অরূপরতন হালদার / দু'টি কবিতা
১
অবোধ, তোমার নিষ্কাম শিশুটি পোড়ে ওই ঘাসের
মদিরায়। তুলে ধরো প্রসন্ন কাণ্ড, ছায়াময়, মুর্শিদ
এক। শাঁখের শব্দ ভেসে যায় বাঁকানো গলিপথে,
থই থই সন্ধ্যায় ছবিরা ঈষৎ দোমড়ানো যেন প্রকৃত
নিসর্গ রক্তে আসে। পাথরে সন্ত্রস্ত ছায়া পড়ে থাকে,
তুমি অতল নর্তকী যেন, খুলে যাও অপ্রস্তুত আগুনে।
আগুনের যে অন্ধকার ব্রীড়াবশত পিপুল শাখাটির
কাছে নত সে আমার সমস্ত চক্র ছিঁড়ে ফেলে। হে
জাগর, দূর্বাদলশ্যাম, তোমার সঘন সিঁড়িগুলো
জ্বলে ওঠে নিঃশব্দ উল্কাপাতে। এ দাহ পূর্বাপর সব
অক্ষর নিয়ে ঝাঁপ দেয় প্রেমিকের মতো, কপোতাক্ষ
নিচে, তার বুকের উপর রাজহংসীর গ্রীবা অস্ত্রের
সম্মোহন বয়ে আনে। পাড়ের কাছে কলরোল ক্রমে
মিথ্যা শ্রম, হাওয়া-বাতাসের ভুল ঝরে পড়ে মধুরাতে
২
চাঁদের শরীর শূন্যতা-প্রয়াসী, এই গৃহবোধ আঁকা হয়
যে চোখের তিমিরে সেইখানে স্ব স্ব তৃষ্ণা মাছির গূহ্য
কামনায় শ্বাস নেয়, মাছের ত্বরান্বিত বোধ খুলে যায়
অগভীর জলের কেন্দ্রে। অঞ্চলভেদে শিকারের
মাত্রাজ্ঞান ছুঁড়ে ফেলে কেউ, তারপর কেলাসিত স্তন,
স্তনে নিবদ্ধ গান হাসনরাজার মতো বেঁধে ফেলে ধূসর
আলো, কৃষকের মায়া শস্যে গুমরোয়। তুমি মুদ্রাদোষ
হেতু আঙুলের শীর্ষ পোড়াও, জিভের উপর তুন্দ্রা ও
ভূমিক্ষয়, এমনি ঔচিত্যবোধ স্মৃতির পরিখা থেকে
তুলে আনে পারাপার। হায়, বিস্তীর্ণ নদীখাত পুড়ে যায়
মায়াবী শিখায়, সেসব আমাদের জ্ঞানের অতীত, গূঢ়
অতিকথা, সান্দ্র আলোয় তাদের জন্য একটি প্রাতরাশ-
টেবিল সাজানো আছে। দেখা হয়, মত্ত আনন্দরাশি
দেখে ভাঙা ফুটপাথ ভরে ওঠে প্রেমে ও জুগুপ্সায়
*****************************************************************************************************
পেশায় শিশু-চিকিৎসক। শিশুদের না-বলা অভিব্যক্তির মাধ্যমে রোগনির্ণয়ের দৈনন্দিনতা থেকে কবিতার অনাবিষ্কৃত ভূমিতে নতুন স্পন্দন শোনবার প্রয়াসী। কলেজ জীবন থেকে কবিতায় হাত পাকানো। এখনো পর্যন্ত পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। "শূন্য রক্ত গাথা" সাম্প্রতিকতম বই, ডিসেম্বর, ২০২১শে প্রকাশিত। লিখেছেন বেশ কিছু বিশিষ্ট কবিতা-পত্রিকা ও ওয়েব-পত্রিকায়। কবিতা লেখা ছাড়া বিভিন্ন বিদেশি কবিতার অনুবাদে নিয়মিতভাবে ব্যাপৃত। চলচ্চিত্র ও চিত্রকলাও তাঁর বিশেষ আগ্রহের বিষয়।



কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন