কবিতাগুচ্ছ * সৌমেন চট্টোপাধ্যায়
হৃদয় গহ্বরে ইতিহাস কাঁদে
জীবনে নিহিত দুঃখের রাত্রিতে ধ্বংসের নির্জন
অতীত একাকী আমাদের স্পর্শ করে
পরিব্যাপ্ত অন্তরীক্ষ ওড়ে
নীরবে প্রাচীন প্রজন্ম নক্ষত্র রাত্রির আকাশে
শরণার্থী হয় নিষাদের পৃথিবীতে
পাথর মাটির শবে- মৃত্যু শোকে জাতিস্মর কাঁদে
তখন প্রান্তিক
আঁধারে বিধ্বস্ত চেতনার
অবিরল ক্ষত
গুলির উপর
জ্যোৎস্নার বিচিত্র ফুল ফোটে
কখনো কখনো
আদিম প্রাণের
অস্ফুট গৌরব শূন্যতার পরপারে
গূঢ় বেদনার জন্ম দেয়
পার্থিব বিস্ময় জেগে ওঠে
শৈশবের কোনো এক বিমূর্ত মেঘের নষ্ট দেশে
বহু ধূসরতা মুছে দিয়ে
স্নেহের বিশ্বাসে
বিরতি বিহীন প্রত্ন ভাষার গভীর নীল গান
গেয়েছি আমরা পূর্ণ ভোরে
দীর্ঘ প্রতিক্ষার
পর প্রজন্মের করতলে
এখন শুধুই মরুভূমির নিঃসঙ্গ
পথের রহস্য
আজ সময়ের মুখ ঢাকে
ভয়ের অন্তরে নির্বাক জীবন কাঁদে
মৃত্যুর উৎসবে
প্রান্তরে সঞ্চিত
ব্যাথার অসুখ
দিনাবসানের বিমর্ষ প্রহর গোনে
হৃদয় গহ্বরে
শূন্য মহাকাশ জুড়ে আজ
ইতিহাস কাঁদে
এ কেমন অন্তর্জলি
মেলা থেকে ফিরি একা একা
দহনের চালচিত্রে পোড়া বনরেখা
পড়ন্ত বেলার গ্রামদেশে
আদি দেবতার
নিঃস্ব অন্ধকার
চুপ দিয়ে কাঁদে
হাড়িকাঠে সভ্যতার রক্ত,অভিচারী নিষিদ্ধ সাধনা
আর পথে পথে দুঃখ ঘোরে
নিহত গানের ভাষা বুনো শালিকের দেহ বিঁধে
রক্তভারে অস্তগামী সূর্য-রুক্ষ মাঠের ফসল
ঠিকানা বর্জিত ভূখণ্ড তোমার হাতে তুলে দিয়ে
তবে কি শুধুই এই অন্তর্জলি চেয়েছি আমরা!
মৃতবৎ অবিরল ঝর্নাজলে অতি শিহরণ
জাগে ক্ষণে ক্ষণে
পড়ে থাকে দেহহীন দেহ
মেলা শেষে একা একা ফিরে যাচ্ছি শূন্য হাতে
অনাগত প্রজন্মের হাতে হাতে দিয়ে গেলাম সাঁঝেরমূল
মৃত্যুর মতন হীম বাতাস শিল্পীর
মাথার ভেতর নক্ষত্রের দীর্ঘ সুরে
কাঁদে আদি দেবতার কাছে
বেলা শেষে ফিরি একা একা
তবে কোন অপভ্রমণের খেলা হলো
ঠিকানা বিহীন এ কেমন অন্তর্জলি কাছে এলো
এ কেমন অভিজিৎ নক্ষত্রে অমৃতযোগ ছিল
(After prison Note -Antonio Gramsci)
সাব- অল্টার্ন
এখানে এখন
জীবন জেগেছে
পাখির মায়াবী ডাকে,আজো প্রত্নরাতের বাতাসে
শিকড়ের গান খেলা করে
যদিও এখানে প্রান্তিক প্রাণের মর্মে
এক গর্ভবতী বিপ্লবের ব্যাথার করুন ইতিহাস
নীরবে কান্নার গোপন কাহিনী হয়ে শুয়ে আছে
এইসব মেঠো
গ্রামের ভোরের
শিশির বিন্দুতে
সূর্যের নিসর্গ
ভুলিয়েছে আমাদের সেইসব কথা
কঠিন সন্ধ্যার হাত ধরে
নিজেকে বইছি মাটির ঝর্নার দেশে
উদাসী মাঠের
বাউলের মতো রাঙা পথে হেঁটে হেঁটে
দেখেছি বেদনা
কিভাবে পোড়ালো
আমাকে আমারি কিছু ভুলে
অথচ কোথাও কোন দুঃখ ছিলনা
জমাট শিলার প্রাচীন অন্ধকারে
রক্তের নিবিড় স্রোতে, পাথুরে অন্তরে সেই সুরের আকুতি
আমাকে জাগায়
দাঁড়িয়ে থেকেছি
ভীষণ নির্জনে, নীরব জ্যোৎস্নার আলো
আজ নির্বাসিত
বৃক্ষের একটি ফুল ছুঁয়ে উড়ে যায় দূরের দিগন্তে
এখানে এখনো
বিষন্ন ফুলেরা স্বজনের বন্ধনে উজ্জ্বল হয়
তাদের নিজস্ব ভাষার সুতীব্র কণ্ঠে
বিশুষ্ক বাতাসে শালবনের সুঘ্রাণ চৈত্রের জীবন জুড়ে
নিজেকে জারিত করে সেই প্রাচীন হওয়ার রাতে
আমাদের নিয়ে যায় প্রতিশ্রুতির প্রান্তিক গর্ভে
যেখানে রাত্রির
দুঃখ প্রতিবার
আষাঢ়ের মেঘে
আচ্ছন্ন থেকেছে
মহুয়ার বনে সেই বিপ্লব গভীরে নীরব আকাশ চিরে
বারবার মানুষের কথা বলেছিলো
একদিন বহুদূর হতে ওদের গানের কলি
সমবেত জনতার ভিড়ে মিশে গিয়ে
বিশ্বাসকে দৃঢ় করে ফিরেছিল শিকড়ের গান গেয়ে গেয়ে
অলখ্যে, নিজস্ব সঙ্গিনীর হাত ধরে
জ্যোৎস্নার রাতের
নদীর কিনারে
শুনেছি অচেনা পাখির অনেক গান
সেদিন আমার প্রতীক্ষার
অন্তরে অন্তরে বয়েছিল
ফল্গুর স্রোতের শব্দহীন
সেসব মাটির মানুষের পদশব্দ
বিচ্ছেদ বেদনা আমাকে ব্যাথিত করে নিয়ে যায়
কালের প্রান্তরে সূর্যাস্তের
এমন সন্ধ্যায় দুহাতে যা কিছু কুড়িয়েছি তার
সমূহ দিনের অভিজ্ঞতা
শতাব্দীর আত্মীয়তা চেয়ে
সিক্ত হতে চায় সেইসব
দেশজ প্রান্তিক
হৃদয়ের স্পর্শে
পরিচিত পৃথিবীর সেই নির্যাতিত অন্তর্লীন
নদীর গভীর ধারা আজ
জীবনের গল্পে চূড়ান্ত স্বীকৃতি পেয়ে পৌঁছে গেছে
আমি থেকে আমাদের মসৃন সকালে
যেখানে সকল বিশ্বাস মিলিয়ে যায়
স্নেহসিক্ত কুটিরের জর্জরিত অন্ধকার ছিড়ে
প্রেমের অমৃত গর্ভরসে
প্রাণের ফুলের গভীর যন্ত্রণার সেই ইতিহাস
সকলের শীতার্ত হৃদয়ে দিয়ে যায় অনবদ্য সূর্যের গৌরব
আর মেঠো গর্ভবতী গ্রামের বাতাসে
ওড়ে নির্যাতিত
নদীর স্বীকৃত
কাহিনীর শিকড়ের গান
খেলে যাই নক্ষত্র ইশারায়
দূরবাসী আলোরেখা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে
মরশুমী ঝরাপাতা বিশুষ্ক বাতাস
ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে আকাশ, নক্ষত্র মাটির মানুষ
নীরব রাত্রির প্রত্নদেহে শুয়ে আছি
প্রত্যাশাপীড়িত
এই জীবনের স্বাদমূলে
যোনির আদিম রক্তগন্ধময় এক
মেঘলা নদীর ছায়াপথ খেলা করে
আমার গভীরে
স্বপ্নের ভেতর কোথাও কঠিন শূন্যতা বেজেছে
একদিন তুমি
করতলে ছিলে রৌদ্রফুল
আজ দেহমূলে তারই ছায়া পড়ে আছে
দীর্ঘ থেকে আরো বহু দীর্ঘ
ছায়াপথ মেঘভার চেপে আছে বুক
মুখহীন দুঃখী মরশুমী ঝরাপাতা
মাঝ নদীজলে খেলে যায়
অতল পাতালে নক্ষত্রের ইশারায়
অনঙ্গ সন্ন্যাসী
কোনো এক দেবযোগ অরণিমন্থনে
আমাকে জাগিয়েছিলে হিম
দুঃখিত আকাশী রাতে; অনঙ্গ সন্ন্যাস
চন্দ্রপাতে তাঁরই
দীর্ঘ ছায়া ফেলে
বিকীর্ণ জ্যোৎস্নার পথে সন্ধ্যারাগ নামে
আনপথে ঘুরে ঘুরে নিজের নিঃসঙ্গ
পদচিহ্ন দেখি
বুঝেছি মাটির
দেহে অন্তর্দাহ অশ্রুমতী নদীর মতন চলে
জন্ম আঁকে
শালিনীর ভেজা তীরে ঘুমিয়েছো একাকী করে
একাকী জলের কিনারে অচেনা আহত মুখে
ভাষাহীন দুখে সারা পথ জুড়ে নিয়ত ভাসে
পাথুরে মেঘের গান কুয়াশার করুণ বুকে
রুপোলি জলের দেশে সে তো আজ জন্ম খোঁজে
আকাশের গায়ে যতি রেখা দিয়ে তোমাকে আঁকে
অতল আঁতুড়ে কবি
সৌমেন চট্টোপাধ্যায়
অতলে আঁতুড় বেজেছে ধ্রুপদী সুরে
পাতাশূন্য সেই গাছে দেখেছি আবার
পৃথিবীর আদিরূপ ভাসে
কোনো এক শব্দহারা রাত্রির বাগানে
কবেকার শীর্ণ ডালপালা
আজও ছায়া রেখে উড়ে যায়
দিব্যজ্যোৎস্নালিপি
দেখেছি বিজনে
পর্নালি যোনিতে নিজের জন্মের চিহ্ন খেলা করে
মরুগ্রাসে ছায়াপথ- দিনান্তে সূর্যাস্ত সকলেই
ভেসে গিয়ে বারেবারে ফিরে ফিরে আসে
কবির বেদনা জীর্ণ অবশেষ দুঃখী রৌদ্রে হিম হয়ে জ্বলে
শূন্য নদীচরে কবিতার কল্পচিত্র
কবির নির্বাক দেহে এঁকে যায় ধ্রুপদী সুরের
অতল আঁতুড়
মরুগ্রাসী ছায়াপথ অনার্য সিন্ধুর ঘন জলে
ঘনিষ্ট আঁধারে চিরকাল
আদি ব্রহ্মাণ্ডের
ভেতর নবীন কবিজন্ম কেঁদে যায়
বাবা ,এইতো আমি আছি
নাভিকুণ্ড রয়ে গেল গাঁথা
আশ্বিন শ্মশানে
উন্মাদ অশ্রুর
বহু প্রত্ন রক্ত
করোটি আকাশ জুড়ে ক্ষতদাগে খেলে
নষ্ট স্মৃতিকথা উষ্ণ চালের মতন ওঠে নামে
ছেঁড়া ছেঁড়া মাংসছাই অস্থি কণা হয়তো খুঁজেছে চেনা মুখ
চিতার সমীপে
প্রেমের শূন্যতা
কেবল ই ঘোরে উদাসীন পুকুরের
অন্ধ বাসনার
মায়াবী জলজ রেখা ঘিরে
সেই স্তব্ধ মুখ মাথা রেখে গেল মেধা চিহ্ন কিছু
নিঝুম কাফান উড়ে গেল
নৈশব্দের দিকে
আমার পাহাড়ি গ্রামে মৃত পাথরের প্রতিচ্ছবি
আজ ক্লান্ত গানে ভাসে দহনে দহনে
আমার পরাগরেণুর ভেতর রয়ে গেল বহু ঈশ্বরের
নৈবেদ্য ,তোমার নাভিপদ্ম স্থির চোখ
দুরের পশ্চিম কোণে দেখেছি চিন্তার
চারণ প্রবাহে
মঙ্গল কাব্যের সকল অক্ষর মেঘ ঋতু বুকে
জ্বলজ্বল করে
তীর বিদ্ধ স্মৃতি হয়ে যায় পরিযায়ী
পৈশাচী প্রাকৃত অন্ধকারে
কৌশিকী রাত্রিতে
নৈঋত আকাশ থেকে ভালোবাসা সঙ্গম বিষাদ
আরও সকল ফসিলের
প্রতিশ্রুতি বাজে একতারার একাকী তর্জনীতে
আশ্বিন নক্ষত্র আলো নাভিকুন্ডে মিশে রয়ে গেল
উন্মাদ করোটি জুড়ে শ্মশান ভূমির ক্ষতদেশে
আমিতো সেই বোধিবৃক্ষ
আমি তো এখন
সেদিনের সেই বোধিবৃক্ষ
ইতঃস্তত অভিশাপগুলির নিঝুম
দেহশব এই জীবনে মিলিয়ে আছে
রয়ে গেছে শূন্য দেহবৃক্ষে
সেসব ঘনিষ্ঠ দিনযাপনের
সবুজ শ্যাওলা;
গভীর প্রদেশে ভেসে আছে
তারই ব্রহ্মনাদ ,কষ্ট ম্লানদুঃখছায়া
উদাস রাত্রির কোলে অনর্গল ভাঙা অন্ধকারে
অন্ধকার ভেঙে ফাল্গুন রোদ্দুরে একটি জীবন্ত প্রাণ খুঁজি
প্রত্যন্ত মৌলিক দেশে জন্মান্ধ ক্ষয়ের গন্ধ
কিছু স্বাদ কিছু স্মৃতিহারা কথাছায়া আবছায়া
হয়ে অর্ধনারীশ্বর তার
যুগ্ম প্রতিভাসে
আমাকে জাগায়
অবচেতনের নাভিফুলের কম্পনে
দেখেছি, সন্মুখে
দেবঋষি গূঢ় অতিপ্রাকৃত সৃষ্টির
রাত্রির মাতৃকাফুলে নম্র অঘ্রানের
ক্ষেতের চূড়ান্ত হিম আঁধারের শান্ত ক্ষণে
উজ্জ্বল সূর্যের সন্তানের
মতো আরো এক অজ্ঞাত সন্ন্যাস মেধা
আমার ভেতর গেঁথে দিয়ে মহাপৃথিবীর অষ্টনাড়ি ছিড়ে
অভিষিক্ত করে
অন্তরীক্ষ জুড়ে
মনের গভীরে যে স্থাপত্য
রুক্ষতা নির্মাণ করেছিলো একদিন
জৈষ্ঠ্য কৃষ্ণাচতুর্থীর বিষণ্ণ মুহূর্তে;
এক লহমায় তাকে নষ্ট করে বিবর্ণ ধ্বংসের
দিকে নিয়ে গেছে বহুবার
সেই ঋষীগন্ধ
সেদিন নৈঋত
মেঘ থেকে অপ্রাপ্তির শূন্যতা মৃতের
দেহকোষ হতে পাণ্ডুলিপি ভরেছিলো
বিধ্বংসী জলজ
শরীরের পোড়াগান সুরে;
আত্মজের খোঁজে মৃতবৎসা রূপসী নিজস্ব জন্মদেশে
সন্ধ্যাসূর্যফুল ক্ষণে ক্ষণে জন্ম দিলো
চির আকাঙ্খিত ভূমিদেশে
পশ্চিমের দুঃখস্মৃতিঅশ্রু মুছে দিয়ে
আজো তা শূন্যের গভীরে সৃষ্টির দিনাঙ্ক নির্মাণ করে ;
জন্ম বিস্তারের মহাপ্রবাহের সেই
ভীষন ক্লান্তির স্তব্ধ আদি পুরুষ ও রমণীর
নিদ্রামগ্ন রক্তজলস্রোতের অন্তরে
ভোর রাত্রে সেইসব নিষাদি অতীত স্বপ্নচিহ্ন
নিষ্পাপ অন্তিম সুর মেখে ঘনকৃষ্ণের অনন্তে যেতে চেয়েছিলো;
দেহভাষাগানে সেই মুখ ফুটে ওঠে
কাঙ্গালী গোধূলি চিহ্নগুলি
বাঁশবন নদী ...
জলের গোপন গর্ভফুলে মৈথুন রচনা করে
আমাদের জন্ম দিয়ে গেলো
ইতঃস্তত কোনো এক ভিনদেশী মায়াবী বিষাদগুলি
আমার স্মৃতির দেহাবশেষের অতি প্রত্ন ধূসর মাংসের কণিকা
আদর মেখে ছুঁতে চেয়েছিলো
পিতৃ পুরুষের মহাকাশে
ছড়ানো বিছানো তর্পনের অশ্রুজল
পৃথিবীর ব্রহ্মলগ্নে
আপতিত রোদ্দুরের মন বোধিবৃক্ষে
নিজেকে ছড়ায় সুচিত্রিত
মানুষ জন্মের অন্তরীক্ষে
ইতস্তত অভিশাপগুলি
নিঝুম কঙ্কালে বারেবারে
এসে ঘর বাঁধে পোড়া জ্যোৎস্নার মলিন নদীজলে
বাঁশবনে শান্ত জোড়ের গোপন তটে...
অনাদি জরায়ুমাটি দেশে তারা আসে
গর্ভফুলে আমাদের গিথে দেয় নিজস্ব মৈথুন সুরে
পূর্বপরদীর্ঘ বহু দীর্ঘ জন্মহীন
মহাবিশ্ব গাত্রে
যীশুসংহত মরুনদী মায়ায় ঋণী
সন্ধ্যার নদীতীরে অবিরল বিষাদ বাজে
নিষাদের দেহ হলুদ গোধূলি গন্ধে ডাকে
জল তিতিরের মুখোমুখি হীম অতল ছুঁয়ে
মরু নদী চলে যীশুসংহত ছায়ার পাশে
সেখানে তোমার রাতের শরীরে নিহত নদী
বহু অতীতের রূপকথা মেখে মায়ায় ঋণী
চরাচর জুড়ে আমাদের ডাকে অন্ধগুণিন
খ্রীষ্টের পোশাক
মায়ামাখা নদীজলে গোধূলির সূর্য
টুপ টুপ ঝরে
দ্বাদশীর চাঁদ ডুবে যায়
ধ্বংসের ওপারে
দুঃখী বাউলের পায়ে সন্ধ্যার আকাশ নেমে আসে
হিরন্য গর্ভের প্রথম আকাশ ভেঙে
পৃথিবীতে প্রাণ আসে অশরীরী বেদনার কোলে
খ্রীষ্টের ধৈর্য্যের
পোশাক একাকী রক্তমাখা
ভাঙাচোরা পৃথিবীর নষ্ট
শেষ সীমা ছুঁয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে
ওপারে ধ্বংসের দেশের দুয়ার এঁটে
সমাপ্তি বিহীন
আমার পথের
সেই অভিমুখে বিন্দু বিন্দু সূর্যফুল ফুটে আছে
আরো কিছু পরে
দ্বাদশীর চাঁদ
নিজস্ব অস্তিত্বে
জন্মের পরাগ ছড়াবে মায়াবী রাতে
***********************************
সৌমেন চট্টোপাধ্যায়
জন্ম ২২ নভেম্বর ১৯৭৭ পুরুলিয়া জেলার Madhutati গ্রামে। পেশায় মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার সৌমেন পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করলেও সাহিত্যের প্রতি ঐকান্তিক টান অনুভব করেন।বিভিন্ন সাময়িকপত্রে এবং ওয়েবজিনে নিয়মিত লিখে থাকেন । তাঁর একটি জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ -- বিস্মৃত যুগের শব্দ ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন