বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

গুচ্ছকবিতা * গৌতম কুমার গুপ্ত



কবিতাগুচ্ছ * গৌতম কুমার গুপ্ত

উৎসবের দিন 


কি ভাবে বৈশাখ কেটেছিল মনে নেই

আজ শরতের দিন

কাশফুল মাস দিনের বনানী

তবু ধানগাছে উৎসবের হিম

নতুন জামাকাপড় পার্ব্বণী মুখ

চুনকাম দেয়ালে পাড়ায় পাড়ায় 

রাস্তায় নতুন মোরামে পায়ের ভেজা ছাপ

পদ্ম শালুক জল থইথই পুকুর ভরাট

ভিজে আদুল গায়ে হেঁটে যায় গ্রামের বধূ

ভিয়েনের কড়াইয়ে গন্ধ ভেসে আসে

আনারকলি চোনা মিঠাই আরশে দুধপোয়া

নতুন ঝুড়িতে সব্জী 

আজ ভরে ওঠে উৎসবের দিন

বাংলার ঘরে ঘরে।



প্রত্যক্ষ 


কথা দিচ্ছি মুখোমুখি হবো

জানাবো মুখরতা সপ্রশংস দৃষ্টিশর

ফেরাবো না চোখ

   গেঁথে দেবো শরীরে পলক


কথার বিপরীতে

যে চরিত্র দাঁড়িয়ে আছে

উন্মোচন করো তাকে, 

অবলুপ্ত করো কৃষ্ণকালিমা

খুলে খুলে দেখে নাও অম্ল ক্ষার অথবা ক্ষারক

      মর্মন্তুদ আগুন


আয়ুজল রেখে আসো

     প্লাবনে ধুয়ে যাক তরলে

ফুঁ দিয়ে শেখো নির্বাপণ অচিরাৎ

 মৈত্রীতায় জয়ী হোক পিপাসার্ত দ্বন্দ্ব দ্বেষ

আরো বিনম্র করো অধিক প্রণয়ে 

ঠোঁট যদি চাও পুড়ে নাও এইবেলা 

       প্রত্যক্ষ গনগনে


মাছি ও ক্ষত বিদ্বেষে পরম্পরা যদি

উপশমে উড়ুক অবশিষ্ট ছাই ও কান্না:

চোখের জলে লেখা থাক লুপ্ত বহ্নিমান


ভালো হোক, খাঁটি হোক

আমার অনন্য ঐশ্বরিক প্রার্থনা








বাঁচতে চাই 

                                                         

জলসা রংয়ের ঘুমন্ত যৌবন

আজ টেরিফিক টইটম্বুর

আলপিন বোঝো মাইরি

ঐ মাতাল চাঁদের মত খোঁচা মারছে


এখন ঠারেঠোরে লকলকে দুব্বোঘাস চিবুচ্ছি

আর বুকের লোমশ বোতামে হাত বুলাচ্ছি

জিপার খুলে স্ট্র রংয়ের পেচ্ছাপ 

আমূল ভুলিয়ে দিচ্ছে সভ্যতার জ্ঞানবিকাশ


জ্বলে যাচ্ছি জ্বলে যাচ্ছি নষ্ট নীড়ে

আমাদের হাত পায়ের স্বভাব 

চারিত্রিক ধোয়া তুলসী পাতার নমঃ অঙ্গ

চুটকি মেরে ঠেসে ধরছি লাবণ্য ঠোঁটে


বারংবার কৌন্তেয় অভিসারে জিভ চেটে

ঢুকিয়ে দিচ্ছি ফুসফুসের ভেতর তামাকের আগুন

আর সারা শরীরে নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে

উদ্বাস্তু ভালবাসার জঘন্য অন্ধকার


কালবৈশাখীর মেঘের মত আকাশের দিকে

তাকিয়ে কে যেন বলেছিল

আমি বাঁচতে চাই.........    বাঁচতে চাই


আজ এই অন্ধ স্বভাবের সামনে দাঁড়িয়ে

 চিলচিৎকার ছুটে যাক আকাশে বাতাসে

আনন্দে দুঃখে বিষাদে বিস্ময়ে

আমি বাঁচতে চাই......... বাঁচতে চাই

সভ্যতার শেষ নিশ্বাঃসে

শেষবারের মতো



অবরোহ


দৃশ্যতঃ সুখী আসলে নিচু কড়াই।পোড়া মেঘ। কলমের

খুল্লতাত জ্ঞাতি। কপচানো স্বদেশের নিভু চাঁদ।


মাংসের ওপিঠে থ্যাঁতলানো চিবুকের তিল।বিশ্বসুন্দরী

নেচে নেচে ক্যাটস্ওয়াক।পাছার ওপরে চোখের অভিসারী মাছি।


দিন যায়।জ্বলে আগুন।নেভে বৃষ্টি।ঈশানকোণে তারতম্য বাতাস।ঘুম নামছে। আধারে  আঁধার।



অঙ্কন 


তোমার জন্য এঁকে রাখি

সুউচ্চ ছাদ শূণ্য উদ্যানের খেলা

ছাদের ব্যবিলনে মন্ত্রপূত নীল আকাশ

নীল সূর্য

তোমার চোখ ছুঁয়ে যায় দিগন্ত। 


বাতাসের পরিখা ঘিরে পাখিরালয়

বলাকা উড়ান

দিগ্বিদিক সবুজের পাহাড় পৌরুষ

তোমার চোখে হারায় না দিগ্বলয়।


নদীও আঁকি কিংবা জলস্রোত

পারাপারে ভেসে যায় বাউলিয়া গান

মনের ইথারে জেগে যায়

মেঘ নামক ভালবাসার বৃষ্টিকাহিনী।


এই সব অঙ্কন প্রণালী 

ইজেলের সাত রামধনু রং

সাদা ক্যানভাসে আমার সযত্ন 

তুলি পরিক্রমা।


তোমার ওষ্ঠরেখায় এঁকে রাখি

আমার ভালবাসা, চুম্বন ললিত কলা।


****************************************************************************************************




গৌতম কুমার গুপ্ত

কবির জন্ম  ১৩৬৭ বঙ্গাব্দে বাঁকুড়া জেলার শালতোড়া থানার গোপালনগর গ্রামে।বর্তমানে পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের বাসিন্দা।প্রথম জীবনে সাংবাদিকতা পরে ই সি এলে কেন্দা এরিয়া বিভাগের কর্মী ছিলেন।২০১৯ সালে চাকুরিজীবন থেকে অবসর গ্রহন করেন।শিক্ষাগত যোগ্যতা বিজ্ঞান এবং কলা বিভাগে স্নাতক।পরে পার্সোনাল ম্য্যানেজমেন্ট ইনডাসট্রিয়াল রিলেশনে স্নাতকোত্তর পাশ করেন।আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে লেখালেখি শুরু।'কালকেতু' নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তো বটেই ওয়েব ম্যাগাজিনেও গল্প কবিতা প্রবন্ধ লিখে থাকেন।এ পর্যন্ত তাঁর চারটি কাব্যগ্রন্থ  " সময়ের এই জলসাঘরে,'স্বভাবের সিলেবাস','অক্ষর ভাইরাস' এবং 'বিষুবরেখার পাখি' প্রকাশিত হয়েছে।কয়েকটি নাটকও লিখেছেন। ইতিমধ্যে "কয়লাক্ষেত্র "এবং কৃষ্ণগহ্বর নামে দুটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে।।শীঘ্র একটি কাব্যগ্রন্থ 'যদি হৃদয়ের কথা বলো'প্রকাশিত হতে চলেছে।

.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন