কবি উদয় ভানু চক্রবর্তী-র দুটি কবিতা
কোজাগরী
বড় এনামেলের থালায় বাড়া রয়েছে ভাত
যেন সুগন্ধি বসন্তবিলাসী চাল- ধোয়া উড়ছে।
গরম ডাল সাজিয়ে দিয়েছে ফুলমনির মা পঞ্চ ব্যঞ্জনের মতো -
জোছনায় পূর্ণ সমস্ত ঘর।
উলুধ্বনিতে সেজে উঠেছে নীল অন্ধকার, বাতাসে সুখের স্পর্শ-
খন্ড খন্ড মেঘের দল রূপকথার ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে।
আহা স্বপ্ন স্বপ্ন স্বর্গীয়তা, আজ একদিন সমস্ত ক্ষুধা, দুঃখ, ব্যথারা
দূরে দিগন্তের ওপারে হারিয়ে যাচ্ছে।
মা ডেকে বললেন "আয় মা ঘরে এসে খেতে বোস"।
পাশের বাড়ীর মেয়েটা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো-
"বাবা বাবা ওই দেখ ফুলমনি"।
অনন্ত আকাশে তখন কালপুরুষ মুছে দিয়ে নক্ষত্ররা সাজিয়ে তুলেছে
পদ্মাসনা মহালক্ষীর অপরূপ মুর্তি, অবিকল যেন কুড়ুনি মেয়ে
ফুলমনির মুখটি আঁকা।
মাথার পেছনে ঝলমল করছে মায়ের বাড়া সেই ডাল ভাতের
থালার মতো কোজাগরী চাঁদ, পিঠের ঝোলায় চকচক করছে
আজ কুড়িয়ে পাওয়া যত কাগজের টুকরো, ভাঙ্গা শিশি বোতল,
পায়ের কাছে বসে রয়েছে পেঁচাটা পৃথিবীর সবটুকু প্রশান্তি নিয়ে!
"..এসো মা লক্ষী বসো ঘরে-
আমার এ ঘরে থাকো আলো করে..." !!
জলছবি
প্রতিবাদ একদিন বিপ্লবের ভাষা হয়ে ওঠে,
ভালবাসা জুঁইয়ের মত ফুটে থাকে ব্যালকনিতে- বিভোর স্মৃতিময়,
কিছু স্তব্ধতা নিঃশব্দ কোলাহলে কুরে কুরে খায়
একাকীত্বের ফাঁক ফোকোরগুলো!
বিষাদ হঠাৎ স্বরলিপি হয়ে যায়-
সম্পর্কগুলো অজস্র ভ্রান্তি বিলাসে চুর চুর হওয়া হেমন্তের ম্লান রাত যেন-
কত অপেক্ষা হ্যাং হওয়া মোবাইলের মত, এত কথা বুকে,
অথচ সব অর্থহীন-
ধূলো থেকে ধূলোয় ফেরা জীবনের গল্প!
আর কবিতা?
টুকরো অনুভূতিগুলোর পাশে অনাদরে পড়ে থাকা
ছোটোবেলার ড্রয়িং খাতাটা যেন-
দুঃখরা সেখানে ভীষণ প্রিয় জলছবি !!!
*********************************************
সুন্দর প্রকাশ কবির
উত্তরমুছুনঅশেষ ধন্যবাদ
উত্তরমুছুন