গেছে
এই সব মেয়েদের বুকে, ফেলে রেখে গেছে
অসমাপ্ত, উধাও হয়ে প্রিয়বন্ধুর সাথে।
তাই আলো আসে ছটায়, কিচেনে সামাল প্ল্যান –
হৃদয়ের ঢল নেমে ঝিঙাফুল সংক্রমণে
নীল হয়ে ফোটে, সাঁঝে অথবা মাঝরাতে।
অন্ধকারে আমি ফের নিঃসাড় থাকি, যুদ্ধ ঘোষণায়,
কল্পনায় – খেলা দেখি গ্যালারিতে, নিরুত্তাপ
সাঁকো বানাতে হবে আমায়, ভোর হলেই
রঙবেরঙের নুড়িপাথর –
সকালের ফেরিগানে, আজানে ছোপানো হবে ঝিঙাফুল,
মুদ্রার ঝলমলে পিঠ।
********************************************
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন