পাঁচই জুন ও একটি কবর
স্বপন নাথ
5ই জুন । বিশ্ব পরিবেশ দিবস । বিশ্বায়িত বিশ্ব বৈষয়িক বাণিজ্যে বিস্তর । ঘণ্টার এই পালনীয় ঘটা দিবসে প্রকৃতি জননীর চোখ স্ফীত । এই স্ফীতি পিডাঙ্কল হেমিস্ফিয়ারের আনন্দ নৃত্য, নাকি সেরিব্রাল অ্যাটাকে স্তব্ধ ? পরে আসছি সেই কথায় ।
কিন্তু ঐ যে বিবেক !
দোপাটির বীজ ফাঠিয়েছে বিস্তর । কার ফুলে মধুরেণ সমাপতে ? খোঁজ করলো না কেউই । অথচ বললো : জয়ের সূচনা ঘরেই । সেখানে বঞ্চিত হলেই বিবেক গুমরে মরে । ভূতের কানমোলা খায় । তো প্রেমের এখন ভূতের কানমোলা খাওয়ার দশা ।
রবিঠাকুর বলেছেন , " স্বভাব দোষে যারা নিজে থেকেই কিছু ভাবতে চায় , তাদের জোটে ভূতের কানমোলা ।" তা তো মিথ্যে হবার নয় । তো হয়েছে কিনা ঐ দোষ । স্বভাব দোষ !
ক্যালেন্ডারে অগ্রজ , অনুজ আবহমান কাল ধরে এসেছে , গেছে । ভবিষ্যতে আসবে , যাবে ।বর্তমানে আসছে , যাচ্ছে । কিন্তু সর্বত্রই 75% লোক ঘসা মাজা করে , কোপনি আঁটা বিদ্যেই শিক্ষণীয় হয়ে ওঠে । বুকসেলফে তুলে রাখে ডিগ্রি মুখীন কাগজ । স্বনির্মিত , আমন্ত্রিত কিংবা চাটুকাবৃত্তীয় সভা মঞ্চে বক্তৃতা করে । দেশ উদ্ধারের কথা বলে । ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে কী রেখে যাচ্ছি বলে হা হুতোশ করে । পারলে দধীচির মতো তখনই খুলে দেয় বুকের পাঁজর ! বজ্রাঘাতে নিপাত দিতে পারে সকল কলুষ , পাপ ।
এমনই উৎস্বর্গীকৃত প্রাণ !
কিন্তু জামা খুললেই ক্ষেপেছিস ভাই ! তোর ছেলে ক্ষুদিরাম হোক । তোর মেয়ে ওয়েদ্দেদার ! আমি বাবা একটু ঘুমোই । বউয়ের কোলটা কতটা নরম ভুলেই গেছি কখন !
রেখে দে তোর পরিবেশ দিবস উদযাপন ।
প্রেম ভাবে । বলে , কেউ কেউ (20%) পারে না জানেন । সত্যি সত্যি । , 5% বিবেকের কথা শোনে । যুক্তিতে মুক্তির আলো খোঁজে । ভাবে । সমাজকে ভাবতে শেখায় । তারাই কানমোলা খায় । তকমা জোটে , অশিক্ষিত ! কুয়োর ব্যাঙ ! কিচ্ছু জানে না , বোঝে না । আবেগে ভাসে । বিরোধী কার্যকলাপের পোঁদ উঁচু ডেঁয়ো । দাও ওর পোঁদ কেটে । অর্থাৎ মানবিক সব কর্মকাণ্ড থেকে ছেঁটে দাও । স্বার্থের ফুরুশ থেকে কুরুশ কাঠিটিকে আড়চোখে তুলে দাও ফেলে ।প্রচারের আলো যেন তার গায়ে না এসে লাগে আর । নজরে - - -নজরে । শালকাঁটা এসে বিঁধুক পাঁজরে ।
কুরুশ কাঠি অবশ্য মঙ্গলই মনে করে। তারা তো প্রচার চায় না। তারা চায় কাজ। নিরব নিশ্চুপ ।
ফুল ফুটুক । সুবাস ছড়াক। এই তার ব্রত। ব্রতধারী গর্ভিনী মা কি সন্তানের দাবি নিয়ে নাছোড় দাঁড়ায় দত্তার কাছে ? সন্তানের ক্ষতি হয় পাছে , এই তার ভয়। ছেড়ে দিয়ে কাঁদে। আর প্রার্থনা করে । ওর কাছেই জাতক যেন হেসে খেলে থাকে । মানুষ হয়।
এই সব মানুষেরাও ভাবে , আগামী পৃথিবী উর্বর হবে তাদেরই রক্তপাতে । আবারো চাষযোগ্য হবে মাটি । বৃষ্টি আনার মন্ত্রেরা ডেকে তুলবে , "অঙ্কুর ,ও অঙ্কুর , চোখ মেলো দেখি ।"
ধনধান্য পুষ্পে ভরে উঠবে কোল । বিপ্রতীপে কলাও ফলবে কতো । ঠিক যেমনটি এখন । হাজারো খয়রাতির কলা ! অন্তর্দয় কলা , মধ্যর্দয় কলা , ধর্মীয় ভাবাবেগের কলা , মনস্তাত্ত্বিক দূষণের কলা । দৃশ্যদূষণ কলা । আরো আরো উদ্ভাবনী কলা । আর সব কলার নিরীক্ষণে দাঁত বের করা বানর কিংবা হনুমান অথবা প্রভুর পা চাটা মেনি ।
প্রত্যেকেই খাবল খাবল । এজেন্সি মারফত তুলে নেবে কলার বিপণন ছড়া ।
কেউটে ফোঁস রগরগে চলা জমিয়ে তুলবে আরো আরো গাছে চড়া । কুড়িয়ে খাবার খেলা ।
খোসায় পিছলে কার হাত ভাঙলো না মাজা ! দেখার দরকার নেই । শুধু দুধ সাদা দু পাটি দাঁত মাড়ি পর্যন্ত বের করে খ্যাক খ্যাক করবে । আর গোটা গোটা কলা । ছাড়াবে আর খাবে - - - -।খোসা ছাড়াবে আর খাবে - - - -।
2
ফেরা যাক মূলে। প্রেম ফেরে । পরিবেশ দিবস উদযাপনের সাড়াম্বর ঢাক পেটানোর স্বয়ংম্বরে। পোস্ট মর্টেমের দেউলখানায় দুঃখ জল কবর ভিজিয়ে ফেলে : তখন সকাল দশটা। জামাইষষ্ঠীর ফলার নিয়ে শ্বাশুড়ী মারা তৈরী । তাঁরা খুড়তুতো, জ্যাঠতুতো মিলিয়ে আট জামাই ফরাস ডাঙায় ফলার ভোজনের অপেক্ষায় উন্মুখ । এমন সময় মোবাইলে টুং টুং - - - হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ। খুলে দেখি কলেজের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে ছবি। পরিবেশ দিবস উদযাপন ।
জনা পাঁচেক শিক্ষার্থী নিয়ে নবাগত অধ্যক্ষ। স্বভাবটা তেলাপিয়ার মতো। পচা ডোবা নালা জলে থাকে। পচা পাচকো যা খুশি খায়। কামড়েও দেয় । কাঁটাও মারতে পারে। গোমরাটে একা অহংকারে , মুখে বাচ্চা ভরে থাকে । ছেড়ে দিয়ে সাহস যোগায়। ভয় পেলে ভরে নেয় মুখে । এখানে বাচ্চা মানে কথার ভাষণ । ছেলেরা তাই নাম দিয়েছে তেলাপিয়া স্যার ।
সঙ্গে কেউটেআইপিক্সেল দয়াময় পোদ্দার। অফিস বয়। তিনিই এখন দণ্ডমুণ্ডের কর্তা । কেউকেটা সংস্রবে কেউটেনবিশ । এবং কেউটে ফোঁসে স্তব্ধ আজ্ঞাবহ বিডিও সাহেব।
সম্মিলিত ভাবে গাছ বসাচ্ছেন আর সেলফি নিচ্ছেন । গাছ বসাচ্ছেন আর কৃতার্থ করছেন।কৃতার্থ পরিমল ছন্দে প্রজাপতিময় ছবি ছেড়েছেন গ্রুপে ।
ছবি মানে যৎকিঞ্চিত কাঞ্চনং মূল্যং ,ইয়া গচ্ছ ,ইয়া গচ্ছ । ইয়া তিষ্ঠ , ইয়া তিষ্ঠ । দুটো একটা গর্ত করে গাছ পুঁতে ছবি ।
তাও আবার কলেজের ব্যানারে নয়। সরকারি অনুদান এসেছে ব্লক স্তরে । অনুষ্ঠান করতে হবে। সরকারি অর্ডার । ইউ সি দিতে হবে। তাই বেছে নেওয়া পকেট। গট আপ গেম খেলার পকেট। তোমার কিছু রইলো কিছুটা আমারও গোচের । ড্যামি অনুষ্ঠান । ইউ সি সাবমিট।পয়সা গায়েব।
কবর খোঁড়া এখানেই শুরু । অনুদান হজমের কবর। ন্যায় নিষ্ঠ সততার কবর। আত্মসম্মান বিকিয়ে দেওয়ার কবর। মেরুদণ্ড নুয়ে ফেলার কবর।
যারা বুঝলো ইশারায় কাফি। হ্যাণ্ডসেক করমর্দন । বাকিরা লাইক কমেন্টসে ভরিয়ে দিচ্ছে পাওয়ার পয়েন্টস।
3
ছবি দেখে কমেন্টস বুকে অজানাচিত এক শিক্ষকের প্রশ্ন, 'কবে হলো ?'
কেউটেআইপিক্সেলের জবাব : ' আজই'
অজানাচিত শিক্ষক : জানালে না ! যেতাম তো ।
তারপর সাদা পাতায় কবর ভেজা জল :
তর্পণ জলে প্রেমের স্মৃতি জ্বলজ্বল । বলি ,
ঘর বাঁধতে লোকের দরকার। ডাক পড়ে তখন ।
উনুন পাততে লোকের দরকার।ডাক পড়ে তখন।
বাঁধা ঘর পাতা উনুন পেলে লোকের দরকার পড়ে ? নিজের মতো খুঁদ কুঁড়ো যা জোটে রেঁধে নিলেই হলো।অতশত ডাকার দরকার পড়ে না তো !
অজানাচিতকে বলি , 'এই তো গেল বছর গ্রীষ্মাবকাশে ফল প্রকাশের দিন কলেজে সকলের উপস্থিতি জানিয়ে মেল করা হয়েছিল ।
এসেছিলেন নাকি ?
অজানাচিত : না। ওটা তো অফিস মেণ্টেন্যান্সদের কাজ। টিচিং স্টাফদের নয়।
প্রেমের হাতেখড়ি , 'এমনটি কোথাও লেখা আছে নাকি ?'
দূষণের কঙ্কাল কাঠি খনখনিয়ে ওঠে । পাশে সরিয়ে রাখি। বলি , 'আজ পোগ্রামের কথা না জানানোর জন্য গোঁসা হলো কেন ?' ভিআইপিদের সঙ্গে ছবি উঠলো না বলে ! নাকি এমন হাত ছোঁয়া দূরত্ব থেকে পরিবেশবাদী তকমার কলার ওল্টানো সুযোগ হাতছাড়া হলো বলে , বিরহ হলো ?
হায়রে প্রেম ! কখন যে কার কুহকে ফাঁসো ! তুমিও কি ছেনালী শিখে গেছো ? তবে আর দোষ দেবো কাকে ? একদিন আমিও রচেছি তোমাকে ।
এই যে কণ্যাশ্রী সঙ্ঘ যার ব্যানারে পরিবেশ দিবসের উদযাপন , যেটি তেলাপিয়া অধ্যক্ষের হাতে শোভাবর্ধক। আমারই ঔরসজাত ।সরকারী আনুকুল্যতা পায়নি তখনও । নিজের খরচে ব্যাচ ,লোগো ,আইডেণ্টেটি কার্ড ফিতে দিয়ে বাঁধা। কলেজের নামটি সযতনে বেণী পাকানো। নান্দনিকতার সুষ্ঠু বিন্যাসের বীজ শিক্ষার্থীদের মনে । গোপনে রোপন । সেই সেলফি গ্রুপে কেউ পোস্ট করেনি। চিরায়ত প্রেমের কবর !
4
গ্রাভেলসে চাপা পড়া দেহ আপন বিবর ফুঁড়ে
দুঃখ জলে নেয়ে গেল এই।
রক্ত মাংসের দেহ তো ! মোহগুলো হুটহাট বেরিয়ে পড়ে ।
নান্দনিক পরিবেশ দিতে নিজেই প্রেম বিলিয়েছে প্রেম । ফ্রি কোচিং করিয়েছি। নাচ গান আবৃত্তি অঙ্কন ক্যুইজ তাৎক্ষণিক বক্তৃতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্লকে জেলায় রাজ্যে উজ্বল দৃষ্টান্তে হে প্রেম তুমিই গর্বিত । বিজ্ঞান মেলায় মেডেল হাতে তোমার উপস্থিতি চমকপ্রদ।
শিক্ষক দিবস, যুব দিবস, শিশু দিবস, ভাষা দিবস, বর্ষামঙ্গল ,মণীষী জীবন উদযাপন ,রাখিবন্ধন প্রভৃতি ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী শিক্ষক সম্পর্কের পরিবেশে রচনায় তুমি অনবদ্য ।
কলেজের পার্শ্বস্থ এলাকায় সার্ভেটিম নামিয়ে শৌচালয়, বাথরুম ,কলের জলের সমীক্ষা তুলে ধরে সরকারি ভাবে অভাব পুরণের ব্যবস্থা, ডেঙ্গু সচেতনতা ক্যাম্প, স্বাস্থ্য পরীক্ষণ শিবির । দু দুটো শিক্ষার্থীর ওপেন হার্ট সার্জারি করিয়ে আনা । নিজের তাগিদে। সব ক্ষেত্রেই হে প্রেম তোমার সাফল্য চমৎকৃত করেছে তোমাকে ।
প্রেম অন্ধ নিরপেক্ষ। গৃহকর্ম করেনি কখনো। অবশ্য তার ভাইপো ,ভাইবোন, ছাত্রছাত্রীরা সেই অভাব পুরনে ঘাটতি রাখেনি কখনো। প্রেম কৃতজ্ঞ । চির ঋণী কল্যাণীয়দের কাছে ।
পূর্বতন অধ্যক্ষ মহাশয় সৎব্যক্তি, কিছু কিছু ফাণ্ডের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।ধন্যবাদ প্রাপ্য ওনারও ।
কিন্তু দূর্ভাগ্য ! এখন সব প্রকল্প ভূক্ত । অনুদান সিদ্ধ । পাইয়ে দেওয়ার তুষ্ট রাজনীতি । অটুট ভোটব্যাঙ্ক গঠন। রমাপদ চৌধুরীর "ভারতবর্ষ " গল্পের সেই বিখ্যাত উক্তি সামনে আনে প্রেম -- -ভিক্ষে পেয়ে ভিক্ষে পেয়ে , "ক্ষেতিতে চাষ করা মানুষগুলো সব ভিখারী বনে গেল।"
মাঝখানে যত প্রকল্প তত অনুদান , তত কবর !
তখন যারা বলতো , ' কী হবে এ সবে ?' বিল ছেঁছবে একজন,কৈ খাবে অন্যজন । এ আর নতুন কথা কি !'
বুঝিনি ।
ঐ যে প্রেম। নিরপেক্ষ অন্ধ ! কাজ নেই তো খই ভাজ ! দেখো গো , নাম কিনতে এসেছে গোঁসাই !
খেসসা করতো !
আর আজ যখন সরকারি প্রকল্পের আয়ত্তাধীন। অনূদান অঢেল।তখন দেখি আসল গোঁসাইজীই বাদ।কইলে বইলেরাই গোঁসাই চন্দনে ভেক ! একেবারে মঞ্চের উপর !
হে প্রেম , তুমিও কি কমিশনের গন্ধে মুখ লুকোও কবরে !!
5
আজো প্রেম অন্ধ নিরপেক্ষ। প্রতিদিনকার ব্রতের মতো। ট্যাপের জলটা পড়েই যাচ্ছে , নবটা বন্ধ করে দাও। ল্যাম্পপোস্টের বাতিটা ঠা ঠা রোদ্দুরেও এক পায়ে খাড়া , ওকে অফ করে শান্তি দাও। ছুটির পর ফাঁকা ঘর , ফ্যানগুলো তখনও ক্লান্ত মুখর। তার কথা কানে নাও। স্যুইচ অফ করো।
ঘরে বাইরে একই কাজ। হে প্রেম ! কিন্তু গোপনে। পাছে কেউ দেখে ফেলে ! লজ্জা, ভয়।
বলাই !
হাঁ , বলাই যে শুধু রবীন্দ্রনাথেই ছিল না ,কে জানতো ! হে প্রেম ! তুমি যে বলাই। প্রত্যক্ষ করেছি আমি শিউলি পতনের ভোরে।
অবশ্য একথা অনুধাবনের লোক খুব কম। নেই বললেই চলে। এখন তো সব সাবজেক্ট বিশারদ কিনা ! তাঁরা নিজের নিজের সাবজেক্টের বাইরে বিশেষ বিচরণ করেন না। বাংলা বিশারদরাও একটু অন্য প্রজাতির । সাজেশান নির্ভর ।সহায়িকার সাহায্যে সামর্থ্য এই যা।
হায় জগদীশচন্দ্র ! হায় সত্যেন্দ্রনাথ ! তোমরা কিসে বিশারদ ?
অন্ধ হলেও প্রলয় বন্ধ থাকে না । তাই বলাইয়েরা অগোচরে কেঁদে মরে। বুক ভাসায় ।সাপোর্ট পায় না । গাছের সঙ্গে গাছ হয়ে জড়ায় । হে প্রেম ! তোমাকে কাটবে জেনেও ফের গাছ বসাই। আগামীকে সুস্থ দেখবে বলে গোড়া খুসে দেয় । কমিশনের মোটা টাকা শান্তির খামে ভরে পৌঁছে যাবে ভূতের ড্রয়ারে। জেনেও জল যোগায় । পালন করে পাঁচই জুন , পরিবেশ দিবস । কৈ কিন্তু আগেই উঠে থাকে ভূতের পাতে ।
মনে পড়ে কলেজের প্রথম সমাবর্তনের দিন। স্মৃতি তর্পণের জল তুলে আনে প্রেম । সেটিও ছিল পাঁচই জূন। তিন দিন আগেও কলেজ চত্ত্বর তলব মুখর । লুঙ্গি গেঞ্জি পরে ,মাথায় গামছা বেঁধে নিড়ানি দিয়ে খৈনি , তলব গুটখা , পান , পারাগের খালি প্যাকেট কুড়িয়ে জড়ো করা। প্রতিষ্ঠার পর তিপান্ন বছরের কলুষ প্রণোদনা !
কলেজ ক্যাম্পাস নাকি গো ভাগাড় !
দুমনে বস্তার চারবস্তা পচা প্যাকেট ! সব কুড়িয়ে কেরোসিন ঢেলে জ্বালিয়ে পরের দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ।
পাশের বাড়ির দোকানদার কাকু পড়াশোনা করেন নি। তাই স্মৃতিধর। শিক্ষিতরা ভুলে যায় কেন বেশি ।
হে প্রেম ! অর্থময় স্বার্থের ঝুলি শিক্ষিতেরও কী পরিয়ে দেয় ঠুলি ?
6
এ পর্যন্ত দুঃখ জল কবরের ভিজিয়েছে মাটি। পাঁচই জুনের আলো নিজস্বীতে একটু জ্বেলে আসি।
প্রেমও যে রূপান্তর অন্য রকমে। সেও জানে লাট্টুর মতো উদ্ভাবনী ঘূর্ণিতে পিন যেন নিজেই নর্তকী :
রবীন্দ্র জয়ন্তীর দিন ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে ঠিক করেছিল, পুরো জ্যৈষ্ঠ মাস ধরে আম , লিচু , কাঁঠালের বিচি কুড়িয়ে জড়ো করবো যে যার মতো।
আগামী বর্ষার প্রথম সপ্তাহে তা রোপন করা হবে , নদীর তীর বরাবর ।
কথা মতো আজ পাঁচই জুন । তাঁরা সব ভবন ভিতর । নিয়ে এসেছে বিচিভর্তি ক্যারিব্যাগ। এই মুহূর্তে বাড়িতে প্রেমের বিচির পাহাড় ।
সব ঠিকঠাক । শুধু অভিমান ফুঁসে ফুঁসে ওঠে ।
হে প্রেম ! আজ তুমি কলেজ গেট , কেউটের দখলে। কাল তুমি চিরশ্রী নদীর পাড়ে । কেউটে ফোঁসে টাকা উড়লেই নয়ানজুলি ভরাট। পাঁচ তারা বিল্ডিং উঠে পড়ে। চলে যাবে কেউটের দখলে।
রক্ষার সামর্থ্য সব চির ঘুম নিদ্রার কবরে।
রক্ষকই ভক্ষক যখন , ভক্ষকের তক্ষক হয়ে ছোবল মারলে মরবো সকলে। কবরের মাটি ফুঁড়ে শুষে নিও পচন রক্ত শর্করা শঢন। কবরের দুঃখ জলে ভেসে থাক এইটুকু প্রেম নিবেদন।

*********************************************************************************************


মননের মৌলিক স্বরের স্বরান্তর ঘটিয়ে " স্বরবর্ণ" নতুন দিশার আগমন ঘটিয়ে চলেছে নিরন্তর। প্রার্থনা করি দেবাশিষ দার যোগ্য নেতৃত্বে স্বরবর্ণ স্বীয় কীর্তি স্থাপন করুক।
উত্তরমুছুন