শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

তোমায় খুঁজে ফিরি



অমৃতস্য পুত্রাঃ -স্বামী বীরেশ্বরানন্দ

স্মৃতিকথা 

স্বামী সত্যরূপানন্দ

১)

পূজ্যপাদ স্বামী বীরেশ্বরানন্দজী মহারাজের কাছে আমি সন্ন্যাসদীক্ষা লাভ করেছিলাম। তাঁকে সম্ভবত প্রথম দর্শন করি ১৯৬৩-তে। প্রথম দর্শনেই আমি তাঁর মাতৃবৎ স্নেহ অনুভব করেছিলাম। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৫ মার্চ পর্যন্ত আমার বেলুড়মঠে বাস করার সৌভাগ্য হয়। পূজ্যপাদ মহারাজের মহাসমাধি হয় মার্চ মাসে। অতএব জুন ১৯৭৬ থেকে মার্চ ১৯৮৫ পর্যন্ত প্রায় নয় বছর তাঁর পবিত্র সান্নিধ্যলাভের সৌভাগ্য আমার হয়েছিল।

     আমি কখনও তাঁর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা অন্যান্য ঘটনা লিখে রাখেনি। তাই এই দীর্ঘ সময়ের যে সামান্য কয়েকটি পূত ও প্রেরণাদায়ক ঘটনা আমার স্মরণে আছে, সেইগুলো লিখবার চেষ্টা করছি। এই ঘটনাগুলির সময় এবং স্থান ক্রমানুসারে সাজানো সম্ভব নয়। তবুও পূজ্যপাদ প্রভু মহারাজের পবিত্র জীবনের অনুচিন্তন আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রেরণাপ্রদ ও চিত্তশুদ্ধিকারক -এই ভেবেই ভক্তদের সেবায় আমি এই শব্দাঞ্জলি অর্পণ করছি।

     কর্মযোগের রহস্য : ঘটনাটি সম্ভবত ১৯৭০-৭১ সালের। (সেইসময় প্রবীণ সন্ন্যাসী থেকে নবীন ব্রহ্মচারী পর্যন্ত সকলেই পূজ্যপাদ বীরেশ্বরানন্দজীকে 'প্রভু মহারাজ' বলতেন)। প্রভু মহারাজ মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়ারে দীক্ষা দেবার জন্য পদার্পণ করেছেন। গোয়ালিয়রে 'রামকৃষ্ণ আশ্রম' নামে একটি প্রাইভেট আশ্রম রয়েছে। সেই সময়ে মধ্যপ্রদেশের শুধু রায়পুরেই রামকৃষ্ণ মিশনের শাখাকেন্দ্র ছিল। যেহেতু গোয়ালিয়ার মধ্যপ্রদেশে, অতএব রায়পুর আশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী আত্মানন্দজী এবং আমি প্রভু মহারাজের সেবার জন্য গোয়ালিয়ারে গিয়েছি। বেলুড় মঠের তুলনায় গোয়ালিয়ারে আমরা সকলে মহারাজের কাছে বেশিক্ষণ বসতে পারতাম। তাঁর বিশ্রামের পর আমরা সব সাধু-ব্রহ্মচারী বসে যেতাম ও তাঁর সঙ্গে নানারকম আধ্যাত্বিক প্রসঙ্গ করতাম। এই প্রসঙ্গেই একদিন আমি তাঁকে বললাম, 'মহারাজ, আমরা সকলে তো মিশনের সাধু-ব্রহ্মচারী। আমরা নিঃস্বার্থভাবে কর্ম করি। অতএব আমাদের সব কর্মই আপনা-আপনি যোগে পরিণত হয়। এখন আমাদের আর অন্য কোন সাধনার প্রয়োজন নেই। স্বামীজীও বলেছেন যে, নিঃস্বার্থ কর্মের দ্বারাই তোমরা মুক্ত হয়ে যাবে। মহারাজ দৃঢ়ভাবে বললেন, 'না।' আমি বললাম, 'স্বামীজী তো বলেছেন কর্মযোগের দ্বারাই মুক্তি হবে।' তখন প্রভু মহারাজ বললেন, 'জান, কর্মযোগের লক্ষণ কি? তারপর তিনি নিজেই উত্তর দিলেন  'Conscious and constant remembrance of God while working' -অর্থাৎ কর্মের সময় সতত ও সজাগ ভাবে ঈশ্বরকে স্মরণ, এটাই কর্মযোগের লক্ষণ। মহারাজের এই উপদেশটি আমাদের জীবনের আলোকস্তম্ভ স্বরূপ।

     নিস্পৃহতা ও লোকশিক্ষা : এক অ্যামেরিকান যুবক-ভক্ত নিজের দেশে পুরানো মোটর গাড়ি কেনা-বেচার ব্যবসা করত। এক-দেড় বছর পর পর সে এসে বেলুড়মঠে কিছুদিন থাকত। একবার সে একটি দামী বড় গাড়ি কিনে জাহাজে করে ভারতে আনিয়ে বেলুড়মঠে নিয়ে এসে মহারাজকে উপহার দিল। কিন্তু মহারাজ সেই গাড়ি ব্যবহার করতেন না। অনেক কষ্টে তাঁকে সেই গাড়িতে বেলুড় মঠেই দু-চারবার ঘোরানো হয়েছিল। অন্য কয়েকজন প্রবীণ সাধু কখন কখনও বেলুড় মঠ থেকে কলকাতা যাওয়ার সময় গাড়িটি ব্যবহার করতেন।  

     একবার মহারাজকে সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য বেলুড় মঠ থেকে ১০/১২ কিলোমিটার দূরে রামকৃষ্ণ মিশনের সেবাপ্রতিষ্ঠান হাসপাতলে যেতে হবে। কয়েকজন প্রবীণ সন্ন্যাসী অনুরোধ করলেন মহারাজ যেন আমেরিকান গাড়িটাতেই হাসপাতালে যান। মহারাজ তাদের মন রাখতে রাজি হয়ে সেই গাড়িতেই রওনা হলেন। এদিকে, মহারাজের গাড়ি প্রায় সেবাপ্রতিষ্ঠানের কাছে পৌঁছে গেছে। এক জায়গায় অনেক গাড়ি যানজটে দাঁড়িয়ে আছে। সেখান থেকে বেরিয়ে হাসপাতলে পৌঁছাতে সামান্য সময় লাগল। এরমধ্যে সেখানে দাঁড়ানো কয়েকটি ফুর্তিবাজ যুবক ব্যঙ্গ করে বলল, 'রামকৃষ্ণ মিশনের সাধুরা তো রাজা, দেখছিস না -কেমন লাখ-লাখ টাকার দামী গাড়িতে চড়ে মজায় বেড়াচ্ছে।' ঠাট্টাচ্ছলে বলা কথাগুলি মহারাজ শুনলেন, মহারাজের সেবকরাও শুনলেন।


     যে-সাধু সম্পত্তি দেখাশোনা ইত্যাদির কাজ দেখতেন তাঁকে ডেকে পূজ্যপাদ মহারাজ কয়েকদিন পরেই বললেন 'তাড়াতাড়ি এই আমেরিকান গাড়িটি বিক্রি করে দাও।' মহারাজের আদেশ শুনে কয়েকজন প্রবীণ সন্ন্যাসী আক্ষেপ করে বলতে লাগলেন যে, বৃদ্ধাবস্থায় মহারাজের সুবিধার জন্য এই গাড়িটি দিয়েছে, তাকে কেন বিক্রি করা হবে? কিন্তু কার এতো সাহস যে, মহারাজকে এই কথা বলে? কয়েকদিন গাড়ি বিক্রির কোন প্রসঙ্গ হলো না। মহারাজ সেই সাধুটিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, 'গাড়ি বিক্রির কি হলো?' সে বেচারী ঘাবড়ে গিয়ে বলল যে, কয়েকজন প্রবীনদের ইচ্ছা যে উচিত দাম পেলে তবেই গাড়িটি বেঁচা উচিত। এ কথা শুনে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হয়ে আদেশ দিলেন যে, যা দাম পাওয়া যাচ্ছে তাতেই গাড়িটিকে তখনই বিক্রি করে দিতে।

     বালীর এক ধনী ব্যক্তি, যাঁর বাড়িকে লোকে জাহাজবাড়ি বলত, জানতে পারলেন যে বেলুড় মঠ একটি বিদেশী গাড়ি বিক্রি করতে চাইছেন। তাঁর এক সাধুর সঙ্গে পরিচয় ছিল। তিনি বললেন, 'আমি এক লাখ টাকায় গাড়িটি কিনতে রাজি আছি।' পূজনীয় মহারাজকে বলা হল। মহারাজ বললেন, 'এক্ষুনি বিক্রি করে দাও।' গাড়িটি এক লাখ টাকায় তখনই বিক্রি করে দেওয়া হল। এমনই ছিল মহারাজের নিস্পৃহতা আর আমাদের সাধুদের জন্য তাঁর শিক্ষা।

     কৃপা-বৃষ্টি : সম্ভবত ১৯৮২ বা ৮৩ সালের ঘটনা। চণ্ডীগড় রামকৃষ্ণ মিশনে আমাকে বক্তৃতা দিতে ডাকা হয়েছিল। সেখানে অমৃতসর থেকে কয়েকজন বক্তৃতা শুনতে এসেছিলেন তাঁরা সকলেই পূজ্যপাদ বীরেশ্বরানন্দজী মহারাজের শিষ্য। তাঁদের মধ্যে একজন আমাকে এই ঘটনাটি বলেছিলেন। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই মহারাজের মন্ত্রশিষ্য ছিলেন। দীক্ষার সময় হয়তো স্ত্রীর মন ততটা সমনস্ক ছিল না। তাই তিনি মন্ত্রের ঠিক ঠিক উচ্চারণ শুনতে পাননি। অমৃতসরের বাড়িতে ফিরে স্বামী স্ত্রী আলাদা আলাদা ভাবে জপ করতেন। স্ত্রী কিন্তু কিছু বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি তাঁর স্বামীকে বিষয়টি জানিয়ে বলেছিলেন যে, দীক্ষার পর থেকেই তাঁর ওই অবস্থা হচ্ছে। স্বামী বললেন, 'এটা ঠিক নয়। দীক্ষার পর ঠিক ঠিক জপ করলে মনের অশান্তি দূর হয়। তুমি অন্য কোন কারণে অস্থির হচ্ছ।' স্বামীর এই জবাবে তিনি সন্তুষ্ট হলেন না আর তার অশান্তি বেড়েই চললো। 

     এই ঘটনার কিছুদিন পরে মহিলাটি লাগাতার তিনদিন ধরে স্বপ্নে দেখলেন যে, পূজনীয় মহারাজ তাঁকে বলছেন, তুমি ভুল জপ করছ। স্ত্রীর কথা শুনে তাঁর স্বামী তাঁকে বলেন, 'তুমি স্বপ্নের বৃত্তান্ত লিখে দাও চিঠিতে, আর যে মন্ত্র জপ করছো তাও লেখ। আমি পূজনীয় গুরুদেবের কাছে পাঠিয়ে দেব।' মহিলাটি সেই সমস্ত লিখে দিলে তাঁর স্বামী তা পূজনীয় মহারাজের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। ডাকে মহারাজের উত্তর এল, তাতে মন্ত্র কি ভুল ছিল তা নির্দেশ করে সঠিক মন্ত্র লিখে দিয়েছিলেন। মহিলাটি অশুদ্ধ মন্ত্র আর নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। নিষ্ঠাভরে ঠিক মন্ত্র জপের অভ্যাসের ফলে অল্পদিনেই তাঁর মনের অশান্তি দূর হলো।


৩)

     ১৯৮৪-তে বিহারের সহরসা জেলায় কোশী নদীর বাঁধ এক জায়গায় ভেঙে গিয়েছিল। শত শত লোকের বাড়ি জলে ডুবে গিয়েছিল। নিরুপায় গরিব লোকেরা বাঁচার তাগিদে বাঁধের যে দুদিক অক্ষত ছিল, সেদিকে ছুটে গিয়েছিলেন। বিহার সরকার বন্যাপীড়িতদের সাহায্যের জন্য বেলুড়মঠের কাছে আবেদন করেছিলেন। বেলুড় মঠ চারজন সন্নাসী এবং পনেরো জন ব্রহ্মচারীকে ত্রাণকার্যের জন্য সেখানে পাঠিয়েছিলেন। এই ত্রাণকার্য প্রায় পাঁচ বা ছয় সপ্তাহ ধরে চলেছিল। এরমধ্যে বিহার সরকার বন্যাপীড়িত গ্রামবাসীদের বিভিন্ন জায়গায় শিবির ইত্যাদিতে রাখার ব্যবস্থা করে ফেলেছিলেন। ত্রাণের সময় রামকৃষ্ণ মিশন এবং প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় রাখতে, একজন দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রশাসনিক আধিকারিককে আমাদের সঙ্গে রাখা হয়েছিল। সেই আধিকারিক জীবনে প্রথমবার রামকৃষ্ণ মিশনের সাধু-ব্রহ্মচারীদের সংস্পর্শে এসেছিলেন।

     আমাদের সকলকে পুরানো জীর্ণ এক প্রশাসনিক ভবনে থাকার জন্য জায়গা দেওয়া হয়েছিল। সেই আধিকারিকটি ওই জরাজীর্ণ বাড়িটিতে যা কিছু মোটামুটি ভালো জিনিস ছিল, সব নিজের জন্য নিয়ে রেখেছিলেন। আমরা সাধু-ব্রহ্মচারীরা দুটো বড় ঘরে মাটিতে শুতাম। বাইরের দিকে একটা বারান্দা ছিল, সেখানে রান্না হতো, সেখানেই আমরা খেতাম। আধিকারিকটি প্রথম তিন চারদিন অন্য কোন জায়গায় খেতেন।

     সারাদিন সেবাকার্যে ব্যস্ত থেকে সন্ধ্যার সময় যখন বাসস্থানে ফিরতাম, তখন আমরা স্নান ইত্যাদি সেরে আমাদের শোবার ঘরেই বসে মিশনের আশ্রমগুলিতে যে সন্ধ্যা আরত্রিক ভজন গাওয়া হয়, সেটি গাইতাম। সেখানে আমরা একটা কাঠের উপর ঠাকুর-মা-স্বামীজীকে বসিয়ে পূজাস্থান তৈরি করে নিয়েছিলাম।

     চার-পাঁচ দিন পরে সেই আধিকারিকটি সন্ধ্যার সময় আরতি, ভজন ইত্যাদির আওয়াজ শুনে সেখানে এসে বসে পড়লেন। সম্ভবত আরত্রিকটা তাঁর পছন্দও হল। রাত্রে খাবার পর আমরা ইংরেজিতে 'গসপেল' ও স্বামীজীর কোন বই পড়তাম। সেদিন রাতে খাবার পর ওই ভদ্রলোকটি আবার আমাদের ঘরে এসে দেখলেন যে, পাঠ ইংরেজিতে হচ্ছে, আলোচনাও ইংরেজিতে। তখনও পর্যন্ত তিনি এমন সাধুদের দেখেননি যাঁরা ইংরেজিতে কথা বলেন। তিনি সাধারণত ভিক্ষাজীবী সাধুদেরই দেখেছিলেন। এইসব দেখে তিনি এত মুগ্ধ হলেন যে, আমাদের সঙ্গে থাকতে-শুতে চলে এলেন, আর খাওয়া-দাওয়াও আমাদের সঙ্গেই করতে লাগলেন। আমাদের সঙ্গে থেকে ঠাকুর মা স্বামীজী সম্বন্ধে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন। এইভাবে তিনি আমাদের সঙ্গে বেশ মিলেমিশে গেলেন। আলোচনাপ্রসঙ্গে তিনি মন্ত্রদীক্ষা ইত্যাদি বিষয়েও আমাদের কাছ থেকে শুনলেন। তার মনে দীক্ষা নেওয়ার ইচ্ছা হল। ত্রাণকার্য শেষে আমরা বেলুড়মঠে ফিরে এলাম। মঠে আমি স্বামী প্রমেয়ানন্দজীকে (রামগোপাল মহারাজকে) ওই লোকটির পূজনীয় প্রভু মহারাজের কাছে দীক্ষা নেওয়ার ইচ্ছা জানালাম। স্বামী প্রমেয়ানন্দজী বললেন, 'একবার মহারাজকে বল।' পূজনীয় মহারাজ কৃপা করে তাকে দীক্ষার অনুমতি দিলেন। লোকটি যথাসময়ে বেলুড়মঠে এসে মহারাজের কাছে দীক্ষা নেন। আমি তাকে আরও কয়েকদিন মঠে থেকে প্রতিদিন গুরুদর্শন করার জন্য অনুরোধ করলাম। কিন্তু তিনি পরে কখনও মঠে আসবেন বলে ফিরে গেলেন।

     এই দীক্ষা-অনুষ্ঠান মহারাজের শেষ দীক্ষাদান। এর পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন, আর কিছুদিন পরেই দেহরক্ষা করেন। মহারাজের দেহরক্ষার খবর অল ইন্ডিয়া রেডিওতে প্রচারিত হলো। সেই ভক্তটি তখন এক সরকারি কাজে বিহারের কোন একটা দূরবর্তী জেলায় গিয়েছিলেন। মহারাজের মহাসমাধির খবর শুনে তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হলেন। কাঁদতে কাঁদতে অনুতাপ করতে লাগলেন যে, মঠে আর কিছুদিন কেন থেকে গেলাম না! এই ভেবে তিনি সারারাত কেঁদেছিলেন। শেষে ভোর তিনটের সময় একটি চিঠি লিখে তার মনের ব্যথা আমাকে জানান। আমি সেই চিঠি পেয়ে দুঃখিত হলাম, ভাবলাম তাকে সান্ত্বনা দিয়ে চিঠি লিখি। কিন্তু ব্যস্ততার জন্য সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিতে পারলাম না। এর এক সপ্তাহের মধ্যে আমি সেই ভক্তটির দ্বিতীয় চিঠি পেলাম। তার বক্তব্যের সারাংশ ছিল, 'সন্তোষ মহারাজ, সেই রাত্রে মহারাজের মহাসমাধির খবর যেদিন শুনেছিলেন, আমি মনের কষ্ট জানিয়ে আপনাকে চিঠি লিখেছিলাম। সেই চিঠি হয়তো পেয়ে থাকবেন। আপনাকে চিঠি লেখার পর কাঁদতে কাঁদতে ভোর প্রায় চারটার সময় আমার আবার ঘুম আসলো। জানিনা কতক্ষণ ঘুমিয়েছিলাম। এই সময়ে আমি এক দিব্যস্বপ্ন দেখলাম। দেখলাম, চারিদিকে এক দিব্যজ্যোতিতে ছেয়ে গেছে। পূজনীয় বীরেশ্বরানন্দজী মহারাজ সম্পূর্ণ সুস্থ ও জ্যোতির্ময় শরীরে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। কাছে এসে হাত তুলে তিনি আমাকে বললেন, 'তুমি কেন এত কাঁদছ? দীক্ষার সময়ে আমি যা বলেছি, সেই রকম কর আর মন্ত্র জপ কর। যখন দরকার হবে, তখন আমি আবার তোমাকে বলব কি করতে হবে।' মহারাজের কথা অত্যন্ত স্পষ্ট শুনতে পেলাম আর আমার ঘুম ভেঙে গেল। তখন প্রায় সাতটা বাজে। আমার মন থেকে দুঃখ বা অনুতাপ পুরোপুরি দূর হয়ে গেছে। আমার মন আনন্দে ভরপুর আর সেই আনন্দময় মনেই আপনাকে আমি এই দ্বিতীয় চিঠি লিখছি।


                             ******************************************************

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন