চিরন্তন জানা / দু'টি কবিতা
হারানো সুর
তোমার এই মাঝে মাঝে স্পষ্ট হয়ে ওঠা
অনর্গল কথা বলে চলা
মুহুর্মুহু খোঁজ নিতে থাকা
তারপর হঠাৎ একদিন
বিস্মৃতির পথে হেঁটে যাওয়া
রাত্রির গাছেদের মত চুপ করে যাওয়া
এই বৈপরীত্য দেখলে মনে হয়
মা হারমোনিয়ামে
আশাবরী রাগের আরোহন এবং অবরোহন
আলাপ অনুশীলন করে চলেছে...
বাইরে বৃষ্টি। বৃষ্টিধ্বনির মধ্যে দিয়ে ভেসে আসছে
তোমার নিভু আলোয় ভেজা মুখশ্রী— গায়ে জলের অলংকার।
এই পঙক্তিগুলির উপর দিয়ে
ধেয়ে চলেছে উজান মাছের দল— জলের বিপরীতে—
এক পুষ্করিণী থেকে অপর পুষ্করিণীতে
চলে যাওয়ার মাঝে তারা জানে না
সাক্ষাৎ হবে মৃত্যুর সাথে— মৃত্যুর সন্তানের মত
মানুষ ছাতা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়
মায়ের হারমোনিয়াম থেকে ভেসে আসছে
মেঘমল্লার— সেই সুরের সাথে বেড়ে চলেছে বৃষ্টি
বৃষ্টির ভেতর তৈরী হচ্ছে তোমার
আত্মার নৈসর্গিক দৃশ্য— সেই ঝাপসা আলোয়
আমি জানি তুমি আমার এই লেখাটির দিকে
ক্রমাগত ছুটে চলেছ— ছুটেই চলেছ—
তোমার দীর্ঘশ্বাস এসে পড়ছে
এই লেখাটির শেষ চরণে।
তাই লেখাটি স্তব্ধ হল।
বিষাদবৃষ্টি
কোনো একটি নক্ষত্রনির্ঝরে ভেসে যাচ্ছে
অপরাহ্নের মেঘ— অনুতপ্ত বারিধারা
এমন চিন্তিত মুখে
তাকিয়ে আছ পৃথিবীর
নগ্ন স্নানদৃশ্যের দিকে— যেন
তার অবগাহনের সমস্ত কাল ধরে
তোমার উপর বিষাদবৃষ্টি হয়ে চলল
কেউ তা দেখল না।
কেউ তা দেখতে পেল না।
সকলই হয়ে গেল চোখের আড়ালে।
সমস্ত পুণ্য কিংবা কু-কাজ চোখের আড়ালেই
হয়ে থাকে।
কখনও মা ঠাকুরের পায়ে বেলপাতা দিতে
ঠাকুর ঘরে ঢোকে—
কখনও বা শুধুমাত্র নিশ্চিন্তে একটু কাঁদতে।
***********************************************************************************************
জন্ম ১৯৯৮ খ্রীষ্টাব্দের ১৯শে ডিসেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জগন্নাথপুর গ্রামে। বর্তমানে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র। লেখালেখির শুরু কলেজে যাওয়ার পর থেকে। মূলত কবিতা লিখতেই বেশি ভালবাসেন। সম্প্রতি ৪৫তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলাতে প্রথম কাব্যগ্রন্থ “সূর্যশিশিরে থাকলে আমাতে থেকো না” প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা ছাপা হয়।



কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন