গুচ্ছ কবিতা * শুভশ্রী রায়
কাল
শেষ ডাকছে না কী বুঝি না,
কিছু একটা অমঙ্গল অনুভব করি
আর এই সব চিন্তা ধীরে ধীরে
আমাকে ধরে ফেলে পুরোপুরি।
রক্তের চাপ প্রায়ই নেমে যায়
এখনই মরতে নেই অনিচ্ছা
তবে পোষা খরগোশদুটো'র জন্য
মায়া হয়, তাছাড়া কিছু ঋণ
শোধ করতে হবে।
খুড়তুতো দাদাকে সামনের সপ্তাহে বাকীটা
পাঠাব। চুকিয়ে দেব। মামাতো দিদির
ঋণ এ জন্মে শোধ করা যাবে না।
দুয়েক জনের সঙ্গে বিনা কারণে
খারাপ ব্যবহার করেছি, আমারই জ্বালা
বেশি, রাতে ঘুমোতে পারি না।
তাদের কাছে ক্ষমা চাইছি না যদিও
অনুতপ্ত।
যারা আমাকে কম-বেশী
ঠকিয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করিনি।
খারাপ হোক তাদের, তবে তারা
আমাকে ভাঙতে পারেনি। মানুষ
মানুষের জীবন ধ্বংস করতে পারে না।
তারাও আমাকে শেষ করতে পারেনি,
সাময়িক ধাক্কা দিয়েছে।
জীবন অফুরন্ত নয় কারুরই। সীমিত সময়েই
কেউ মাপা হাসে, কেউ চাপা হাসে, কেউ
হিসেব বহির্ভূত। এইটাই হ'ল না আমার।
সামনের বার দেখব। কে জানে মানুষ হয়ে
জন্মাব না কুকুর-বেড়াল!
মানুষ হ'লে ফের নারী জন্ম।
এইবার মাতৃত্ব চাই,
আমার সমস্ত রক্ত যেন সন্তানের জন্য
দুধ হয়ে যায়।
জাহ্নবী
দূরে দূরে নৌকো, দিগন্তে পৌঁছবে তারা
নির্মোহ জাহ্নবীই যুগ আর যুগান্ত আঁকে
স্রোতস্বিনী পুণ্যের পাশে পাপও নিয়েছে
সব সভ্যতার জন্মমৃত্যু তার বাঁকে বাঁকে।
নদী কখনো কখনো জলের গল্প বলে
কখনো বা মগ্ন নিজেরই স্রোতের সুরে
জীবনকে কতভাবে তার দেখা শোনা!
ভাঙা গড়া স্রোত হয়ে আছে বুক জুড়ে।
ঝুমা বৌদি
বিকেলে গা ধুয়ে ছাদ-বারান্দায় এসে দাঁড়াতে তুমি
পায়ের নিচে জমা পড়ত মফস্বল শহরের মনোযোগ
পাড়া আলো হয়ে যেত, তরুণীরা ঈর্ষায় কুটিলতর।
ঝুমা বৌদি, সুন্দরী ঝুমা বৌদি,
তোমার চরিত্রে দাগ ছিল এমন কথা শত্রুও বলবে না;
স্বামী তোমার নিবন স্যার রসায়নের শিক্ষক
এক ফোঁটা শহরের অর্ধেক তরুণীর সঙ্গে তার নাম জড়িয়েছিল,
কখনো স্বামীর দোষ দেখতে না, বলতে
"মেয়েগুলো সাংঘাতিক, বিছানায় টানতে পারে।"
ঝুমা বৌদি, ঝুমা বৌদি, দুটো ছেলেমেয়ে তোমার
মেয়েটা অঙ্কে দারুণ ছিল, এখন গ্লাসগো থাকে
ছেলে আমস্টারডাম।
তুমি কী আগের মতো সুন্দরী এখনো?
অনেক যুগ দেখিনি, কল্পনা করি
মোটা হয়ে গেছ, চোখমুখ অতটা টলটলে নেই,
সময় ঠুকরে ঠুকরে খেয়ে নিয়েছে অপার লাবণ্য।
ঝুমা বৌদি, এখনো কী তুমি বিকেলে গা ধুয়ে
গোলাপী শাড়িটা পরে না বারান্দা না ছাদে
দাঁড়াও এসে
কেমন যেন পুজোর ধোঁয়ার মতো ভেসে ভেসে
শরীর ভর্তি পবিত্র সব ফুল নিয়ে?
তোমার চোখ
তোমার চোখ দু'টো এত ঘন কালো
মনে হয় তোমার চোখ থেকেই
সমস্ত রাত্রি শুরু হয়েছিল।
তোমার চোখ দুটো এত বেশি গভীর
রাত শেষ হয়েও যেন থেকে গেছে,
সৃষ্টির রহস্য মিশে নয়নের অন্তর স্থির।
অনায়াস সম্ভাবনা
কমরেড, পরের জন্মে তোমার আমার গল্পকে
মৌসুমী বাতাসে উড়ে যেতে দেব না
নেমে যাব পরস্পরের ভালোবাসার অতলে,
তুমি কিন্তু বোলো না একদম, "নেব না"!
দ্বিধা ছেড়ে সোজা বলি, গনগনে আগুনের স্পর্শে
যেমন আশ্লেষে ফুলে ওঠে রুটি
অনায়াস নৈকট্যে তোমার সোহাগ পেয়ে আমিও
যেন তেমনই সম্ভাবনায় ফুলে উঠি।
********************************************************************************************
জন্ম: ১২ জানুয়ারি, ১৯৭১, কলকাতা ;পনেরো / ষোল বছর বয়স থেকে নিয়মিত লেখালিখি করছেন । থাকেন উত্তর কলকাতার পাইকপাড়া এলাকায়। প্রকাশিত বই, একটি: অলক্ষ্মীর পাঁচালি ।




কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন