কবি ইলা ঢালী-র দুটি কবিতা
সেই মেয়েটা
সন্ধ্যার পর বাসে করে বাড়ি ফেরার অপরাধে যে মেয়েটাকে
মহাসড়কে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিলো,
আজ তার ২ বছর...
যে প্রেমিক পুরুষ সেদিন তাঁর খোঁপায় ফুল গুজে চোখের জলে
তাঁকে শেষ বিদায় জানিয়েছিলো,
আজ সে ব্যস্ত নতুন মনে বসন্ত রাঙানো কবিতা লেখায়,
যে বাবা মা তারজন্য সেদিন কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়েছিলো,
আজ তারাও মানিয়ে নিতে জানে।
যে গণমাধ্যমের ক্যামেরা আর সাউন্ডে সারাদেশে সেদিন উঠেছিলো
মেয়েটার নিথর দেহ আর গগনবিদারী চিৎকার...
সে গণমাধ্যম আজ রাজনীতিবিদদের সম্বর্ধনা প্রদানের ভিডিওচিত্র
ধারনে ব্যস্ত।
যে সাধারণ মানুষ সেদিন প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিলো কন্ঠে,
আজ তারাও জীবীকার সন্ধানে ব্যস্ত সময় পার করছে,
যে বান্ধবীটি তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ছিলো,
আজ সেও সদ্য বিয়ে করে স্বামীর ঘরে ভীষণ ব্যস্ত সকলের মন
জোগাতে।
২ বছর আগে যে প্রতিবাদী জনসড়ক ছিলো ভীষণ উত্তাল,
আজ সেখানে বিরাজ করছে প্রতিবাদহীন নিরব এক যানজট।
আসলে
পৃথিবীটা এমনই,
সময়ের সাথে সাথে সব রং,সব সম্পর্ক,
সব স্মৃতি ও ফিকে হয়ে যায়।
আলগা হয়ে যায় আজন্মের অটুট বন্ধন।
নক্ষত্র ঝরা শরৎ
এই তো সেদিন,
হেমন্তের বিষন্ন গোধূলীর পথ ধরে চলে গেলো
আরো একটি নক্ষত্র ঝরা শরৎ।
আরো কতো শরৎ যাবে বয়ে,
আরো কতো দিন যাবে মুছে,
নিভে যাবে আরো কতো জ্বলন্ত প্রদীপ....
শূন্য গগনতলে পৌষ রাত্রির কুহেলীর মতোই ঝরে যাবে
আরো কত-শত নক্ষত্ররাজি,
কত শিউলী ঝরা প্রভাত হারাবে কুয়াশার সাদা কাফনে,
কত নদী হবে চৌচির,
দূর্বাদল হবে উধাও চির সবুজ প্রান্তর থেকে।
কত-শত পাখি হারাবে আপন নীড়,
কত পাখি নতুন করে বাঁধবে নতুন ঘর,
চিরসবুজ প্রান্তর ঢাকবে কঠিন কংক্রিটে,
জীবনের সরষ যত ফুরাবে কালের বিবর্তনে,
রুক্ষতায় আচ্ছন্ন হবে জীবনের বারো মাস...
প্রতিটা ক্ষণ,প্রতিটা প্রহর।।
শুকাবে তোমার নামে গাঁথা কত মালা,
ঝরিবে কুসুম বনে,
কত-শত ইতিহাস ঢেকে যাবে,
নতুন কোনো বিরহী ইতিহাসের ভীড়ে।
তবুও,
তবুও জানি প্রিয়,
তুমি আসবেনাকো আর,
নক্ষত্রের তরে,
আমার এ বৃথা প্রতীক্ষা, হবে না কভু অবসান।।
********************************************************
শুভ কামনা তোমার জন্য
উত্তরমুছুন