শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

অণুগল্প * মানসী কবিরাজ



সুপ্ত ইচ্ছারা

মানসী কবিরাজ

সবার সব ক্ষমতা থাকে না । কিন্তু ক্ষমতা নেই বলে ইচ্ছাও জাগবে না তেমন তো নয় । কাজে কাজেই  অনুপমের মনের গুপ্ত কুঠুরিতে একটা সুপ্ত  ইচ্ছা বাসা বেঁধেছে বেশ কিছুদিন হল ।  শুধু অনুপমই  সেই ইচ্ছার গোঁড়ায় সার জল কিছু দেয়নি। কে আর খাল কেটে কুমীর আনতে চায় যেচে !আসলে  প্রথম প্রথম কিন্তু শুভ্রা মানে অনুপমের এক এবং অদ্বিতীয় বউ  বেশ রসেবশেই দাম্পত্যালাপ চালাত । বিয়ে যত পুরানো হচ্ছে  রস তো নয় আস্ত কর্পূরের ড্যালা  উবে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই।  শুভ্রার এখন কথায় কথায়  খোঁটা ।  অনুপমের নাসিকা গর্জনের ঠ্যালাতে নাকি পাড়াতে  চোরের উপদ্রব কমে গেছে , অনুপম প্লেটে ঢেলে বিশ্রী শব্দ করে চা খায় ( আগে তো এটাই  শুভ্রার জারা হট্ কে টাইপ লাগত ) , বাজারের যত কানা বেগুন , পাকা ঢ্যাঁড়স , নরম পেটের মাছেরা নিজেরাই যেন  অনুপমের থলিতে ঝাঁপিয়ে এসে পড়ে ! নেহাতই শুভ্রার হাতের ক্যারিশ্মা  রান্নাগুলো এত সুস্বাদু হয় । অনুপমকে নিয়ে শুভ্রার  অভিযোগের তালিকা যাকে বলে শ্রাদ্ধের ফর্দের চেয়েও  লম্বা ।


এদিকে  অফিসে , বাজারে এমনকি  ঠেকের আড্ডাতেও  বচনবাগীশ হিসাবে অনুপমের বেশ একখানা নামডাক আছে  । কিন্তু হায় ! বাইরে যতই অনুপমের বুলির ঝুলি উপছে উঠুক না কেন বউএর সামনে এলেই যাবতীয় পুরুষ- সিংহের মতো তারও সব বোলচাল পুরো ঘেঁটে- ঘ হয়ে যায় । কিন্তু সহ্যেরও একটা সীমা নিদেনপক্ষে একটা  এক্সপায়ারি ডেট থাকে তাই শেষ অবধি শান্তি চুক্তি ভেঙে অনুপম একদিন বোমাটা ফাটিয়েই ফেলল। স্লগ ওভারে সপাটে ছক্কা হাঁকিয়ে বলে দিল ঘুমের সময় শুভ্রার মুখ বোয়াল মাছের মতো হাঁ হয়ে থাকে । আগে ছিল  আটাশ ইঞ্চির তন্বী কোমর এখন ছেচল্লিশের কুমড়োপটাশ । গলার স্বর শুনলে রাস্তার কুকুর অবধি ঝগড়া থামিয়ে দেয় আর রান্নার কথা না তোলাই ভালো । সেসব বস্তু কী স্বাদে কী গন্ধে একেবারে জেলখানার চেয়েও খারাপ । নেহাতই  অনুপম ঋষিতুল্য মানুষ তাইই প্রশান্ত চিত্তে কোনরকম  উচ্চবাচ্চ না করেই সেসব গলধঃকরণ করে । ঝড়ের গতিতে ভিতরের ঝাল উগলে বেশ আত্মপ্রসাদের সঙ্গে অনুপম ভাবল জব্বর একখানা চাল দেওয়া গেছে । এক চালেই মিসেস শুভ্রা  একেবারে কিস্তিমাৎ ! যাক বাবা এবারে আয়েশ করে সিগারেটে একটা টান দেওয়া যাক এই ভেবে  যেই অনুপম লাইটার জ্বালাতে গ্যাছে ওমনি আঙুলে এক মোক্ষম ছ্যাঁকা !  দূর থেকে ভেসে আসছে শুভ্রার  অমোঘ বচন ‘ আর কখন ঘুম থেকে উঠবে কুম্ভকর্ণের বংশধর ? বলি এরপর কি দোকান বাজারের ঝাঁপ গুটাতে যাবে !”  ধড়মড় করে চোখ খুলেই   অনুপম দেখে , কখন যে বেড সাইড টেবিলে চায়ের কাপ রেখে গেছিল শুভ্রা ঘুমন্ত অবস্থায় সে ঐ গরম চায়েই আঙুল ডুবিয়েছে !



************************************************************************************************



 মানসী কবিরাজ

জন্ম বহরমপুরে। পড়াশোনা মালদা এবং কোলকাতা মিলিয়ে মিশিয়ে। পেশায় সরকারি আধিকারিক। চাকরি সূত্রে  শিলিগুড়ি এবং  এখানেই স্থায়ী বসবাস।পছন্দ বই সিনেমা বাগান আড্ডা এবং ভ্রমণ। লেখালিখি বানিজ‍্যিক পত্রপত্রিকায়  এবং  লিটল ম‍্যাগাজিনে। প্রকাশিত কবিতার বই --পতঝড়  এবং অনন্ত সাঁতারের ক্লাস।


1 টি মন্তব্য: