লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল / তিনটি কবিতা
মেঘ শূন্য সক্রেটিস
কিছু পঙক্তি রেখে দিই বিশ্বাস রাখা নক্ষত্র ও বৃক্ষদের কাছে , গহীন আলোর দিকে কচুরিপানায় ভেসে যায় একটি অকারণ গদ্যের খসড়া – একতারা হাতে পেরিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর, দূরেও মেঘ শূন্য সক্রেটিস তখন হাত থেকে হাতে চালান করে দিচ্ছে প্রমার পাত্র – অন্ধত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নাকি ; রাস্তাটি নিশ্বাস ছাড়ে নিরন্তর আত্মসমর্পণ আর পরাবাস্তব ফাঙ্গাসে
যাও তবে অরুণোদয়ের আরম্ভে আবার , কোমর জলে এবার দাঁড়াবো আমি , চারুশিল্পের কণাগুলি পানকরি মৃদুতার শোক-আবেগে ; ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে অনবদ্য সব মিউজিক কম্পোজিশন – মিশতে থাকে নিজেকে উজাড় করে কাঁদবার পরাস্ত ভূভাগ
স্বরবর্ণময় মধ্যরাত্রিরা সন্ধিযোগের পেছনে লং সট পায়ের শব্দে ঢুকে যায় সোহিনীতে
আহত শব্দের এপাড়া ওপাড়া
কিন্তু এখানে খাঁ খাঁ বাতাস বয়ে যায় ফাটলের মধ্যে দিয়ে, মিশে যায় সাইকোলজির জলীয় নিশ্বাসের অস্থির নিম্নচাপ ; প্রতি মর্মরে আহত শব্দের এপাড়া ওপাড়ায় ঝরে বাঁশির পরাগ , খিদে থেকে পৃথক হয় খড়মাটির প্রলেপ ; অন্ধ রঙে একটাও চাঁদ লেখা হয়নি – ডাটা ট্রান্সপারে স্মৃতি ভাঙার সাথে সাথে কেঁদে ফেলেছি একাএকা ; নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্রে আঙুল ছোঁয়াতেই ডানাদার একটা শূন্য নিয়ে অমলধবল সীমানায় চৌচির মনীষা
চরাচরে তামাদি পাতার সাথে বৃত্তাকারে ঘুরছে শনিগ্রহ , এই বুঝি সমস্ত চিহ্নের মুহূর্ত ভাবনার স্বরগ্রাম – থাকব কি থাকবনা'র অন্ধকার আজ অহংকার নিয়ে ফরেনসিক রিপোর্টে – কত বাঁক কত প্রবাহ – জল আর কোনো রঙেরই রইল না
দৃশ্যত , এই প্রখর প্রতিধ্বনিতেও দু-একটা ফুল কাঁপছে ; প্রজাপতিও
চোখ বুজে নয়ন খুঁজতে থাকি
একরাশ ধোঁয়ায় দম আটকে যেতেই আমি চোখ বুজে নয়ন খুঁজতে থাকি, কালো কালো রাস্তায় ছড়িয়ে আছে আসক্তির ওভারলোডেড ট্রাক ; পারদ লাগানো কাচের ভিতর ভাঙা পাঁজর জমতে জমতে ক্রমশ গহীন ক্ষতময় আলো , মদ্যপ চালকের কোমরে কোনো চিন চিন ব্যথা নেই – উঠোন ভর্তি ঘাসে পূর্ণতম চাঁদের সমর্পণে উঠে আসছে নাভিশ্বাস আর পিপাসা – দশদিকে কাক ডাকে প্রাণহীন প্রাণহীন
স্যাঁতসেঁতে কথকতায় শব্দহীন সাপ ধেয়ে আসে – নাভির নিচে ফিনকি দিয়ে ওঠে হাঁটার যাবতীয় কৌশল ,স্মৃতি নিঙড়ানো ক্লোরোফিল সনেটের মতো জমাট ও শীতল — খোলামেলা কিছু ফলিত ভূগোলের অবয়বগত অভিমান
সেই আমি, অলিন্দে ডাক আসে – জোনাকির উপচ্ছায়ায় ঘুরতে ঘুরতে এবার যেতে হবে দিগন্তরেখা থেকে দূরে
**********************************************************************************************
আত্মপরিচয় দিতে গিয়ে লক্ষীকান্ত লিখছেন :পাড়াগাঁয়ের রাস্তায় চলতে চলতে কখনো কেঁচো মাড়িয়ে যাই । পায়ের দু'পাশে আজানা ঘাসের অধিকার গুলিতে তখন শ্বাসকষ্ট । তবুও দুলে ওঠে সবুজ , হেঁটে চলেছেন আমার দাদু ঠাকুমা - সেই সব বৃক্ষের ছায়ায় বিস্তারিত কবিতা । সে দিকে তাকাই আর রোদ মাখতে থাকে চোখ । তুলে নিই বিন্দু বিন্দু আলোর কথা । আলোকিত হই নিজে নিজেই ....। কবিতার বইগুলি- হঠাৎ হঠাৎই - ১৯৯৮ মানুষের নদী - ২০০০ খরানদীর বৃষ্টি সম্ভব - ২০১০ সজনেফুল ও নিঃশর্ত সমর্পণ - ২০১১ আঁধারের পাঁজর - ২০১২ কালো নৌকার তৃষ্ণা - ২০১৩ তিলক জন্মের ছায়া - ২০১৫ হরিত প্রাণের কম্পাঙ্ক - ২০১৮ জাম রঙের পুরুষ - ২০১৯ মনস্কাম ছুঁয়ে দেখো – ২০২১ নিঃসঙ্গ নাভিচন্দন – ২০২২



কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন