******************************************************
সম্পাদকীয়
স্বরবর্ণ * দশ * শারদীয় ১৪২৯
৮ আশ্বিন ১৪২৯ * ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
********************************************************
শরৎ মানেই খুশির হিল্লোল। মনেপ্রাণে। আকাশে-বাতাসে। মেঘ-বৃষ্টি, নিম্নচাপ যতই শাসাক,দ্রব্যমূল্য যতই চোখ রাঙাক, নাভিশ্বাস উঠুক নুন আন্তে পান্তা ফুরোনো আপামরজনের ...তবু,নিশ্চিন্তে মেঘের ফাঁক দিয়ে রোদ্দুর কী করে যেন পিছলে এসে পড়ে খড়ের গাদায়, টিনের চালে....দোল খায় নারকেল সুপারি আম জাম জামরুলগাছের ডালে ডালে। খাল বিল নদী নালা জলা জঙ্গল কাশফুল বুকে ধরে দু'হাত তুলে মাথা দোলায়। দোলা লাগে শহরেও। ' ধর্মতলার মোড়ে একফালি চাঁদ আটকে আছে ইলেকট্রিকের তারে' সেই একফালি চাঁদকে সম্পূর্ণ করার পালা চলে শারদ পার্বণের দিনগুলোতে। শহরে কী গ্রামে।
তবে, শব্দের ভেতরেই কবি লেখকের যাবতীয় সন্ধ্যারতি, পুজো পার্বণ। শব্দের ভেতরেই উদযাপন তাঁর কান্না-হাসির অনির্বাণ তিথি। তাঁর শরৎ হেমন্ত উদ্বাহু হয় তখনই, যখন শব্দে শব্দে সৃষ্টির শিখাটি জ্বলে ওঠে। কবিতা তাঁর অন্তরাত্মার এমনই এক নির্জন সংগীত। এবার আমরা শারদ "স্বরবর্ণে"একটু কান পাতি .... "..যাকে তুমি মৃত্যু / জানো, সে শুধু খন্ডযবনিকা....আত্মার আড়াল / আত্মা--- শোক ভুলে থাকা।"
------পরানসখা ব্রজবাসী লিখছেন গুচ্ছকবিতায়।
" দুগ্গা, অপু রে। কিছু-ই দেখি না তো ! না ট্রেন না কাশফুল না ছাতিম সুবাস। যেদিন রোদ্দুরের গায়ে ছায়া ছায়া বুঝতে পারি আশ্বিন মাস। বলি ত্রিনয়ন খোলো মা গো। দ্যাখো দাঁড়িয়ে আছি জলশূন্য জ্ঞানশূন্য নিরম্বু আকাট।
মারবে কী গো ! আমায় অসুর করো। এ জীবনে এখনও মেলেনি তিন বাঁও। না যদি পারো; আরো যন্ত্রণা, যন্ত্রণা দাও"
-------প্রদীপ ঘোষ / গুচ্ছ কবিতা
"....হাবুডুবু খেয়ে নোনা জলে/ সমুদ্রঘোটক হয়ে, ডলফিন, / শেষে দেখি কখন আঁচলে /লেগে আছে শীর্ণ সেফটিপিন।"
-----মেটামরফোসিস/ গৌরীশঙ্কর দে
"এত কালোতে কেন যে দাঁড়ালে / সকল রেখার ওপারে / তাঁকেই খুঁজি ..."
------দীপঙ্কর রায়/ গুচ্ছ কবিতা
এমনি আরও আরও.....
এবার চোখ ফেরানো যাক গদ্যেশিল্পের দিকে। একটু নমুনা---
'নিয়তির হরফে লেখা এক নাটকীয় অশান্তির নাম ' মির্জা গালিব'
খুব সম্ভবত ভারতের ইতিহাসে মির্জা গালিবের মতো প্রভাবশালী কবি দ্বিতীয়টি আর নেই। তিনি প্রথম এগারো বছর বয়সে কবিতা লেখা শুরু করেন। বিয়ে করেন প্রথম তেরো বছর বয়সে। তাঁর লেখা গজল, শায়েরি, রুবাইয়াতে বিহ্বল হয়েছে সদ্য প্রেমে পড়া তরুণ থেকে পরিণত পণ্ডিত পর্যন্ত।......"
'মির্জা গালিব' প্রবন্ধে প্রবন্ধকার শংকর ব্রহ্ম এমনি করেই মির্জা গালিবের অনালোচিত দিকগুলির বিশ্লেষণে প্রয়াসী হয়েছেন।
"আশির দশককে আমার ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। সময়ের চিহ্ন হিসেবে। একটা অদ্ভুত সমাপতনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল সেই সময়ের বাঙালির মনন। বৈপরীত্যের সঙ্গে আপোষ তৈরি হচ্ছিল একটা। এবং অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্রান্তিকালে। গত শতাব্দীর তো বটেই এই শতকের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ একটা ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে যখন আপোষ আর সন্দেহের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তার অবচেতনের একটা রেখাচিত্র এঁকে দেয় সেই দশকের বাংলা কবিতা। ......"
'আশি এবং অন্তর্বর্তী পাঠ' কবিতা বিষয়ক গদ্যে আশির দশকের অন্যতম দুই গুরুত্বপূর্ণ কবি বিজয় সিংহ এবং অরুণাংশু ভট্টাচার্যের দুটি গ্রন্থের আলোচনা প্রসঙ্গে এভাবেই এগিয়েছে আলোচক সব্যসাচী মজুমদারের ভাষাশিল্প।
'ফারসি কবিতার তিন নারী' অনুবাদ কবিতায় রুপায়ণ ঘোষ-এর অনবদ্য অনুবাদকর্মে আমরা পড়ব জমিলা ইস্ফাহনি , নূরজাহান (শাজাহান পত্নী) এবং যিব-অল-নিসা-মখফি-র অসাধারণ সব কবিতা।
'' নীরেন্দ্রনাথ এর কবিতা পড়তে পড়তে শিখেছি, মানুষ যখন স্বীয় সীমাকে নি:সীম ভাবে অতিক্রম করে যায় তখনই জন্ম হয় সার্থক কবিতার' .....'প্রসঙ্গ: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও আমাদের সমকাল'' গদ্যে পারমিতা ভৌমিক কেন এমন উপলব্ধিতে পৌঁছলেন, তা জানতে আপনাকে আদ্যোপান্ত গদ্যটি পড়তেই হবে।
সম্প্রতি না-ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন কিংবদন্তী চলচ্চিত্র পরিচালক জাঁ লুক গোদার। 'স্মরণ' বিভাগে তাঁকে নিয়ে অনবদ্য স্মৃতিচারণ করলেন প্রথিতযশা লেখক কিন্নর রায়। এ বছরই জন্মশতবর্ষের সূচনা হল আর এক নাট্য ও সিনেমা ব্যক্তিত্ব উৎপলজায়া শোভা সেনের। জন্মশতবর্ষের শুরুতে 'বিপ্লবের বাঁশি' রচনায় তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানালেন স্বনামধন্য লেখক সম্রাট মুখোপাধ্যায়।
সত্তর অধিক কবিতা গল্প অণুগল্প দু'টি ধারাবাহিক উপন্যাস-সহ বহুতর রচনায় সমৃদ্ধ হয়ে শারদীয় স্বরবর্ণ আজ মহালয়ার পুণ্য লগ্নে প্রকাশিত হল। এই আয়োজন পাঠকদের ভালো লাগলে আমাদের সুদীর্ঘ পরিশ্রম সার্থক হবে।
দুয়ারে শারদোৎসব। উৎসবমুখর হয়ে উঠুক সকলের আগামী দিনগুলি ...
****************************************************************************************************

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন