বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বিশেষ রচনা * স্বপন নাথ




পাঁচই জুন ও একটি কবর 

স্বপন নাথ 


5ই জুন । বিশ্ব পরিবেশ দিবস । বিশ্বায়িত বিশ্ব  বৈষয়িক বাণিজ্যে বিস্তর । ঘণ্টার  এই পালনীয় ঘটা দিবসে প্রকৃতি জননীর চোখ স্ফীত । এই স্ফীতি   পিডাঙ্কল হেমিস্ফিয়ারের  আনন্দ নৃত্য, নাকি সেরিব্রাল  অ্যাটাকে স্তব্ধ ? পরে আসছি সেই কথায় । 

কিন্তু ঐ  যে বিবেক !

দোপাটির বীজ ফাঠিয়েছে  বিস্তর ।  কার ফুলে মধুরেণ সমাপতে ? খোঁজ করলো না কেউই । অথচ বললো : জয়ের সূচনা ঘরেই । সেখানে বঞ্চিত হলেই বিবেক গুমরে মরে । ভূতের কানমোলা খায় ।  তো প্রেমের  এখন ভূতের কানমোলা খাওয়ার দশা । 

রবিঠাকুর  বলেছেন , " স্বভাব দোষে যারা নিজে থেকেই কিছু ভাবতে চায়  ,  তাদের জোটে  ভূতের কানমোলা ।" তা তো মিথ্যে হবার নয় । তো হয়েছে কিনা  ঐ দোষ । স্বভাব দোষ !


ক্যালেন্ডারে  অগ্রজ , অনুজ আবহমান কাল ধরে এসেছে , গেছে ।  ভবিষ্যতে  আসবে , যাবে ।বর্তমানে  আসছে , যাচ্ছে ।  কিন্তু সর্বত্রই 75% লোক ঘসা মাজা করে  ,  কোপনি আঁটা বিদ্যেই শিক্ষণীয় হয়ে ওঠে । বুকসেলফে তুলে রাখে ডিগ্রি মুখীন কাগজ ।  স্বনির্মিত , আমন্ত্রিত কিংবা চাটুকাবৃত্তীয় সভা মঞ্চে বক্তৃতা করে । দেশ উদ্ধারের কথা  বলে ।  ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে কী রেখে যাচ্ছি  বলে হা হুতোশ করে । পারলে দধীচির মতো তখনই  খুলে দেয় বুকের  পাঁজর !  বজ্রাঘাতে নিপাত দিতে  পারে সকল কলুষ , পাপ ।

এমনই উৎস্বর্গীকৃত প্রাণ ! 

কিন্তু  জামা খুললেই ক্ষেপেছিস ভাই ! তোর ছেলে ক্ষুদিরাম হোক । তোর মেয়ে ওয়েদ্দেদার  ! আমি বাবা  একটু ঘুমোই । বউয়ের কোলটা কতটা নরম ভুলেই গেছি কখন ! 

রেখে দে তোর পরিবেশ দিবস উদযাপন ।


 প্রেম ভাবে । বলে , কেউ কেউ (20%) পারে না জানেন ।  সত্যি সত্যি ।  , 5% বিবেকের কথা শোনে । যুক্তিতে মুক্তির আলো খোঁজে ।  ভাবে । সমাজকে ভাবতে শেখায় । তারাই  কানমোলা খায় । তকমা জোটে  , অশিক্ষিত  !  কুয়োর ব্যাঙ  ! কিচ্ছু জানে না  , বোঝে না ।  আবেগে ভাসে । বিরোধী কার্যকলাপের পোঁদ উঁচু ডেঁয়ো ।  দাও ওর পোঁদ কেটে । অর্থাৎ মানবিক সব কর্মকাণ্ড থেকে ছেঁটে দাও ।  স্বার্থের  ফুরুশ থেকে কুরুশ কাঠিটিকে আড়চোখে তুলে দাও ফেলে ।প্রচারের  আলো যেন তার গায়ে না এসে লাগে  আর ।  নজরে - - -নজরে ।  শালকাঁটা এসে বিঁধুক পাঁজরে ।


কুরুশ কাঠি অবশ্য মঙ্গলই মনে করে। তারা তো প্রচার চায় না। তারা চায় কাজ। নিরব নিশ্চুপ ।

ফুল ফুটুক । সুবাস ছড়াক। এই তার ব্রত। ব্রতধারী গর্ভিনী মা কি সন্তানের দাবি নিয়ে নাছোড় দাঁড়ায় দত্তার কাছে ? সন্তানের ক্ষতি হয় পাছে , এই তার ভয়। ছেড়ে দিয়ে কাঁদে। আর প্রার্থনা  করে । ওর কাছেই জাতক যেন হেসে খেলে থাকে । মানুষ হয়।


এই সব মানুষেরাও ভাবে , আগামী পৃথিবী  উর্বর হবে তাদেরই রক্তপাতে । আবারো চাষযোগ্য হবে মাটি । বৃষ্টি আনার মন্ত্রেরা ডেকে তুলবে  , "অঙ্কুর ,ও অঙ্কুর , চোখ মেলো দেখি ।"


ধনধান্য পুষ্পে ভরে উঠবে কোল ।  বিপ্রতীপে   কলাও ফলবে কতো ।  ঠিক যেমনটি এখন । হাজারো খয়রাতির কলা ! অন্তর্দয় কলা , মধ্যর্দয় কলা , ধর্মীয় ভাবাবেগের কলা , মনস্তাত্ত্বিক দূষণের কলা ।  দৃশ্যদূষণ কলা । আরো আরো উদ্ভাবনী কলা ।  আর সব কলার নিরীক্ষণে দাঁত বের করা বানর কিংবা হনুমান অথবা প্রভুর পা চাটা মেনি ।

প্রত্যেকেই খাবল খাবল ।  এজেন্সি মারফত তুলে নেবে কলার বিপণন ছড়া । 

কেউটে ফোঁস  রগরগে চলা জমিয়ে তুলবে আরো আরো  গাছে চড়া ।  কুড়িয়ে খাবার খেলা ।

খোসায় পিছলে কার হাত ভাঙলো না মাজা ! দেখার দরকার নেই । শুধু  দুধ সাদা দু পাটি দাঁত মাড়ি পর্যন্ত বের করে খ্যাক খ্যাক করবে । আর গোটা গোটা কলা । ছাড়াবে আর খাবে - - - -।খোসা ছাড়াবে আর খাবে - - - -।


                              2


ফেরা যাক মূলে। প্রেম ফেরে । পরিবেশ দিবস উদযাপনের সাড়াম্বর ঢাক পেটানোর স্বয়ংম্বরে। পোস্ট মর্টেমের দেউলখানায় দুঃখ জল কবর ভিজিয়ে ফেলে : তখন সকাল দশটা। জামাইষষ্ঠীর ফলার নিয়ে শ্বাশুড়ী মারা তৈরী । তাঁরা খুড়তুতো,  জ্যাঠতুতো মিলিয়ে আট জামাই ফরাস ডাঙায় ফলার ভোজনের অপেক্ষায় উন্মুখ । এমন সময়  মোবাইলে টুং টুং - - - হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ। খুলে দেখি কলেজের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে ছবি। পরিবেশ দিবস উদযাপন । 


জনা পাঁচেক শিক্ষার্থী নিয়ে নবাগত অধ্যক্ষ। স্বভাবটা তেলাপিয়ার মতো। পচা ডোবা নালা জলে থাকে। পচা পাচকো যা খুশি খায়। কামড়েও দেয় । কাঁটাও মারতে পারে। গোমরাটে একা অহংকারে , মুখে বাচ্চা ভরে থাকে । ছেড়ে দিয়ে সাহস যোগায়। ভয় পেলে ভরে নেয়  মুখে । এখানে বাচ্চা মানে কথার ভাষণ । ছেলেরা তাই নাম দিয়েছে তেলাপিয়া স্যার ।


 সঙ্গে কেউটেআইপিক্সেল দয়াময় পোদ্দার। অফিস বয়। তিনিই এখন দণ্ডমুণ্ডের কর্তা । কেউকেটা সংস্রবে কেউটেনবিশ । এবং কেউটে ফোঁসে স্তব্ধ আজ্ঞাবহ বিডিও সাহেব।


 সম্মিলিত ভাবে গাছ বসাচ্ছেন আর সেলফি নিচ্ছেন । গাছ বসাচ্ছেন আর কৃতার্থ করছেন।কৃতার্থ পরিমল ছন্দে প্রজাপতিময় ছবি ছেড়েছেন গ্রুপে ।


ছবি মানে যৎকিঞ্চিত কাঞ্চনং মূল্যং ,ইয়া গচ্ছ ,ইয়া গচ্ছ । ইয়া তিষ্ঠ , ইয়া তিষ্ঠ । দুটো একটা গর্ত করে গাছ পুঁতে ছবি ।


তাও আবার কলেজের ব্যানারে নয়। সরকারি অনুদান এসেছে ব্লক স্তরে । অনুষ্ঠান করতে হবে। সরকারি অর্ডার । ইউ সি দিতে হবে। তাই বেছে নেওয়া পকেট। গট আপ গেম খেলার পকেট। তোমার কিছু রইলো কিছুটা আমারও গোচের । ড্যামি অনুষ্ঠান । ইউ সি সাবমিট।পয়সা গায়েব।


কবর খোঁড়া এখানেই শুরু । অনুদান হজমের কবর। ন্যায় নিষ্ঠ সততার কবর। আত্মসম্মান বিকিয়ে দেওয়ার কবর। মেরুদণ্ড নুয়ে ফেলার কবর।

যারা বুঝলো ইশারায় কাফি। হ্যাণ্ডসেক করমর্দন । বাকিরা লাইক কমেন্টসে ভরিয়ে দিচ্ছে পাওয়ার পয়েন্টস।


                          3


 ছবি দেখে কমেন্টস বুকে অজানাচিত এক শিক্ষকের প্রশ্ন,  'কবে হলো ?'

কেউটেআইপিক্সেলের জবাব : ' আজই'

অজানাচিত শিক্ষক  : জানালে না ! যেতাম তো ।


তারপর সাদা পাতায় কবর ভেজা জল :

 তর্পণ জলে প্রেমের স্মৃতি জ্বলজ্বল । বলি ,

ঘর বাঁধতে লোকের দরকার। ডাক পড়ে তখন ।

উনুন পাততে লোকের দরকার।ডাক পড়ে তখন।


বাঁধা ঘর পাতা উনুন পেলে লোকের দরকার পড়ে ? নিজের মতো খুঁদ কুঁড়ো যা জোটে রেঁধে নিলেই হলো।অতশত ডাকার দরকার পড়ে না তো !

অজানাচিতকে বলি , 'এই তো গেল বছর গ্রীষ্মাবকাশে ফল প্রকাশের দিন কলেজে সকলের উপস্থিতি জানিয়ে মেল করা হয়েছিল ।

এসেছিলেন নাকি  ?

অজানাচিত : না। ওটা তো অফিস মেণ্টেন্যান্সদের কাজ। টিচিং স্টাফদের নয়।


প্রেমের হাতেখড়ি , 'এমনটি কোথাও লেখা আছে নাকি ?'


দূষণের কঙ্কাল কাঠি খনখনিয়ে ওঠে । পাশে সরিয়ে রাখি। বলি , 'আজ পোগ্রামের কথা না জানানোর জন্য গোঁসা  হলো কেন ?' ভিআইপিদের সঙ্গে ছবি উঠলো না বলে ! নাকি  এমন হাত ছোঁয়া দূরত্ব থেকে পরিবেশবাদী তকমার কলার ওল্টানো সুযোগ হাতছাড়া হলো বলে , বিরহ হলো ?


হায়রে প্রেম ! কখন যে কার কুহকে ফাঁসো ! তুমিও কি ছেনালী শিখে গেছো ? তবে আর দোষ দেবো  কাকে ? একদিন আমিও রচেছি তোমাকে । 

এই যে কণ্যাশ্রী সঙ্ঘ যার ব্যানারে পরিবেশ দিবসের  উদযাপন , যেটি তেলাপিয়া অধ্যক্ষের হাতে শোভাবর্ধক। আমারই ঔরসজাত ।সরকারী আনুকুল্যতা পায়নি তখনও । নিজের খরচে ব্যাচ ,লোগো ,আইডেণ্টেটি কার্ড ফিতে দিয়ে বাঁধা। কলেজের নামটি সযতনে বেণী পাকানো। নান্দনিকতার সুষ্ঠু বিন্যাসের বীজ শিক্ষার্থীদের মনে । গোপনে রোপন । সেই সেলফি গ্রুপে কেউ পোস্ট করেনি। চিরায়ত প্রেমের  কবর !

                             4


 গ্রাভেলসে চাপা পড়া দেহ আপন বিবর ফুঁড়ে

দুঃখ জলে নেয়ে গেল এই।

রক্ত  মাংসের দেহ তো ! মোহগুলো হুটহাট বেরিয়ে পড়ে ।

নান্দনিক পরিবেশ দিতে নিজেই প্রেম বিলিয়েছে প্রেম । ফ্রি কোচিং করিয়েছি। নাচ গান আবৃত্তি অঙ্কন ক্যুইজ  তাৎক্ষণিক বক্তৃতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্লকে  জেলায় রাজ্যে উজ্বল দৃষ্টান্তে হে প্রেম তুমিই গর্বিত । বিজ্ঞান মেলায় মেডেল হাতে তোমার উপস্থিতি চমকপ্রদ। 

শিক্ষক দিবস, যুব দিবস, শিশু দিবস, ভাষা দিবস, বর্ষামঙ্গল ,মণীষী জীবন উদযাপন ,রাখিবন্ধন  প্রভৃতি ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী শিক্ষক সম্পর্কের পরিবেশে রচনায়  তুমি  অনবদ্য । 

কলেজের পার্শ্বস্থ  এলাকায় সার্ভেটিম নামিয়ে শৌচালয়, বাথরুম ,কলের জলের  সমীক্ষা তুলে ধরে সরকারি ভাবে অভাব পুরণের ব্যবস্থা, ডেঙ্গু সচেতনতা ক্যাম্প, স্বাস্থ্য পরীক্ষণ শিবির । দু দুটো শিক্ষার্থীর ওপেন হার্ট সার্জারি করিয়ে আনা । নিজের তাগিদে। সব ক্ষেত্রেই হে প্রেম তোমার সাফল্য চমৎকৃত করেছে তোমাকে । 


প্রেম  অন্ধ নিরপেক্ষ। গৃহকর্ম করেনি  কখনো। অবশ্য তার ভাইপো ,ভাইবোন, ছাত্রছাত্রীরা সেই অভাব পুরনে ঘাটতি রাখেনি কখনো। প্রেম কৃতজ্ঞ । চির ঋণী কল্যাণীয়দের কাছে ।


 পূর্বতন অধ্যক্ষ মহাশয় সৎব্যক্তি, কিছু  কিছু  ফাণ্ডের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।ধন্যবাদ প্রাপ্য ওনারও ।


কিন্তু দূর্ভাগ্য ! এখন সব প্রকল্প ভূক্ত । অনুদান সিদ্ধ । পাইয়ে দেওয়ার তুষ্ট রাজনীতি । অটুট ভোটব্যাঙ্ক গঠন। রমাপদ চৌধুরীর "ভারতবর্ষ " গল্পের সেই বিখ্যাত উক্তি সামনে আনে প্রেম -- -ভিক্ষে পেয়ে ভিক্ষে পেয়ে , "ক্ষেতিতে চাষ করা মানুষগুলো সব ভিখারী বনে গেল।"


মাঝখানে যত প্রকল্প তত অনুদান , তত কবর !

তখন যারা বলতো , ' কী হবে এ সবে ?' বিল ছেঁছবে একজন,কৈ খাবে অন্যজন । এ আর নতুন কথা কি !'

 বুঝিনি ।

 ঐ যে প্রেম। নিরপেক্ষ অন্ধ ! কাজ নেই তো খই ভাজ ! দেখো গো , নাম কিনতে এসেছে গোঁসাই !

খেসসা করতো !

আর আজ যখন সরকারি প্রকল্পের আয়ত্তাধীন। অনূদান অঢেল।তখন দেখি আসল গোঁসাইজীই বাদ।কইলে বইলেরাই গোঁসাই চন্দনে ভেক ! একেবারে মঞ্চের উপর ! 

হে প্রেম , তুমিও কি কমিশনের গন্ধে মুখ লুকোও কবরে !!


                           5


আজো প্রেম অন্ধ নিরপেক্ষ। প্রতিদিনকার ব্রতের মতো। ট্যাপের জলটা পড়েই যাচ্ছে , নবটা বন্ধ করে দাও। ল্যাম্পপোস্টের বাতিটা  ঠা ঠা রোদ্দুরেও এক পায়ে খাড়া ,  ওকে অফ করে শান্তি দাও। ছুটির পর ফাঁকা ঘর , ফ্যানগুলো তখনও ক্লান্ত মুখর। তার কথা কানে নাও। স্যুইচ অফ করো।

 ঘরে বাইরে  একই কাজ। হে প্রেম ! কিন্তু গোপনে। পাছে কেউ দেখে ফেলে ! লজ্জা, ভয়।

বলাই ! 

হাঁ , বলাই যে শুধু রবীন্দ্রনাথেই ছিল না ,কে জানতো ! হে প্রেম ! তুমি যে বলাই। প্রত্যক্ষ করেছি আমি শিউলি পতনের ভোরে। 


অবশ্য  একথা অনুধাবনের লোক খুব কম। নেই বললেই চলে। এখন তো সব সাবজেক্ট বিশারদ কিনা ! তাঁরা  নিজের নিজের সাবজেক্টের বাইরে বিশেষ বিচরণ করেন না। বাংলা বিশারদরাও একটু অন্য প্রজাতির । সাজেশান নির্ভর ।সহায়িকার সাহায্যে সামর্থ্য  এই যা।

হায় জগদীশচন্দ্র ! হায় সত্যেন্দ্রনাথ ! তোমরা কিসে বিশারদ ? 

অন্ধ হলেও প্রলয় বন্ধ থাকে না । তাই    বলাইয়েরা অগোচরে কেঁদে মরে। বুক ভাসায় ।সাপোর্ট পায় না । গাছের সঙ্গে গাছ হয়ে জড়ায় । হে প্রেম ! তোমাকে কাটবে জেনেও ফের গাছ বসাই। আগামীকে সুস্থ দেখবে বলে গোড়া খুসে দেয় । কমিশনের মোটা টাকা শান্তির খামে ভরে পৌঁছে যাবে ভূতের ড্রয়ারে। জেনেও জল যোগায় । পালন করে পাঁচই জুন , পরিবেশ দিবস । কৈ কিন্তু আগেই উঠে থাকে ভূতের পাতে ।


মনে পড়ে কলেজের প্রথম সমাবর্তনের দিন। স্মৃতি তর্পণের জল তুলে আনে প্রেম । সেটিও ছিল পাঁচই জূন। তিন দিন আগেও  কলেজ চত্ত্বর তলব মুখর । লুঙ্গি  গেঞ্জি পরে ,মাথায় গামছা বেঁধে নিড়ানি দিয়ে খৈনি , তলব গুটখা , পান , পারাগের খালি প্যাকেট কুড়িয়ে জড়ো করা। প্রতিষ্ঠার পর তিপান্ন বছরের কলুষ প্রণোদনা  ! 

কলেজ ক্যাম্পাস নাকি গো ভাগাড় ! 

দুমনে বস্তার চারবস্তা পচা প্যাকেট ! সব কুড়িয়ে কেরোসিন ঢেলে জ্বালিয়ে পরের দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । 

পাশের বাড়ির দোকানদার কাকু পড়াশোনা করেন নি। তাই স্মৃতিধর। শিক্ষিতরা ভুলে যায় কেন বেশি ।

 হে প্রেম ! অর্থময় স্বার্থের ঝুলি শিক্ষিতেরও কী পরিয়ে দেয় ঠুলি ? 


                           6


এ পর্যন্ত দুঃখ জল কবরের ভিজিয়েছে মাটি। পাঁচই জুনের আলো নিজস্বীতে একটু জ্বেলে  আসি।

প্রেমও যে রূপান্তর  অন্য রকমে।  সেও জানে  লাট্টুর মতো উদ্ভাবনী ঘূর্ণিতে পিন যেন নিজেই নর্তকী  : 

রবীন্দ্র জয়ন্তীর দিন  ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে ঠিক করেছিল, পুরো জ্যৈষ্ঠ মাস ধরে আম , লিচু , কাঁঠালের বিচি কুড়িয়ে জড়ো করবো যে যার মতো।

আগামী বর্ষার প্রথম সপ্তাহে তা রোপন করা হবে , নদীর তীর বরাবর । 

কথা মতো আজ পাঁচই জুন । তাঁরা  সব ভবন ভিতর । নিয়ে এসেছে বিচিভর্তি ক্যারিব্যাগ। এই মুহূর্তে বাড়িতে প্রেমের  বিচির  পাহাড় ।

সব ঠিকঠাক । শুধু  অভিমান ফুঁসে ফুঁসে ওঠে ।


হে প্রেম ! আজ তুমি  কলেজ গেট , কেউটের দখলে। কাল তুমি চিরশ্রী নদীর পাড়ে । কেউটে ফোঁসে টাকা  উড়লেই  নয়ানজুলি ভরাট। পাঁচ তারা বিল্ডিং  উঠে পড়ে। চলে যাবে কেউটের দখলে। 

রক্ষার সামর্থ্য সব চির ঘুম নিদ্রার কবরে।

রক্ষকই ভক্ষক যখন , ভক্ষকের তক্ষক হয়ে ছোবল মারলে মরবো সকলে। কবরের মাটি ফুঁড়ে শুষে নিও পচন রক্ত শর্করা শঢন। কবরের দুঃখ জলে ভেসে থাক এইটুকু প্রেম নিবেদন।



*********************************************************************************************



স্বপন নাথ 

পিতা : বলাই চন্দ্র দেবনাথ।মাতা:শ্রীমতি মায়া নাথ।গ্রাম-বেটিয়ারী, ডাকঘর- নলপুর,  থানা-সাঁকরাইল, জেলা- হাওড়া,পেশা- শিক্ষকতা ।
নেশা-লেখা , মূলত কবিতা ও প্রবন্ধ ।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : আটটি। প্রথম প্রকাশ (2006)বাতুল বালিয়াড়ি। পর্যায়ক্রমে মৃত্যুজপ শীলিত পরিক্রমা, চন্দ্র হলো না,সেই হরিণী যেই হরিণী, দ্বীপজন্ম, আয়াত পেরনো জল, গ্রহণ,   প্রভৃতি । সবকটিই শ্রদ্ধেয় কবি শঙ্খ ঘোষের তদারকিতে প্রকাশিত । প্রকাশিতব্য "ছিপ ধরা প্রহর "2022কোলকাতা বইমেলা ।
"আয়াত পেরনো জল" কাব্যগ্রন্থটি 2020 অন্নদাশঙ্কর রায় স্মৃতি পুরস্কারে মনোনিত হয়েছিল। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আবৃত্তি বিভাকর সম্মানে ভূষিত ।


1 টি মন্তব্য:

  1. মননের মৌলিক স্বরের স্বরান্তর ঘটিয়ে " স্বরবর্ণ" নতুন দিশার আগমন ঘটিয়ে চলেছে নিরন্তর। প্রার্থনা করি দেবাশিষ দার যোগ্য নেতৃত্বে স্বরবর্ণ স্বীয় কীর্তি স্থাপন করুক।

    উত্তরমুছুন