বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

সুজয় যশ



সুজয় যশ / দু'টি কবিতা

আমাদের মাটির বাড়ি 


আমাদের ভেতরে একটা করে মাটির বাড়ি থাকে । পিওন আসে দুপুরে চিঠি নিয়ে । আমাদের পুরনো দরজায় শেকল নাড়ায় । খড়ের চালের ফাঁকে বাসা করে থাকা চড়ুইপাখি টা চমকে ওঠে পিওনের ডাকে । আমরা দরজা খুলতে দেরি করলে, পিওন আবার কড়া নাড়ে । আমাদের স্মৃতিগুলো দরজা খোলে । 

কার চিঠি ? কার চিঠি ?

পিওন দাড়িয়ে থাকে না, চলে যায় । দোরগোড়ায় পরে থাকে থরে থরে সাজানো চিঠি । যারা চলে গেছে তারাও লিখেছে চিঠি । পুরনো আমগাছের চিঠি । তালপাতার পাখায় লেখা চিঠি । নতুন ইচ্ছেদের রঙ বেরঙের খামে ভরা চিঠি । পুরনো ক্ষতগুলোর চিঠিগুলো শুকনো রক্তের মতো জমাট বেঁধে গেছে একটা আর একটার সাথে । আমরা উঁকি মারি পাশের বাড়ির দরজায় । খড়ের চাল থেকে ধোঁয়া ওঠে ওদের , বৃষ্টি থামার পর রোদ উঠলে যেমন হয়, ঠিক তেমন । ফিঙে উড়ে এসে পোকা বেছে খায় ।

আমরা কপাট বন্ধ করি, বড় কাঠের খিল টা লাগিয়ে ফিরে আসি আমাদের মাটির ঘরে । এত বড় বাড়ি অথচ বড় অগোছালো । অর্ধেক খড় পচে গেছে তবু নতুন করে ছাইতে মন চায় না যেন আমাদের । জায়গায় জায়গায় ফুটো চাল , জল পড়ে , মাটির মেঝে কাদা কাদা হয় । কেন্নো ঘুরে বেড়ায় দেওয়াল জুড়ে, পাটাতন জুড়ে, মেঝে জুড়ে ।

আমাদের অযত্নে, একদিন আমাদের ভেতরে সাজানো মাটির বাড়ি টা গলতে গলতে - ভাঙতে ভাঙতে ধ্বংসস্তূপ হয়ে , পড়ে থাকে কিছু কেন্নো, ধেড়ে ইঁদুর আর বাস্তু সাপের ভিটে হয়ে । আমরা শাবল চালিয়ে , সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেরিয়ে পালাই সেই মাটির বাড়ি থেকে । সদর দরজা, বাঁশের পাটাতন , কড়ি বর্গা, কাঁড়ি কাঠ -- চাপা পড়ে যায় আমাদের ধসে পরা মাটির দেওয়ালে ।

এরপর আর পিওন আসে না , চড়ুই পাখি বাসা করে না , ফিঙে পাখিরাও আসে না । ভাঙা দেওয়াল , গলে পড়া মাটির উঠুন আর কড়ি বর্গার ভাঙাচোরা থেকে মুখ উঁচিয়ে থাকে ভাঙাচোরা তালপাখার ডাঁট । আমরা স্মৃতি হিসাবে রেখে দিই ঐক্যবদ্ধ পুঁটুলি ভাঙা বাড়ির মাটি , গলার মাদুলি করে ।

আমাদের সবার ভেতরে একটা মাটির বাড়ি থাকে । শুধু একটা সময় পর হারিয়ে ফেলি মালিকানা স্বত্বা । তখন বড় খাঁ খাঁ করে নিজের ভেতর নিজের ভাঙা বাড়ির ভাঙা মাটির দেওয়াল ।












ইনসমনিয়া

আমরা কখনো কখনো নিশাচর হয়ে উঠি ।

আলো বিমুখ । অন্ধকারে নিমজ্জিত এক

মানুষ । খুঁজি কোনো এক অন্য মানুষ ।

আমরা কখনো কখনো নিশ্চল নিদ্রাহীন ,

নির্বাক চিত্রদের পাথর চোখে দেখি অবিচল ।

কখনো কোনো পুরনো ছোঁয়া , পুরনো গন্ধ ,

সারা রাত আমাদের মাথার পাশে ,

আমাদের মানুষ গন্ধ মাখা বিছানায় এসে বসে ।


অনিদ্রায় ভর করে আমরা মানুষ খুঁজে চলি

যার হাতে রেখে দেওয়া যায় আমাদের প্রায়শ্চিত্ত ।


********************************************************************************************



সুজয় যশ 

জন্ম  ২৬ ডিসেম্বর ,১৯৮২ 
বর্ধমানের  হৈড়গ্রামে । একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ।
ছোটবেলায় কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা পড়ে প্রাণীত হন । কৃত্তিবাস , গির্বান , তারারা , লাবণ্য, নীলদর্পণ, মধ্যবর্তী ইত্যাদি লিটল ম্যাগাজিন ছাড়াও স্বরবর্ণ , ছায়াবৃত্ত  অনলাইন ওয়েবজিনে লিখেছেন ।মাঝে কর্ম জীবনের ব্যস্ততার জন্য সাহিত্যচর্চা বন্ধ ছিলো । আবার কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা নতুন করে ফিরে পান স্ত্রী এবংপুত্রের কাছে ।
'সাহিত্যের কাছে আজীবন ঋণ থেকে যাবে এত সুন্দর করে জীবনকে চিনতে শেখার সুযোগ দেওয়ার  জন্য '---জানাচ্ছেন সুজয় ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন